মুহাম্মাদ (সঃ) এর এলমে গায়েব সমর্থনে দলিল সমূহ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দলিল নং ১

ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (রহ:) বলেন: প্রথমত আপনাদের জানতে হবে যে এলমে গায়ব তথা অদৃশ্য জ্ঞান মহান আল্লাহর অধিকারে; আর মহানবী (দ:) বা অন্যান্যদের মোবারক জিহ্বায় এর আবির্ভাব ঘটে থাকে তাঁরই তরফ থেকে হয় ওহী (ঐশী বাণী) মারফত, নয়তো এলহাম (ঐশী প্রত্যাদেশ) দ্বারা। হুযূর পূর নূর (দ:) একটি হাদীসে এরশাদ ফরমান,

আমি আল্লাহর নামে কসম করছি, নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না কেবল আমার প্রভু যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া।

নোট

    • তাবুকের যুদ্ধের সময় যখন রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর উট হারিয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি মানুষদের কাছে ওর খোঁজ জানতে চান, যার প্রেক্ষিতে জনৈক মোনাফেক (যায়দ ইবনে আল-লাসিত আল-কায়নুকাঈ) বলেছিল,

এই হলেন মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) যাঁর কাছে ওহী এসেছে আসমান থেকে, অথচ তিনি জানেন না তাঁর উট কোথায়।

এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে নূরনবী (দ:) আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন,

অমুক লোক (মোনাফেক) এ কথা বলেছে। নিশ্চয় আমি কিছুই জানি না শুধু আমার প্রভু খোদাতা’লা যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন তা ছাড়া। আর তিনি আমাকে জানিয়েছেন যে ওই উট অমুক উপত্যকায় একটি গাছের সাথে লাগাম জড়িয়ে গিয়ে আটকে আছে।

মানুষেরা তখনি ওখানে দৌড়ে গিয়ে (ঐ অবস্থায়) উটটিকে পায়।

    • এই বর্ণনা দু’জন সাহাবী হযরত মাহমুদ ইবনে লাবিদ (রা:) ও হযরত উমারা ইবনে হাযেম (রা:) কর্তৃক প্রদত্ত এবং ‘আল-মাগাযী’ পুস্তকে ইবনে এসহাক কর্তৃক লিপিবদ্ধ বলে ইবনে হিশাম তাঁর ’সীরাহ’ (৫:২০৩) ও আত-তাবারী তাঁর ‘তারিখ’ (২:১৮৪) গ্রন্থগুলোতে বিবৃত করেছেন;
    • এ ছাড়া ইবনে হাযম নিজ ’আল-মুহাল্লা’ (১১:২২২) কেতাবে এবং ইবনে হাজর তাঁর ‘ফাতহুল বারী’ (১৩:৩৬৪, ১৯৫৯ সংস্করণ) ও ‘আল-ইসাবা’ (২:৬১৯) গ্রন্থগুলোতে, আর ইবনে হিব্বান সনদ ছাড়া স্বরচিত ‘আল-সিকাত‘ (২:৯৩) পুস্তকে বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেন।
    • উপরন্তু, ইবনে কুতায়বা (রা:)-কে উদ্ধৃত করে ‘দালাইল আন্ নবুওয়াহ’ (১৩৭ পৃষ্ঠা) কেতাবে আল-তায়মী এটি বর্ণনা করেন।
    • ইমাম নাবহানীর উদ্ধৃত অংশটি হযরত উকবা ইবনে আমির (রা:) হতে আবু আল-শায়খ তাঁর ‘আল-আ’যামা’ (৪:১৪৬৮-১৪৬৯ #৯৬৭১৪) পুস্তকে বর্ণনা করেন, যা একটি দীর্ঘতর বর্ণনার অংশ এবং যা’তে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে নিম্নের কথাগুলো:

তুমি এখানে আমাকে কী জিজ্ঞেস করতে এসেছ তা তোমার বলার আগেই আমি বলতে পারি; আর যদি তুমি চাও, তবে তুমি আগে জিজ্ঞেস করতে পারো, আমি এরপর উত্তর দেবো…….তুমি এখানে এসেছ আমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে।

    • মহানবী (দ:)-এর উট একইভাবে হোদায়বিয়ার অভিযানেও হারিয়েছিল এবং পাওয়া গিয়েছিল । অতএব, আমাদের কাছে তাঁর কাছ থেকে যা কিছু অদৃশ্য জ্ঞান হিসেবে এসেছে, তার সবই হলো ঐশী প্রত্যাদেশ যা তাঁর নবুয়্যতের সত্যতার একটি প্রামাণ্য দলিল।

দলিল নং ২

আরেক কথায়, ইমাম আহমদ রেযা খানের বিস্তারিত ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মহানবী (দ:)-এর এলমে গায়ব হচ্ছে আংশিক (’জুয’ই), অসম্পূর্ণ (গায়র এহাতী), মন্ঞ্জুরীকৃত (আতায়ী), এবং স্বকীয় নয় (গায়র এসতেকলালী), যা কুরআন মজীদেসুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে নিচে:

অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের ওপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া

— সূরা জিন, ২৬-২৭ আয়াত

ইমাম নাবহানী (রহ:) বলেন:

মো’জেযাগুলোর অধিক সংখ্যার কারণে এই অধ্যায়ে সবগুলো তালিকাবদ্ধ করা অসম্ভব; আর বাস্তবতা হলো এই যে এগুলোর সবই তাঁর মোবারক হাতে সংঘটিত হয়েছে, তাঁর অধিকাংশ হালতে (অবস্থায়), কেউ তাঁকে প্রশ্ন করুক বা না-ই করুক, (কিংবা) পরিস্থিতি যা-ই দাবি করেছিল (তার পরিপ্রেক্ষিতে)। এগুলো তাঁর হতবাক করা সর্বাধিক সংখ্যক মো’জেযা (অলৌকিকত্ব)।

ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) নিজ ’আশ-শেফা’ গ্রন্থে বলেন:

মহানবী (দ:)-এর এলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) এই সকল মো’জেযার অন্তর্ভুক্ত যা স্পষ্ট ও নিশ্চিতভাবে আমাদের জ্ঞাত হয়েছে বিপুল সংখ্যক বর্ণনাকারীর সাদৃশ্যপূর্ণ অসংখ্য বর্ণনার মানে দ্বারা।

নোট

    • ইমাম কাজী আয়ায কৃত ‘শেফা শরীফ’ (৪১৩-৪১৪ পৃষ্ঠা): “…..গায়বের সাথে তাঁর পরিচয়ের প্রতি নির্দেশক সাদৃশ্যপূর্ণ মানে’সমূহ।”

দলিল নং ৩

ঈমানদার ও অবিশ্বাসীদের মাঝে গায়েবি এলমের সাথে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর পরিচিতি ও তা জানার বিষয়টি এমনই সর্বজনবিদিত এবং সাধারণভাবে স্বীকৃত ছিল যে তাঁরা একে অপরকে বলতেন,

চুপ! আল্লাহর শপথ, তাঁকে জানানোর জন্যে যদি আমাদের মধ্যে কেউ না-ও থাকে, তবুও পাথর ও নুড়ি-ই তাঁকে তা জানিয়ে দেবে।

নোট

    • মক্কা বিজয়ের সময় নবী পাক (দ:) ও হযরত বেলাল (রা:) কাবা শরীফের অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর ‘আত্তাব ইবনে উসায়দ এবং হারিস ইবনে হিশামকে আবুসুফিয়ান ইবনে হারব এ কথা বলেন।
    • এই বর্ণনা আল-কিলাঈ নিজ ‘একতেফা’ (২:২৩০) পুস্তকে উদ্ধৃত করেন।
    • আল-মাওয়ার্দী তাঁর ‘আলম আল-নবুওয়া’ (১৬৫ পৃষ্ঠা) কেতাবেও এটি বর্ণনা করেছেন।

দলিল নং ৪

আল-বুখারী (রহ:) হযরত ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

আমরা আমাদের স্ত্রীদের সাথে কথাবার্তা ও অবকাশকালীন আলাপ থেকে দূরে থাকতাম পাছে আমাদের ব্যাপারে কোনো ওহী নাযেল না হয়ে যায় (এই আশংকায়)। হুযূর পাক (দ:) বেসাল (খোদার সাথে পরলোকে মিলন)-প্রাপ্ত হবার পর আমরা আরও খোলাখুলি আলাপ করতাম।

নোট

    • হযরত ইবনে উমর (রা:) হতে গ্রহণ করে আল-বুখারী (রহ:), ইবনে মাজাহ (রহ:) ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:) এটি বর্ণনা করেন।

দলিল নং ৫

    • সাহল ইবনে সায়াদ আল-সাঈদী থেকে আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি যে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের স্ত্রীর সাথে একই চাদরের নিচে শুয়ে থাকা সত্ত্বেও কোনো কিছু করা থেকে বিরত ছিলেন এই ভয়ে যে তাঁদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াত অবতীর্ণ হতে পারে।

নোট

    • তাবারানী নিজ ’আল-কবীর’ গ্রন্থে (৬:১৯৬ #৫৯৮৫) এটা বর্ণনা করেন;
  • সহীহ সনদে ইমাম হায়তামীও বর্ণনা করেন (১০:২৮৪)

দলিল নং ৬

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা:) বলেন:

আমাদের মাঝে আছেন আল্লাহর নবী, যিনি কেতাব তেলাওয়াতরত,

যেমন উজ্জ্বল প্রভা ভোরের আকাশকে করে থাকে আলোকিত,

তিনি আমাদের পথপ্রদর্শন করেছেন অন্ধত্ব থেকে করে মুক্ত,

আর তাই আমাদের অন্তর নিশ্চিত জানে তিনি যা বলেন তা ঘটবে সত্য ।।

নোট

    • হযরত আবু হুরায়রা (রা:) হতে ইমাম বুখারী (রহ:) এটি বর্ণনা করেন তাঁর ‘আল-তারিখ আল-সগীর’ (১:২৩) কেতাবে এবং আত-তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ আল-মাসানী’ (৪:৩৮) গ্রন্থে।
  • আল-কুরতুবী (১৪:১০০) ও ইবনে কাসির (৩:৪৬০) তাঁদের তাফসীর কেতাবগুলোতে এই বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।

দলিল নং ৭

আর হযরত হাসান ইবনে সাবেত (রা:) বলেন:

এক নবী যিনি তাঁর চারপাশে প্রত্যক্ষ করেন যা অন্যরা দেখতে পায় না,

প্রতিটি সমাবেশে যিনি আল্লাহর কেতাব করেন বর্ণনা,

তিনি যদি আগাম বলেন অনাগত কোনো দিনের ঘটনা,

তবে তা সত্য হবে পরদিন নয়তো তারও পরের দিন, সন্দেহ বিনা ।।

নোট

    • হিশাম ইবনে হুবাইশ থেকে গ্রহণ করে এটি বর্ণনা করেছেন আত-তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (৪:৪৮-৫০) গ্রন্থে;
    • নিজের সনদকে সহীহ ঘোষণা করে আল-হাকিম (৩:৯-১০);
    • ইবনে আবদ আল-বারর তাঁর ’আল-এসতিয়াব’ (৪:১৯৫৮-১৯৬২) কেতাবে;
    • আল-তায়মী নিজ ‘দালাইল আল-নবুওয়াহ’ (পৃষ্ঠা ৫৯-৬০) গ্রন্থে; এবং আল-লালিকাঈ তাঁর শরাহ-এ।
    • এছাড়া, এটি লিপিবদ্ধ আছে ‘উসূলে এ’তেকাদে আহলে সুন্নাহ’ (৪:৭৮০) পুস্তকে।
    • আত-তাবারীর ‘তাফসীর’ (১:৪৪৭-৪৪৮), ইবনে হিব্বানের ‘আল-সিকাত’ (১:১২৮) ও আল-কিলাঈ-এর ‘আল-একতেফা’ (১:৩৪৩) গ্রন্থগুলোতেও এটি বর্ণিত হয়েছে।
    • আবু মা’আদ আল-খুযযা হতে ইবনে সায়াদ (১:২৩০-২৩২)-ও এটি বর্ণনা করেন, তবে এটি মুরসাল এবং আবু মা’আদ একজন তাবেয়ী, যা ইমাম ইবনে হাজর স্বরচিত ’আল-এসাবা’ (#১০৫৪৫) গ্রন্থে ব্যক্ত করেছেন।

যুক্তি খন্ডন

‘তাকভিয়াতুল ঈমান’ বইটির লেখক দাবি করেছিল মহানবী (দ:) পরের দিন কী ঘটবে তা জানতেন না, কেননা তিনি এক মেয়েকে থামিয়ে দিয়েছিলেন এ কথা বলে “এই বিষয়টি বাদ দাও” যখনই সে আবৃত্তি করেছিল “আমাদের মাঝে এক নবী (দ:) আছেন যিনি আগামীকাল কী হবে তা জানেন”; ওই লেখকের এই অদ্ভূত দাবিকে ওপরে উল্লেখিত ৪ লাইনের পদ্য দুটো নাকচ করে দিয়েছে। [1] হুযূর পাক (দ:)-এর ওই মেয়েকে নিষেধ করার মানে এই নয় যে তিনি গায়ব জানতেন না, বরং এ বিষয়টি সাবেত বা প্রমাণিত যে আল্লাহ

অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের ওপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না আপন মনোনীত রাসূলগণ ছাড়া

— সূরা জ্বিন, ২৬-২৭ আয়াত)

এবং তিনি রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর কাছে শেষ বিচার দিবস অবধি এবং তারও পরের ঘটনাগুলোর ভবিষ্যত জ্ঞান প্রকাশ করেছেন। আসলে নবী পাক (দ:) ওই মেয়েকে এ কখা বলাতে বাদ সেধেছিলেন এই কারণে যে এলমে গায়ব তাঁর প্রতি স্বকীয় পর্যায়ে আরোপ করা হয়েছিল, আর এই স্বকীয়তা একমাত্র আল্লাহরই।[2] ওই মেয়ে এমনই ছোট ছিল যে তার নামায পড়ার বয়সও হয় নি।[3] তার কাছ থেকে এ রকম দাবি করাটা (ওই সময়কার) জনপ্রিয় বিশ্বাসের ইঙ্গিতবহ ছিল, যা নবী (দ:)-এর জন্যে বেমানান হলেও দৈবজ্ঞ, জ্যোতিষী, গণক গংদের এ মর্মে মিথ্যা দাবির প্রতিনিধিত্বকারী ছিল যে তারা নিজেদের ক্ষমতাবলে ভবিষ্যত জানতে পারতো; এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহতা’লা ঘোষণা করেছেন:

কোনো আত্মা জানে না যে কাল কী উপার্জন করবে

— সূরা লোকমান, ৩৪ আয়াত

তাই মহানবী (দ:) একটি বর্ণনায় আরও ব্যাখ্যা করে বলেন,

শুধু আল্লাহ-ই জানেন আগামীকাল কী ঘটবে।

— ইবনে মাজাহ বিশুদ্ধ সনদে

অর্থাৎ, তিনি স্বকীয় এবং পরিপূর্ণভাবে জানেন।

তথ্যসূত্র

· রুবাইয়্যে বিনতে মুওয়াব্বেয (রা:) হতে আল-বুখারী; এবং সুনান ও ইমাম আহমদ বর্ণিত।

· · ইমাম ইবনে হাজর (রহ:)-এর ‘ফাতহুল বারী’ গ্রন্থে উদ্ধৃত তাঁর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য

  1. · আবু দাউদের ‘সুনান’-এর ওপর ইবনুল কাইয়েমের হাশিয়া বা টীকা দ্রষ্টব্য
    • মহানবী (দ:)-এর অদৃশ্য জ্ঞানবিষয়ক ৮০টি হাদীস-[ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (রহ:)-এর ৯০০ পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহি আ’লাল আ’লামীন ফী মো’জেযাতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন (১৩১৭ হিজরী/১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ) হতে সংগৃহীত]-মূল: শায়খ ড: জিবরীল ফুয়াদ হাদ্দাদ দামেশকী-অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

মুহাম্মাদ (সঃ) এর এলমে গায়েব সমর্থনে দলিল সমূহ 2

দলিল ১

ইমাম আহমদ (রহ:) ও আত্ তাবারানী (রহ:) হযরত আবু যর গিফারী (রা:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

মহানবী (দ:) যখন আমাদের ছেড়ে যান (পরলোক গমন করেন), তখন উড়তে সক্ষম এমন কোনো পাখি ছিল না যার সম্পর্কে তিনি আমাদের জানান নি।

নোট

    • এটি বর্ণনা করেছেন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হতে আত্ তাবারানী নিজ আল-কবীর (২:১৫৫ #১৬৪৭) কেতাবে, যার বরাত ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী (৮:২৬৩-২৬৪);
    • এছাড়াও ইমাম আহমদ (রহ:), আবু দাউদ (রহ:), আত্ তায়ালিসী, ইবনে সা’আদ তাঁর ’তাবাকাত’ (২:৩৫৪) পুস্তকে, আল-বাযযার নিজ ‘মুসনাদ’ (৯:৩৪১ #৩৮৯৭) গ্রন্থে, আত্ তাবারী স্বরচিত তাফসীর কেতাবে (৭:১৮৯), ইবনে আবদ আল-বারর তাঁর ‘আল-এসতিয়াব’ পুস্তকে (৪:১৬৫৫), ইবনে হিব্বান (১:২৬৭ #৬৫ এসনাদ সহীহ), এবং আদ্ দারু কুতনী নিজ ‘এলাল’ কেতাবে (৬:২৯০ #১১৪৮)।
    • এর উদ্ধৃতি আছে আল্ হায়তামী (রহ:), ‘মাওয়ারিদ আল-যামান’ (৪৭ পৃষ্ঠা) গ্রন্থে।
    • এটি হযরত আবু আল-দারদা (রা:) হতে বর্ণনা করেছেন আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ পুস্তকে (৯:৪৬ #৫১০৯ এসনাদ সহীহ)

দলিল ২

ইমাম মুসলিম (রহ:) হযরত ‘আমর ইবনে আখতাব (আবু যায়দ) আল-আনসারী (রা:) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

মহানবী (দ:) আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যতোক্ষণ না যোহরের নামাযের সময় হয়; তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন এবং নামাযশেষে আবার তাতে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন। ইতোমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয় এবং তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি নামাযশেষে আবারও মিম্বরে আরোহণ করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর বয়ান রাখেন। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই তিনি আমাদের বলেন। আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি-ই সবচেয়ে জ্ঞানী যিনি এর অধিকাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন।

— ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ বর্ণিত

দলিল ৩

আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রা:) হতে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন:

রাসূলুল্লাহ (দ:) আমদের মাঝে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে (কথা বল)-ছিলেন; আর তিনি ওই সময় থেকে (পৃথিবীর) শেষ সময় পর্যন্ত যা যা ঘটবে তার কোনোটাই বাদ দেন নি, সবই আমাদের বলেছেন। যাঁরা তা মনে রাখতে পেরেছেন, মনে রেখেছেন এবং যাঁরা ভুলে গিয়েছেন, তাঁরা ভুলেই গিয়েছেন। যাঁরা ওখানে উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা সবাই এটা জানেন। আমি হয়তো ওর কিছু কিছু ভুলে গিয়ে থাকতে পারি; কিন্তু যখনই তা ঘটে তখনই আমার মনে পড়ে যায়, যেমনিভাবে কেউ এমন কোনোব্যক্তিকে মনে রাখেন যিনি দূরে কোথাও ছিলেন, অথচ তিনি ফিরে আসার পরপরই তাঁকে চেনতে পারেন।

নোট

    • হযরত হুযায়ফা (রা:) হতে ইমাম আল-বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম আবু দাউদ ও ইমাম আহমদ বর্ণিত;
  • হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা:) হতে ইমাম তিরমিযী ও ইমাম আহমদও বর্ণনা করেছেন এটি।
  • আল-বুখারী হযরত উমর (রা:) হতেও অনুরূপ একটি বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন।

দলিল ৪

ইমাম মুসলিম হযরত হুযায়ফা (রা:)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন:

রাসূলে খোদা (দ:) আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই বলেছেন এবং এমন কোনো কিছু বাকি ছিল না যে সম্পর্কে আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি নি; শুধু আমি এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করি ‍নি মদীনাবাসীর মদীনা থেকে বের হবারকারণ কী হবে?

নোট

    • হযরত হুযায়ফা (রা:) হতে ইমাম মুসলিম ও ইমাম আহমদ বর্ণিত যা’তে নিম্নের বাক্যটি সংযুক্ত – “শেষ মুহূর্ত অবধি”।

দলিল ৫

আবু দাউদ (রহ:) হযরত হুযায়ফা (রা:) থেকে আরও বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন:

আল্লাহর শপথ! আমি জানি না আমার সাথীবৃন্দ (অন্যান্য সাহাবী) ভুলে গিয়েছেন না ভুলে যাওয়ার ভান করছেন (ফিতনা প্রতিরোধের বিষয়টি; মোল্লা কারী নিজ ‘শরহে শেফা’ পুস্তকে বলেন: ‘আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দেয়ার ব্যাপারটি), কিন্তু রাসূলুল্লাহ (দ:) দুনিয়ার শেষ সময় অবধি যতো ফিতনা সংঘটনকারীর আবির্ভাব হবে তাদের কারোর নামই বাদ দেন নি; এদের প্রত্যেকেরই ন্যূনতম তিন’শ অনুসারী হবে। মহানবী (দ:) তাদের প্রত্যেকের নাম, তাদের বাবার নাম ও গোত্রের নাম আমাদের জানিয়েছেন।

— হযরত হুযায়ফা হতে আবু দাউদ বর্ণিত

দলিল ৬

হযরত আনাস (রা:) হতে আবু এয়ালা সহীহ সনদে রওয়ায়াত করেন যে তিনি বলেন:

মহানবী (দ:) না-রাজি হালতে বের হয়ে এলেন এবং সবার উদ্দেশ্যে বল্লেন, ‘আজ তোমরা আমাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে না, শুধু আমি তোমাদের এই ব্যাপারে বলবো;’ আর আমরা দৃঢ় প্রত্যয় পোষণ করছিলাম যে জিবরীল (আ:) তাঁরসাথেই ছিলেন। এমতাবস্থায় হযরত উমর (রা:) বল্লেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! এই কিছু দিন আগেও আমরা অজ্ঞতার যুগে বসবাস করতাম। আপনার কাছে মাফ চাই, আপনি আমাদের (অজ্ঞতা প্রকাশ করে) বে-ইজ্জতীতে ফেলবেন না। আমাদের ক্ষমা করুন, আর আল্লাহতা’লাও আপনাকে ক্ষমা করুন’।

নোট

    • হযরত আনাস (রা:) হতে আবু্ এয়ালা নিজ ’মুসনাদ’ গ্রন্থে (৬:৩৬০ #৩৬৮৯) বর্ণনা করেছেন।
    • আর ইমাম হায়তামীর (৭:১৮৮) মতে, এর বর্ণনাকারীরা আল-বুখারী ও মুসলিমেরই বর্ণনাকারী। এই দুই ইমামের ’সহিহাইনে’ একটি দীর্ঘতর বর্ণনা সংযুক্ত রয়েছে।
    • ‘আর আল্লাহতা’লাও আপনাকে মাফ করুন’, হযরত উমর (রা:)-এর এই বাক্যটি কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা ব্যক্ত করে।

দলিল ৭

হযরত উমর (রা:) থেকে আবু এয়ালা গ্রহণযোগ্য সনদে রওয়ায়াত করেন; তিনি বলেন:

আমি রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে বলতে শুনেছি, ‘কুরাইশের এই গোত্র (হাই্য) ততোক্ষণ নিরাপদ থাকবে যতোক্ষণ না তারা ধর্ম থেকে সরে মুরতাদ হয়ে যাবে।’ এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলে, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমি কি জান্নাতে যাবো, না জাহান্নামে?’ হুযূর পূর নূর (দ:) বলেন, ‘বেহেশ্তে।’ আরেক ব্যক্তি উঠে একই প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেন, ‘দোযখে।’ অতঃপর তিনি এরশাদ ফরমান, ‘আমি তোমাদের কিছু না বলা পর্যন্ত তোমরা আমাকে কিছু বলো না। ভয়-ভীতির কারণ না হলে তোমরা একে অপরের দাফন বন্ধ করে দিতে (লাওলা আন লা তাদাফানূ); আমার অবশ্যই তোমাদেরকে বলা উচিত যে বিপুল সংখ্যক লোক জাহান্নামে যাবে এবং তারা কারা তা তোমরা জানবে। আমাকে যদি এ ব্যাপারে আদেশ দেয়া হয়, তবে আমি তা নিশ্চয় পালন করবো’।

নোট

    • হযরত ইবনে উমর (রা:) হতে আবু এয়ালা এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১০:৬৬ #৫৭০২);
    • দীর্ঘতর বর্ণনায় লিপিবদ্ধ করেছেন ইবনে আবি হাতিম নিজ ‘এলাল’ পুস্তকে (২:২৫৬ #২২৬২)।

তথ্যসূত্র

    • মহানবী (দ:)-এর অদৃশ্য জ্ঞানবিষয়ক ৮০টি হাদীস-[ইমাম কাজী ইউসুফ নাবহানী (রহ:)-এর ৯০০ পৃষ্ঠাব্যাপী গ্রন্থ ‘হুজ্জাতুল্লাহি আ’লাল আ’লামীন ফী মো’জেযাতে সাইয়্যেদিল মুরসালীন (১৩১৭ হিজরী/১৮৯৯ খৃষ্টাব্দ) হতে সংগৃহীত]-মূল: শায়খ ড: জিবরীল ফুয়াদ হাদ্দাদ দামেশকী-অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment