প্রকৃতপক্ষে মদ হারাম হওয়ার প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সহীহ হাদীছ শরীফ :
পূর্বের আলোচনায় আমরা সূরা নিছার ৪৩ নং আয়াত শরীফের শানে নযূল দেখেছি (https://bit.ly/2ErNBQ2 )। সে বর্ণনায় প্রমাণ হয়েছে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে মদপান করে নামায পড়ার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নেই।
আজকে আমরা একটি বর্ণনা দেখবো। আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম এর বর্ণনায় এসেছে, মদ যাতে নিষিদ্ধ হয় এ বিষয়ে তিনি আল্লাহ পাকের নিকট দোয়া করেন। যা হাদীছ শরীফে উল্লেখ আছে,
حَدَّثَنَا عَبَّادُ بْنُ مُوسَى الْخُتَّلِيُّ، أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ، – يَعْنِي ابْنَ جَعْفَرٍ – عَنْ إِسْرَائِيلَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ لَمَّا نَزَلَ تَحْرِيمُ الْخَمْرِ قَالَ عُمَرُ اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِي الْخَمْرِ بَيَانًا شِفَاءً فَنَزَلَتِ الآيَةُ الَّتِي فِي الْبَقَرَةِ { يَسْأَلُونَكَ عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ قُلْ فِيهِمَا إِثْمٌ كَبِيرٌ } الآيَةَ قَالَ فَدُعِيَ عُمَرُ فَقُرِئَتْ عَلَيْهِ قَالَ اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِي الْخَمْرِ بَيَانًا شِفَاءً فَنَزَلَتِ الآيَةُ الَّتِي فِي النِّسَاءِ { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَقْرَبُوا الصَّلاَةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى } فَكَانَ مُنَادِي رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ يُنَادِي أَلاَ لاَ يَقْرَبَنَّ الصَّلاَةَ سَكْرَانُ فَدُعِيَ عُمَرُ فَقُرِئَتْ عَلَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ بَيِّنْ لَنَا فِي الْخَمْرِ بَيَانًا شِفَاءً فَنَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ { فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ } قَالَ عُمَرُ انْتَهَيْنَا .
আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মদ পান হারাম হওয়া সম্পর্কিত আদেশ তখনও অবতীর্ণ হয়নি। আমি বললাম, হে আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য মদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে দিন। অতঃপর সূরাহ আল-বাক্বারাহর (২১৯ নং) আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “(হে রাসূল)! তারা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। আপনি বলুন, উভয়ের মধ্যে বড় বড় পাপের উপাদান আছে, যদিও এতে লোকদের জন্য কিছু উপকারিতাও আছে। কিন্তু উভয় কাজের পাপ ও অকল্যাণের পরিমাণ উপকারিতার চেয়ে অনেক বেশি।” অতঃপর আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনাকে ডাকা হলো এবং উনাকে এ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহ পাক! মদের ব্যাপারে আমাদের সুস্পষ্টভাবে বলে দিন। অতঃপর সূরাহ আন-নিসার (৪৩ নং) আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মাতাল অবস্থায় সলাতের কাছেও যাবে না; সলাত তখন পড়বে যখন তোমরা বুঝতে পারো তোমরা কি পড়ছো।” এরপর হতে যখন সলাতের জামা‘আত প্রস্তুত হতো, হাবীবুল্লাহ হুযুর পাক ছল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একজন ঘোষক ঘোষণা করতেন, সাবধান! মাতাল অবস্থায় সলাতের কাছেও আসবে না। আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম কে ডেকে এনে এ আয়াত পড়ে শুনানো হলো। তিনি আবার দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ পাক! মদের বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলে দিন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলোঃ “হে ঈমানদারগণ! মদ, জুয়া, আস্তানা ও পাশা এসবই নাপাক, শয়তানী কাজ। তোমরা এসব থেকে দূরে থাকো” (সূরাহ আল-মায়িদাহঃ ৯০-৯১)। ‘আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম বলেন, আমরা এসব কাজ বর্জন করলাম। (মুসনাদে আহমদ ১/৫৩: ৩৭৮, আবু দাঊদ ৩৬৭০; তিরমিযী ৩০৪৯, তাফসীরের তাবারী ৮/৬৫৭)
আলবানী হাদীছ শরীফটি সহীহ বলেছে।
হযরত আবু মায়সারাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وقال أبو ميسرة: نزلت بسبب عمر بن الخطاب
মদ নিষিদ্ধের আয়াত নাজিল হয়েছিল আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম এর কারণে (তাফসীরে কুরতুবী, মায়েদাহ ৯০ নং আয়াত শরীফ)
সূতরাং প্রমাণ হলো সূরা নিছা ৪৩ নং আয়াত শরীফ ছাড়াও মদ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞার ৩ টি আয়াত শরীফই আমীরুল মু’মিনিন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব আলাইহিস সালাম উনার দোয়ার মাধ্যমে নাযিল হয়েছে। এ বর্ণনাই সহীহ। বাতিল ফির্কার লোকেরা আবু দাউদ শরীফের যে বর্ণনা দিয়ে আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনাকে দোষারোপ করে সে বর্ণনার আগের বর্ণনাই উপরোক্ত হাদীছ শরীফ। বাতিল ফির্কারা তাদের বিদ্বেষ অনুযায়ী বির্তকিত ও অগ্রহনযোগ্য বর্ণণাটি দিয়ে দলীল দিলো অথচ সহীহ বর্ণনাটি এড়িয়ে গেলো। এ থেকেই তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্টই বোঝা যায়। (চলবে…)