জাবির ইবনে হাইয়্যানের রসায়ন বিষয়ক গবেষণার মূলে ছিল ‘তাকবিন’ সৃষ্টি করা। আরবী শব্দ তাকবিন অর্থ গঠন। তিনি তার গবেষণাগারে এ সংক্রান্ত অনেক গবেষণা করেছেন। তার বই বুক অব স্টোনস-এ তিনি কৃত্রিম কাঁকড়া, সাপ, এমনকি মানুষ তৈরির প্রণালীও উল্লেখ করেছেন। গবেষণাগারে সৃষ্ট এই তাকবিনগুলো আবার তাদের মহান আল্লাহপাক কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হবে।
জাবির ইবনে হাইয়্যান ছিলেন বরাবরই ধর্মভীরু মানুষ। তিনি বুক অব স্টোনসে বারংবার উল্লেখ করেছেন, প্রাণের সঞ্চার আল্লাহ ছাড়া কেউ করতে পারে না এবং তাই, এসব সৃষ্টি করতে হলে আল্লাহর একনিষ্ঠ আবেদ হতে হবে। বইয়ের শুরুর দিকে তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার দারবারে দীর্ঘ মোনাজাত করার বিষয়টিও উল্যেখ্য করেছেন।
শুধু তাই নয় তিনি ইমাম জাপর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে রসায়ন ও নানাবিধ বিষয়ে শিক্ষা লাভ করেছিলেন । অর্থাৎ জাবির ইবনে হাইয়ান ইমাম জাপর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার উনার মুরিদ বা শিশ্য/ছাত্র ছিলেন । জাবির ইবনে হাইয়ান প্রায়ই বলতেন, “আমি আলকেমির যা যা শিখেছি সবই আমার শিক্ষক ইমাম জাফর সাদিক আলাইহিস সালাম উনার কাছ থেকে।”
জাবির ইবনে হাইয়্যানের গবেষনার অন্যতম বিষয় বস্তুর মধ্যে একটি ছিল সাধারণ ধাতু থেকে স্বর্ণ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করা এবং ‘এলিক্সার’ বা অমোঘ ঔষধ তৈরির প্রচেষ্টা, যে ঔষধ খেলে মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারবে!
কেবল সাধারণ ধাতুকে স্বর্ণে রূপান্তর ও ‘এলিক্সার’ আবিষ্কারের প্রচেষ্টায় মগ্ন না থেকে, জাবির ইবনে হাইয়্যান অনেক রসায়নে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। ইস্পাত তৈরি, লোহার মরিচা রোধ, স্বর্ণালঙ্কারে মসৃণ খোদাই, কাপড় রঙ করার প্রণালী, চামড়ার ট্যানিং, বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থের সংশ্লেষণের মতো বেশ কিছু কার্যকরী কাজ করেছেন তিনি। তিনিই প্রথম কাঁচ তৈরিতে ম্যাংগানিজ ডাইঅক্সাইড ব্যবহার করেছিলেন, যা আজ অবধি ব্যবহৃত হচ্ছে। তার বুক অব স্টোনস ছাড়াও, ‘বুক অব দ্য কম্পোজিশন অব রসায়ন’, ‘বুক অব ব্যালেন্সেস’, ‘বুক অব কিংডম’ সহ বেশকিছু বই ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করেছিলো রোবার্ট অব চেস্টার নামক এক ব্যক্তি। বইগুলো এত প্রভাবশালী হয়ে ওঠে যে, পরবর্তী কয়েকশো বছর সেগুলো ইউরোপজুড়ে রসায়নের প্রধান পাঠ্যবই হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
রসায়নের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায়, আধুনিক রসায়নে জাবির ইবনে হাইয়্যানের উলেখ্যযোগ্য অবদানগুলো হলো-
• রসায়নতে পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষণের প্রচলন;
• খনিজ ধাতু নিয়ে গবেষণার দ্বার উন্মোচন;
• উষ্ণতা, আর্দ্রতা, শীতলতা ও শুষ্কতা- এ চারটি বিষয়ের বিস্তারিত বিজ্ঞানসম্মত বিবরণ;
• নাইট্রিক এবং সালফিউরিক অ্যাসিড উৎপাদন;
• বিভিন্ন খনিজ ধাতু থেকে স্বর্ণ পৃথকীকরণ;
• পারদের বিশুদ্ধিকরণ ও লবণকে পানিতে সম্পূর্ণ দ্রবণীয় বলে আখ্যায়িতকরণ;
• ‘অ্যাকোয়া রেজিয়া’ প্রস্তুতকরণ, যা স্বর্ণকে দ্রবীভূত করতে পারে;
• ক্ষারের ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘অ্যালকালি’র প্রচলন;
• স্ফটিকিকরণের মাধ্যমে বিশুদ্ধিকরণ;
• সিলভার নাইট্রেটের অধঃক্ষেপণ;
• মারকিউরাস অক্সাইড ও মারকিউরিক অক্সাইডের অধঃক্ষেপণ;
• আর্সেনিয়াস অ্যাসিড প্রস্তুতকরণ।
এ আবিষ্কার গুলো না হলে বর্তমান সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞানে এখনও শত শত বছর পিছিয়ে থাকতো । বাস্তবতা হচ্চে জাবির ইবনে হাইয়্যানের আবিষ্কার ছাড়া বর্তমানের আধুনিক রসায়নকে কল্পনাও করা যায় না ।





Users Today : 203
Users Yesterday : 767
This Month : 14625
This Year : 186496
Total Users : 302359
Views Today : 7312
Total views : 3584055