“আমি যার মওলা, আলীও তার মওলা”
ছরকারে দো আলম, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইরশাদ হচ্ছে :
মান কুনতু মাওলাহু ফা আলীয়ুন মাওলাহু
অর্থাৎ, আমি যার (মাওলা) বন্ধু, আলীও তার বন্ধু।
[তিরমিযী,৫মম খন্ড, পৃ-৩৯৮, হাদীস-৩৭৩৩]
❏ প্রমাণ ১ :
আল্লামা সুয়ূতী (রহ.) রচিত ‘আদায়েল’ নামক কিতাবে ওই সকল বিষয়ের বর্ণনা রয়েছে, যে সকল বিষয় তিনি নতুন আবিষ্কার করেছিলেন। তাঁর পূর্বে কোন খোলায়ে রাশেদীন যা করেননি। হযরর আলী ও হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) মধ্যে সৃষ্ট মতানৈক্যের কারণ ছিলো হযরত ওসমান যুন্নূরাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাত। আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এবং হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (رضي الله عنه) উভয়েই বলতেন, ওসমান (رضي الله عنه) হত্যাকারীদের কেসাস কায়েম করার কাজটি দ্রুত করতে হবে, যাতে করে সাধারণ মানুষ খলীফাগণের প্রতি ধৃষ্টতা প্রধর্শন করতে না পারে। কিন্তু হযরত আলী (رضي الله عنه) ধীরস্থিরতার পথ গ্রহণ করলেন এবং এটাকেই কল্যাণ মনে করলেন। খেলাফতের কাজ নির্বিঘ্ন রাখতে চাইলেন। এই মতানৈক্যের ভিত্তি ছিলো ইজতেহাদী ভূল। তারপর হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) অপসারিত করলেন। বিরোধিতা বৃদ্ধ পেলো। ফলে যা না হওয়ার তাই সংঘটিত হলো। আল্লামা সুয়্যুতি রহঃ ‘মসনদে ইমাম আহমদ’ কিতাব থেকে এরবায্ ইবনে সারিয়া থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন , রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন : হে আল্লাহ্! লেখা ও গণিত শিক্ষা দাও এবং তাকে আযাব থেকে রক্ষা করো।
❏ প্রমাণ ২ :
ইবনে আবু শায়বা এবং তিবরানী মালিক ইবনে ওমায়ের থেকে বর্ণনা করেছেন, সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) বলতেন, আমি সব সময় রাজ্যশাসনের আকাঙ্ক্ষী ছিলাম। রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘ইয়া সালাফতা ফাআহসিন'(যখন শাসক হবে জনগনের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করবে) অপর এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘ওয়াসমাহ’ (এবং ক্ষমা করে দিয়ো)।
❏ প্রমাণ ৩ :
সায়্যিদুনা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছেন, সায়্যিদুনা আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) শাসনকে তোমরা অপছন্দ করোনা। তিনি না থাকলে বহু লোকের মস্তক তাদের দেহ থেকে বিচিন্ন হয়ে যাবে। তিনি একথা দ্বারা সম্ভবতঃ তাঁর পুত্র নাপাক ইয়াজিদের কার্যকলাপের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। [মাদারেজুন নবুওয়াত, ৮ম খন্ড, ১৮১,১৮২ পৃষ্ঠা]
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে যারা গালি দেয়, মুনাফিক বলে তাদের জন্য শরীয়তের বিধান কী?
উত্তর :- হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে বিরুপ ধারণা পোষণকারীদের জন্য সকল উলামা সম্প্রদায় (আরব ও আজমসহ) যে মন্তব্য করেছেন তা হল :- একজন মহান সম্মানিত সাহাবী সম্পর্কে এরূপ মত পোষণকারীরা পথভ্রষ্টঃ
❏ প্রমাণ ৪ :
ইবনে আসাকির ‘তারিখে দামাস্ক’ ও আজবা ‘কেতাবুশ শরীয়া’ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন
قيل للحسن: يا أبا سعيد إن ههنا قو ما يشتمون يلعنون معاوية فقال: على اولتك الذين يلعنون لعنة الله
অর্থ :- হযরত হাসান (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করা হল, হে আবু সাঈদ! একদল লোক রয়েছে হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)কে গালিগালাজ করে ও অভিশাপ দেয়? তখন হযরত হাসান (رضي الله عنه) বললেন যারা এরূপ আচরণ করে তাদের উপর আল্লাহর লানাত (অভিশাপ)।
[তারিখে দামাস্ক ৫৯ খন্ড, ২১১ পৃঃ, কেতাবুশ শরীয়া ৫ম খন্ড ২৪৬৭ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ৫ :
ইবনে আসাকির বর্ণনা করেন হযরত আব্দুল্লাহ বিন মোবারক মন্তব্য করেছেন যে, কেউ যদি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে কটু কথা বলে বা বক্রভাবে দৃষ্টিপাত করে, তাহলে অবশ্যই সাহাবীর শানে বেয়াদবি করা হবে। আর সাহাবাদের সম্পর্কে কটুক্তিকারীরা অবশ্যই জাহান্নামী।
[তারিখে দামাস্ক, ৫৯ খন্ড, ২১১ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ৬ :
কাজী আইয়াদ ‘শেফা’শরীফের মধ্যে উল্লেখ করেছেন
من شتم أحدا من أصحاب النبي ابا بكر أو عمر أو عثمان أو علي او معاوية أو عمرو بن العاص فإن قال كانوا على ضلال و كفر
অর্থ:- হযরত মালিক রাহিমাহুমুল্লাহু মন্তব্য করেছেব যদি কেউ কোন সাহাবীয়ে রাসুল যেমন হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান, হযরত আলী,হযরত মুয়াবিয়া ও হযরত ওমর বিন আস প্রমুখদের প্রতি খারাপ মন্তব্য করে তাহলে সে যেন পথভ্রষ্ট ও কুফরী তে আছে।
[আশ-শেফা ২য় খন্ড, ৪৯৩ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ৭ :
‘খেলাল আস-সুন্নাহ’তে বর্ণিত হয়েছে,
আবি আব্দুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হল ওই সকল লোকেদের সম্পর্কে আপনার মতামত কি? যারা বলে, আমরা মুয়াবিয়াকে কাতিবে ওহী ও মুমিনের মামা বলে মনে করি না। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেন
هذا قول سوءئ ردئ يجانبون هو لاء القوم ولا يجالسون
অর্থ:- এরূপ মন্তব্য করা অবশ্যই শরীয়ত বিরোধী ও জঘন্য। এরূপ মন্তব্যকারীদের বিতাড়িত করা ও বয়কট আবাশ্যিক কর্তব্য।
[খেলাল আস সুন্নাহ ২য় খন্ড, ৪০০ ও ৬৫৯ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ৮ :
ইমাম নেসাপুরী মন্তব্য করেছেন যারা হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)র শানে কটু মন্তব্য করে তাদের সঙ্গে নামায পড়াও তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন হারাম।
[ মাসাইলে ইবনে হানি নেসাপুরী ১ম খন্ড, ৬০ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ৯ :
আস সুন্নাহ নামক পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে কোন একজন হযরত আব্দুল্লাহ রহমতুল্লাহ আলাইকে জিজ্ঞাসা করলেন হে আবদুল্লাহ! আমার এক মামা আছে যে, হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)র শানে কটু কথা বলে তার সহিত মেলামেশা কি শরিয়ত সম্মত? তিনি উত্তর দিলেন তার সহিত মেলামেশা করা এমন কি একত্রিতভাবে খাওয়া দাওয়া করা হারাম।
[ আস-সুন্নাহ, ২য় খন্ড, ৪৪৮ পৃঃ]
❏ প্রমাণ ১০ :
لا اكراه فى الدين قد تبين الرشد من الغى
ধর্মে কোন জবরদদস্তী নেই, নিশ্চয় ভ্রান্তি থেকে সত্য পথ খুবই প্রতিভাত হয়েছে। যে ব্যক্তি তাদেরকে কাফের বলবেনা, উস্তাদ, আত্বীয় বা বন্ধুত্বের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিবে তাড়াও তাদের মত কাফির। কিয়ামতের দিবসে এক রশিতে বাঁধা হবে। “যে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে (জাহান্নামের) ফেরেশতারা তাকে হেঁচড়ে নিয়ে যাবে।”
[আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খন্ড ২৬৬ পৃ]