যে ব্যক্তি আলিমের যিয়ারত করল সে যেন আল্লাহর নবীর যিয়ারত করল..।
ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৩০ হিজরী হাদিসটি আরেকজন সাহাবী থেকে এভাবে বর্ণনা করেছেন,
حدثنا أبو الحسين محمد بن أحمد بن جعفر، ثنا يعرب بن خيران، ثنا محمد بن الفضل بن العباس البلخي بسمرقند ، ثنا أبو محمد حمد بن نوح، ثنا حفص بن عمر العدني، عن الحكم، عن عكرمة، عن ابن عباس، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: من زار العلماء فكأنما زارني، ومن صافح العلماء فكأنما صافحني، ومن جالس العلماء فكأنما جالسني، ومن جالسني في الدنيا أجلس إلى يوم القيامة
-“হযরত ইবনু আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আলেমের যিয়ারত করলসে যেন আমার যিয়ারত করল, যে ব্যক্তি আলেমের সাথে বসল সে যেন আমার সাথে বসল, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় আমার সাথে বসল সে যেন সে কেয়ামতের দিন আমার কাছে বসবে।” (ইমাম আবু নুয়াইম: আখবারু ইসবাহান, হাদিস নং ২১০৭;)
এই হাদিসের সনদে حفص بن عمر بن ميمون العَدنيّ (হাফছ ইবনু উমর ইবনে মায়মুন আদনী) রয়েছে। ছাহেবে জীল তাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে উল্লেখ করেছেন কিন্তু বাকী সকল ইমামগণ তাকে দুর্বল আখ্যা দিয়েছেন। কেউ কেউ তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। যেমন এই রাবী সম্পর্কে ইমাম যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেছেন, وثقه محمد بن حماد الطهراني -“ইমাম মুহাম্মদ ইবনু হাম্মাদ তাহরানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন।”(ইমাম যাহাবী: মিযানুল এতেদাল, রাবী নং ২১৩০;)
قال ابن أبي حاتم: أخبرنا أبو عبد الله الطهراني قال: حدثنا حفص بن عمر العدني، وكان ثقة.
-“ইমাম ইবনু আবী হাতেম ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, আবু আব্দিল্লাহ তাহরানী আমাদের খবর দিয়েছেন তিনি বলেছেন, হাফছ ইবনু উমর আদনী সে বিশ্বস্ত রাবী।”(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৪০৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৯৮;)
وَقَال أَبُو أَحْمَد بْن عدي: وعامة حديثه غير محفوظ، وأخاف أن يكون ضعيفا كما ذكره النَّسَائي
-“ইমাম আবু আহমদ ইবনু আদী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, তার সাধারণ হাদিস গুলো অসংরক্ষিত এবং আমি ভয় করছি ইহা দুর্বল হওয়ার ব্যাপারে, যেমনটি ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) উল্লেখ করেছেন।”(ইমাম মিযযী: তাহজিবুল কামাল, রাবী নং ১৪০৫; ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৯৮;)
হাফিজুল হাদিস ইমাম শামছুদ্দিন যাহাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) আরো বলেছেন,
ضعفوه -“ইমামগণ তাকে দুর্বল বলেছেন।” (ইমাম যাহাবী: আল কাশেফ, রাবী নং ১১৫৯;)
ইমাম আবু হাতিম ( رَحْمَةُ الله عليه) لَيِّنُ الْحَدِيثِ. -“হাদিস বর্ণনায় দুর্বল।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৯৮;) ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন لَيْسَ بِثِقَةٍ. -“সে বিশ্বস্ত নয়।”(ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৯৮;)
অতএব, সামগ্রীক বিচারে এই রাবীর বর্ণিত রেওয়ায়েত নূন্যতম স্তর হবে হাছান অথবা দ্বায়িফ। এই হাদিসের অর্থের সাথে মিল রয়েছে এমন একাধিক রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইমাম দায়লামী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটি এভাবে বর্ণনা করেছেন,
عن مُعَاوِيَة بن حيدة من اسْتقْبل الْعلمَاء فقد استقبلني وَمن زار الْعلمَاء فقد زارني وَمن جَالس الْعلمَاء فقد جالسني وَمن جالسني فَكَأَنَّمَا جَالس رَبِّي عز وَجل
-“সাহাবী হযরত মুয়াবিয়া ইবনু হায়দাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি আলেমকে স্বাগতম করল সে যেন আমাকে স্বাগতম করল, যে ব্যক্তি কোন আলেমের যিয়ারত করল সে যেন আমার যিয়ারত করল, যে ব্যক্তি আলেমের সাথে বসল সে যেন আমার সাথে বসল, যে ব্যক্তি আমার সাথে বসল সে যেন আল্লাহর কাছে বসল।”(মুসনাদু ফেরদৌস, হাদিস নং ৫৮৯৩; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৮৮৮৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিছ, হাদিস নং ৪৫৭১০;)
ইমাম আলাউদ্দিন হিন্দী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও হাফিজুল হাদিস ইমাম জালাউদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিস উল্লেখ করে বলেছেন,
الرافعي عن بهز بن حكيم عن أبيه عن جده. -“ইমাম রাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) বাহজ ইবনু হাকিম ( رَحْمَةُ الله عليه) থেকে, তিনি তিনার পিতা ও দাদার সূত্রে বর্ণনা করেছেন।”(ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৮৮৮৩; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিছ, হাদিস নং ৪৫৭১০;) এখানে ‘বাহজ ইবনু হাকীম’ এর দাদা হল, معاوية بن حيدة (মুয়াবিয়া ইবনু হায়দাহ) যিনি আল্লাহর রাসূলের সাহাবী।
প্রিয় পাঠক মহল লক্ষ্য করুন, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী ( رَحْمَةُ الله عليه) সনদসহ হাদিসটি আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন এবং আসমাউর রিজালের আলোকে হাদিসটি মওজু নয়। সেখানে কওমীদের গুরু জনাব আব্দুল মালেক সাহেব তিনার ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের প্রথম প্রকাশের ৯৪ পৃষ্টায় বলে দিলেন- “অনেক উলামায়ে কেরামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে খুব আগ্রহের সঙ্গে এবং হাদিসে রাসূল মনে করে এটাকে বর্ণনা করে থাকে। কিন্তু তা হাদীসে রাসূল নয়।”
কওমীদের কি দ্বায়িত্ব জ্ঞানহীনতা দেখুন। রাসূলে পাক ( ﷺ)’র একটি আল হাদিসকে জাল হাদিস বানিয়ে দেওয়াই তাদের মূল কর্ম।