মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন বিষয়ে ইমামগণের আকিদা।
সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
➖➖➖➖➖➖➖
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রজনীতে সংঘটিত অলৌকিক কাজ সমূহ :
👉 সৃষ্টির সেরা শুভ রজনী যে রজনীতে রত্নাগর্ভা মা আমিনা (রাঃ) ধারন করলেন রাসূলাল্লাহ (ﷺ) এর নূর মুবারককে পবিত্র নূরানী গর্ভে :
– এ রজনীতে শয়তানদের বনী আদমকে বিভ্রান্ত করার সকল কৌশল বন্ধ হয়ে গেল।
– ফেরশতাকুল শয়তানের সিংহাসন উল্টিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিল।
– জৈনক ফেরেশতা এটাকে সমুদ্রে চল্লিশ দিন পর্যন্ত ডুবাতে থাকল।
– ফেরশতাকুল শয়তানকে ভীষন প্রহার করল, ফলে সে আবূ কোবাইস নামক পাহাড়ে আত্নগোপন করতে বাধ্য হলো।
– শয়তান সেখানে ভীষন চিত্কার করতে থাকল। চিৎকার শুনে তার দল লশকর সকলে এসে উপস্থিত হলো।
তারা বলল, হে দলপতি! আপনি ক্রন্দন করছেন কেন?সে বলল মহাবিপদ উপস্থিত।অত্র রাত্রিতে নূরে মুহাম্মদী (ﷺ) মাতৃগর্ভে স্থিতি লাভ করেছে।
– তার দরুনই দুনিয়া ও আখিরাতের ইজ্জত,
– সে নগ্ন তলোয়ার নিয়ে আবির্ভূত হবে।
– ফলে আমার বেঁচে থাকা মুশকিল হয়ে পড়বে,
– সে পূর্ববতী ধর্মগুলো রহিত (মূলোচ্ছেদ) করে দিবে;
– মূর্তিসমূহ ধ্বংস করে দিবে;
– ব্যভিচার, শারাবখোরী ও জুয়া হারাম করে দিবে;
– জৌতিষ্কের বিদ্যা বিলুপ্ত করবে;
– হক কথা বলবে;
– ইনসাফে শ্রীবৃদ্ধী সাধন করবে;
– আসমানের তারকামালার ন্যায় মসজিদসমূহ মিটমিট করে জ্বলতে থাকবে;
– প্রতি স্থানে আল্লাহর নাম নিবে;
উক্ত উত্তম কাজগুলো তার জামায়াতকে আকড়িয়ে থাকবে, এগুলোতে আমার কোন ফন্দী চলবেনা।
[সূত্র- রাওজাতুল আহবাব]
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের ফজিলত :
👉 ইমাম হযরত হাসান বছরী (রহঃ)
[বিশিষ্ট তাবিয়ী, যিনি শতাধিক সাহাবায়ে কিরাম (রা) গণের সাক্ষাত লাভ করেছিলেন] তিনি বলেন-
قال الحسن البصرى رحمة الله عليه وَدِدْتُّ لَوْ كَانَ لِىْ مِثْلُ جَبَلِ اُحُدٍ ذَهْبًا فَاَنْفَقْتُهٗ عَلٰى قِرَاءَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: ‘আমার একান্ত ইচ্ছা হয় যে, আমার যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকতো তাহলে তা পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে ব্যয় করতাম।’সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম হযরত ইমাম শাফিয়ী (রহ) বলেন-
قَالَ اَلاِمَامُ الشَّافِعِىُّ رَحِمَهُ اللهُ مَنْ جَمَعَ لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِخْوَانًا وَهَيَّاَ طَعَامًا وَاَخْلٰى مَكَانًا وَعَمَلَ اِحْسَانًا وَصَارَ سَبَبًا لِقِرَائَتِهٖ بَعَثَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِيْنَ وَيَكُوْنُ فِىْ جَنَّاتِ النَّعِيْمِ.
অর্থ: ‘যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে :
– লোকজন একত্রিত করলো,
– খানাপিনার ব্যবস্থা করলো,
– জায়গা নির্দিষ্ট করলো এবং
– এ জন্য উত্তমভাবে তথা সুন্নাহ ভিত্তিক আমল করলো
– তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক হাশরের দিন ছিদ্দীক্ব, শহীদ ছলিহীনগণের সাথে উঠাবেন এবং উনার ঠিকানা হবে জান্নাতে নায়ীমে।’ সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
👉 হযরত জুনাইদ বাগদাদী (রহ) বলেন-
قال جنيد البغدادى رحمة الله عليه مَنْ حَضَرَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَظَّمَ قَدَرَهٗ فَقَدْ فَازَ بِالاِيْمَانِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর আয়োজনে উপস্থিত হবে এবং উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করবে সে বেহেশ্তী হবে।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
👉 বিখ্যাত ইমাম হযরত ইমাম মারূফ কারখী (রহ) বলেন-
قال المعروف الكرخى رحمة الله عليه مَنْ هَيَّأَ طَعَامًا لاَجْلِ قِرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَمَعَ اِخْوَانًا وَاَوْقَدَ سِرَاجًا وَلبِسَ جَدِيْدًا وَتَبَخَّرَ وَتَعَطَّرَ تَعْظِيْمًا لِمَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَشَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ الْفِرْقَةِ الاُوْلٰى مِنَ النَّبِيّنَ وَكَانَ فِىْ اَعْلٰى عِلِّيِّيْن.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র ঈদে মীলাদুননবী (ﷺ) উপলক্ষে খাদ্যের আয়োজন করে, অতঃপর লোকজনকে জমা করে, মজলিসে আলোর ব্যবস্থা করে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নতুন পোশাক পরিধান করে, সুঘ্রাণ ও সুগন্ধি ব্যবহার করে, আল্লাহ পাক তাকে নবী আলাইহিমুস সালামগণের প্রথম কাতারে হাশর করাবেন এবং সে জান্নাতের সুউচ্চ মাক্বামে অধিষ্ঠিত হবেন।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৮ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি (রহ) বলেন-
مَا مِنْ شَخْصٍ قَرَاَ مَوْلِدَ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلٰى مِلْحٍ اَوْ بُرٍّ اَوْشَىء اٰخَرَ مِنَ الْمَأكُوْلاتِ اِلا ظَهَرَتْ فِيْهِ الْبَركَةُ فِىْ كُلِّ شَىء. وَصَلَ اِِلَيْهِ مِنْ ذٰلِكَ الْمَأكُوْلِ فَاِنَّهٗ يَضْطَرِبُ وَلا يَسْتَقِرُّ حَتى يَغْفِرَ اللهُ لاٰكِلِهٖ.
অর্থ: যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করে লবণ, গম বা অন্য কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর ফুঁক দেয়, তাহলে এই খাদ্য দ্রব্যে অবশ্যই বরকত প্রকাশ পাবে। এভাবে যে কোন কিছুর উপরই পাঠ করুক না কেন, তাতে বরকত হবেই। উক্ত খাদ্য-দ্রব্য মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীর জন্য আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি তাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত সে ক্ষান্ত হয় না।” সুবহানাল্লাহ!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ৯ পৃষ্ঠা]
👉 হযরত ইমাম সাররী সাকতী (রহ) বলেন-
قال السر سقتى رحمة الله عليه مَنْ قَصَدَ مَوْضعًا يُقْرَأُ فِيْهِ مَوْلِِدُ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدْ قَصَدَ رَوْضَةً مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ لاَنَّهٗ مَا قَصَدَ ذٰلِكَ الْمَوْضعَ اِلا لِمُحَبَّةِ النَّبِىِّ صَلّٰى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করার জন্য স্থান নির্দিষ্ট করলো সে যেন নিজের জন্য জান্নাতে একটি বাগান নির্দিষ্ট করলো। কেননা সে তা হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক (ﷺ) উনার মুহব্বতের জন্যই করেছে। আর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসবে সে আমার সাথেই জান্নাতে থাকবে।” সুবহানাল্লাহ্!
[আন নি’মাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম ইবন কাসির (রহঃ) তার বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থে লিখেন :
ইবলিশ শয়তান জীবনে ঠিক এই সময়টাতেই খুব বেশি কেঁদেছে বা আফসোস করেছে।
أن إبليس رن أربع رنات حين لعن وحين أهبط وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم وحين أنزلت الفاتحة
১. আল্লাহ যখন তাকে অভিশপ্ত হিসেবে ঘোষণা দিলেন,
২. যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বিতাড়িত করা হল,
৩. নূর নবীজীর (ﷺ) দুনিয়াতে আগমনের সময় এবং
৪. সূরা ফাতিহা নাযিল হবার সময়
[সূত্রঃ ইবন কাসির, আল আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা – ১৬৬]
👉 হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহ) তিনি বলেন-
قَالَ سُلْطَانُ الْعَارِفِيْنَ الْاِمَامُ جَلالُ الدِّيْنِ السُّيُوْطِىُّ قَدَّسَ اللهُ سِرَّهٗ وَنَوَّرَ ضَرِيْحَهُ فِىْ كِتَابِهِ الُمُسَمّٰى الْوَسَائِلِ فِىْ شَرْحِ الشَّمَائِلِ” مَا مِنْ بَيْتٍ اَوْ مَسْجِدٍ اَوْ مَحَلَّةٍ قُرِئَ فِيْهِ مَوْلِدُ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلا حَفَّتِ الْمَلٰئِكَةُ ذٰلِكَ الْبَيْتَ اَوِ الْمَسْجِدَ اَوِ الْمَحَلًّةَ صَلَّتِ الْمَلٰئِكَةُ عَلٰى اَهْلِ ذٰلِكَ الْمَكَانِ وَعَمَّهُمُ اللهُ تَعَالٰى بِالرَّحْمَةِ وَالرِّضْوَانِ واَمَّا الْمُطَوَقُّوْنَ بِالنُّوْرِ يَعْنِىْ جِبْرَائيلَ وَمِيْكَائِيْلَ وَاِسْرَافِيْلَ وَعَزْرَائِيْلَ عَلَيْهِمُ السَّلامُ فَاِنَّهُمْ يُصَلُّوْنَ عَلٰى مَنْ كَانَ سَبَبًا لِقَرَائَةِ مَوْلِدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاِذَا مَاتَ هَوَّنَ اللهُ عَلَيْهِ جَوَابَ مُنْكِرٍ وَنَكِيْرٍ وَيَكُوْنُ فِىْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ.
অর্থ: “যে কোন ঘরে অথবা মসজিদে অথবা মহল্লায় পবিত্র মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করা হয় সেখানে অবশ্যই আল্লাহ পাকের ফেরেশতাগণ বেষ্টন করে নেন। আর তারা সে স্থানের অধিবাসীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করতে থাকেন। আর আল্লাহ পাক তাদেরকে [উক্ত লোকসকলকে] স্বীয় রহমত ও সন্তুষ্টির আওতাভুক্ত করে নেন। আর নূর দ্বারা সজ্জিত প্রধান ৪ ফেরেশতা অর্থাৎ হযরত জিবরায়ীল, মীকায়ীল, ইসরাফীল ও আযরায়ীল আলাইহিমুস সালামগণ মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনকারীগণের উপর ছলাত-সালাম পাঠ করেন। যখন তারা [উদযাপনকারীগণ] ইনতিকাল করেন তখন আল্লাহ পাক তাদের জন্য মুনকার-নাকীরের সুওয়াল-জাওয়াব সহজ করে দেন। আর তাদের অবস্থান হয় আল্লাহ পাকের সন্নিধ্যে সিদ্দিকীনদের মাক্বামে।” সুবহানাল্লাহ্!
[ওয়াসিল ফি শরহে শামায়িল, আন নিয়ামাতুল কুবরা আলাল আলাম ১০ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম কসতলানী (রহ) আরও বলেন: ”যাদের অন্তর রোগ-ব্যাধি দ্বারা পূর্ণ, তাদের কষ্ট লাঘবের জন্যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের মাস (রবিউল আউয়ালের) প্রতিটি রাতকে যাঁরা উদযাপন করেন তাঁদের প্রতি আল্লাহতা’লা দয়াপরবশ হোন!”
[আল-মাওয়া আল-লাদুন্নিয়া, ১ম খন্ড]
👉 ইমাম সুলতান মোল্লা আলী কারী (রহ)
[মুহাদ্দিস ও হানাফী ফেকাহবিদ] তিনি বলেন:
আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান, ‘নিশ্চয় তোমাদের কাছে তাশরীফ এনেছেন তোমাদের মধ্য থেকে ওই রাসূল (সূরা তাওবা, ১২৮ আয়াত)
মিলদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে আবু লাহাবের আযাব লাঘব :
👉 ইবনে জাওজী (রহ) বলেন, “যখন ঐ আবু লাহাব কাফির, যার তিরস্কারে কোরআনে সূরা নাজিল হয়েছে। মিলদুন্নাবী (ﷺ) এ আনন্দ প্রকাশের কারনে জাহান্নামে পুরস্কৃত হয়েছে। এখন উম্মতে মুহাম্মাদী (ﷺ) এর ঐ একত্ববাদী মুসলমানের কি অবস্থা? যে নবী কারীম (ﷺ) এর বেলাদাতে খুশি হয় এবং রাসুল (ﷺ) এর ভালবাসায় তার সাধ্যনুযায়ী খরচ করে!
[ইবনে জাওজী (রহ) : বয়ানুল মিলাদুন্নবী]
👉 বিখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইয়াকুব (রহ) উনার কিতাবে লিখেন-
قال النبي صلي الله عليه و سلم رايت ابا لهب في النار يصيح العطش العطش فيسقي من الماء في نقر ابهامه فقلت بم هذا فقال بعتقي ثويبة لانها ارضعتك
অর্থ : হাবীবুল্লাহ, হুজুর পাক (ﷺ) তিনি বলেন, আমি আবু লাহাবকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনে নিমজ্জিত অবস্থায় চিৎকার করে বলছে, পানি দাও ! পানি দাও !
অতঃপর তার বৃদ্ধাঙুলীর গিরা দিয়ে পানি পান করানো হচ্ছে | আমি বললাম, কি কারনে এ পানি দেয়া পাচ্ছো ? আবু লাহাব বললো, আপনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে মুক্ত করার কারনে এই ফায়দা পাচ্ছি ! কেননা তিনি আপনাকে দুগ্ধ মুবারক পান করিয়েছেন !”
[তারীখে ইয়াকুবী ১ম খন্ড ৩৬২ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম সুহাইলী (রহ) লিখেন :
وذكر السهيلي ان العباس قال لما مات ابو لهب رايته في منامي بعد حول في شر حال فقال ما لقيت بعد كم راحة الا ان العذاب يخفف عني في كل يوم اثنين وذلك ان النبي صلي الله عليه و سلم ولد يوم الاثنين وكانت ثويبة بشرت ابا لهب بمولده فاعتقها
অর্থ: হযরত ইমাম সুহাইলী (রহ) উল্লেখ করেন যে, হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আবু লাহাবের মৃত্যুর এক বছর পর তাকে আমি স্বপ্নে দেখি যে, সে অত্যন্ত দুরবস্থায় রয়েছে ! সে বললো, (হে ভাই হযরত আব্বস রা.) আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পর আমি কোন শান্তির মুখ দেখি নাই।
তবে হ্যাঁ, প্রতি সোমবার যখন আগমন করে তখন আমার থেকে সমস্ত আযাব লাঘব করা হয়, আমি শান্তিতে থাকি। হযরত আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তিনি বলেন,আবু লাহাবের এ আযাব লাঘব হয়ে শান্তিতে থাকার কারন হচ্ছে, হাবীবুল্লাহ হুজুর পাক (ﷺ) এর বিলাদত শরীফ এর দিন ছিলো সোমবার ! সেই সোমবারে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) এর বিলাদতের সুসংবাদ নিয়ে আবু লাহাবের বাঁদী সুয়াইবা (রা) তিনি আবু লাহাবকে খবরটি জানালেন তখন আবু লাহাব মিলাদুন্নবীর সংবাদ শুনে খুশি হয়ে হযরত সুয়াইবা (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) উনাকে তৎক্ষণাৎ আযাদ করে দেয় !”
★ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী শরহে বুখারী ৯ম খন্ড ১১৮ পৃষ্ঠা
★ ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী : ওমদাতুল ক্বারী লি শরহে বুখারী ২০ খন্ড ৯৫ পৃষ্ঠা !
★ ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবুল লাদুননিয়াহ ১ম খন্ড !
★ শরহুয যারকানী ১ম খন্ড ২৬০ পৃষ্ঠা !
মিলাদুন্নবীর (ﷺ) সম্মিলিতরূপ দানকারী বাদশাহ মুজাফফর (রহ) কেমন ছিলেন?
👉 ইমাম ইবনে কাসীর (রহ) লিখেন :
أحد الاجواد والسادات الكبراء والملوك الامجاد له آثار حسنة وقد عمر الجامع المظفري بسفح قاسيون وكان قدهم بسياقه الماء إليه من ماء بذيرة فمنعه المعظم من ذلك واعتل بأنه قد يمر على مقابر المسلمين بالسفوح وكان يعمل المولد الشريف في ربيع الاول ويحتفل به احتفالا هائلا وكان مع ذلك شهما شجاعا فاتكا بطلا عاقلا عالما عادلا رحمه الله وأكرم مثواه وقد صنف الشيخ أبو الخطاب ابن دحية له مجلدا في المولد النبوي سماه التنوير في مولد البشير النذير فأجازه على ذلك بألف دينار وقد طالت مدته في الملك في زمان الدولة الصلاحية وقد كان محاصر عكا وإلى هذه السنة محمودالسيرة والسريرة قال السبط حكى بعض من حضر سماط المظفر في بعض الموالد كان يمد في ذلك السماط خمسة آلاف راس مشوى وعشرة آلاف دجاجة ومائة ألف زبدية وثلاثين ألف صحن حلوى
অর্থঃ “ বাদশাহ মুযাফফর (রহ) ছিলেন একজন উদার/সহৃদয় ও প্রতাপশালী এবং মহিমান্বিত শাসক, যাঁর সকল কাজ ছিল অতি উত্তম। তিনি কাসিইউন-এর কাছে জামেয়া আল-মুযাফফরী নির্মাণ করেন।
(প্রতি) রবিউল আউয়াল মাসে তিনি জাঁকজমকের সাথে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করতেন। উপরন্তু, তিনি ছিলেন দয়ালু, সাহসী, জ্ঞানী, বিদ্বান ও ন্যায়পরায়ণ শাসক – রাহিমুহুল্লাহ ওয়া একরাম – শায়খ আবুল খাত্তাব (রহ) সুলতানের জন্যে মওলিদুন্ নববী (ﷺ) সম্পর্কে একখানি বই লিখেন এবং নাম দেন ‘আত্ তানভির ফী মওলিদ আল-বাশির আন্ নাযীর’। এ কাজের পুরস্কারস্বরূপ সুলতান তাঁকে ১০০০ দিনার দান করেন। সালাহিয়া আমল পর্যন্ত তাঁর শাসন স্থায়ী হয় এবং তিনি ’আকা’ জয় করেন। তিনি সবার শ্রদ্ধার পাত্র থেকে যান।
”আস্ সাবত্ এক ব্যক্তির কথা উদ্ধৃত করেন যিনি সুলতানের আয়োজিত মওলিদ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন; ওই ব্যক্তি বলেন: ‘অনুষ্ঠানে সুলতান ভালভাবে রান্নাকৃত ৫০০০ ছাগল, ১০,০০০ মোরগ, ১ লক্ষ বৌল-ভর্তি দুধ এবং ৩০,০০০ ট্রে মিষ্টির আয়োজন করতেন’।”
★ তারিখে ইবনে কাসীর : আল-বেদায়াহ ওয়ান নেহায়া’ ১৩তম খণ্ড, ১৭৪ পৃষ্ঠা
★ ইমাম ইবনে খাল্লিক্বান : তারীখে ইবনে খাল্লিক্বান-৪/১১৭-১১৯]
★ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী : তফসীরে জালালাইন]
স্ক্যান কপি (click here)
👉 হাফিজে হাদীস ইমাম যাহাবী (রহ) উনার কিতাবে লিখেন
ﻛﺎﻥ ﻣﺘﻮﺍﺿﻌﺎ ﺧﻴﺮﺍ ﺳﻨﻴﺎ ﻳﺤﺐ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ
ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
অর্থ: বাদশা মুজাফফরুদ্দীন (রহ)
– তিনি নম্র, ভদ্র ও
– উত্তম স্বভাবের অধিকারী ছিলেন।
– তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন।
– তিনি ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসগনকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।”
[সিয়ারু আলামীন নবালা, ২২ তম খন্ড, ৩৩৬ পৃষ্ঠা]
👉 এ মহান বাদশার প্রশংসায় উনার সমকালীন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আল্লামা ক্বাযী ইবনে খল্লিক্বান (রহ) উনার কিতাবে লিখেন-
ﻭﻛﺮﻡ ﺍﻻﺧﻼﻕ ﻛﺜﻴﺮ ﺍﻟﺘﻮﺍﺿﻊ ﺣﺴﻦ
ﺍﻟﻌﻘﻴﺪﺓ ﺳﺎﻟﻢ ﺍﻟﻄﺎﻗﺔ ﺷﺪﻳﺪ ﺍﻟﻤﻴﻞ ﺍﻟﻲ
ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭ ﺍﻟﺠﻤﺎﻋﺔ ﻻ ﻳﻨﻔﻖ ﻋﻨﺪ ﻣﻦ
ﺍﺭﺑﺎﺏ ﺍﻟﻌﻠﻮﻡ ﺳﻮﻱ ﺍﻟﻔﻘﻬﺎﺀ ﻭﺍﻟﻤﺤﺪﺛﻴﻦ
ﻭﻣﻦ ﻋﺪﺍﻫﻤﺎ ﻻ ﻳﻌﻄﻴﻪ ﺷﻴﺎ ﺍﻻ ﺗﻜﻠﻔﺎ
অর্থ: বাদশা হযরত মুজাফফরুদ্দিন ইবনে যাইনুদ্দীন (রহ) :
– তিনি প্রসংসনীয় চরিত্রের অধিকারী,
– অত্যধিক বিনয়ী ছিলেন।
– উনার আক্বীদা ও বিশ্বাস ছিল সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ।
– তিনি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন।
– তিনি আলিম উলামা, ফক্বীহ ও মুহাদ্দিসগন উনাদের পিছনে ব্যয় করা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে ব্যয় করার ব্যাপারে মিতব্যয়ী ছিলেন।”
[ইমাম ইবনে খল্লিক্বান (রহ) : ওয়াফইয়াতুল আ’ইয়ান, ৪র্থ খন্ড, ১১৯ পৃষ্ঠা]
👉 শায়খ মোহাম্মদ ইলিয়াশ (রহঃ) (ওফাত: ১২৯৯ হি) [মালেকী মযহাবের আলেম] তার কিতাবে বলেন,
– ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম পালন করা হয় হিজরী ৬ষ্ঠ শতকে।
– এটি প্রবর্তন করেন ইরবিলের ন্যায়পরায়ণ সুলতান মোযাফফর শাহ (রহ)।
– ওই সব অনুষ্ঠানে তিনি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন আলেম-উলেমা ও মহান সূফীবৃন্দসহ সকলকে আমন্ত্রণ জানাতেন।
– সে মেজবান যা খাওয়ানো হতো তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকতো ৫০০০ দুম্বার রোস্ট, ১০০০০ মোরগ ও ৩০০০০ প্লেট মিষ্টি।
– সেই সময় থেকে অদ্যাবধি মুসলমান সমাজ রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করে আসছেন।
– এর আয়োজনে তাঁরা মানুষকে খাওয়ানো, গরিব-দুঃস্থদের মাঝে দান-সদকাহ এবং অন্যান্য প্রশংসনীয় (মোস্তাহাব) আমল পালন করেন।
– এই আমল (ইসলামী আচার) তাঁদেরকে বিগত বছরগুলোতে মহা রহমত-বরকত অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
[শায়খ মোহাম্মদ ‘ইলিয়াস : তাঁর ’আল-কওল আল-মুনজিয়ী’]
তৎকালীন মক্কা মদীনায় কি মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপিত হত?
👉 প্রখ্যাত মুহাদ্দীস ইবন যাওজী (রহঃ) বলেন,
“সর্বদা মক্কা ও মদিনাবাসী, মিসর, ইয়ামেন, সিরিয়াবাসী এবং আরবের পূর্ব-পশ্চিমের সকলেই মীলাদুন্নাবী (ﷺ) অনুষ্ঠান করে থাকেন। রবিউল আউয়াল মাসের নব চন্দ্রের আগমনে আনন্দ উৎসব করেন এবং তারা সকলেই এ সমস্ত অনুষ্ঠানাদি দ্বারা মহান পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করেন”
[ইমাম যাওজী : স্বীয় কিতাব বয়ানুল মীলাদুন্নাবী, পৃঃ ৫৮]
👉 ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস (২৬৬-৩৫১ হি) বলেন-
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন সেটা হল এমন জায়গা যেখানে সোমবার দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়। (যেহেতু সোমবার মিলাদুন্নবী ﷺ)
[ইমাম মুফাসসির আল নাক্কাস : শিফা আল-ঘারাম ১:১৯৯]
👉 ইমাম আল-আযকারী (রহ) [৩য় শতাব্দীর ইমাম] মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যে বরকতময় ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন, (অধিক তাবাররুক) অনুগ্রহ পাওয়ার উদ্দেশ্যে সে ঘরে নামাজ পড়াকে আলেমেদ্বীনগণ মুস্তাহাব বলেছেন।
[ইমাম আল-আযকারী : আখবার মক্কা ২ : ১৬০]
👉 ইমাম ইবনে জুবাইর (রহ) [৫৪০-৬৪০ হি]
তার নিজের কিতাবে লিখেন-
প্রতি বছর মক্কায় মুসলমানগণ মাওলিদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন উপলক্ষে রবিউল আওয়াল মাসের প্রত্যেক সোমবার, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর জন্মস্থানে সবাই একত্রিত হন।
[ইবনে জুবাইর : কিতাবুর রিহাল : ১১৪-১১৫]
👉 ৭ম শতাব্দীর বিখ্যাত ইতিহাসবিদ আবু আল আব্বাস আল আযাফী (রহ) এবং তার পুত্র আবুল কাশিম আল আযাফী (রহ) তাদের বিখ্যাত [আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম] কিতাবে লিখেন,
ধার্মিক ইতিহাসবিদ ও বিখ্যাত পর্যটকগণ এই তথ্য সঠিকভাবে জানিয়েছেন যে, মক্কায় মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন –
– কোন কাজ নেয়া হত না (সকল কাজ বন্ধ করে) লোকজন শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর পবিত্র জন্মস্থান জিয়ারত করতে ব্যস্ত থাকত।
– উক্ত দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত এবং সবাই সেখানে একত্রিত হত।
[আবু আব্বাস আল-আযাফী : আদ-দুরুরুল মুনাজ্জাম]
👉 ৮ম শতাব্দীর বিখ্যাত পর্যটক ও ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা (রহ) তার কিতাবে বর্ননা করেন,
বনু শায়বা গোত্রের প্রধান এবং কাবা শরীফের দরজার দায়িত্বরত প্রহরীর মাধ্যমে প্রতি শুক্রবার, জুমুয়ার নামাজের শেষে এবং রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন কাবা শরীফের দরজা খুলে দেয়া হত।
মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন শাফেয়ী মাযহাবের কাজী (মক্কার সুপ্রিম বিচারক) নাজমুদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে আল ইমাম মহিউদ্দীন আত তাবারী (রহ) তিনি আওলাদে রাসুল (ﷺ) এবং মক্কার অন্যান্য সাধারণ জনগণ এর মধ্যে খাদ্যদ্রব্য বিতরণ করতেন।
[ইতিহাস বীদ ইবনে বতুতা : তার রিহলায় : খন্ড ১ : ৩০৯ এবং ৩৪৭ পৃ]
👉 ইমাম শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ) নিজের সেরা অভিজ্ঞতাগুলোর একটি বর্ণনা করেন:
মক্কা মোয়াযযমায় এক মীলাদ মাহফিলে আমি একবার অংশগ্রহণ করি। তাতে মানুষেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর প্রতি দরুদ সালাম প্রেরণ করছিলেন এবং তাঁর বেলাদতের সময় (আগে ও পরে) যে সব অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটেছিল, আর তাঁর নব্যুয়তপ্রাপ্তির আগে যে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করা হয়েছিল (যেমন – মা আমেনা হতে নূর বিচ্ছুরণ ও তাঁর দ্বারা নূর দর্শন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর বাবা আব্দুল্লাহর কপালে নূর দেখে তাঁকে এক মহিলার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া ইত্যাদি), সে সম্পর্কে তাঁরা উল্লেখ করছিলেন। হঠাৎ আমি দেখলাম এ রকম এক দল মানুষকে নূর ঘিরে রেখেছে; আমি দাবি করছি না যে আমার চর্মচক্ষে এটি আমি দেখেছি; এও দাবি করছি না যে এটি রূহানীভাবে (দিব্যদৃষ্টি মারফত) দেখেছি, আর আল্লাহতা’লা-ই এই দুইয়ের ব্যাপারে সবচেয়ে ভাল জানেন। তবে ধ্যানের মাধ্যমে এই সব আনওয়ার (জ্যোতিসমূহ) সম্পর্কে আমার মাঝে এক বাস্তবতার উদয় হয়েছে যে এগুলো সে সকল ফেরেশতার আনওয়ার যাঁরা ওই ধরনের (মীলাদের) মজলিশে অংশগ্রহণ করেন। আমি এর পাশাপাশি আল্লাহর রহমত নাযেল হতেও দেখেছি।
[ফুইয়ূয আল-হারামাইন, ৮০-৮১ পৃষ্ঠা]
👉 মুফতি এনায়েত আহমদ (রহঃ) বলেন-
“মকা ও মদীনা শারীফ এবং অধিকাংশ ইসলামি রাষ্ট্রে এ কথা প্রচলিত আছে যেপবিত্র রবিউল আউয়াল মাসে মীলাদুন্নাবী (ﷺ) এর মাহফিল অনুষ্ঠিত করে মুসলমানদেরকে একত্রিত করে মিলাদ মাহফিল শারীফ পাঠ করা হত। ইহা একটি বিরাট বরকতময় কাজ এবং রাসূল (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ মদীনা ঘুনাওয়ারায় মসজিদে নববীতে এবং মক্কা শারীফে রাসূল (ﷺ) এর জন্মস্থানে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হত।”
তিনি উক্ত কিতাবে আরও বর্ণনা করেন
“সুতরাং মুসলমানদের রাসূল (ﷺ) এর মহব্বত ভালবাসায় এ মাহফিল করা ও তাতে শরীক হওয়া উচিত।”
[তাওয়ারিখে হাবীবে ইলাহ, পৃঃ ১২]
ইমামগণের মতে মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে যেসব আমল উত্তম :
👉 শায়খুল ইসলাম ও ৩ লক্ষ হাদিসের হাফেজ ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) বলেন-
এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে [এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, ‘এই দিনে আল্লাহতা’লা ফেরাউনকে পানিতে ডুবিয়ে মূসা (আ)-কে রক্ষা করেন। তাই আমরা মহান প্রভুর দরবারে এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে রোযা রেখে থাকি।’ এই ঘটনা পরিস্ফুট করে যে আল্লাহতা’লার রহমত অবতরণের কিংবা বালা-মসীবত দূর হওয়ার কোনো বিশেষ দিনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, সেই উদ্দেশ্যে বার্ষিকী হিসেবে তা উদযাপনের সময় :
– নামায,
– রোযা,
– দান-সদকাহ বা
– কুরআন তেলাওয়াতের মতো বিভিন্ন এবাদত-বন্দেগী পালন করা শরীয়তে জায়েয। আর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মীলাদের (ধরণীতে শুভাগমন দিবসের) চেয়ে আল্লাহর বড় রহমত কী-ই বা হতে পারে? এরই আলোকে প্রত্যেকের উচিত হযরত মূসা (আ) ও ১০ই মহররমের ঘটনার (দালিলিক ভিত্তির) সাথে সঙ্গতি রেখে মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবস উদযাপন করা; তবে যাঁরা এটি বিবেচনায় নেন না, তাঁরা (রবিউল আউয়াল) মাসের যে কোনো দিন তা উদযাপনে আপত্তি করেন না; অপর দিকে কেউ কেউ বছরের যে কোনো সময় নির্দিষ্ট ক করা ব্যতীত সারা বছর উদযাপনকে কোনো প্রকার ব্যতিক্রম ছাড়াই বৈধ জেনেছেন।
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ’, ৬৪ পৃষ্ঠা]।
👉 তিনি আরো বলেন :
”আমি মওলিদের বৈধতার দলিল সুন্নাহ’র আরেকটি উৎস থেকে পেয়েছি (আশুরার হাদীস থেকে বের করা সিদ্ধান্তের বাইরে)। এই হাদীস ইমাম বায়হাকী (রহ) হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন: ‘হুযূর পাক (ﷺ) নবুয়্যত প্রাপ্তির পর নিজের নামে আকিকাহ করেন; অথচ তাঁর দাদা আবদুল মোত্তালিব তাঁরই বেলাদতের সপ্তম দিবসে তাঁর নামে আকিকাহ করেছিলেন, আর আকিকাহ দু’বার করা যায় না। অতএব, রাসূলে খোদা (ﷺ) বিশ্বজগতে আল্লাহর রহমত হিসেবে প্রেরিত হওয়ায় মহান প্রভুর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্যে এটি করেছিলেন, তাঁর উম্মতকে সম্মানিত করার জন্যেও, যেমনিভাবে তিনি নিজের ওসীলা দিয়ে দোয়া করতেন। তাই আমাদের জন্যেও এটি করা উত্তম হবে যে আমরা মীলাদুন্নবী (ﷺ) দিবসে কৃতজ্ঞতাসূচক খুশি প্রকাশার্থে
– আমাদের দ্বীনী ভাইদের সাথে সমবেত হই,
– মানুষদেরকে খাবার পরিবেশন করি এবং
– অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন করি।’ এই হাদীস পূর্বোক্ত মহানবী (ﷺ) -এর দ্বারা মীলাদ ও নবুয়্যত-প্রাপ্তির দিবস পালনার্থে সোমবার রোযা রাখার হাদীসকে সমর্থন দেয়।”
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
👉 ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:) বলেন,
ঈদে মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনে যে সব নেক বা পুণ্যময় কাজ করা যায় তাতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে :
– মহানবী (ﷺ)-এর আগমনের প্রতি (শোকরিয়াসূচক) খুশি উদযাপন ও আনুগত্য প্রদর্শন;
– পুণ্যবান ও গরিব মানুষকে সমবেত করে তাঁদেরকে খাওয়ানো;
– নেক আমল পালন ও মন্দ আমল বর্জনে উদ্বুদ্ধ করে এমন ইসলামী নাশিদ/না’ত/সেমা/কাওয়ালী/পদ্য আবৃত্তি বা পরিবেশন;
– রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর প্রশংসাসূচক (এ ধরনের) শে’র-পদ্য-সেমা আবৃত্তিকে সে সকল শ্রেষ্ঠ মাধ্যমের অন্তর্গত বলে বিবেচনা করা হয় যা দ্বারা কারো অন্তর তাঁর প্রতি মহব্বতের দিকে আকৃষ্ট হয়।
[হুসনুল মাকসাদ ফী আমলিল মওলিদ, ৬৪-৬৫ পৃষ্ঠা]
👉 হাফেয ইমাম সাখাভী (ওফাত: ৯০২ হিজরী) বলেন,
তাঁর ’ফাতাওয়া’ গ্রন্থে বলেন, মওলিদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন হিজরী ৩য় শতকের পরে আরম্ভ হয়।
– অতঃপর মুসলিম উম্মাহ সকল শহর ও নগরে দান-সদকা,
– মহানবী (ﷺ) এর মীলাদ বর্ণনার মতো নানা সওয়াবপূর্ণ বরকতময় আমল পালন করে এর উদযাপন করে আসছেন।
👉 হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (রহঃ) (বিসাল: ৯১১ হিজরী) বলেন,
– মীলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপনের উদ্দেশ্যে মানুষজনকে সমবেত করা,
– কুরআন মজীদের আয়াতে করীমা তিলাওয়াত করা,
– মহানবী (ﷺ)-এর জন্মবৃত্তান্ত আলোচনা,
– তাঁর বেলাদতের (ধরণীতে শুভাগমনের) সাথে সম্পর্কিত বিস্ময়কর অলৌকিক ঘটনাবলীর উল্লেখ করা, এবং
– এই উপলক্ষে মানুষকে খাবার পরিবেশন করা সেই সকল বিদআতে হাসানা (নতুন প্রবর্তিত কল্যাণকর ও সওয়াবের আমল) এর শ্রেণীভুক্ত যা মহানবী (ﷺ)-এর প্রতি আনুগত্য ও যথাযথ সম্মান প্রতিফলন করে।
[ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী : তাঁর লিখিত ‘হুসনুল মাকসিদ ফী ‘আমালিল মাওলিদ কিতাবে]
👉 ৯ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আলফে সানী (রহ) মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন করেছেন :
তিনি মির্জা হুসামুদ্দিন আহমেদ এর মিলাদ বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
نفس قرآں خواندن بصوتِ حسن و در قصائد نعت و منقبت خواندن چہ مضائقہ است؟ ممنوع تحریف و تغییر حروفِ قرآن است، والتزام رعایۃ مقامات نغمہ و تردید صوت بآں، بہ طریق الحان با تصفیق مناسب آن کہ در شعر نیز غیر مباح است. اگر بہ نہجے خوانند کہ تحریفِ کلمات قرآنی نشود. . . چہ مانع است؟-
অর্থঃ
– সুন্দর কন্ঠে কুর’আন তিলাওয়াত,
– নাত শারীফ পাঠে এবং
– মানকাবাত (ওলী-আল্লাহ এর প্রশংসামূলক কবিতা) পাঠে ভুল কি?
– নিষেথাজ্ঞা কেবল তখন প্রযোজ্য হবে যদি কুর’আন শারীফের শব্দ পরিবর্তন করা হবে, কুর’আন শারীফ এমনভাবে পাঠ করা যেন মনে হচ্ছে কেউ গান শুনে তালি দিয়া হচ্ছে যার অনুমতি নেই।
– যদি মিলাদ এভাবে পাঠ করা হয় যেন কুর’আন শারীফ সঠিকভাবে পাঠ করা হয়, কাসিদা গুরুত্বের সহিত সঠিকভাবে পাঠ করা হয় তাহলে এখানে ক্ষতি কি?
[সূত্রঃ মাকতুবাত শারীফ (উর্দু) ভলি ০৩, চিঠি নং ৭২, পারসিয়ান দাফতার সোম, হিসসা হাশতাম]
স্ক্যান কপি (click here)
👉 ইমাম হাফেয আবদুর রহমান ইবনে ইসমাইল (রহঃ) (ওফাত: ৯৬৫ হিজরী)
[যিনি আবু শামাহ নামে সমধিক প্রসিদ্ধ] তিনি বলেন,
বিদআতে হাসানা বা নব প্রবর্তিত উত্তম ও কল্যাণকর প্রথাগুলোর অন্যতম হলো মীলাদুন্নবী (ﷺ) এর দিন উদযাপনের জন্যে যা যা করা হয়। যেমন :
– দান-সদকাহ করা,
– অন্যান্য সওয়াবদায়ক আমল পালন এবং খুশি প্রকাশ করা।
– গরিবদের প্রতি দয়াশীল হওয়ার পাশাপাশি
– এমন একটি আমল যা মহানবী (ﷺ) এর প্রতি কারো মহব্বত, প্রশংসা ও গভীর শ্রদ্ধার ইঙ্গিত বহন করে এবং
– তাঁকে নেয়ামতস্বরূপ (আমাদের মাঝে) প্রেরণের জন্যে তা আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে।
[ইমাম হাফেয আবদুর রহমান ইবনে ইসমাইল : আল-বা’য়েস আ’লা ইনকার আল-বেদআ’ ওয়াল হাওয়াদিস’]
👉 ইমাম আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহ) তিনি বলেন-
مَنْ عَظَّمَ لَيْلَةَ مَوْلِدِهٖ بِمَاۤ اَمْكَنَهٗ مِنَ التَّعْظِيْمِ وَالاِكْرَامِ كَانَ مِنَ الْفَائزِيْنَ بِدَارِ السَّلامِ.
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার সাধ্য ও সামর্থ্য অনুযায়ী পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী (ﷺ) উদযাপন করবে, সে জান্নাতে বিরাট সফলতা লাভ করবে।” সুবহানাল্লাহ্!
[মাছাবাতা বিস সুন্নাহ ১ম খন্ড]
👉 ইমাম শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ) বলেন:
রবিউল আউয়াল মাসের বরকত (আশীর্বাদ) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বেলাদত তথা ধরণীতে শুভাগমনের কারণেই হয়েছে। এই মাসে উম্মতে মোহাম্মদী যতো বেশি দরুদ-সালাম প্রেরণ করবেন এবং গরিবদের দান-সদকাহ করবেন, ততোই তাঁরা মঙ্গল লাভ করবেন। [ফতোয়ায়ে আযীযিয়্যা, ১:১২৩]
কোন রাত সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ? মিলাদুন্নবী (ﷺ) এর রাত নাকি ক্বদরের রাত?
👉 ইমাম সেহাবউদ্দীন কাসতলানী (রহ) বলেন :
”মহানবী (ﷺ)-এর বেলাদত তথা এ ধরণীতে শুভাগমন রাতে হয়েছে বলা হলে প্রশ্ন দাঁড়ায় যে দুটো রাতের মধ্যে কোনটি বেশি মর্যাদাসম্পন্ন – কদরের রাত (যা’তে কুরআন অবতীর্ণ হয়), নাকি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ধরাধামে শুভাগমনের রাত?
হুযূর পূর নূর (ﷺ)-এর বেলাদতের রাত এ ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতর ৩টি কারণে –
১) নবী করীম (ﷺ) এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হন মওলিদের রাতে, অথচ কদরের রাত (পরবর্তীকালে) তাঁকে মন্ঞ্জুর করা হয়। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এর আবির্ভাব, তাঁকে যা মন্ঞ্জুর করা হয়েছে তার চেয়েও শ্রেয়তর। তাই মওলিদের রাত অধিকতর মর্যাদাসম্পন্ন।
২) কদরের রাত যদি ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার কারণে মর্যাদাসম্পন্ন হয়, তাহলে মওলিদের রাত মহানবী (ﷺ) এ ধরণীতে প্রেরিত হবার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফেরেশতাদের চেয়েও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আর তাই মওলিদের রাতও শ্রেষ্ঠতর।
৩) কদরের রাতের বদৌলতে উম্মতে মোহাম্মদীকে বিশিষ্টতা দেয়া হয়েছে; অথচ মওলিদের রাতের মাধ্যমে সকল সৃষ্টিকে ফযিলাহ দেয়া হয়েছে। কেননা, মহানবী (ﷺ)-কে সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রহমত করে পাঠানো হয়েছে (আল-কুরআন ২১:১০৭)। অতএব, এই রহমত সমগ্র সৃষ্টিকুলের জন্যে সার্বিক।”
[ইমাম কসতলানী (রহ) প্রণীত ‘আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ১৪৫ পৃষ্ঠা,
ইমাম যুরকানী মালেকী স্বরচিত ‘শরহে মাওয়াহিবে লাদুন্নিয়া’, ১ম খণ্ড, ২৫৫-২৫৬ পৃষ্ঠা।]
মিলাদুন্নবী (ﷺ) উদযাপন বিষয়ে ইমামগণের আকিদা
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।