১. কোরআন নাযিলের মাস:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِیْۤ اُنْزِلَ فِیْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الْهُدٰی وَ الْفُرْقَانِ
রমযান মাস, যাতে অবতীর্ণ হয়েছে কোরআন, মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে।(সূরা বাকারা: ১৮৫)
২. মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম মাস: আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,
مَا أَتَى عَلَى الْمُسْلِمِينَ شَهْرٌ خَيْرٌ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَلَا أَتَى عَلَى الْمُنَافِقِينَ شَهْرٌ شَرٌّ لَهُمْ مِنْ رَمَضَانَ، وَذَلِكَ لِمَا يُعِدُّ الْمُؤْمِنُونَ فِيهِ مِنَ الْقُوَّةِ لِلْعِبَادَةِ، وَمَا يُعِد فِيهِ الْمُنَافِقُونَ مِنْ غَفَلَاتِ النَّاسِ وَعَوْرَاتِهِمْ، هُوَ غنْم الْمُؤْمِن يَغْتَنِمُهُ الْفَاجِرُ.
আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমযানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমযান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনগণ এ মাসে (গোটা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনীমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ। (মুসনাদে আহমাদ: ৮৩৬৮ মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৮৯৬৮ সহীহ ইবনে খুযাইমা: ১৮৮৪ তবারানী: ৯০০৪ বাইহাকী শুআবুল ঈমান: ৩৩৩৫)
৩. পাপ মোচন ও গুনাহ থেকে ক্ষমা লাভের মাস: আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন,
الصلَوَاتُ الْخَمْسُ، وَالْجُمْعَةُ إِلَى الْجُمْعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُن إِذَا اجْتَنبَ الْكَبَائِر.
পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমযান থেকে আরেক রমযান মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহসমূহকে মুছে দেয় যদি সে কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (সহীহ মুসলিম: ২৩৩)
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও দুআ কবুলের মাস:হযরত জাবির রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺইরশাদ করেছেন,
إن لله في كل يوم وليلة عتقاء من النار في شهر رمضان، وإن لكل مسلم دعوة يدعو بها فيستجاب له
রমযান মাসের প্রতিটি দিবস ও রজনীতে আল্লাহ তাআলা অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রত্যেক মুসলিমের একটি দুআ, যা সে করে, কবুল করা হয়।(মুসনাদে বায্যার: ৩১৪১ মাযমাউয যাওয়াইদ: ১৭২১৫)
৫. শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার মাস: আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,
إِذَا كَانَ أَوَّلُ لَيْلَةٍ مِنْ شَهْرِ رَمَضَانَ ، صُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ وَمَرَدَةُ الْجِنِّ ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ فَلَمْ يُفْتَحْ مِنْهَا بَاب ، وَفُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ فَلَمْ يُغْلَقْ مِنْهَا بَاب ، وَيُنَادِي مُنَادٍ يَا بَاغِيَ الْخَيْرِ أَقْبِلْ ، وَيَا بَاغِيَ الشَّرِّ أَقْصِرْ ، وَلِلَّهِ عُتَقَاءُ مِنَ النَّارِ وَذَلكَ كُلُّ لَيْلَةٍ
যখন রমযানের প্রথম রাত হয়, শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলো শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করা হয়; খোলা হয় না তার কোন দ্বার, জান্নাতের দুয়ারগুলো খুলে দেয়া হয়; বদ্ধ করা হয় না তার কোন তোরণ। এবং একজন ঘোষক ঘোষণা করে: হে পুণ্যের অন্বেষণকারী, অগ্রসর হও। হে মন্দের অন্বেষণকারী, ক্ষান্ত হও। আর আল্লাহর জন্য রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত অনেক বান্দা, এটা প্রত্যেক রাতে হয়। (তিরমিযি: ৬৮২ ইব্ন মাজাহ: ১৬৪২)
৬. জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়ার মাস:
ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদীসে এ বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। এ ছাড়া আরো হাদীসে তা আছে। যেমন, আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺইরশাদ করেছেন,
إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة، وغلقت أبواب النار، وصفدت الشياطين.
যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।(সহীহ বুখারী: ১৮৯৮ সহীহ মুসলিম: ১০৭৯ ১ মুসনাদে আহমদ : ৮৬৮৪, সুনানে দারেমী: ১৭৭৫)
৭. রহমত ও আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়ার মাস: আবু হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন,
إذا كان رمضان فتحت أبواب الرحمة
রমযান মাস শুরু হলেই রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় (সহীহ মুসলিম: ১০৭৯)
সহীহ বুখারী’র (১৮৯৯) বর্ণনায় রয়েছে, إذا دخل شهر رمضان، فتحت أبواب السماء রমযান আরম্ভ হলে আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়।
৮. আমলের সওয়াব বহুগুণ বৃদ্ধির মাস: রমযান মাসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য এই যে, এ মাস মুমিনের নেক আমলের প্রতিদান বৃদ্ধির মাস এবং আখেরাতের সওদা করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ মাসে আমলের দ্বারা অনেক বেশি মুনাফা লাভ করা যায়। যেমন, উম্মে মাকিল রাযি. হতে বর্ণিত, নবী কারীম ﷺ ইরশাদ করেছেন,
عمرة في رمضان تعدل حجة.
রমযান মাসে উমরা হজ্বের সমতুল্য। (সুনানে তিরমিযী: ৯৩৯, সুনানে আবু দাউদ: ১৯৮৬)
৯. লাইলাতুল কদরের মাস: আনাস ইবনে মালেক রাযি.বর্ণনা করেন,
دَخَلَ رَمَضَانُ، فَقَالَ رَسُولُ اللّهِ صلى الله عليه وسلم: إِن هَذَا الشهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ، وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ، مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّه، وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا مَحْرُومٌ.
রমযান মাসের আগমন ঘটলে রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবীদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬৪৪)
১০. দানশীলতার মাস: আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি.বলেন
كان رسول الله ﷺ أجود الناس بالخير، وكان أجود ما يكون في شهر رمضان.
রাসূলুল্লাহ ﷺ ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমাযানে তাঁর দানশীলতা আরো বেড়ে যেত। (সহীহ মুসলিম: ৫০)
আল্লাহ সকলকে রমযানের ফযিলত হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।