মুজাস্সিমাদের দেহবাদ ও আমরা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

তুমি বলছো, যদি আল্লাহর দেহই না থাকে তো, তাঁর অস্তিত্ব থাকে কিভাবে? দেহ ছাড়া কি কিছুর অস্তিত্ব থাকতে পারে?

বলি, ভাই- পারে, অবশ্যই পারে। তোমার হৃদয়ে যে আবেগ-ভালোবাসা; এর কি কোনো দেহ আছে? নিশ্চয় নেই। তবে কি এর অস্তিত্ব নেই? বুঝতেই পারছো, দেহহীন স্বত্তার অস্তিত্ব থাকতে পারে। পারেই। আছেই বরং। পরম করুণাময় সুমহান আল্লাহ।

——–

আরো বলছো, দেহ না থাকলে কুরআনুল কারীমে হাত, চেহারা ইত্যাদির কথা বলা হলো যে! হাত, চেহারা তো দেহেরই অংশ। অতএব আল্লাহর হাত, চেহারা বলা মানে তাঁর দেহের কথাই বলা।

বলি ভাই, দেহহীন স্বত্তারও হাত, চেহারা বলা যায়! হ্যাঁ, নিশ্চয়ই যায়। বলো ভাই, সত্যের কি কোনো দেহ আছে? নিশ্চয় নেই। তবু কি কুরআনে ‘সত্যের পা’ বলা হয়নি!(সূরা ইউনুসঃ২)

দিনের কি কোনো দেহ আছে? নিশ্চয় নেই। তবু কি কুরআনে ‘দিনের চেহারা’ বলা হয়নি!(সূরা আল ইমরানঃ৭২)

হ্যাঁ, বুঝতেই পারছো, এগুলো ভাষার অলঙ্কার।

এই যে তোমার দেহবাদী আক্বীদা, এতে কি আমার কোনো হাত আছে? নেই তো। বাইনসাফ বলো, এখানে হাত বলতে কি আসলেই আমার হাত বুঝিয়েছি? নিশ্চয় না। বরং এটা ভাষার অলঙ্কার। হ্যাঁ, কুরআনুল কারীমে স্থানে স্থানে আল্লাহর হাত, চেহারা বলার হিকমত এটাই। ভাষার অলঙ্কার। আল্লাহর শপথ, এগুলো দেহের অংশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বুঝানো হয়নি।

———

তুমি আরো বলছো, দেহ না থাকলে কিয়ামতে বা জান্নাতে আল্লাহকে দেখা যাবে কিভাবে? বস্তু না হলে কি কোনো কিছু দেখা যায়!

বলি ভাই, হ্যাঁ, দেখা যায়।

এবারও তোমার সেই প্রেম-ভালোবাসা, হৃদয়াবেগ। এর কি কোনো দেহ আছে? নেই তো! তবু কি এগুলো মহান আল্লাহ দেখেন না? নিশ্চয়ই দেখেন। এবং চাইলে নিশ্চয় অন্যকে দেখাতেও পারেন। হ্যাঁ।

ভাইরে, জান্নাতে আল্লাহকে দেখা ও দেখানোর ব্যাপারটাও এমনই। এটা তাঁর কুদরতের অধীন। তিনি চাইবেন বলেই তাঁর দেহহীন স্বত্তা অন্যরা দেখতে পাবে। এটা তোমার আমার বোধগম্যতার উর্ধ্বে। এটাই বিশ্বাস। এটাই ঈমান।

————–

উপরের সবচিন্তা রাখো। জাস্ট নিচের কথাগুলো গভীর ও নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করো ভাই। ইনশাআল্লাহ, সত্য উদ্ভাসিত হবে।

ধরো, স্রষ্টার দেহ আছে। নাউজুবিল্লাহ! দেহ থাকা মানে কোনো না কোনো স্থানে থাকা। অথচ তিনি সময় ও স্থানের উর্ধ্বে। বরং এদুটোও তাঁর সৃষ্টি। আর তিনি তো কোনো সৃষ্টির মুখাপেক্ষী নন।

তাছাড়া সমস্ত স্থানের মতো সে স্থানও তো তাঁর সৃষ্টি। সমস্ত স্থান সৃষ্টির আগে তবে তিনি কোথায় ছিলেন! তখন কি তাঁর দেহ ছিল না! তখন না থাকলে পরে হলো বুঝি! পরে হওয়া মানে আল্লাহর মাঝেও কিছু সৃষ্টি হওয়া! নাউজুবিল্লাহ! চিন্তা করলে- আদতে কত ভয়াবহ এই দেহবাদী আক্বীদা, দেখছো ভাই! অতএব ফিরে এসো ভাই। ফিরে এসো এই ভয়াবহ বিদআতী আক্বীদা থেকে। হোক এ আক্বীদা ইবন তাইমিয়া কিংবা আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের। হোক এঁদের চাইতেও প্রসিদ্ধ আর আকর্ষণীয় কারো! ঈমানের ক্ষেত্রে এঁরা তো বহু বহু দূরের! এরচে আরও বিরাট কোনো জ্ঞানসম্পন্নকেও যদি ছেড়ে দিতে হয় তো, ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপন বাপ, ভাইয়েরও কোনো ছাড় নেই। এটাই ঈমানী ইক্সাম(পরীক্ষা)।

“তারা কি মনে করেছে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই পরীক্ষা না করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে!”

(সূরা আল ‘আনকাবূতঃ২)

——–

বিঃ দ্রঃ-

বর্তমানে দেহবাদী তথা মুজাস্সিমা আক্বীদা হু হু করে ছড়াচ্ছে। আল্লাহ এই উম্মাহকে হিফাযত করুন। আমাদেরকে কবুল করুন, প্রকৃত সালাফদের আক্বীদায়। হ্যাঁ, ইমাম ত্বহাভী র. দের আক্বীদায়। তিনি বলেন, 

“وَتَعَالَى عَنِ الْحُدُودِ وَالْغَايَاتِ وَالْأَرْكَانِ وَالْأَعْضَاءِ وَالْأَدَوَاتِ، لَا تَحْوِيهِ الْجِهَاتُ السِّتُّ كَسَائِرِ الْمُبْتَدَعَاتِ

“আর আল্লাহ তা‘আলা সীমা, পরিধি, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, সাজ-সরঞ্জাম, উপাদান-উপকরণ মুক্ত এবং সকল সৃষ্ট বস্তুকে যেমন ছয়টি দিক পরিবেষ্টন করে, তা তা পারে না। অর্থাৎ তাঁর স্বত্তা যেকোনো দিক হতে মুক্ত।”

(আক্বীদাতুত ত্বহাভী, ৩৮ নং আক্বীদা)

ইমাম শাফেয়ী র. বলেন, 

المجسم كافر

“মুজাসসিম তথা আল্লাহর জন্য দেহধারী আকিদায় বিশ্বাসী কাফির।”

(ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী র., আলআশবাহ ওয়ান নাযাইর, পৃ.-৪৮৮)

শায়খ আবদুল গনি নাবলুসি র. বলেন,

ومن اعتقد أن الله جسم قاعد فوق العرش فهو كافر وإن زعم أنه مسلم

“যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, আল্লাহ দেহবান সত্তা, আরশের ওপর বসা—সে কাফির, যদিও সে নিজেকে মুসলিম মনে করে।”

(আল-ফাতহুর রব্বানি, পৃ.- ১২৪)

ইমাম হুমাম র. বলেন, 

من قال الله جسم لا كالأجسام كفر

‘যে বলবে, ”আল্লাহ তাআলা দেহবিশিষ্ট তবে অন্যান্য দেহের মত নয়” সে কুফুরী করলো।’

(শরহু ফাতহিল কাদীর, ১ম খণ্ড, ইমামদের গুণাবলী সংক্রান্ত পরিচ্ছদ)

ইমাম সিরাজুদ্দীন ইবনুল মুলাক্কিন শাফেয়ী র. (৮০৪হি.) বলেন, 

فإنه يكفر من يقول عن الله جسم لا كالأجسام 

“নিশ্চয় যে আল্লাহর ব্যাপারে বলে, তিনি দেহ বিশিষ্ট তবে অন্যান্য দেহের মত নন তবে তাকে কাফির সাব্যস্ত হবে।”

(আত তাওদ্বীহ লি শারহিল জামিয়িস সহীহ, ৩৩/২৫৬পৃ.)

আব্দুর রহমান আলজুযায়রী র. বলেন, 

تكفير المجسم، يعني أنّ المجسم كافر في المذاهب الأربعة يعني الإجماع.

“দেহবাদীদেরকে কাফির বলা, অর্থাৎ চার মাযহাব তথা ইজমা অনুযায়ী মুজাসসিমারা কাফির।”

(আলফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ, ৫/৩৯৬ পৃ.)

শেষ করছি, মাওলা আলী রা. ‘র বক্তব্য দিয়ে। মাওলা আলী রা. বলেন,

سيرجع قوم من هذه الأمة عند اقتراب الساعة كفارًا ينكرون خالقهم فيصفونه بالجسم والأعضاء

“কিয়ামত নিকটবর্তী কালে এই উম্মাহর একদল কুফরীতে ফিরে যাবে। তারা তাদের স্রষ্টাকে অস্বীকার করবে এভাবে; তাঁকে দেহ ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা আখ্যায়িত করবে।”

(ইবনুল মুআল্লিম আলকুরাশী র., নাজমুল মুহতাদী ওয়া রাজমুল মু’তাদী, পৃ.-৫৮৮)

ফা লা ক্ব

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment