মেডিটেশনঃ মোহাসাবা বা আত্মপর্যালোচনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মোহাসাবা_বা_আত্মপর্যালোচনা 

তরিকতের একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্ম #মোহাসাবা আমাদের অনেকের কাছে অজানা। এটা হলো #আত্মপর্যালোচনা অর্থাৎ আজ সারাদিন কি কি করলাম তার অনুসন্ধান চালানো! এ আমল আহলে তরিকত থেকে গায়েরে তরিকত,  মুসলমান থেকে অমুসলমান  পযন্ত সকলের কাছে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। তিরমিজি শরীফের একটি হাদীসে  হুযূর বলেছেন– ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে মৃত্যু আসার আগেই নিজের বিচার করে নেয়।”। 

#মোহাসাবা_করার_প্রক্রিয়া_কেমন? 

সাধারণত আমাদের  মন মস্তিষ্ক  বড় চঞ্চল।  সুতরাং আত্মপর্যালোচনা করতে গেলেই,  সর্বোচ্চ দুই মিনিট /তিন মিনিট পরেই আমাদের মনে ধারনা আসে “এনাফ”,  অনেকক্ষন হয়ে গেছে।  পুরো দিনের হিসাব নেয়া শেষ।  বাস্তবে সামান্য কিছু সময় পার হয়েছে।  এবং হিসাব নিকাশ কিছুই হয় নি৷  কিন্তু মন বিদ্রোহ করছে যে! এইজন্য মোহাসাবার দুটি ফেস আছে। #এক_হলো সকাল থেকে রাত পযন্ত দেখা, #দুই_হলো রাত থেকে পিছনে ফিরে ফিরে সকাল পযন্ত দেখা। 

#এক, প্রথমেই নুন্যতম পনেরো  মিনিট সময় বরাদ্দ করে নিতে হবে ( এই পনেরো  মিনিট আমি ভাবনা চিন্তা আত্মপর্যালোচনা করতেই থাকবো -যতই মনে হোক না কেন সব কিছু বোঝা শেষ – ভাবা শেষ -দেখা শেষ) ।  এখন  সকাল থেকে ঘড়ির কাটা ধরে ধরে ভাবতে থাকি। সকাল ছয়টার সময় কি করেছি?  সাতটার সময়ে কি করেছি?  এই ভাবে ৮-৯-১০-১১ টার সময় কিকি করা হয়েছে দেখি। এটা শুধুই দেখা,  এই দেখার সময়ে জাজমেন্টাল হলে হবে না।  অন্যকোনো ভাবনায়  সুইস করা যাবে না শুধু ভিডিও দেখার মতো দেখে যেতে হবে।  খারাপ কিছু ধরা পড়বে (এটাই স্বাভাবিক),  কিন্তু সেই খারাবি নিয়ে টেনশন করা যাবে না।  এটাও চ্যলেঞ্জ যে, দশ পনেরো মিনিটের মধ্যে লাস্ট ১৬/১৭ঘন্টা রিভিউ করতে হবে (বাকি সাত আট ঘন্টা তো ঘুমিয়ে পার করে দিন)। ৮-৯-১০-১১-১২ এভাবে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো দুপুর ১টা বা ২টা পরে টার পরে আবার দেখলেন ব্রেন কাজ  করছে না।   তাহলে এখন সাইড পাল্টে নিন। 

 #দ্বিতীয় ফেস শুরু করি। এখন (ধরি রাত ১১ টা) প্রথমে লাস্ট এক ঘন্টা কি কি করেছি দেখি অর্থাৎ ১১টা থেকে ১০টা পযন্ত কি কি করেছি। তারপর পর ১০ টা থেকে ৯ টা পযন্ত দেখি। তারপর ৯টা থেকে ৮ টা, ৮ টা থেকে ৭ টা,  ৭ টা থেকে ৬ টা, ৬ টা থেকে ৫ টা – এভাবে রিভিউ করতে থাকি।  এই দুই ফেসে রিভিউ করা শেষ হলে,  এখন আইডেন্টিটিফাই করি- কোথায় কোথায় সময় চুরি হলো, কে চুরি করলো,  কিভাবে চুরি করলো ইত্যাদি।   কোথায় কোথায় আমল চুরি হলো।  কোথায় কোথায় সওয়াব চুরি হলো। 

 সঠিক  ম্যানেজমেন্ট আজ পযন্ত কেউ তরিকতের রাস্তায় অগ্রসর হতে পারে নি বা কোনও রাস্তায় উন্নতি সাধন করতে পারে নি ।সেই জন্য  অন্তত দুই মাস একটানা প্রায় প্রতিদিন  পনেরো মিনিট স্থির করে,  ডাবল ফেসে (সকাল থেকে সামনের দিকে এগিয়ে  + রাত থেকে নিচের দিকে নেমে)  মোহাসাবা করার পরেই এর সঠিক স্পন্দন বা ফয়েজ আমরা পেতে শুরু করবো। তখন সাত আট মিনিটেই পুরো টা সম্পন্ন হবে ইনশাআল্লাহ।  আল্লাহ আমাদের সহায়ক হোন। 

নোটঃ অভ্যস্ত হয়ে গেলে দিনের যে কোনও সময়ে বা ঘুম থেকে ওঠার তিন চার ঘন্টা পর থেকেই পাচ মিনিটের মোহাসাবা করে নেয়া যায়। এতে দিনের টাইম ম্যানেজমেন্ট এ গ্যাপ থাকে না। সারাদিন  সচ্চ ভাবে পরিচালিত হবে ইনশাআল্লাহ।। আর একটা কথা,  অনেক সময়েই নফস ধোকা দিয়ে বলবে, হাতে সময় নেই, বিশ্বাস করুন নফস মিথ্যা বলছে। বরং পাচ মিনিটের মোহাসাবাতে পাচ /ছয় ঘন্টার সময় সাশ্রয় হবে। আবার, কোনও এক সকালে আগের দিনের সম্পুর্ন ভিডিও টি  মনের কম্পিউটারে রিপ্লে করা নেয়া যায়। অর্থাৎ,  এটা আমল করার জন্য সুনির্দিষ্ট টাইম নাই। বরং যখনই সময় পাওয়া যাবে -করে নিতে হবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment