যাদু বিষয়ক আলোচনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সেহের আরবী শব্দ যার অর্থ যাদু। সেহের বা যাদু করা হারাম এবং এটা যে কবীরা  গোনাহ্ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। যাদুর মধ্যে যদি কোনো কথা বা কাজ কুফুরীমিশ্রিত  থাকে, তাহলে যাদু করা শুধু কবীরা গোনাহ্ নয়; বরং কুফুরীও। যাদু শিক্ষা করা এবং শিক্ষা  দেয়া- উভয়ই হারাম। অবশ্য কোনো কোনো আলেম এরূপ মত পোষণ করেছেন, আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে যাদুবিদ্যা শিখলে হারাম হবে না। যাদুকরের মন্ত্রে যদি কুফুরী কালাম না থাকে তবে তাকে শারীরিক  শাস্তি দিতে হবে। আর কুফরী কালাম থাকলে হত্যা করতে হবে। যাদুকরের তওবার ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন যিন্দীক ব্যক্তির তওবার ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। আর যিন্দীক বলা হয় নবুওয়াত, দ্বীন, হাশর নশর এবং কিয়ামত অস্বীকারকারীকে।

যাদুর বাস্তবতা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ বলেছেন, যাদুর কোনো বাস্তবতা নেই,  এটা ধারণাগত একটি ব্যাপার। অর্থাৎ যাদু থেকে যেসব অবস্থা ও কাজ প্রতিফলিত  হয় ওগুলো সবই মানুষের খেয়াল। এর বাস্তবতা নেই। আবু বকর আন্তরাবাদী শাফেয়ী এবং আবু বকর রাযী হানাফী ও তাঁদের মতানুসারীরা এরূপ ধারণা রাখে। এ ছাড়া আরও কিছু লোকের ধারণাও এরকম।

ইমাম  নববী (رحمة الله)  বলেন, বিশুদ্ধ মত হচ্ছে,  যাদুর বাস্তবতা আছে। জমহুর উলামার মত এটাই। কিতাবুল্লাহ্ ও মশহুর হাদীছ দ্বারা তা প্রমাণিত। মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবেও এরকম উল্লেখ আছে। শায়েখ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন,  যাদুর বিষয়ে যে ব্যাপারটি জটিল তা হচ্ছে, যাদু কি মূল সত্তাগতভাবে প্রতিক্রিয়াশীল কিছু, না শুধু ধারণাগত ব্যাপার। যারা এটাকে ধারণাগত ব্যাপার মনে করে, তারা এর প্রতিক্রিয়াকে স্বীকারই করে না। আর যাদুর প্রতিক্রিয়ায় যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা আবার মতানৈক্য করেন, যাদু কি নিছক কোনো তাছীর বা প্রতিক্রিয়া? যেমন বিশেষ কোনো ব্যাধি মানুষের মেজাজকে পরিবর্তন করে দেয়। নাকি এটা বিশেষ কোনো অবস্থা পর্যন্ত পৌঁছে? যেমন পাথর প্রাণী হয়ে যাওয়া বা প্রাণী পাথর হয়ে যাওয়া। জমহুর উলামা প্রথমোক্ত মতের প্রবক্তা।

কেউ  কেউ আবার  এরকমও বলে,  যাদুর কোনো প্রমাণ  নেই। বাস্তবতাও নেই। কথাটি ভুল। এর বিপরীতে কোরআন ও হাদীছের বক্তব্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, কোরআনে করীমে যাদুর তাছীর যতটুকু উলেখ­    করা হয়েছে, এর বেশী নেই। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যাদুবিদ্যা দ্বারা স্বামীস্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর কাজ করা হতো।’ সুতরাং এতটুকুর মধ্যে যাদুর প্রভাব সীমাবদ্ধ। যাদু এর চেয়ে বেশী কিছু করতে পারে না। এর চেয়ে বেশী শক্তি যাদুর মধ্যে থাকলে কোরআনে করীমে  তা উলেখ­    করা  হতো। যেহেতু  যাদু সম্পর্কিত  ঘটনা, যেমন হারুত  ও মারুতের কথা তো কোরআনে  করীমে উল্লেখ করা হয়েছেই। এর  চেয়ে বেশী প্রভাব যাদুতে থাকলে তার বর্ণনা প্রদানে কোনো বাধা তো ছিলো না। বর্ণনা যখন করা হয়নি, তখন এটাই প্রমাণিত হয় যে, যাদুমন্ত্রের মধ্যে এর অতিরিক্ত কোনো ক্ষমতা নেই। যাদু একটি তৈরী রশির মতো যা কাজ এবং উপকরণ দু’এর সমন্বয়ে গঠিত  হয়। অর্থাৎ উপকরণ এবং তা সহকারে মন্ত্র পাঠ এই দুই মাধ্যমে যাদু সম্পাদিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুষ্ট লোকদের দ্বারাই একাজ হয়ে থাকে। শর্ত হচ্ছে, যাদুকরকে অবশ্যই জুনুবী এবং নাপাক হতে হবে। আর যদি হারাম সহবাস বা মুহারেমের সাথে সহবাস করে জুনুবী ও নাপাক হয়ে থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। সেই হবে যাদু বিদ্যায় যোগ্যতম ব্যক্তি।

যাদুর প্রতিক্রিয়ার বাস্তবতাকে যারা অস্বীকার করে, তারা এমন বলে থাকে যে, ফেরাউনের  যাদুকরেরা ময়দানে যে রশি ফেলে যাদু করে সাপ বানিয়েছিলো সেগুলো প্রকৃতপক্ষে সাপ হয়নি এবং প্রকৃতপক্ষে সেগুলোতে কোনো যাদুও চালনা করা  হয়নি। আসলে রশিগুলো ছিলো চামড়ার থলে। সেগুলোকে কেটে টুকরো টুকরো করে স্তরে স্তরে সাজিয়ে তার উপর আগুন রেখে দেয়া হয়েছিলো অথবা সূর্যের নীচে রেখে দেয়া হয়েছিলো। চামড়ার টুকরোগুলো যখন আগুনের তাপে উত্তপ্ত হলো, তখন সেগুলো নড়াচড়া করতে লাগল। তাদের এ ধরনের অপব্যাখ্যা অদ্ভূত। কেনোনা, আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন স্থানে সেহের বা যাদু সম্পর্কে বলেছেন। কোনো কোনো স্থানে তো ‘সহরুন আযীম’- বড় যাদু, এরকমও বলেছেন এবং যাদুকরদেরকে সাহারা বলেছেন। যাদুকে খেয়ালী মনে করলে এসব বর্ণনাকে তো অবাস্তবই মনে হবে।

সহীহ্  বর্ণনায়  পাওয়া যায়,  এক ইহুদী সরওয়ারে  কায়েনাত (ﷺ) কে যাদু করেছিলো। সেই যাদুর প্রভাব তাঁর পবিত্র স্বভাবে প্রকাশ পেয়েছিলো। দৈহিক, মানসিক  ও জৈবিক শক্তিতে বৈকল্য দেখা দিয়েছিলো। এই ঘটনা ঘটেছিলো হুদায়বিয়া থেকে প্রত্যাবর্তনের পর ষষ্ঠ হিজরীর যিলহজ্জ মাসে। এই যাদুর ক্রিয়া ছিলো চল্লিশ দিন। মতান্তরে ছয় মাস বা এক বৎসর।

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, সহীহ নির্ভরযোগ্য মত এই যে, চলিশ্ল    দিন যাদুর আছর ছিলো। তবে হ্যাঁ আলামত জাহির হওয়া এবং তা সম্পূর্ণ শেষ হওয়া, এদিক দিয়ে সময় অবশ্য আরও দীর্ঘ হয়েছিলো। রসুলেপাক (ﷺ) এক রাতে   হজরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) এর ঘরে এসে অত্যন্ত বিনীতভাবে আল্লাহ্তায়ালার কাছে দোয়া করলেন। এরপর বললেন, হে আয়েশা! তুমি জেনে রেখো,  আল্লাহ্তায়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন। আমার প্রার্থনা গৃহীত হয়েছে। তিনি (ﷺ) আরো বললেন, দুজন লোক এলো। একজন আমার মাথার কাছে, আরেকজন পায়ের দিকে বসলো। তারা একজন আরেকজনকে বললো, কী হয়েছে? অসুখ কী ধরনের? অপরজন বললো, ইনি যাদুগ্রস্ত হয়েছেন। প্রথমজন আবার প্রশ্ন করলো, কে যাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বললো, লবীদ ইবনে সালাম নামক  এক ইহুদী। প্রথমজন জিজ্ঞেস করলো, কিসের মধ্যে যাদু করেছে? দ্বিতীয়জন বললো, চিরুনীতে এবং মাথা ও দাড়ি চিরুনী করার পর যে চুল পড়তো সেই চুলে।

দোয়ায়ে শেগুফায়ে নফল কিতাবে আছে, প্রথমজন জিজ্ঞেস করলো, কোথায় রাখা হয়েছে? সে বললো ওয়াযদানের কূপে ফেলে ঢেকে রেখেছে। এক বর্ণনায় আছে, বীরে আযদানে রেখেছে। উলামা কেরাম বলেন, এটাই বিশুদ্ধ। রসুলেপাক

(ﷺ) কয়েকজন সাহাবীকে সঙ্গে নিয়ে ওই কূপের নিকট গেলেন। সেখানে পৌঁছে বললেন, এই কূপটিই আমাকে দেখানো হয়েছিলো।

কূপটির  পানি লাল  বর্ণ ধারণ করেছিলো।  মনে হচ্ছিলো যেনো তার  মধ্যে মেহেদীর রঙ গুলে দেয়া হয়েছে। সেখানে যে খেজুর গাছগুলো ছিলো, সেগুলোর মাথা  শয়তান অর্থাৎ সাপের মাথার মতো ছিলো। সেই কূপ থেকে যাদুর উপকরণগুলো তুলে আনা হলো।

বোখারী ও মুসলিম শরীফে এরকমই বর্ণনা করা হয়েছে। বোখারী শরীফের এক  বর্ণনায় এসেছে, সাইয়্যেদা আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) নিবেদন  করলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! যে একাজটি করেছে আপনি তার নাম প্রকাশ করছেন  না কেনো? তাকে লাঞ্ছিত করছেন না কেনো? রসুলেপাক (ﷺ) বললেন, কোনো লোকের মন্দ কাজ প্রসারিত করাটাকে আমি পছন্দ করি না। আল্লাহ তায়ালা আমাকে তো সুস্থই করে দিয়েছেন, এখন মানুষের কাছে প্রচার করার আর কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে না।

হজরত   ইবনে আব্বাস   (رضي الله عنه)   এর একটি হাদীছ   ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) দালায়েলুন্নবুওয়াত কিতাবে এক দুর্বল সনদের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। বলেছেন, লোকেরা যখন সেই কূপ থেকে যাদুর উপকরণগুলো বের করলো তখন ধনুকের একটি ফিতা পাওয়া গেলো, যার মধ্যে এগারটি গেরো দেয়া ছিলো। তখন সুরা ফালাক্ব এবং সুরা নাস নাযিল হলো। এ দু’খানা সুরার একেকটি আয়াত পাঠ করা হলো আর একেকটি গেরো খুলে গেলো।

অন্য  আরেক বর্ণনায়  আছে, রসুলেপাক (ﷺ)  হজরত আলী (رضي الله عنه)  ও হজরত আম্মার (رضي الله عنه) কে পাঠিয়ে দিলেন। তাঁরা সেই কূপের ভিতর একটি খেজুরের চারা গাছ পেলেন যার মধ্যে এগারটি গেরো দেয়া ছিলো। ফতহুলবারীতে বলা হয়েছে, কূপের ভিতর একজন নামলেন। তিনি সেখানে খেজুরের চারা গাছের কিছু খণ্ডাংশ পেলেন।  মোম দিয়ে রসুলেপাক (ﷺ) এর আকৃতি বানিয়ে সুঁই বিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। আর এগারটি গেরো দিয়ে একটি সুতা তার মধ্যে বেঁধে দেয়া হয়েছিলো। এগুলো কূপ থেকে উদ্ধার করা হলো। এ সময় একেকটি গেরো খোলার জন্য এগারো আয়াত সম্বলিত ফালাক ও নাস এই দুই সুরা নিয়ে এলেন হজরত জিব্রাইল (عليه السلام)। একেক আয়াত পাঠ করা হলো আর একেকটি গেরো খুলে গেলো এবং সুঁইগুলোও বের হয়ে এলো। এভাবে সকল সুঁই যখন বেরিয়ে এলো, তখন তিনি যন্ত্রণা থেকে আরাম পেলেন। এক বিশেষ ধরনের স্বস্তি ও প্রশান্তি লাভ করলেন।

কোনো  কোনো সুফিয়ায়ে  কেরাম বলেন, এ ঘটনার  ক্ষেত্রে রসুলেপাক (ﷺ) প্রথমেই  আল্লাহ্তায়ালার নিকট নিরাময়ের আবেদন  করেননি। আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ আসার পূর্বে তিনি নিছক আত্মসমর্পণের নীতির উপরই ছিলেন। বিপদের সময় ধৈর্য ধারণ করা এবং কষ্ট ভোগ করাটাকে পুরস্কার পাওয়ার ওসীলা মনে করাই  ছিলো তাঁর স্বভাব। কিন্তু মুসিবত যখন দীর্ঘায়িত হলো, তখন আশংকা করতে লাগলেন, না জানি এর কারণে ধর্মপ্রচারের কাজে দুর্বলতা দেখা দেয়। তাই তিনি আল্লাহ্তায়ালার নিকট  নিরাময়ের দোয়া করলেন। সেজন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আত্মিক ও জাগতিক দুই ধরণের চিকিৎসার ইঙ্গিত দিলেন। আত্মিক চিকিৎসা হচ্ছে সুরা ফালাক্ব ও সুরা নাস অবতীর্ণ হওয়া। আর জাগতিক চিকিৎসা হচ্ছে মাথায় শিঙ্গা লাগানো।

সফরুস সাআদত কিতাবের লেখক বলেছেন, যারা দ্বীন ও ইমানের দৌলত হতে বঞ্চিত, তারা অবশ্যই এধরনের চিকিৎসাকে অস্বীকার করে বলবে যে, শিঙ্গা লাগানো যাদুর চিকিৎসা হয় কেমন করে।

তাদের  এধরনের দ্বন্দ্বের  জবাব এই যে, কোনো কাফের  চিকিৎসক যেমন জালিনুস বা ইস্তাতালিসের চিকিৎসকরা যদি এই চিকিৎসা নির্ধারণ করতো, তাহলে তারা অস্বীকার করতো না। তারা তার সমর্থনে বরং এরকম বলতো, এধরনের বিজ্ঞানী বা চিকিৎসকগণ যখন এরকম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তখন অবশ্যই এর মধ্যে কোনো না কোনো হেকমত নিহিত আছে। অথচ রসুলে করীম (ﷺ) এর কাজের ব্যাপারে এ ধরনের বিশ্বাস এবং উক্তি থাকা প্রয়োজন ছিলো। কেনোনা রসুলেপাক (ﷺ) যাদুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে শিঙ্গা লাগানোর একটা জ্ঞানগত হেকমত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। যাদুর প্রতিক্রিয়া মস্তক পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছিলো, অর্থাৎ মস্তিষ্কের শক্তির মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিলো। সুতরাং রসুলেপাক (ﷺ) কোনো কাজ না করেও করে ফেলেছেন বলে মনে করতেন। এই যে মানসিক অবস্থার পরিবর্তন এটা যাদুর কারণে তাঁর স্বভাবে এবং রক্তকণিকায় মিশ্রিত হয়ে গিয়েছিলো, যার কারণে  মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে স্বভাব ও আচরণকে বদলে দিয়েছিলো। বদ আত্মা তথা বদ জ্বীন ও শয়তান, মানুষের খারাপ নফস এবং প্রাকৃতিক দৈহিক শক্তির সমন্বয়ে যাদু সম্পাদিত হয়।

যাদুর  ক্ষেত্র  হচ্ছে প্রাণীর  দেহ। দেহটি যেহেতু  রূহ সম্পৃক্ত, তাই যাদুর প্রতিক্রিয়া পতিত হয় দেহ, রূহ উভয়টির উপর। যাদুর প্রভাব দেহে মিশে যাওয়ার পর কলব থেকে এক সূক্ষ্ম উত্তাপ মস্তিষ্কের অভ্যন্তরের দিকে উৎসারিত হয়। তখন

সেই উত্তাপটিই মস্তিষ্কের শক্তির জন্য একটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যাদুর প্রতিক্রিয়া তখন মস্তিষ্কের তার নিজস্ব অবস্থা থেকে সরিয়ে ক্ষতিকর অবস্থায় নিয়ে যায় এবং ব্যক্তি  বা প্রাণী তখন তার স্বাভাবিক স্বভাবের বাইরে চলে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে শিঙ্গা লাগিয়ে দূষণজনিত উত্তপ্ত রক্তকে বের করে দেয়া খুবই যুক্তিসঙ্গত এবং উত্তম চিকিৎসা।

কোনো কোনো বেদাতী সম্প্রদায় রসুলেপাক (ﷺ) এর দেহ মোবারকে যাদুর তাছীরকে অস্বীকার করেছে। তারা মনে করে, যাদুর তাছীরকে স্বীকার করলে তাঁর উচ্চ মর্যাদার হানি হয় এবং তাঁর নবুওয়াতের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টির কারণ হয়। এ জাতীয় কথা মিথ্যা। আর শরীয়তের উপর দৃঢ়তা না থাকার কারণে এরকম প্রশ্ন তাদের মনে উদয় হয়। যাদুর ব্যাপারটিকে অস্বীকার করলে তো এটাই ধরে নিতে হয় যে, রসুলেপাক (ﷺ) একজনকে জিব্রাইল মনে করলেন, অথচ তিনি জিব্রাইল (عليه السلام) নন। তিনি মনে করলেন যেনো ওহী নাযিল হচ্ছে, অথচ  ওহী নাযিল হয়নি। রসুল করীম (ﷺ) এর দ্বারা এ ধরনের ভ্রান্তি হতে পারে মনে করলে ইসলাম আর রইলো কিসে? তারা আরও মনে করে, যাদুর আছর হতে পারে কোনো ফাসেক ব্যক্তির মধ্যে, কোনো মোমিন ব্যক্তির মধ্যে তা হতে পারে না। বেদাতীদের এ সমুদয় কথাই পরিত্যাজ্য। কেনোনা রসুলেপাক (ﷺ) যে তাঁর নবুওয়াতের দাবিতে সত্যবাদী ছিলেন এ ব্যাপারে দলীল কায়েম হয়ে গিয়েছে।

তাছাড়া  তাঁর দ্বীন  প্রচার কর্মসূচীতে  আল্লাহ তায়ালা যা পৌঁছিয়েছেন,  তার হেফাজত ও সংরক্ষণের উপর মোজেজা সমূহই সাক্ষী। যেসব পার্থিব ব্যাপার তাঁর ক্ষেত্রে  সংঘটিত হয়েছে, সেগুলোর জন্য তিনি প্রেরিত হননি, সেগুলো তাঁর নবুওয়াতের অন্তর্ভূত নয়। ওগুলো হচ্ছে এমন কিছু মানবীয় বিষয় যা সাধারণভাবে সব  মানুষের মধ্যেই থাকে। যেমন রোগ, ব্যাধি ইত্যাদি। সুতরাং এ ধরনের দুনিয়াবী ব্যাপার তাঁর মধ্যে সংমিশ্রিত হওয়া বিচিত্র নয়। দ্বীনি  ব্যাপারে তাঁকে যেমন হেফাজত করা হয়েছে, সেরকম দুনিয়াবী ব্যাপারেও করা হয়েছে। একথার দ্বারা এ ধারণাও সৃষ্টি হতে পারে না যে, তিনি দুনিয়াবী কাজকর্ম  যেমন খুশি তেমনই করে ফেলেছেন। তিনি এরূপ কক্ষণও করেননি। কারণ কাজকর্ম করাটা ছিলো তাঁর নিজস্ব আওতাভুক্ত ব্যাপার। আর দুনিয়াবী বিষয়ের আরেক দিক অসুখ বিসুখ হওয়া  ছিলো তাঁর আওতাবহির্ভুূত। আর সুুস্থ সবল থাকা নবুওয়াতের সত্যতার শর্ত নয়। মক্কার কাফেরেরা তাঁকে যাদুকর বলেছিলো। যে ব্যক্তি যাদুকর, তার উপর তো অন্যের যাদু প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ফলে সে ব্যক্তি অসুস্থও হবে না কখনও। সুতরাং অন্যের যাদুর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে গেলো যে, তিনি যাদুকর ছিলেন না। কাজেই মুসলেহাতের কারণেই হয়তোবা আল্লাহ্তায়ালা তাঁর পবিত্র শরীরে যাদুর তাছীর সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন। বিরুদ্ধবাদী বেদাতীদের কথা  ‘যাদুর তাছীর হওয়া অপূর্ণতার প্রমাণ’ এটাও কোনো বিধিবদ্ধ কথা নয়। কামেল ব্যক্তিদের মধ্যেও কোনো হেকমত ও মুসলেহাতের কারণে তাছির হতে পারে। এ সম্পর্কে বহু সহীহ্ হাদীছ রয়েছে, যা অস্বীকারের উপায় নেই। আল্লাহ্পাকই ভালো জানেন।

➥[কিতাবঃ মাদারেজুন নবুওয়াত। মূলঃ ইমাম আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment