হাদিস ও ফিকহ তথা যাবতীয় মাযহাবী ইলম আহলে বাইতের বিদ্যালয় থেকে নিঃসৃত। (ইমাম আবূ হানিফা)
হাদিস শিক্ষার জন্য বিভিন্ন দেশে সফরকালে, আবূ হানিফা রাঃ যখন মক্কা থেকে মদিনা যান সেখানে প্রথমে হযরত ইমাম বাকের রাঃ এঁর খিদমতে উপস্থিত হন। ইমাম বাকের রাঃ নাম শুনেই বলে উঠেনঃ তুমি কি ঐ আবূ হানিফা, যে নিজের যুক্তির ভিত্তিতে আমার দাদার হাদীসের বিরােধিতা করে? তিনি বললেনঃ আমার সম্পর্কে এ অসত্য রটানো হয়েছে। অনুমতি পেলে কিছু বলতে চাই । তিনি বললেনঃ বলো।
আবূ হানিফা রাঃ বললেনঃ পুরুষের তুলনায় নারী দুর্বল। যদি যুক্তির ভিত্তিতে আমি সিদ্ধান্ত দিতাম তাহলে বলতাম যে , উত্তরাধিকারের ব্যাপারে নারীকে অধিক দিতে হবে। কিন্তু আমি তা বলি না । বলিঃ পুরুষ দ্বিগুণ পাবে। অনুরূপভাবে, রােযা অপেক্ষা নামায উত্তম। যুক্তির ভিত্তিতে কথা বললে বলতামঃ ঋতুমতী মেয়েলােকের নামাযের কাযা জরুরী। কিন্তু তা বলি না ; বরং বলিঃ তার ওপর রােযার কাযা জরুরী।
ইমাম আবু হানিফা রাঃ এঁর এ বক্তব্য শুনে হযরত ইমাম বাকের রাঃ অভিভূত হলেন এবং উঠে এসে কপালে চুমু দিয়ে দোয়া করলেন ও যতদিন ইচ্ছা তাঁর কাছে থাকতে অনুমতি দিলেন। ১১৪ হিজরীতে তাঁর ইন্তিকাল হয় । তাঁর পুত্র হযরত ইমাম জাফর সাদিক তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন । ইমাম আবূ হানিফা রাঃ এঁর সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। আহলে বাইত সম্পর্কে ইমাম আ’যম বলতেন যে , হাদীস ও ফিক্হ তথা যাবতীয় মাযহাবী ইলম আহলে বাইতের বিদ্যালয় থেকে নিঃসৃত। (আল ফিকহুল আকবরঃ পৃষ্ঠা ১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।)
আবূ হানিফা রহঃ বলেন, ইমাম জাফর সাদিক রাঃ এঁর মত ফকিহ বা জ্ঞানী আমি কখনো দেখিনি। (ইবনে আদী রহঃ আল কামিল, ১/২৩২)
হ্যা, এভাবেই প্রিয় নবী ﷺ এঁর বংশধরগণ সারা পৃথিবীতে ইসলামের নূর, ইলমের নূর ছড়িয়ে গেছেন, যাচ্ছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এটা বুঝতে এত বেশি বেগ পেতে হবে না। আল্লাহর বন্ধু তথা আউলিয়ায়ে কেরামের নাম বলতে বললে যাঁদের নাম খুব তাড়াতাড়িই স্মরণে আসে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন গাউসুল আজম হযরত আব্দুল কাদের জিলানী রাঃ এবং সুলতানুল হিন্দ খাজা গরীবে নেওয়াজ মঈনুদ্দিন চিশতী রাঃ।
এই মহান দুই সুফি-সাধকের মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত এক মিল। ইঁনারা দু’জনেই পিতা ও মাতা উভয় দিক থেকেই প্রিয় নবী ﷺ এঁর পরিবারবর্গ তথা আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত। এই মহান দু’জন সুফি সাধক-ই বিশ্বব্যপী প্রসিদ্ধ দুই তরিকা যথাক্রমে ক্বাদেরীয়া ও চিশতীয়া তরিকার মহান ইমাম। ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করতে, ইসলামের সুঘ্রাণকে পৃথিবীব্যপী ছড়িয়ে দিতে এ দু’জনের অবদান অনস্বীকার্য। আর তাদের এই কাজের সুবিধার্থে মহান আল্লাহ পাক তাদের উভয়কেই দিয়েছেন অসংখ্য কারামত-ক্ষমতা-হেকমত। এভাবে শুধু উনারা নন, যাঁর মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা জুলুমপূর্ণ পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবেন তিনি অর্থাৎ ইমাম মাহদী আঃ ও আহলে বাইত তথা প্রিয় নবী ﷺ এঁর বংশধরের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আল্লাহু আকবার !! এগুলো বিদায় হজ্জে রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর ঐ বাণীর কতই না সুন্দর প্রতিফলন!
(বিদায় হজ্জে মক্কা ও মদীনার মাঝামাঝি গাদিরে খুম নামক স্থানে দাঁড়িয়ে) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমাদের কাছে আমি এমন (দুটি) জিনিস রেখে যাচ্ছি যা তোমরা শক্তরূপে আঁকড়ে ধরলে আমার পরে কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তার একটি অন্যটির তুলনায় বেশি মর্যাদাপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণঃ (একটি হল) আল্লাহ তা’আলার কিতাব যা আকাশ হতে মাটি পর্যন্ত দীর্ঘ এক রশি এবং (অন্যটি) আমার আহলে বাইত। এ দুটি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না কাউসার নামক ঝর্ণায় আমার সঙ্গে একত্রিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব তোমরা লক্ষ্য রেখ আমার পরে উভয়ের সঙ্গে কিভাবে আচরণ কর। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮৮)
মাওলা আলী আঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ মাহ্দী (আ.) আমাদের আহলে বাইত থেকে হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এক রাতে খিলাফতের যোগ্য করবেন। (সূনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮৫)
সাঈদ ইবনুল মুসায়্যাব রা. বলেন, আমরা উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর নিকট বসা ছিলাম। আমরা পরস্পর মাহ্দী (রা.) সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছিঃ মাহ্দী ফাতেমা আঃ এঁর বংশধর। (সূনানে ইবনে মাজাহ ৪০৮৬)
প্রসঙ্গত, প্রিয় নবী ﷺ এঁর বংশধর, সৌদি আরবের সম্মানিত স্কলার, শায়খ মুহাম্মদ ইবনে আলাভী আল মালেকী আল মক্কী (রহঃ) এঁর নামোও উল্লেখ করা যায় যিনি দীর্ঘ ৩২ বছর যাবৎ হেরেম শরীফে দরস প্রদান করেন। ইনি ২০০৪ সালে ওফাতবরণ করেন।
এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানের বাইরেও যারা খেদমত করে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুজন হলেন
Alhabib Ali Al Jifri الحبيب علي الجفري
الحبيب عمر بن حفيظ – Habib Omar
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে মৃত্যু অবধি কুরআন-সুন্নাহ-আহলে বাইত, সাহাবা ও সুফিয়ায়ে কেরামের রশি আঁকড়ে ধরে থেকে পথভ্রষ্টতার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার তাওফিক দান করুক।