(১) কুফরী, হয়তো আকায়েদ সম্পর্কে অজ্ঞতা, কিংবা আত্মার অবাধ্যতা অথবা শয়তানের কুমন্ত্রণায় প্রকাশ পায়। কিন্তু আমি প্রথম অধ্যায়ে প্রমাণ করেছি যে, নবীগণ আল্লাহ ওয়ালা হয়েই জন্ম গ্রহণ করেন, অধিকন্তু তাদের আত্মাসমূহ পাক এবং শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে নিরাপদ। যখন এ তিনটি কারণ অনুপস্থিত, তখন তাদের থেকে কুফরী ও পাপ কিভাবে প্রকাশ পেতে পারে?
(২) পাপ নফসে আম্মারা ও শয়তানের প্রভাবে হয়ে থাকে। কিন্তু তারা এ দু’টো থেকে নিরাপদ।
(৩) ফাসিকের বিরোধিতা করা প্রয়োজন, নবীর অনুসরণ করা ফরয। যে কোন অবস্থায় নবীদেরকে মান্য করতে হবে। যদি নবীও ফাসিক হয়, তাহলে অনুসরণও প্রয়োজন আবার ফাসিক হেতু বিরোধিতাও প্রয়োজন এবং এটা দু’টি বিপরীতধর্মী বস্তুকে একত্রিকরণের মত।
(৪) ফাসিকের কথা যাচাই না করে গ্রহণ করতে নেই। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান- اِنْ جَاءَكُمْ فَاسِق بِنَبَافَتَبَيَّنُوْا ফাসিক কোন সংবাদ আনলে তা যাচাই করে দেখবে। কিন্তু নবীদের প্রত্যেক কথা বিনাবাক্যে গ্রহণ করা ফরয। যেমন- আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-
مَاكَانَ الِمُؤْمِنٍ وَّ لَامُؤْمِنَةٍ اِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ اَمْرً ااَنْ يَّكُوْنَ لَهُمُ اَلخِيْرَةُ مِنْ اَمْرِهِمْ
(আল্লাহ ও তার রসুল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে, কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণের অধিকার নেই।) নবী যদি ফাসিকও হয়ে থাকে, তাহলে বিনা বাক্যে তাঁদের নির্দেশ মান্য করাও প্রয়োজন, আবার মান্য না করাও প্রয়োজন। এতে দুটি বিপরীত বস্তু একত্রিকরণ।
(৫) গুনাহগারের প্রতি শয়তান রাজি, তাই সে শয়তানের দলের অন্তভূক্ত এবং নেক্কারের প্রতি আল্লাহ রাজি, তাই সে আল্লাহর দলভূক্ত। যদি কোন নবী এক মুহূর্তের জন্যেও গুনাহগার হয়, তাহলে মায়াজাল্লা, তিনি শয়তানের দলভুক্ত হয়ে যান। কিন্তু তা কখনও সম্ভব নয়।
(৬) ফাসিক থেকে মুত্তাকী আফযল। আল্লাহতা’আলা ইরশাদ ফরমান- اَمْ نَجْعَلُ الْمُتَّقِيْنَ كَالْفُجَّارِ যদি নবী কোন সময় গুনাহে লিপ্ত হন আর সে সময় যদি তার কোন উম্মত নেকীর কাজ করতে থাকে, তাহলে সেই সময়ের জন্য উম্মতকে নবী থেকে আফযল বলতে হয়। কিন্তু তা অসম্ভব। কেননা কোন অবস্থাতেই উম্মত নবীর বরাবর হতে পরে না।
(৭) বদ আকীদা পোষণকারীর তাযীম হারাম। হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
مَنْ وَقَّرَ صَاحِبَ بِدْعَةٍ فَقَدْ اَهانَ عَلى هَدَمِ الْاِسْلَامِ
যে ব্যক্তি বদ আকীদা পোষণকারীর সম্মান করলো, সে ইসলামকে ধ্বংস করতে সাহায্য করলো। আর নবীর প্রতি সম্মান করা হচ্ছে ওয়াজিব। যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান- وَتُعَزِّرُوْهُ وَتُوَقِّرُوْهُ যদি কোন নবী এক মুহূর্তের জন্য ধর্মদ্রোহী হয়ে যায়, তখন তার তাযীমও ওয়াজিব আবার হারামও। এ রকম কি কখনও হতে পারে?
(৮) গুনাহগারদের ক্ষমা হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওসীলায় হবে, যেমন আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান-
وَلَوْ انَّهُمْ اِذْ ظَلَمُوْا اَنْفُسَهُمْ جَاءُوْكَ الاية
এ আয়াতে সাধারণ গুনাহগারদেরকে হুযূর পাকের সমীপে হাজির হয়ে তাঁর ওসীলায় ক্ষমা প্রার্থনা করার আহবান জানানো হয়েছে। যদি তিনি গুনাহে লিপ্ত হন, তার ওসীলা কে হবে? এবং কার বদৌলতে তাকে ক্ষমা করা হবে? যিনি সমস্ত গুনাহগারের মাগফিরাতের ওসীলা হবেন, তিনি স্বয়ং গুনাহ থেকে পাক হওয়াই চাই। যদি তিনিও গুনাহগার হন, তাহলে বিনা কারণে অগ্রাধিকারের প্রশ্ন আসবে।
(৯) মূল্যবান জিনিস মূল্যবান পাত্রে রাখা হয়। মুক্তা যেমন মূল্যবান, তেমন বাক্সও মূল্যবান হয়ে থাকে। স্বর্ণ অলংকারের বাক্সও মূল্যবান হয়ে থাকে। দুধের পাত্র দুর্গন্ধ ও টক থেকে হিফাজত রাখতে হয়, নতুবা দুধ নষ্ট হয়ে যায়। আল্লাহর কুদরতী কারখানার মধ্যে নবুয়াত হচ্ছে অসাধারণ ও অনন্য নিয়ামত। তাই এর পাত্র অর্থাৎ নবীগণের আত্মা কুফরী, পাপ এবং সব রকমের নাপাকী থেকে পূতঃপবিত্র হওয়া চাই। এ জন্য আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান- ওসব আত্মা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা অবগত, যেগুলো রিসালতের উপযোগী।
(১০) ফাসিক-ফাজিরের খবর সাক্ষ্য ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়। যদি নবীগণ ফাসিক হতেন, তাহলে তাদের প্রত্যেক সংবাদের জন্য সাক্ষীর প্রয়োজন হতো। অথচ নবীদের প্রত্যেক বাণী শত শত সাক্ষ্য থেকেও উত্তম। হযরত আবু খজিমা আনসারী (রাঃ) উট সম্পর্কে এটাইতো বলেছিলেন যে, হে আল্লাহর হাবীব, উটের ব্যবসা বেহেশত-দোযখ ও হাশর-নশর থেকে বড় নয়। যখন আমরা আপনার থেকে এসব শুনে ঈমান এনেছি, তাই সে পবিত্র মুখ থেকে এটা শুনে কেন বিশ্বাস করবো না? বাস্তবিকই আপনি উট ক্রয় করেছেন। এর পুরস্কার স্বরূপ তার এক জনের সাক্ষ্য দু’জনের সাক্ষ্যের সমতুল্য করে দিয়েছেন। -সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-