আমি এর আগের বহছে আরয করেছি যে আল্লাহর ওলীগণ ও তাদের মাযারসমূহ আল্লাহর নিদর্শন এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ অর্থাৎ ধর্মের নিশান সমূহের সম্মান করার জন্য কুরআনী নির্দেশ রয়েছে। وَمَنْ يُّعَظِّمْ شَعَائِرَ اللهِ فَاِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوْبِ (কেউ আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে, এ-তো তার হৃদয়ের তাকওয়া সজ্ঞাত)
এ সম্মানের বেলায় কোন শর্তারোপ করা হয়নি। এক এক দেশে এক এক ধরণের রীতি প্রচলিত আছে। যেই দেশে এবং যেই সময়ে যে ধরণের বৈধ তাযীম প্রচলিত আছে, সেই মতে করা যায়েয। তাঁদের কবরসমূহে ফুল অর্পন চাদর চড়ান ও বাতি জ্বালানো ইত্যাদির উদ্দেশ্য সম্মান প্রদর্শন, তাই এগুলো জায়েয। তাজা ফুল যেহেতু এক প্রকার জীবন আছে, সেহেতু ওটা তসবীহ তাহলীল করে। যার ফলে কবরবাসি ছওয়াব পেয়ে থাকেন অথবা তাঁর শাস্তি হ্রাস পায় এবং যিয়ারতকারীগণ এর থেকে সুঘ্রাণ লাভ করে। তাই এটা প্রত্যেক মুসলমানের কবরের উপর আর্পন করা জায়েয। এর তাসবীহের বরকতে যে কবরবাসির আযাব হ্রাস পায়, এর প্রমাণ মিশকাত শরীফের ادابالخلاءঅধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদে সেই হাদীছে রয়েছে, যেখানে বর্ণিত আছে একবার হুযুর আলাইহিস সলাম দু’কবরের পাশ দিয়ে যাবার সময় ইরশাদ ফরমান কবরবাসির আযাব হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন প্রস্রাবের ছিটা থেকে সতর্ক থকতো না এবং অপরজন পরনিন্দা করতো।
ثُمَّ اَخَذَجَرِ يْدَةً رَطْبَةً فشقَّهَا نِصْفَيْنِ ثُمَّ غَرَز فِىْ كُلِّ قَبْرٍ وَاحِدَةً قَالُوْا يَارَ سَوْلَ اللهِ لما صَنَعْت هَذَا فَقَالَ لَعَلَّهَ اَنْ يّخَفَّفَ عَنْهُمَا مَالَمْ يَيْبِسَا
অত:পর তিনি (দ:) একটি কাঁচা ডাল নিয়ে তা দু’ভাগ করে দু’কবরে গেড়ে দিলেন। সাহাবাগণ আরয করলেন-ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি এরকম কেন করলেন? তখন তিনি বললেন: যতক্ষণ পর্যন্ত এ ডাল না শুকাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ওদের আযাব কম হবে। এ হাদীছের ব্যাখ্যা প্রসংগে ইমাম নববী (রহ:) বলেন।
وَقِيْلَ اِنَّهُمَا يُسَبِّحَنِ مَادَامَ رَطَبَتَيْنِ وَاسْتَحَبَّ الْعُلَمَاءُ قِرْءَةَ الْقُرْ اَنِ عِنْدَ الْقَبْرِ لِهَذَالْحَدِيْثِ اِذْ تِلَاوَتُ الْقُرْ اَنِ اَوْلَى بِالتَّخْفِيْفِ مِنْ تَسْبِيْحِ الْجَرِيْدِ
যতক্ষণ পর্যন্ত ডাল কাঁচা থাকবে ততক্ষণ তসবীহ পাঠ করবে। এ জন্য আযাব কম হবে। এ হাদীছের উপর ভিত্তি করে উলামায়ে কিরাম কবরের পার্শ্বে কুরআন পাঠ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। কেননা আযাব কমানোর বেলায় ডালের তসবীহ থেকে কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব অনেক বেশী।
আশআতুল লুমআত গ্রন্থে এ হাদীছের প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত আছে-
تمسك كنند جماعت به ايں حديث دراند اختن سبزہ وگل ريحان بر قبور
একটি জামাত এ হাদীছকে কবর সমূহে কাঁচা ফুল ও সুগন্ধি দেয়ার বৈধতার দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন। এ হাদীছের ব্যাখ্যায় মিরকাতে বর্ণিত আছে-
“বোঝা গেল যে, মাযারে ফুল দেয়া সুন্নাত”। প্রসিদ্ধ তাহতাবী আলা মারাকিল ফলাহ কিতাবের ৩৬৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
قَدْ اَفْتَى بَعْضُ الْاَئِمَّةِ مِنَ مُتَاخِّرِىْ اَصحَابِنَا بِاَنَّ مَااعْتِيْدَ مِنْ وَضَعِ الرِّيْحَانِ وَالْجَرِيْدِ سُنَّةً بِهَذَا الْحَدِيْثِ
“আমাদের উলামায়ে কিরাম এ হাদীছ থেকে ফতওয়া দিয়েছেন যে, কবরে সুগন্ধি ও ফুল অর্পনের যে রীতি আছে, তা সুন্নাত”।
উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত ইবারত সমূহ “কতেক আলিম ফতওয়া দিয়েছেন” এর ভাবার্থ জায়েয বলা নয়, বরং এর ভাবার্থ হচ্ছে কতেক আলিম একে সুন্নাত মনে করেছেন। কেননা জায়েযত সবাই বলেন, কেবল সুন্নাত বলার ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। ফতওয়ায়ে আলমগীরী কিতাবুল কারাহাত পঞ্চম খন্ড زيارت القبور শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-
وَضْعَ الْوُرَوْدِ والرِّيَاجَيْنِ عَلَى الْقَبُوْرِ حسن
“কবর সমূহের উপর ফুল ও সুগন্ধি রাখা উত্তম” । ফতওয়ায়ে শামীর زيارت القبور শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখ আছে-
وَيُوْحَذُ مِنْ ذَالِكَ وَمِنَ الْحَدِيْثِ نَدْبُ وَضْعِ ذَالِكَ لْاِتْبَاعِ وَيُقَاسُ عَلَيْهِ مَااعْتِيْدَ فِىْ زَمَانِنَا مِنْ وَضْعِ اَغْصَانِ الْاَسِ وَنَحْوِهِ
এ হাদীছ ও অন্যান্য হাদীছ থেকে ওই সমস্ত জিনিস কবরের উপরে রাখাটা মুস্তাহাব বোঝা যায় এবং এ সুবাদে কবরের উপর খেজুর গাছের ডাল ইত্যাদি দেওয়াটা, যা আমাদের যুগে প্রচলিত আছে, তা মুস্তাহাব বলা যাবে। একই জায়গায় শামীতে আরও উল্লেখিত আছে-
وَتَعْلِيْلُهُ بِالتَّخْفِيْفِ عَنْهُمَا مَالَمْ يَيْبِسَا اَىْ يُخَفَّفُ عَنْهُمَا بِبَرْكَةِ تَسْبِيْحِهِمَا اِذْ هُوَ اكْمَلُ مِنْ تَسْبِيْحِ الْيَابِسِ لِمَافِى الْاَخْضَرِ نَوْعُ حَيَاةٍ
শুকনা না হওয়াটাই হচ্ছে আযাব কম হওয়ার কারণ অর্থাৎ ওইসবের তাসবীহের বরকতে কবর আযাব কম হবে, কেননা কাঁচা ডালের তসবীহ শুকনা ডালের তসবীহ থেকে বেশী কার্যকর। কারণ ওটাতে এক প্রকার জীবন আছে।
উপরোক্ত হাদীছ, মুহাদ্দেছীন ও ফকীহগণের ইবারতসমূহ থেকে দুটি বিষয় জানা গেল একটি হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের কবরে সজীব বস্তু রাখা জায়েয। হুযুর আলাইহিস সালাম ওই দু-কবরের উপর ডাল পুঁতে দিয়েছিলেন, যাদের আযাব হচ্ছিল। দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে আযাব কম হওয়াটা কেবল হুযূর আলাইহিস সালামের দুআর কারণে নয় বরং এটা সজীব বস্তুর বরকতের ফল। যদি কেবল দুআয় আযাব কম হতো, তাহলে হাদীছে শুকনা হওয়ার শর্তারোপ কেন করা হলো? তাই, আজকাল আমরাও যদি ফুল ইত্যাদি অর্পন করি, তাতেও ইনশাআল্লাহ কবরবাসির উপকার হবে। সাধারণ মুসলমানদের কবর কাঁচা রাখার এটাও একটা অভিপ্রায় যে বর্ষাকালে এর উপর সবুজ ঘাস জন্মাবে এবং এর তসবীহের বরকতে কবরবাসির আযাব কম হবে। অতএব, প্রমাণিত হলো, প্রত্যেক মুসলমানের কবরে ফুল ইত্যাদি অর্পন জায়েয। মৌলভী আশরাফ আলী সাহেব ‘ইসলাহুর রুসুম’ গ্রন্থে লিখেছেন যে ফুলমূল ইত্যাদি পাপী তাপীদের কবর সমূহে অর্পন করা উচিৎ, আওলিয়া কেরামের কবরে নয়। কেননা তাঁদের মাযার সমূহে আযাব হয় না। কথা ঠিক, তবে জেনে রাখা দরকার যে, যেই আমলসমূহ পাপীদের পাপ হ্রাস করে, তা নেকবান্দাদের পদ মর্যাদা বৃদ্ধির সহায়ক করে। যেমন মসজিদের দিকে যাত্রা করলে আমাদের গুনাহ মাফ হয় আর নেকবান্দাদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ওনার যুক্তি থেকে এটাই প্রকাশ পায় যে নেকবান্দাগণ যেন মসজিদে না আসেন এবং মাগফিরাতও কামনা না করেন, কেননা তাঁরা গুনাহ থেকে পবিত্র। জনাব, ওইসব ফুলের তসবীহের বরকতে তাঁদের কবরে খোদার রহমত আরও বৃদ্ধি পায়, যেমন কুরআন তিলাওয়াতের ফলে হয়ে থাকে।
(২) আওলিয়া কিরামের কবরের উপর চাদর বা গিলাফ চাড়ানো জায়েয, কেননা এর ফলে যিয়ারতকারীদের কাছে ছাহেবে কবরের মর্যাদা প্রকাশ পায়। ফতওয়ায়ে শামীর ৫ম খন্ডে কিতাবুল কারাহিয়া اللبسশীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
ফতওয়ায়ে হুজ্জাতে আছে যে, কবরে গিলাফ চড়ানো মাকরূহ। কিন্তু আমি বলতে চাই যে, বর্তমান কালে যদি সাধারণ লোকের দৃষ্টিতে সম্মানবোধ প্রত্যাশা করা হয়, যাতে কবরবাসীর প্রতি অবজ্ঞা করা না হয় বরং উদাসীন ব্যক্তিদের মনে আদব ও ভয়ের সৃষ্টি হয়, তাহলে গিলাফ চড়ান যায়েয। কেননা আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।
ফতওয়ায়ে শামীর এ ইবারত থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহর ওলীগনের শান-মান প্রকাশ করার জন্য যে কোন বৈধ কাজ জায়েয। গিলাফ চড়ানোর গোড়ার কথা হলো যে, হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র যুগেও পবিত্র কাবা ঘরে গিলাফ ছিল। তিনি (দ:) এটা নিষেধ করেননি। শত শত বছর থেকে হুযুর আলাইহিস সালামের রওযা পাকের উপর সবুজ রং এর রেশমী চাদর চড়ানো আছে, যা খুবই মূল্যবান। আজ পর্যন্ত কেউ একে নাজায়েয বলেননি। মকামে ইব্রাহীম অর্থাৎ যেই পাথরের উপর দাঁড়িয়ে হযরত খলীল (আ:) কাবা শরীফ তৈরী করেছিলেন, সেই পাথরের উপরও গিলাফ চড়ানো আছে এবং ইমারত তৈরী করা হয়েছে। খোদার কি শান! নজদী ওহাবীরাও ওগুলোকে পূর্ববৎ রেখে দিয়েছেন। এখন আমার প্রশ্ন হলো, এগুলোর উপর কেন গিলাফ চড়ানো হলো? নিশ্চয় এসবের মর্যাদার জন্য তা করা হয়েছে। অনুরূপ আওলিয়া কিরামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য তাদের কবর সমূহের উপরও গিলাফ ইত্যাদি রাখা মুস্তাহাব। তফসীরে রূহুল বয়ানের দশ পারায় সূরা তওবার আয়াত – اِنَّمَا يَعْمُرَ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ اَمَن بِاللهِ এর প্রসংগে বর্ণিত আছে-
فَبِنَاء القّبات قُبُوْرِ الْعُلَمَاءِ وَالْاَوْ لِيَاءِ وَالصُّلْحَاءِ وَوَضْحُ السَّتُوْرِ وَالْعَمَائِمِ وَالثِّيَابِ علَ قُبُوْرِهِمْ اَمْرً جَائِز اِذَا كَانَ الْقَصْدُ بِذَالِكَ التَّعْظِيْمُ فِىْ اعينِ الْعَا مَّةِ حَتَّى لَا يَحْتَقِرَوْا صَاحِبَ هَذَا الْقَبْرِ
উলামা, আওলিয়া ও পুণ্যাত্মাদের কবরসমূহের উপর ইমারত তৈরী করা এবং গিলাফ, পাগড়ী, চাদর চড়ানো জায়েয, যদি এর দ্বারা, সাধারণ লোকের দৃষ্টিতে তাঁদের সম্মান প্রকাশ এবং লোকেরা যেন তাঁদেরকে নগন্য মনে না করে, এ উদ্দেশ্য হয়ে থাকে।
(৩) সাধারণ মুসলমানদের কবরে প্রয়োজনবোধে এবং আল্লাহর ওলীদের মাযারসমূহে তাদের শান-মান প্রকাশার্থে বাতি জ্বালানো জায়েয। যেমন প্রসিদ্ধ কিতাব হাদিকায়ে নদিয়া শরহে তরীকায়ে মুহাম্মদীয়া (মিসরী) দ্বিতীয় খন্ডের ৪২৯ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
কবরসমূহে বাতি নিয়া যাওয়া বিদআত এবং অপব্যয়। অনুরূপ ফতওয়ায়ে বযাযিয়াতেও উল্লেখিত আছে যে, এসব নির্দেশ তখনই প্রযোজ্য, যখন অনর্থক করা হবে। কিন্তু যদি কবরস্থানে মসজিদ হয় বা কবরটা রাস্তার পার্শ্বে হয় বা ওখানে কেউ বসে আছেন এমন হয়, অথবা যদি কোন ওলী বা কোন বিশিষ্ট আলিমের কবর হয়, তাহলে তাঁদের আত্মার প্রতি সম্মানের জন্য এবং জনগণের অবগতির জন্য, যাতে এটা ওলীর কবর বুঝতে পেরে ফয়েয হাসিল করতে পারে ওখানে বসে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারে, বাতি জ্বালানো জায়েয।
তাফসীরে রূহুল বয়ানে দশ পারায় সূরা তওবার আয়াত- اِنَّمَايَعْمُرُ مَسْجِدَ اللهِ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে-
অনুরূপ আওলিয়া কেরাম ও পূণ্যাত্মাদের কবরের কাছে তাঁদের শান-মানের জন্য প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো যেহেতু সঠিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, সেহেতু জায়েয এবং আওলিয়া কিরামের (মাযারের) জন্য তৈল ও মোমবাতি বা তাঁদের কবরের পার্শ্বে তাদেরই সম্মানার্থে জ্বালানো হয়। এ উদ্দেশ্যে মানত করা জায়েয। এ ব্যাপারে নিষেধ না করা উচিত।
আল্লামা নাবলুসী (রহ:) স্বরচিত ‘কাশপুন নূর আন আসহাবিল কুবুর’ পুস্তিকায় একই বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেছেন। বিবেকও তাই বলে। অর্থাৎ এসব কাজ জায়েয, যেমন আমি গম্বুজের আলোচনায় বলেছি যে ওসব আওলিয়া কিরামের মাযারের শান-শওকতের দ্বারা প্রকৃত পক্ষে ইসলামেরই শান-শওকত প্রকাশ পায়। ওয়ায়েজী আলিমের উন্নতমানের পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করা উচিত। ঈদের দিন প্রত্যেক মুসলমানের ভাল কাপড় পরিধান করা ও সুগন্ধি ইত্যাদি লাগানো সুন্নাত কেন জানেন? যাতে, তার সাথে আলিংগন করতে লোক আগ্রহান্বিত হয়। এতে বোঝা গেল, যার সাথে সাধারণ মুসলমানদের সম্পর্ক, তার উচিৎ পরিপাটি অবস্থায় থাকা। আওলিয়া কিরামের মাযারসমূহে আল্লাহর বান্দাদের যিয়ারতের স্থান । তাই ওগুলোকেও পরিপাটি অবস্থায় রাখা বাঞ্চনীয়।
আমি নজদী ওহাবীদের আমলে হজ্ব করতে গিয়েছিলাম। ওখানে গিয়ে দেখি কাবা শরীফের চারিদিকে বৃত্তাকার অনেক বিজলী বাতি জ্বলছে এবং হাতিম শরীফের দেয়ালেও আলো ছিল। ঠিক কাবা শরীফের দরজার সামনে চার চারটি আলোকবর্তিকা জ্বালানো হতো। যখন মদিনা শরীফে এলাম সেখানে রওযা পাককে কাবা শরীফ থেকেও আলোকোজ্জল দেখলাম। ওখানকার বাল্বগুলো খুবই প্রখর ও উজ্জল ছিল। মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি ও মহত্ব প্রকাশ করার জন্যই এর আয়োজন। আওলিয়া কিরামের মাযারসমূহেও অনরূপ আলোর ব্যবস্থা করলে ক্ষতি কি? আজকাল বিয়ে শাদী উপলক্ষে বাড়ীঘর আলোকসজ্জিত করা হয়ে থাকে। অনেক সময় আলোর প্রদীপও জ্বালানো হয়, যার জন্য অনেক তৈল লাগে। মাদ্রাসার সভায় আলোকসজ্জাখাতে অনেক টাকা খরচ হয়। মাত্র কয়েক বছর আগের কথা, দেওবন্দীরা মুরাদাবাদে জমিয়তে উলামার এক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল, যেখানে চোখ ঝলসানো বিজলী বাতি লাগানো হয়েছিল। আমার মনে হয় কমপক্ষে দেড়শ টাকা (তৎকালীন) বিজলীর জন্য খরচ হয়েছিল। এটা কেবল সমবেত জনতাকে খুশি করার জন্যই করা হয়েছিল। অনুরূপ ধর্মীয় সভা-সমিতিতে রংবেরংয়ের দ্বারা পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয় এবং ওয়ায়েজীনের গলায় ফুলের মালা দেয়া হয়। কই, এগুলোকেত না অপব্যয় বলা হয়, না হারাম আখ্যা দেয়া হয়। তাই উরসের সমাবেশ যেহেতু ধর্মীয় সমাবেশ, সেহেতু তথায়ও এসব কাজ জায়েয। -সূত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-