মাযারে সিজদা করা কি শিরিক নাকি হারাম? কদম্বুচি কি শিরিক নাকি সুন্নাহঃ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

সম্মানার্থে হাতে ও কদমে চুম্বন করা সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত কিন্তু সিজদায়ে তাজমী হারাম তথা কবীরা গুনাহ তবে শিরিক নয়ঃ

Written by (Masum Billah Sunny)


এ সম্পর্কে বহু হাদিস আছে। এক কথায় বলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে হিজরি ১৪শ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ আ’লা হযরত ইমাম আহাম্মদ রেজা খান বেরলভী (রহঃ) এর লিখিত সিজদায়ে তাজিমী বইটাতে অসাধারণ লিখেছেন অগনিত হাদিসের রেফারেন্স সহ সমস্ত সুত্র সনদসহ বর্ননা করেছেন। 

Download this book →

♦ আলা হজরত শাহ আহমেদ রেযা খান বেরলভি (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) বিরচিত “হুরমতে সিজদায় তাজিম” পুস্তকখানির বাংলায় “তাজিমি সিজদাহ” নামকরণ করে প্রকাশ করা হয়েছে।



তাই এ ব্যাপারে ওনার আকিদাই আমাদের আকিদাঃ



সিজদা ২ প্রকারঃ

1) সিজদায়ে ইবাদতী

2) সিজদায়ে তাজিমী

  • SIZDAYE IBADATI ©©

® তোমরা আল্লাহর জন্য সিজদা কর এবং তাঁরই ইবাদত কর। [সাজদাহ] আন-নাজম, ৫৩/৬২

® নিশ্চয় যারা (অর্থাৎ ফেরেশতা) তোমার রবের নিকট আছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার করে না এবং তারা তাঁরই গুণগান ও মহিমা প্রকাশ করে এবং তাঁরই সম্মুখে সাজদাহবনত হয়। [সাজদাহ] আল-আরাফ, ৭/২০৬  

® আর আসমানসমূহ ও যমীনে যে প্রাণী আছে আর ফেরেশতারা আল্লাহর প্রতি সাজদাহবনত হয় আর তারা অহঙ্কার করে না। আল-নাহল, ১৬/৪৯ 

® তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে সিজদা করে যা কিছু রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা কিছু রয়েছে যমীনে, সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজী, পর্বতমালা, বৃক্ষলতা, জীবজন্তু ও মানুষের মধ্যে অনেকে? আবার অনেকের উপর শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে, আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন তার সম্মানদাতা কেউ নেই, নিশ্চয় আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন। [সাজদাহ] আল-হাজ্জ, ২২/১৮   

® আর আসমানসমূহ ও যমীনের যা কিছু আছে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় আল্লাহর প্রতি সাজদাহবনত হয় এবং তাদের ছায়াগুলিও। [সাজদাহ] আর-রাদ, ১৩/১৫ 

® আর তারকা ও বৃক্ষ উভয়ে (আল্লাহকে) সাজদাহ করে। আর-রাহমান, ৫৫/৬  

® কেবল যারা আমার আয়াতসমূহ বিশ্বাস করে, তাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের রবের প্রশংসার সহিত তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর আর তারা অহঙ্কার করে না। [সাজদাহ] আস- সাজদাহ, ৩২/১৫


  • SIZDAYE TAZIMI ©© এই সিজদা গুলো মুলত সম্মানার্থে হয়েছিল তাও আল্লাহর ইশারায় বা হুকুমে তাই একে সিজদায়ে ইবাদতী বললে তারা সালাফীরা সংগে সংগে শিরক ও কুফরে লিপ্ত হবে।




তার প্রমান আল-কুরআন থেকেই দিব কারণ যদি সিজদায়ে তাজিমী ছিল বলে না মানা হয় তবে নবীগন ও ফেরেশতাগনের উপর শিরিকের অপবাদ দেয়া হবে।


সূরা ত্বোয়া-হা 70 :-

فَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سُجَّدًا قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ هَارُونَ وَمُوسَى
70
অতঃপর যাদুকররা সেজদায় পড়ে গেল। তারা বললঃ আমরা হারুন ও মূসার পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।

সূরা ত্বোয়া -হা 116 :-

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى
116
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।

সূরা হিজর: 29 – অতঃপর (আদম আ. কে)

 যখন

 ঠিকঠাক করে নেব এবং তাতে আমার রূহ থেকে ফুক দেব, তখন তোমরা তার সামনে সেজদায় পড়ে যেয়ো।


সূরা হিজর: 30 – তখন ফেরেশতারা সবাই মিলে সেজদা করল।

সূরা হিজর: 31 – কিন্তু ইবলীস-সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত হতে স্বীকৃত হল না।

সূরা বনী ইসরাঈল: 61 – স্মরণ কর, যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদায় পড়ে গেল। কিন্তু সে বললঃ আমি কি এমন ব্যক্তিকে সেজদা করব, যাকে আপনি মাটির দ্বারা সৃষ্টি করেছেন?

সূরা ত্বোয়া-হা: 116 – যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ তোমরা আদমকে সেজদা কর, তখন ইবলীস ব্যতীত সবাই সেজদা করল। সে অমান্য করল।

সূরা কাহফ:50 – যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললামঃ আদমকে সেজদা কর, তখন সবাই সেজদা করল ইবলীস ব্যতীত। সে ছিল জিনদের একজন। সে তার পালনকর্তার আদেশ অমান্য করল। অতএব তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা জালেমদের জন্যে খুবই নিকৃষ্ট বদল।

সূরা আল আ’রাফ:11 – আর আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি। অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলছি-আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না।

সূরা আল আ’রাফ:12 – আল্লাহ বললেনঃ আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে কিসে সেজদা করতে বারণ করল? সে বললঃ আমি তার চাইতে শ্রেষ্ট। আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা।

সূরা ছোয়াদ: 75 – আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?

★ পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফে হযরত ইউসুফ (আঃ) তার পিতাকে বল্লেন- 

ذْ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَا أَبتِ إِنِّي رَأَيْتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوْكَبًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ رَأَيْتُهُمْ لِي سَاجِدِينَ 

যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি। (সূরা ইউসূফ 4) 

★ সূরা ইউসুফের অন্য আয়াত হচ্ছে – 

وَرَفَعَ أَبَوَيْهِ عَلَى الْعَرْشِ وَخَرُّواْ لَهُ سُجَّدًا وَقَالَ يَا أَبَتِ هَـذَا تَأْوِيلُ رُؤْيَايَ مِن قَبْلُ قَدْ جَعَلَهَا رَبِّي حَقًّا وَقَدْ أَحْسَنَ بَي إِذْ أَخْرَجَنِي مِنَ السِّجْنِ وَجَاء بِكُم مِّنَ الْبَدْوِ مِن بَعْدِ أَن نَّزغَ الشَّيْطَانُ بَيْنِي وَبَيْنَ إِخْوَتِي إِنَّ رَبِّي لَطِيفٌ لِّمَا يَشَاء إِنَّهُ هُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ 

এবং তিনি পিতা-মাতাকে সিংহাসনের উপর বসালেন এবং তারা সবাই তাঁর সামনে সেজদাবনত হল। তিনি বললেনঃ পিতা এ হচ্ছে আমার ইতিপূর্বেকার স্বপ্নের বর্ণনা আমার পালনকর্তা একে সত্যে পরিণত করেছেন এবং তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। আমাকে জেল থেকে বের করেছেন এবং আপনাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি করে দেয়ার পর। আমার পালনকর্তা যা চান, কৌশলে সম্পন্ন করেন। নিশ্চয় তিনি বিজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইউসূফ 100) 

★ সূরা বাকারায় রয়েছেঃ – 

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِاسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ 

এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো।

সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল।ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা আল বাক্বারাহ 34) 

★ আল্লাহপাক রাব্বুল আলামীন বলেন –

مَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা আল হাশর 7)

★ 

Hadith # 1

The Sahaba asked: O Prophet (Peace be upon him) we are more deserving of prostrating to you than the animals. The Prophet (Peace be upon him) replied: It is not allowed for anyone,“IF IT WAS ALLOWED I WOULD HAVE ASKED WOMEN TO PROSTRATE TO THEIR HUSBANDS”

Reference :

★ Sunnan Darimi, Volume No. 1, Page No. 10,

★ Sahih Ibn Hibban (4/335), 

★ Imam al-Mundhri narrated another variant of camel prostrating to Prophet and he declared the chain as “Jayyid (strong) having famous thiqa narrators” (3/35)]

♦ Hadith # 2

কাইস বিন সা’দ (রা:) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি ইয়েমেনের “হীরা” নামক এলাকায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সে এলাকার লোকেরা নিজ প্রশাসককে সিজদা করে। তখন আমি মনে মনে ভাবলাম, এ জাতীয় সিজদাহ’র উপযুক্ত একমাত্র রাসূলই (আ:) হতে পারে। অন্য কেউ নয়। তাই আমি মদীনায় এসে রাসূল (আ:) কে ঘটনাটি এবং আমার মনের ভাবটুকু জানালে তিনি বললেন: ” বলো! 
তুমি আমার ইন্তিকালের পর আমার কবরের পাশ দিয়ে গেলে আমার কবরটিকে সিজদাহ করবে কি? আমি বললাম: না, তিনি বললেন: তাহলে এখনও করোনা। আমি যদি কাউকে কারোর জন্য সিজদাহ করতে আদেশ করতাম তাহলে মহিলাদেরকে নিজ স্বামীদের জন্য সিজদাহ করতে আদেশ করতাম। কারণ, আল্লাহ্‌ তা’আলা পুরুষদেরকে নিজ স্ত্রীদের উপর প্রচুর অধিকার দিয়েছেন “।

 (আবু দাউদ, হাদীস ২১৪০)

♦ Hadith # 3 

হযরত ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল হযরত আনাছ বিন মালিক (রাঃ) থেকে উল্লেখ করেছেন যে – 

আনছারিদের গ্রামে ২টি পাগল উট ছিল ,সেই পাগলা উটের অবস্থা দেখে উটের মালিক দয়াল নবীর (সঃ) দরবারে এল সমাধানের জন্য । তার কথা শুনে আল্লাহর নবী গেলেন দেখতে ,

যখন দয়াল নবী (সঃ)সেখানে পৌঁছলেন একে একে উট দুটি আল্লাহর নবীর কদমে সিজদায় পড়ে গেলেন যা দেখে উপস্থিত সাহাবারা (রাঃ) বলতে লাগলেন ইয়া রাসুলাল্লাহ (সঃ) – জানোয়ার হয়ে এগুলা সিজদা করতে পারলে আমরা কেন করবোনা।
‪‎তখন‬ রাসুল(সঃ) বলেছেন যদি আমি হুকুম দিতাম তাইলে স্ত্রীদের বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে ।

(মুসনাদে আহমদ)

♦ 

Hadith # 4

হযরত‬ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে ইমাম তিরমিজী উল্লেখ করেছেন যে প্রিয় নবী হুযুর পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ ফরমান,
যদি আমি কাউকে কারো প্রতি সিজদা করার নির্দেশ দেয়ার ইচ্ছা পোষন করতাম,তাহলে মহিলাকে নির্দেশ দিতাম নিজের স্বামীকে সিজদা দেয়ার জন্য।

(সুনানে তিরমিযি)

  • ®®® ফতোয়ায়ে আ’লা হযরত (রহঃ) ®®®

★ ইমাম আলা হযরত (রহঃ) বলেছেন –
আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য ইবাদতের উদ্দেশ্য সিজদা করা হলে তা নিশ্চিত ও সর্বসম্মতভাবে ঘৃন্য শিরক ও সুস্পষ্ট কুফর। আর সিজদা-ই তাহিয়্যাহ বা সম্মানার্থে সিজদা নিশ্চিতভাবে হারাম ও গুনাহ-ই কবীরা । 
তিনি তাযীমী সিজদাকে কুফর বলার ক্ষেত্রে মতবিরোধ রয়েছে বলেছেন। 
(আয্ যুবদাতুয্ যাকিয়্যাহ পৃষ্ঠা 7 )
(Fatawa Rizvia,Jild22,Page423)



পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment