(১) যাকাতের হিসাব করার সহজ পদ্ধতি কি?
উত্তর: নিছাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক প্রত্যেক মুসলমানকে বছরান্তে যাকাত প্রদান করতে হবে।
সম্পদের প্রকৃতি ও ধরন অনুযায়ী যাকাতের হার ভিন্ন ভিন্ন হবে। যেমন-
(ক) স্বর্ণ, রৌপ্য, নগদ অর্থ, ব্যবসায়িক মালামাল, আয়, লভ্যাংশ, কাজের মাধ্যমে উপার্জন, খনিজ সম্পদ ইত্যাদির উপর যাকাত ২.৫% হারে হিসাব করতে হবে।
(খ) ফল ও ফসল উৎপাদনের যান্ত্রিক সেচ সুবিধা গ্রহণ করলে ৫% হারে যাকাত হিসাব করতে হবে।
(গ) ফল ও ফসল উৎপাদনে জমি প্রাকৃতিকভাবে সিক্ত হলে ১০% হারে যাকাত হিসাব করতে হবে।
স্বর্ণ বা রূপার নিসাবের ভিত্তিতে প্রতি চন্দ্র বছরে (৩৫৪ দিন) নিজের পূর্ণ মালের যাকাত হিসাব করে প্রথমে সম্পদ থেকে যাকাতের অংশ অর্থাৎ পূর্ণ মালের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা শতকরা আড়াই ভাগ বা ২.৫% পৃথক করে নিতে হবে।
উদাহরণ স্বরূপ ১ রমজান হতে ৩০ শাবান পর্যন্ত বিগত ১ বছরের হিসাব হবে নিম্নরূপ:
স্বর্ণের বাজার দর প্রতি ভরি ৪৫,০০০ টাকা হলে সাড়ে সাত ভরির মূল্য ৩,৩৭,৫০০ টাকা যার উপর যাকাত হবে ২.৫% হারে = ৮,৪৩৭.৫০ টাকা। আর রূপার বাজার দর প্রতি ভরি ৮০০ টাকা হলে সাড়ে ৫২ ভরির মূল্য ৪২,০০০ টাকা যার উপর যাকাত হবে ২.৫% হারে = ১,০৫০.০০ টাকা। যাকাত হিসাব করার সময় এসব স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিক্রয় মূল্যের (অর্থাৎ যাকাত হিসাব করার সময় বিক্রয় করতে চাইলে যে মূল্য পাওয়া যাবে) ভিত্তিতে যাকাত হিসাব করতে হবে। যাকাতের অংশ পৃথক করার সময় বা প্রদান করার সময় অবশ্যই নিয়ত করতে হবে। তা নাহয় যাকাত পরিশোধ হবে না।
যৌথ মালিকানার মালের যাকাত ব্যক্তিগতভাবে নিজের অন্যান্য মালের সাথে দেয়া যায়, আবার সম্মিলিতভাবেও শুধু যৌথ মালিকানার মাল থেকে যাকাত পরিশোধ করা যায়। যাকাত নগদ অর্থে প্রদান করা উচিত। গরীবের কাছে নগদ অর্থই অধিকতর কল্যাণকর। কারণ নগদ অর্থের দ্বারা যেকোন প্রয়োজন মিটানো যায়। যাকাত কোন প্রকার দয়া বা অনুগ্রহ নয়। সর্বপ্রকার লৌকিকতা, যশ-খ্যাতি ও পার্থিব স্বার্থের উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হয়ে একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে যাকাত প্রদান করতে হবে।
(২) যাকাত হিসাবের জন্য যাকাতযোগ্য ও যাকাতের অযোগ্য সম্পদের তালিকা কি কি হতে পারে?
উত্তর: নিম্নে একজন ব্যক্তির যাকাতযোগ্য ও যাকাত হতে বাদ দেওয়ার সম্ভাব্য তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:
ক) ব্যক্তিগত সম্পদ
স্বর্ণ, রূপা ও স্বর্ণ-রূপার অলংকারাদি-
১০ ভরি স্বর্ণ (প্রতি ভরি ৪৫,০০০ টাকা করে) = ৪,৫০,০০০/-
৬০ ভরি রূপা (প্রতি ভরি ৮০০ টাকা করে) = ৪৮,০০০/-
শেয়ারে বিনিয়োগ = নাই
সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ: ঋণপত্র বা
ডিবেঞ্চার, বন্ড, সঞ্চয় পত্র, ট্রেজারি
বন্ড ইত্যাদি = নাই
বীমা, ডিপিএস, প্রভিডেন্ট ফান্ড ইত্যাদি [বীমা] = ৩,০০,০০০/-
স্থায়ী সম্পত্তির উপর নিট আয় [দোকান ও বাড়ী ভাড়া] = ৫০,০০০/-
(গৃহ, দোকান, দালানকোঠা, জমি,
যন্ত্রপাতি, গাড়ি, যানবাহন ইত্যাদি
ভাড়া বাবদ নিট আয়)
বৈদেশীক মুদ্রা: নগদ ও ব্যাংকে জমা,
বন্ড, টিসি ইত্যাদি (বিনিময় হারে=টাকা) [বৈদেশীক মুদ্রা] = ৩০,০০০/-
ব্যাংকে জমা: ফিক্সড্, সঞ্চয়ী, চলতি,
বিশেষ জমা, পোষ্টাল সেভিংস, ইত্যাদি (ব্যাংকে জমা) = ১,০০,০০০/-
ঋণ/পাওনা আদায় = নাই
অন্যান্য = ১০,০০০/-
হাতে নগদ = ২০,০০০/-
মোট = ১০,০৮,০০০/-
বাদ:
বাদযোগ্য ঋণ, বকেয়া কিস্তি,
অন্যান্য বাদযোগ্য দেনা [ঋণ] = ৫,০৮,০০০/-
যাকাতযোগ্য সম্পদ = ৫,০০,০০০/-
খ) ব্যবসায়িক সম্পদ
বিক্রির জন্য দোকানে, গুদামে ও বিক্রয়
প্রতিনিধির (এজেন্ট) কাছে রাখা পণ্যদ্রব্য [দোকানে] = ৪,০০,০০০/-
পরিবহন ও ট্র্যানজিট পণ্য = নাই
উৎপাদিত (তৈরি) পণ্য = ১,০০,০০০/-
উৎপাদন প্রক্রিয়াধীন বা অসম্পূর্ণ পণ্য = নাই
মজুত কাঁচামাল ও প্যাকিং সামগ্রী = ৫০,০০০/-
বাকী বিক্রির পাওনা = নাই
পাওনা আয়, বিল ও অন্যান্য পাওনা হিসাব = নাই
ব্যাংকে জমা = ৮০,০০০/-
অন্যান্য = ২৫,০০০/-
হাতে নগদ = ৪০,০০০/-
মোট = ৬,৯৫,০০০/-
বাদ:
বাদযোগ্য ঋণ, বকেয়া কিস্তি,
পাওনাদার, প্রদেয় বিল [পাওনাদার] = ৪,০০,০০০/-
অন্যান্য বাদযোগ্য দেনা = ৯৫,০০০/-
মোট বাদ = ৪,৯৫,০০০/-
যাকাতযোগ্য সম্পদ = ২,০০,০০০/-
সর্বমোট যাকাতযোগ্য সম্পদ (ক+খ) [৫,০০,০০০+২,০০,০০০] = ৭,০০,০০০/-
যাকাতের পরিমাণ ২.৫০% = ১৭,৫০০/-
এই তালিকায় সকল যাকাতযোগ্য সম্পদের উল্লেখ নেই বরং নমুনা হিসেবে তালীকা দেওয়া হয়েছে। ঋণের ব্যাপারে যাকাত ও ঋণের নিয়মাবলি জেনে নিন। বিস্তারিত জানতে স্থানীয় বিজ্ঞ আলেমের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিতে হবে।
ইসলামী গবেষণা বিভাগ
বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।