এ বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে কতটা কঠোরতা অবলম্বন করতেন তা একটি হাদীসে পাকের বর্ণনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়।
হযরত যিয়াদ ইবনুল হারেস আসসুদাঈ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন জনৈক সাহাবী রাসূলে পাকের দরবারে এসে যাকাতের জন্য প্রার্থনা করলেন। রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (সুস্থ সবল দেহবিশিষ্ট দেখে) বললেন, দেখ যাকাতের খাত নির্ধারণ আল্লাহ তা’আলা কোন নবী কিংবা অন্য কারো হাতে না রেখে নিজেই আটটি ভাগে ভাগ করে দিয়েছেন। তুমি সে আট প্রকারের অন্তর্ভুক্ত থাকলে আমি তোমাকে যাকাতের অংশ দিতে পারি অন্যথায় নয়। [আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ, কিতাবুয যাকাত]
যাকাতের ব্যয়ের খাতসমূহ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’আলা পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ ফরমাচ্ছেন-
اِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَآءِ وَالْمَسَاكِيْنَ وَالْعَامِلِيْنَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوْبُهُمْ وَفِىْ الرِّقَابِ وَالْغَارِ مِيْنَ وَفِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ
তরজমাঃ যাকাততো এ সব লোকেরই জন্যে যারা অভাবগ্রস্ত, নিতান্ত নিঃস্ব যারা তা সংগ্রহ করে আনে, যাদের অন্তরসমূহকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করা হয়, ক্রীতদাস মুক্তির ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের জন্যে, আল্লাহর পথে এবং মুসাফিরদের জন্যে। এটা আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আর আল্লাহপাক সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়। [সূরা তাওবা, আয়াত ৬০]
উদ্ধৃত আয়াতের আলোকে যাকাত বন্টনের আটটি খাত নিম্নরূপ-
১.ফক্বীরঃ অর্থাৎ যার সামান্য সম্পদ আছে কিন্তু তা দ্বারা সারা বৎসরের ব্যয় নির্বাহ হয় না। এক কথায় নেসাব পরিমাণের চেয়ে নিতান্ত কম সম্পদের মালিক যাকাত পাওয়ার উপযুক্ত।
২. মিসকীনঃ যার কিছুই নেই, একেবারে নিঃস্ব, তাকে মিসকীন বলে। এদেরকে যাকাত দেয়া যাবে।
৩. আমিলঃ অর্থাৎ যাকাত সংগ্রহের কার্যে নিয়োজি ব্যক্তি। যাকাত থেকে তাদের বেতন-ভাতা প্রদান কারা যাবে।
৪. মন আকৃষ্টকরণঃ ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কোন অমুসলিমকে অথবা দ্বীন ও ইসলামের উপর অটল থাকার জন্যে নও মুসলিমকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ খাতটি পরিপূর্ণভাবে প্রচলিত থাকলেও পরবর্তীতে ইসলামের ব্যপকতার ফলে কেবল নও মুসলিমদের ক্ষেত্রটি চালু রয়েছে, কিন্তু প্রথমোক্তটি রহিত হয়ে গেছে।
৫. দাস মুক্তিঃ মালিকের সাথে নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে নিজেকে মুক্ত করে নেয়ার শর্তে চুক্তিবদ্ধ (পরিভায়ায় ‘মুকাতাব’) দাসকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে।
৬. ঋণ মুক্তিঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে কর্জমুক্ত করতে যাকাতের অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা যাবে।
৭. আল্লাহর পথেঃ যুদ্ধ সামগ্রী শূণ্য যোদ্ধা যারা সাজ-সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় বাহনের অভাবে জিহাদে অংশ নিতে পারছে না। যাকাত থেকে তাদেরকে সাহায্য করা যাবে।
৮. মুসাফিরঃ নিজ বাসস্থানে ধনী কিন্তু সফরে এসে রিক্তহস্ত হয়ে গেছে। এ ধরনের মুসাফিরকেও যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে। -সুত্রঃ গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব-