যেসব ফেসবুক মুফতি ফতুয়া দেন যে সম্মিলিতভাবে দুয়া করা বিদাত, রাসুল সাল্লাল্লাহূ আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাকি এরকম করেননি, তারা দেখুন, আজ ২৮ জুন, রমজানের আগমণে ইমাম শেখ আব্দুর রহমান আল-সুদাইসি দাঁড়িয়ে আল্লাহর দরবারে দুয়া করছেন আর সমবেত লাখ লাখ মুসুল্লী তাঁর সাথে হাত তুলে আমিন আমিন বলছেন।
সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদের সবাইকে কবুল করুণ আর রমজানের সবগুলো রোজা রাখার তৌফিক দিন, আমীন!
ইজতেমাই তথা সম্মিলিতভাবে মোনাজাতের হাদিসঃ
==============================
সাহাবি হজরত হাবিব ইবনে মাসলামা আল ফিহরি (রা.) যিনি মুস্তাজাবুদ দাওয়াত ছিলেন, তিনি সৈন্যদের অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিলেন, যুদ্ধের ডঙ্কা বেজে উঠল, যখন শত্রুর মুখোমুখি হলেন তিনি বললেন, আমি রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, কিছু মানুষ যখন কোথাও একত্র হয়ে এভাবে দোয়া করে যে, একজন দোয়া করে এবং বাকিরা আমিন আমিন বলে, তবে আল্লাহ তায়ালা তাদের দোয়া কবুল করেন।
[আল মুজামুল কাবির লিত তাবরানি, খ. ৪, পৃ. ২৬, হাদিস : ৩৫৩৬; মাজমাউজ জাওয়ায়েদ লিল হাহছামি, খ. ১০, পৃ. ১৭ হাদিস : ১৭৩৪৭, হাদিসটির সনদ সহিহ।]
দুয়ায় হাত ওঠানো
——————-
১নং হাদীস
হযরত সালমান ফার্সী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হু হতে বর্ণিত,
ان اللہ حی کریم، یستحی ان یرفع الرجل الیہ یدیہ ان یردھما صِفراً خائِبیْن۔
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালু, দাতা। যখন বান্দা তাঁর সামনে প্রার্থনার হাত প্রসারিত করে তখন তা শূন্য ফিরিয়ে দিতে তিনি লজ্জ্বাবোধ করেন।
(জামি’ তিরমিযী, ২/১৯৫)
২নং হাদীস
আবূ মুহাম্মাদ ইবনু আবি ইয়াহ্ইয়া রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন,
رایت عبد اللہ بن الزبیر و رئیٰ رجلا رافعا یدیہ قبلان یفرغ من صلاتہ، فلما فرغ منھا قال: ان رسول اللہ صلی اللہ علیہ و سلم لم یکن یرفع یدیہ حتی یفرغ من صلاتہ۔
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হু একজন নামাযীকে দেখলেন, সে নামায শেষ করার আগেই হাত তুলে দুয়া করছে। তিনি তাকে বললেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সমাপ্ত হওয়ার আগে হাত তুলে দুয়া করতেননা।
(মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯)
৩নং হাদীস
হাযরাত সালমান রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হু থেকে বর্ণিত,
قال رسول اللہ صلی اللہ علیہ وسلم: ما رفع قوم اکفھم الی اللہ عز و جل یسئلونہ شیئا الا کان حقا علی اللہ ان یضع فی ایدیھم الذی سئلوا۔
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিছু মানুষ হাত উঠিয়ে আল্লাহর কাছে কোন কিছু প্রার্থনা করে তখন অবশ্যই আল্লাহ তাদের প্রার্থিত বিষয় দান করেন।
(মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৬৯)
৪নং হাদীস
হাযরাত আবূ উমামাহ্ রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হু হতে বর্ণিত,
قیل لرسول اللہصلی اللہ علیہ و سلم، ای الدعاء اسمع؟ قال: جوف اللیل الآخر، و دبر الصلوات المکتوبات
সাহাবীগণ রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আন্হুম নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, কোন্ দুয়া বেশি কবূল হয়? নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ রাতের দুআ ও ফরয নামাযের শেষের দুআ।
(জামি’ তিরমিযী, ২/১৮৮)
উপরোক্ত চার হাদীসের মধ্যে প্রথম হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে, হাত তুলে দুয়া করলে তা কবূলের সম্ভাবনা বেশি। দ্বিতীয় হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযের পর হাত তুলে দুয়া করতেন। তৃতীয় হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, কিছু মানুষ যখন আল্লাহর দরবারে দুয়া করেন তখন তা কবূল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা থাকে। চতুর্থ হাদীস থেকে জানা যাচ্ছে যে, নামায শেষে দুয়া কবূল হয়।
ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুয়া করার বিষয়ে দু’ ধরণের প্রান্তিকতা রয়েছে। কেউ একে নামাযের অংশ মনে করেন। আর কেউ একে নাজায়িয ও বিদআত বলেন। (অথচ দুটো ধারণাই ভুল, এটা কেবল মুস্তাহাব আমল)
এখানে কতিপয় গাইরে মুকাল্লিদ (অর্থাৎ যারা মাযহাব মানেন না/আহলে হাদীস) আলিমের বক্তব্য উল্লেখ করা হলোঃ
১। হাফিয আব্দুল্লাহ রোপড়ী বলেন, ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুয়া করার যে প্রচলন রয়েছে তা সঠিক। (ফাতাওয়াতে আহলে হাদীস, ২/১৯০)
২. মিয়া নাজীর হোসাইন দেহলবী বলেন, চিন্তাশীল ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, ফরয নামাযের পর হাত তুলে দুয়া করা জায়িয ও মুস্তাহাব। যাইদ (যিনি এ দুয়াকে বিদআত বলেন) ভুল বলেন। (ফাতাওয়ানাজীরিয়্যাহ্, ১/৫৬৬)
৩. মাওলানা সানাউল্লাহ্ অমৃতসরী বলেন, কোনো কোনো রিওয়ায়াতে (বর্ণনায়) নামাযের পর হাত তুলে দুয়া করার কথা রয়েছে। (ফাতাওয়া ছানাইয়্যাহ্, ১/৫২৭)