অনলাইনে এক জামাতী বক্তার একটা বক্তব্য ভাইরাল হলো, সে বলেছে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম মদ পান করলেন। এরপর মাগরিবের নামাযে সূরা কাফিরুন ভুল পাঠ করেছেন। নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক। আম জনতা সেটার প্রতিবাদ করলো। সে মূহূর্তে কিছু জামাতী মওদূদী আক্বীদার অনুসারি তার ভক্ত বক্তব্যটা সঠিক প্রমাণের জন্য সূরা নিছা ৪৩ নং আয়াতের শানের নযূল তিরমিযী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফের কিতাব থেকে একটা হাদীছ দিয়ে দলীল দেয়ার চেষ্টা করলো। নাউযুবিল্লাহ। বিষয়টা যেহেতু হাদীছ শরীফের কিছু কিতাবেও আছে তাই ভবিষ্যতেও এ ফিতনা হতে পারে চিন্তু করে সাধারন মানুষ যাতে বিভ্রান্ত না হয় সেজন্য চুড়ান্ত জবাব দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করছি।
মূলত এ বিষয়ে চুড়ান্ত ফয়সালা পবিত্র কুরআন শরীফে স্পষ্ট ভাবে দেয়া আছে। যাদের নূণ্যতম ইলিম ও আকল আছে তাদের এ বিষয়ে ফিতনায় পতিত হওয়ার সুযোগ নাই। কারন মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ করেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِّنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
হে মুমিনগণ, এই যে মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য-নির্ধারক শরসমূহ এসব শয়তানের অপবিত্র কার্য বৈ তো নয়। অতএব, এগুলো থেকে বেঁচে থাক-যাতে তোমরা কল্যাণপ্রাপ্ত হও। (সূরা মায়িদা ৯০)
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
অর্থ : হে হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম! মহান আল্লাহ পাক উনার ইরাদা মুবারক হলো যে, আপনাদেরকে সকল অপবিত্রতা থেকে হিফাযত করে পবিত্র করার মতো পবিত্র করেই সৃষ্টি মুবারক করা। (সূরা আহযাব ৩৩)
উক্ত আয়াত শরীফের তাফসীরে পবিত্র হাদীছ শরীফে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
عن حضرة بن عمر الفاروق الاعظم عليه السلام قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا واهل بيتى مطهرون من الذنوب
অর্থ : হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি এবং আমার পবিত্রতম আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা সকলেই সকল অপবিত্রতা থেকে পবিত্র ।” সুবহানাল্লাহ (কিতাবু আমালি ১/১৯৮, দররুল মানছূর ১২/৪৩, রূহুল মায়ানী ১১/১৯৪, ফাতহুল কাদীর লি শাওকানী ২/৪১৩, মা’য়রিফাত ওয়াত তারিখ ১/৪১০)
অর্থাৎ আহলে বাইত যারা উনাদের আল্লাহ পাক পবিত্র করেই সৃষ্টি করেছেন। আর আয়াত শরীফে لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ দিয়ে সকল অপবিত্রতা থেকে আহলে বাইত শরীফগন মুক্ত বরং উনারা পূত পবিত্র সে ঘোষনাই আল্লাহ পাক দিয়ে দিয়েছেন।
সূরা মা’য়িদার ৯০ নং আয়াত শরীফে আমরা জানতে পারলাম মদ হচ্ছে رِجْسٌ অপবিত্র জিনিস। আর সূরা আহযাব ৩৩ নং আয়াত থেকে জানতে পারলাম সম্মানিত আহলে বাইত শরীফগন পবিত্র। সকল لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ অপবিত্রতা থেকে আল্লাহ পাক উনাদের হেফাজত রেখেছেন।
তাহলে আপনারাই বলুন আহলে বাইত শরীফের সদস্য খলীফাতু মুসলিমিন হযরত আলী আলাইহিস সালাম কি করে অপবিত্র মদ স্পর্শ করতে পারেন? এধরনের আক্বীদাতো পবিত্র কুরআন শরীফের হুকুমের বিপরীত যা স্পষ্ট ঈমানহানীর কারন। যাদের আল্লাহ পাক পবিত্র রেখেছেন তাদের অপবিত্র কাজের অপবাদ দিলে ঈমান থাকবে কি?
হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তিনি আহলে বাইতঃ
حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ نُمَيْرٍ، – وَاللَّفْظُ لأَبِي بَكْرٍ – قَالاَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ، عَنْ زَكَرِيَّاءَ، عَنْ مُصْعَبِ بْنِ شَيْبَةَ، عَنْ صَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ، قَالَتْ قَالَتْ عَائِشَةُ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ { إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا}
হযরত উম্মুল মু’মিনিন আয়িশাহ্ সিদ্দীকা আলাইহাস সালাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্ ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকালে বের হলেন। উনার পরনে ছিল কালো নকশী দ্বারা আবৃত একটি পশমী চাদর। হযরত হাসান ইবনু ‘আলী আলাইহিস সালাম এলেন, তিনি তাঁকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। হযরত হুসায়ন ইবনু ‘আলী আলাইহিস সালাম এলেন, তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। হযরত ফাতিমা আলাইহাস সালাম এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর হযরত ‘আলী আলাইহিস সালাম এলেন উনাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপরে বললেন, হে আহলে বায়ত! আল্লাহ পাক চান আপনাদের থেকে অপবিত্রতা দূরে রেখে আপনাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে। । (সহিহ মুসলিম ৬১৫৫)
সকল অপবিত্রতা থেকে কতটুকু উনারা পবিত্র তা নিম্নের ঘটনা থেকে বোঝা যায়, আমিরুল মু’মিনিন, খলীফাতুল মুসলিমিন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম ইরশাদ মুবারক করেন,
وعن علي رضي الله عنه : لو وقعت قطرةٌ منها في بئر فبُنيت في مكانها مَنارةٌ لم أؤذّنْ عليها ولو وقعت في بحر ثم جَفَّ فنبت فيه الكلأُ لم أَرْعَه
“যদি মদের এক ফোঁটা কোনো কুপে পড়ে যায়, অতঃপর সেই জায়গায় (কুপের উপরে) মিনার নির্মাণ করা হয়, তবে সেই মিনারে দাঁড়িয়ে আমি আজান দিব না, আর যদি নদীতে মদের ফোঁটা পড়ে, অতঃপর নদী শুকিয়ে গিয়ে সেখানে ঘাস জন্মায়, তবে সে ঘাস আমার পশুদেরও খাওয়াব না।” (তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১/৫০৬, তাফসীরে কাশশাফ, ২য় পারা, সূরা বাকারা,২১৯ নং আয়াত; তাফসীরে আবি সাউদ ১/২৭৫)
এ থেকে বোঝা গেলো মদ পানের মত অপবিত্র একটা বিষয়ের সাথে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে সম্পৃক্ত করা বিরাট মূর্খতা এবং ঈমান হারানোর কারন। (চলবে….)