✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (২২২)
মৃতকে গোসল দেওয়ার জন্য তিন প্রকারের পানি হতে পারে।
(১) সাধারণ হালকা গরম পানি।
(২) কুল পাতার পাকানো হালকা গরম পানি।
(৩) কাপুর মিশ্রিত হালকা গরম পানি। এ সমস্ত পানি ধৌত করার জন্য। আর যদি কুল পাতার ও কাপুর মিশ্রিত গরম পানি পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে সাধারণ হালকা গরম পানিই যথেষ্ট। তবে অতিরিক্ত গরম পানি যেন না হয়।
যে স্থানে মৃতকে ধৌত করার জন্য ইচ্ছা হয় ঐ স্থানে এমনভাবে একটি লম্বা গর্ত খনন করে নিবে, যেখানে গোসলের পানি জমা হবে, এদিক সেদিক কোন কিছু যেন ফেলতে না হয়। অতঃপর উক্ত গর্তের উপর একটি তক্তা কেবলার দিক করে বিছিয়ে দিবে, গর্ত খনন এমন ভাবে করবে যে, মৃতের পা কেবলার দিকে হবে। তক্তা বিছিয়ে দেয়ার পর লোবান, আগরবাতি কিংবা সুগন্ধযুক্ত কোন কিছু তিনবার কিংবা পাঁচবার চতুর্দিকে ঘুরাবে, তার পর মৃতকে بِسْمِ اللهِ وَعَلٰى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللهِ এই দোয়াটি পাঠ করে উক্ত তক্তার উপর শোয়ায়ে দিবে, তার পা কেবলার দিকে হবে যাতে মৃতের চেহেরা কেবলামুখী হয়।
উলেখ্য যে আমাদের দেশে গর্ত খনন ও তক্তা বিছানোর ক্ষেত্রে প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে মৃতকে গোসল দেওয়ার জন্য গর্তটি উত্তর দক্ষিণ লম্বা করে খনন করা হয় এবং তক্তাও উত্তর দক্ষিণ লম্বা করে বসানো হয়, মৃতের পা থাকে দক্ষিণে আর মাথা থাকে উত্তরে, যেমনিভাবে আমাদের দেশে কবরস্থ করা হয়। এভাবে মৃতকে গোসল দেওয়ার জন্য উত্তর দক্ষিণ লম্বা গর্ত করা যাবে।
মৃতকে তক্তার উপর শোয়ানোর পর তার পরিধেয় কাপড় খুলে নিয়ে নাভি হতে রান তথা উরু পর্যন্ত অন্য কাপড় দিয়ে ঢেকে দিবে যাতে শরীর ঢাকা থাকে। অতঃপর গোসলের নিয়ত করবে। হাতে কাপড় পেছিয়ে ঐ হাতে মাটির তিনটি ঢিলা দ্বারা প্রথমে মৃতের পায়খানার রাস্তা পরিস্কার করবে এরপর প্রস্রাবের রাস্তা পরিস্কার করবে। অতঃপর কাপড়ের ভিতরে পানি দ্বারা পরিস্কার করবে। এরপর এই নিয়মে অজু করাবে যে, প্রথমে কোন কাপড় কিংবা রূই পানিতে ভিজিয়ে দাঁত ও ওষ্ঠ এবং নাকের উভয় ছিদ্র মুছে দিবে। অতঃপর নাক ও মুখ এবং উভয় কানের মধ্যে রূই দিয়ে দিবে, যাতে করে অজু করানোর সময় এবং গোসল দেওয়ার সময় ভিতরে পানি না ঢুকে। এরপর প্রথমে মুখ তারপর উভয় হাত কনু পর্যন্ত ধৌত করাবে এটিই হচ্ছে মৃতের অজু।
মৃতকে গোসল করানোর নিয়ম:
❏ মাসয়ালা: (২২৩)
মৃতকে অজু করানোর পর বাম পার্শ্ব তথা বাম কাধ করে শোয়াবে যাতে করে ডান পার্শ্ব উপরে থাকে অতঃপর কুল পাতা দ্বারা পাকানো হালকা গরম পানি তিনবার মাথা হতে পা পর্যন্ত ঢালবে, এরপর ডান পার্শ্ব করে শোয়াবে যাতে করে বাম পার্শ্ব উপরে থাকে অনুরূপ তিন বার মাথা হতে পা পর্যন্ত পানি ঢালবে যাতে করে পানি নিচে পর্যন্ত পৌঁছে যায়, এরপর মৃতকে হেলান দিয়ে বসাবে এবং তার পেটে হালকা ভাবে আস্তে আস্তে নিচের দিকে মালিশ করবে, যদি কোন কিছু বের হয় তবে তা মুছে পরিস্কার করে পানি দ্বারা ধৌত করে দিবে।
মৃতকে অজু গোসল দ্বিতীয়বার দেওয়ার প্রয়োজন নাই, কেবলমাত্র মৃতকে বাম পার্শ্ব শোয়াবে অবশিষ্ট যে পানি থাকে তা তিনবার ঢেলে দিবে এবং মৃতের শরীর কাপড় দিয়ে মুছে নাভি হতে উরু পর্যন্ত অন্য কাপড় দ্বারা ঢেকে দিয়ে মৃতকে উঠিয়ে নিবে।
❏ মাসয়ালা: (২২৪)
গোসল দানকারী ব্যক্তি মৃতের ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়া এবং গোসলের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া উত্তম। আর না হয় অন্য কোন ব্যক্তি যিনি গোসলের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অভিজ্ঞ সেই গোসল দেয়াবে।
❏ মাসয়ালা: (২২৫)
আর যদি মৃত ব্যক্তিটি পুরুষ হয়, তবে সেক্ষেত্রে গোসল দানকারী কোন পুরুষ না থাকে তাহলে যে মহিলা মুহরেম নয় সেই রকম অমুহরেম মহিলা তার হাতে কাপড় পেছিয়ে তায়াম্মুম করাবে।
❏ মাসয়ালা: (২২৬)
মৃতকে তায়াম্মুম করার নিয়ম হচ্ছে; প্রথমে নিয়ত করবে যে, আমি নিয়ত করছি এই মৃতকে তায়াম্মুম করানোর জন্য
امتثال الامر الله وطهارة للبدن لاستباحة الصلوة ورفع الحدث
বলে উভয় হাত পবিত্র মাটির উপর মেরে প্রথমে
بسم الله الرحمن الرحيم
পাঠ করে মাটি যুক্ত হাত দ্বারা মৃতের মুখমন্ডল মাসেহ করবে, ওজুর মধ্যে যে পরিমাণ ধোয়া হয় সে পরিমাণ মাসেহ করবে। অত:পর মাটির উপর হাত মেরে উভয় হাতের কনু থেকে আঙ্গুল পর্যন্ত মাসেহ করে আঙ্গুল হেলাল করবে।
❏ মাসয়ালা: (২২৭)
জানাযার মধ্যে رفع الصوت তথা উচ্চস্বরে কথা বলা মাকরুহ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: চিলিয়ে কান্না করা, মাতামতারী করা, পাগলামী করা কিংবা কাপড় চিড়ে ফেলা এ সমস্ত কিছু মাকরুহ। জিকির করা, কালেমা পাঠ করা নিষেধ নয়। বরং এটি ছাওয়াব ও পূণ্যের কাজ। যেমনঃ
➠ হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রয়েছে:
ذكر قرأة القرآن لاتنا فى بينهما –
জিকির এবং কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের মধ্যে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা নাই।
❏ মাসয়ালা: (২২৮)
মৃত ব্যক্তিকে তার স্ত্রী গোসল দিতে পারবে।