যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জান্নাত ওয়াজীব

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

نَحْمَدُه وَنُصَلِّ عَلٰى رَسُوْلِهِ الْكَرِيْمِ

যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জান্নাত ওয়াজীব

যে ব্যক্তি আন্তরিকতার সাথে এই সাক্ষ্য প্রদান করে-

হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে কোন বান্দা আন্তরিকতার সাথে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহর রাসূল’ তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।[1]

যার পা আল্লাহর পথে ধূলি ধূসরিত হয়

হযরত আবায়া ইবন রিফা’আ (র) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنِ اغْبَرَّتْ قَدَمَاهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যার দু’পা আল্লাহ্‌র পথে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।[2]

যে যোহরের সুন্নত নামায পড়ে

উম্মু হাবীবা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি যোহরের (ফরযের) আগে চার রাকাত নামায পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।[3]

উম্মু হাবীবা (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি যোহরের (ফরযের) আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।[4]

যার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি নির্গত হয়

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ يَخْرُجُ مِنْ عَيْنَيْهِ دُمُوعٌ، وَإِنْ كَانَ مِثْلَ رَأْسِ الذُّبَابِ، مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ، ثُمَّ تُصِيبُ شَيْئًا مِنْ حُرِّ وَجْهِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে মুমিন বান্দার দু‘চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদিও তা মাছির মাথার পরিমাণ হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, তাতে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন।[5]

যে কন্যা সন্তানের প্রতিপালন করে

হযরত জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ لَهُ ثَلَاثُ بَنَاتٍ يُؤويهنَّ ويَكْفِيهنَّ ويَرْحَمَهُنَّ فَقَدْ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ الْبَتَّةَ

যার তিনটি কন্যা আছে, সে তাদেরকে আশ্রয় দান করে, তাদের সমস্ত ব্যয়নির্বাহ করে এবং তাদের সাথে দয়ার্দ্র ব্যবহার করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। উপস্থিত জনতার মধ্য হতে একজন প্রশ্ন করল, যদি কারও দুটি কন্যা সন্তান হয় ইয়া রাসূলুল্লাহ! জবাবে তিনি বললেনঃ দুটি কন্যা হলেও।[6]

যে সুন্দরভাবে উযু করে একাগ্রচিতত্তে সালাত আদায় করে

উকবা ইবন আমির (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

 مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ، ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ، إِلَّا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে মুসলমান সুন্দররুপে উযু করে। তারপর দাঁড়িয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করে দুই রাকাত সালাত আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।[7]

যে মৃতব্যক্তি প্রশংসার যোগ্য হয়

আনাস ইবনে মালিক (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন একটি জানাযা বয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। লোকেরা প্রশংসা করলেন। নবী করিম (সা) তিনবার ‘ওয়াজাবাত’ বললেন। অর্থাৎ ওয়াযিব হয়ে গেছে। তখন  উমর (রা) বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার উপর আমার মা বাবা কুরবানী হোক। একটা জানাযা অতিক্রম করলে তার প্রতি ভাল মন্তব্য করা হলে আপনি তিনবার ‘ওয়াজাবাত’ বললেন। রাসুলুল্লাহ (সা) বললেন,

مَنْ أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَمَنْ أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا وَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الْأَرْضِ

তোমরা যার সম্পর্কে ভাল মন্তব্য করেছ তার জন্য জান্নাত ওয়াযিব হয়ে গেছে। আর যার সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেছে। তোমরা যমীনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা যমীনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী, তোমরা যমীনের বুকে আল্লাহর সাক্ষী।[8]

যে আল্লাহ ও রাসূল এবং দীন ইসলামের প্রতি সন্তুষ্ট

হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) তাকে বলেন, হে আবু সাঈদ!

مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ (সা) কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।[9]

হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ قَالَ: رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولًا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

যে ব্যক্তি বলবে- আমি আল্লাহকে প্রতিপালক, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ (সা) কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট তার জন্য জান্নাত ওয়াজীব।[10]

যে ব্যক্তি বারো বছর আযান দেয়

হযরত ইবন ‘উমর (রা) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ أَذَّنَ ثِنْتَيْ عَشْرَةَ سَنَةً وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَكُتِبَ لَهُ بِتَأْذِينِهِ فِي كُلِّ يَوْمٍ سِتُّونَ حَسَنَةً، وَلِكُلِّ إِقَامَةٍ ثَلَاثُونَ حَسَنَةً

যে ব্যক্তি বারো বছর আযান দেয় তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর প্রতি দিনের আযানের বিনিময়ে তার জন্য ষাট নেকী এবং প্রতি ইকামতের জন্য তিরিশ নেকী লেখা হয়।[11]

যে সামান্য সময়ও আল্লাহর পথে জিহাদ করে

হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (সা) কে বলতে শুনেছেন-

مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

কোন মুসলমান ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর পথে একটি উষ্ট্রী দোহনের সময় পরিমাণ যুদ্ধ করলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।[12]

যে সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করে

হযরত শদ্দাদ ইবন আওস (রা) থেকে বর্ণিত। নবী (সা) একদিন তাকে বললেন,  আমি কি তোমাকে শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফারের সন্ধান দিব না ? তা হল-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، وَأَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَعْتَرِفُ بِذُنُوبِي، فَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ

হে আল্লাহ ! তুমি আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তো তোমারই বান্দা। আমি যথাসম্ভব তোমার সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার ও ওয়াদার উপর আছি। আমি তোমার পানাহ চাই আমার কৃতকর্মের অনিষ্ঠ থেকে। আমার প্রতি তোমার নিয়ামত আমি স্বীকার করছি। আমি আমার সব অপরাধও স্বীকার করছি। তুমি মাফ করে দাও আমার সব আপরাধ। তুমি ছাড়া গুনাহ মাফ করার তো কেউ নেই।

তোমাদের কেউ যদি সন্ধ্যায় এটি পাঠ করে আর ভোরের আগেই যদি তাকদীর অনুসারে তার মৃত্যু এসে যায়, তবে জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব। অনুরুপ তোমাদের কেউ যদি সকালে এটি পাঠ করে আর সন্ধ্যার আগেই যদি তাকদীর অনুসারে তার মৃত্যু এসে যায়, তবে জান্নাত তার জন্য ওয়াজিব।[13]

যে  ব্যক্তি বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ

হযরত আবু উমামা বিন সাহল বিন হুনাইফ (রা)  থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

بَشِّرِ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ

মানুষকে সুসংবাদ প্রদান কর। যে ব্যক্তি বলবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে  তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।[14]

যে  ব্যক্তি অসুস্থতার সময় নিম্নের কালিমা পড়বে

হযরত আবু সাঈদ (রা)  থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ تَكَلَّمَ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ فِي مَرَضِهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি তার অসুস্থতার সময় এই (নিম্নের) কালিমাগুলো পাঠ করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম।

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ। লা ইলাহা ইল্লল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।[1]

যে  ব্যক্তি  সহজ-সরল ও নম্র-ভদ্র হয়

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ هَيِّنًا لَيِّنًا قَرِيبًا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।[2]

[1] . মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস:৬১৫৩।

[2] . আল মুস্তাদরাক হাকীম, হাদীস:৪৩৫।

তথ্যসূত্র

[1] . সহিহ বুখারী কিতাবুল ইলম, হাদীস:১২৮।

[2] . সহিহ বুখারী কিতাবুল জুমুআ, হাদীস:৯০৭।

[3] . তাবরানী আউসাত, হাদীস:৭৫৪৭।

[4] . সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাব ইকামাতিস সালাহ, হাদীস:১১৬০।

[5] . সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুয যুহুদ, হাদীস:৪১৯৭।

[6] . আদাবুল মুফরাদ, হাদীস:৭৮

[7] . সহিহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়, হাদীস:২৩৪।

[8] . সহিহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায়, হাদীস:৯৪৯।

[9] . সহিহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, হাদীস:১৮৮৪।

[10] . সুনানে আবু দাউদ, কিতাবুস সালাত, হাদীস:১৫২৯।

[11] . সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল আযান, হাদীস:৭২৮।

[12] . সুনানে ইবনে মাজাহ, কিতাবুল জিহাদ, হাদীস:২৭৯২।

[13] . জামে তিরমিযী, দুআ অধ্যায়, হাদীস:৩৩৯৩।

[14] . নাসাঈ আস সুনানুল কুবরা, কিতাব আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলি, হাদীস:১০৮৮৫।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment