পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
মাযহাব অনুসরণ : একটি পর্যালোচনা
মুফতি মুহাম্মদ ওবাইদুল হক নঈমী
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ
وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا ﴿٥٩﴾
এরশাদ হচ্ছে
ব্যাখ্যামূলক অনুবাদ
হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর নির্দেশ মান্য করো, নির্দেশ মান্য করো রাসূলের আর তোমাদের মধ্যে যারা মতায় অধিষ্ঠিত তাদেরও (নির্দেশ মেনে চলো)। অতঃপর যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় তবে সেটাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সমীপে উপস্থাপন করো তথা কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে এর সমাধান খুঁজে বের করো (সঠিক সিদ্ধান্ত লাভের আশায়) যদি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হও। এটা উত্তম এবং এর পরিণাম সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। [সূরা নিসা : আয়াত : ৫৯]
আলোকপাত
সুন্নী মুসলিম হিসাবে আমাদের অন্তরে এই বিশ্বাস ও আক্বীদাহ রাখতে হবে যে, পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে নিবেদিত হয়ে মহান আল্লাহ তায়ালার একক ও নিরংকুশ আনুগত্যই হলো তাওহীদের মর্মকথা এবং সাথে সাথে রসূলে করীম রাউফুর রহীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর আনুগত্যও এ জন্য অত্যাবশ্যক যে, তাঁর প্রতিটি কথন, জীবনের প্রতিটি আচরণ উম্মতের নিকট শরীয়তে ইলাহীয়ার প্রতিবিম্ব হিসেবেই বিবেচিত। এমনকি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর কোন নির্দেশ বাহ্যত কুরআন মজীদের বিপরীত প্রতীয়মান হলেও সেেেত্র ব্যাখ্যা সাপেে তাঁর নির্দেশিত বিষয় তথা হাদীস শরীফই শরীয়তের দলীল হিসেবে গণ্য হবে। হযরত মা ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) এর জীবদ্দশায় হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে ২য় বিবাহের অনুমতি না দেয়া এবং হযরত খুযাইমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর স্যা দুইজন সাীর সা্েযর সমতূল্য ঘোষণা দেয়া ইত্যাদি এরই অন্তর্ভুক্ত। অতএব মুমিন দাবীদার কোন ব্যক্তি কোন গ্রহণযোগ্য ও শরয়ী কারণ ব্যতিরেকে রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নির্দেশ ও সিদ্ধান্ত অমান্য করা মূলত নিজের ঈমানকে অস্বীকার করার নামান্তর। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ
فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُوْنَ حَتّى يُحَكِّمُوْكَ فِيْمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُوْا فِىْ اَنْفُسِهِمْ حَرَجٌ مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوْا تَسْلِيْمًا ـ
অর্থ: ‘সুতরাং হে মাহবুব! আপনার প্রতিপালকের শপথ, তারা মু’মিন হবে না যতণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদের েেত্র আপনাকে বিচারক মানবে অতঃপর আপনার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে অন্তরে সংশয় রাখবে না এবং সমর্পিত চিত্তে গ্রহণ করবে না।’’
এ আয়াতে ঈমানের পূর্ণতা নয় বরং ঈমানকেই অস্বীকার করা হয়েছে। অতএব এ বিষয়ে ভিন্ন মতের কোনও অবকাশ নেই যে, মানুষের ইহ ও পরকালীন মুক্তি ও সাফল্যের জন্য আল্লাহ্তায়ালাও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)’র যথাযথ আনুগত্যের কোন বিকল্প আছে। নিঃসন্দেহে কোন বিকল্প পথ নেই।
আলোচ্য আয়াতে اولى الامر এর আনুগত্যের কথাও বলা হয়েছে। যার অর্থ ‘আদেশ দাতাগণ’, মতায় অধিষ্ঠিত ইত্যাদি। সংখ্যাগরিষ্ঠ তাফসীরকাকের মতে اولى الامر দ্বারা ‘কোরআন-সুন্নাহ’র জ্ঞানের অধিকারী ফকীহ ও মুজতাহিদগণকেই বুঝানো হয়েছে। উক্ত মতের পে যাদের অবস্থান তাদের মধ্যে হযরত জাবের বিন আবদিল্লাহ, হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস, হযরত মুজাহিদ, হযরত আতা বিন আবি রিবাহ, হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। কারো কারো মতে উক্ত اولى الامر দ্বারা মুসলিম শাসকবর্গ উদ্দেশ্য।
ইমাম আবু বকর জাস্সাস (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর মতেاولى الامر শব্দটির ব্যাপকার্থ ধরা হলে তাফসীরদ্বয়ের মাঝে আর কোন বিরোধ থাকে না। তখন অর্থ দাঁড়াবে প্রশাসনের েেত্র তোমরা প্রশাসকবর্গের এবং আহকাম ও মাসায়েলের েেত্র বিজ্ঞ আলেমগণের কথা মেনে চলো। যদি আমরা তাঁর উক্ত মতের সাথে আরেকটি কথা সংযোজন করি তাহলে اولى الامر এর ব্যাপকার্থকে সীমাবদ্ধতার পরিসরে নিয়ে আসা যায়, আর তা হলো اولى الامر দ্বারা যদি মুসলিম শাসক উদ্দিষ্ট হয় তাহলে কোন সমস্যা নেই। কারণ প্রশাসন, আহকাম ও মাসায়েলের েেত্র শাসকবর্গ সুবিজ্ঞ আলেমগণের সিদ্ধান্ত ও পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য। সুতরাং শাসকবর্গের আনুগত্য আলেমগণের আনুগত্যের নামান্তর মাত্র।
মোদ্দাকথা হলো, আলোচ্য আয়াতের আলোকে আল্লাহ্ তায়ালা ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আনুগত্য যেমন ফরজ ঠিক তেমনিভাবে সুশাসক বা কোরআন-সুন্নাহ্র যথোপযোগী ব্যাখ্যাদাতা বিজ্ঞ আলেম ও মুজতাহিদগণের আনুগত্যও অপরিহার্য, আর পরিভাষায় এরই নাম হলো তাক্বলীদ বা মাযহাব অনুসরণ। তাক্বলীদ বা কোন ইমামের মাযহাব অনুসরণের অপরিহার্যতার স্বপে উক্ত আলোচ্য আয়াত ছাড়াও পবিত্র কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য প্রত্য ও পরো প্রমাণ রয়েছে।
আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন ধর্মজ্ঞান অর্জনের নিমিত্তে প্রত্যেক দল থেকে কেন একটি উপদল বের হয় না, যেন ফিরে এসে স্বজাতিকে সতর্ক করতে পারে এবং যেন স্বজাতিরা সর্তকবাণী শ্রবণ করে সর্তক হতে পারে। [সূরা তাওবা, আয়াত : ১২৩] উক্ত আয়াতের সারমর্ম হলো উম্মতের মাঝে এমন একটি দল থাকা অপরিহার্য যারা দিবা-রাত্রি কোরআন-সুন্নাহর জ্ঞানার্জনে নিয়োজিত থাকবে এবং ইজতিহাদ বঞ্চিত মুসলমানদের মাঝে ইজতিহাদ প্রসূত জ্ঞান বিতরণ করবে সাথে সাথে সর্বসাধারণের করণীয় হলো তাঁদের প্রদর্শিত মত, পথ অনুসরণ করা এবং যাবতীয় অকল্যাণ থেকে বেঁচে থাকা। উক্ত আয়াতের হুকুম ও তাক্বলীদের মাঝে বৈপরীত্য কোথায়? মহান আল্লাহ্ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেনÑ
অর্থাৎ তোমরা না জানলে বিজ্ঞজনদের কাছে জিজ্ঞেস করো। [সূরা নাহাল, আয়াত- ৪৩] উল্লেখিত আয়াত নিঃসন্দেহে তাকলিদ বা মাযহাব অনুসরণের অপরিহার্যতা প্রমাণ করছে। আয়াতে বলা হচ্ছে জ্ঞানের দৈন্যের কারণে অনভিজ্ঞ লোকদের উচিত অভিজ্ঞ ও জ্ঞানসমুদ্রে বিচরণকারী ব্যক্তিদের দ্বারস্ত হয়ে তাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমল করা।
এভাবে পবিত্র কুরআনে তাক্বলীদ বা মাযহাব অনুসরণের স্বপে এমন অসংখ্য প্রামান্য তথ্য রয়েছে। অনুরূপ পবিত্র হাদিস শরীফে তাক্বলীদ বা মাযহাব অনুসরণের স্বপে প্রামান্য তথ্য বিদ্যমান। যেমন- হযরত হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনÑ
অর্থাৎ আমার পরে তোমরা আবু বকর ও ওমর এ দুইজনকে অনুসরণ করে যাবে। [তিরমিযী, ইবনে মাজাহ্, আহমদ] উল্লেখিত হাদীসেاقتداء শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে।
ধর্মীয় আনুগত্যের অর্থেই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেন
অর্থ- তোমরা (আমার কর্মপদ্ধতি প্রত্য করার মাধ্যমে)
আমাকে অনুসরণ করে যাও আর তোমাদের পরবর্তীরা তোমাদেরকে অনুসরণ করে যাবে। [বুখারী, মুসলিম] এভাবে সাহাবায়ে কেরামসহ সিংহভাগ পূর্ববর্তী ইসলামী মনীষীদের অসংখ্য উক্তি তাকলীদ তথা মাযহাব মানার পে প্রমাণ বহন করে।
উল্লেখ্য একজন মুকাল্লিদ (তাক্বলীদকারী) তার অনুসরণের পাত্র কোন মুজতাহিদকে আইন প্রণেতা বা শরীয়তের স্বতন্ত্র উৎস মনে করে না (যেমন আহলে হাদীস বা লা-মাযহাবীদের একটি অংশ মুকাল্লিদ সম্পর্কে তেমনটি মনে করে থাকে) বরং এই বিশ্বাসে তারা মুজতাহিদগণের অনুসরণ করে থাকে যে, কুরআন ও সুন্নাহ্ হলো ইসলামী শরিয়তের প্রধান দু’টি শাশ্বত উৎস এবং এ উৎসদ্বয়ের সুবিশাল ও বিস্তৃত জগতে সে (তাক্বলীদকারী) একজন অসহায় ও আনাড়ি পথিক মাত্র আর অন্যদিকে মুজতাহিদ হলেন সেই সমুদ্রের একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। সেেেত্র তাঁর প্রদত্ত ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তই হলো বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ এবং বাস্তব সত্যের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি মাত্র। সুতরাং মুজতাহিদগণ আইন প্রণেতা নন বরং আইনের ব্যাখ্যাদাতা। আহলে হাদীস বা লামাযহাবীদের ন্যায় যে বা যারা ইমাম আযম আবু হানীফা (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইমাম মালেক (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইমাম শাফেয়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) প্রমুখ ইমামগণকে নিজেদের সাথে তুলনা করার ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত, মূলত এহেন চিন্তাধারা তাদের স্থুলবুদ্ধি, হীন মানসিকতা এবং নগ্ন নির্লজ্জতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সুতরাং এ ধরনের ব্যক্তি বা সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
আলোচ্য আয়াতের শেষাংশ দ্বারাও অনেকে একটি অগ্রহণযোগ্য ও দুর্বল অভিমত ব্যক্ত করে থাকে। আয়াতাংশটি হলো-
فان تنازعتم فى شئ فردوه الى الله والرسول ان كنتم تؤمنون بالله واليوم الاخر
অর্থাৎ আয়াতের প্রথমাংশে বর্ণিত ‘ঈমানদার’ দ্বারা যে সকল সাধারণ ঈমানদার উদ্দেশ্য। فان تنازعتمদ্বারা ঠিক একই শ্রেণীর ঈমানদার উদ্দিষ্ট। অর্থাৎ তারা আয়াতটির এই অর্থ নেয়, ‘হে ঈমানদারগণ যদি তোমাদের মধ্যে কোন বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয় তবে সেটাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সমীপে উপস্থাপন করো তথা কুরআন ও হাদীস থেকে এর সমাধান খুঁজে বের করো যদি আল্লাহ্ ও কিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হও। এ সম্পর্কে বিজ্ঞজনদের বক্তব্য হলো আলোচ্য আয়াতের প্রথমাংশে সর্বসাধারণকে এবং শেষাংশে ইজতেহাদের যোগ্যতাসম্পন্ন ইমামগণকে বুঝানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আল্লামা আবু বকর জাস্সাস (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) আহকামুল কুর’আনে ব্যক্ত করেনÑ
অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ তায়ালাاولى الامر তথা মুজতাহিদগণকে বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো, কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে সমাধান দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘‘সাধারণ লোক’’ এবং বিজ্ঞ আলেম শ্রেণীভূক্ত নয় এমন ব্যক্তির সে যোগ্যতা নেই। কেননা এ পর্যায়ের ব্যক্তিরা বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে সমাধান দেয়ার পদ্ধতি সম্পর্কে সম্যক অবগত নয়। ‘‘লা মাযহাবীদের’’ কর্ণধার নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁনও ‘ফাতহুল বয়ান’ গ্রন্থে এ কথা অকপটে স্বীকার করেছেন- তিনি বলেন-
মূলত এখানে [فان تنازعتم দ্বারা] মুজতাহিদগণকে স্বতন্ত্রভাবে সম্বোধন করা হয়েছে।
অতএব সাধারণ মুসলমানরা মুজতাহিদগণের ইজতিহাদ প্রসূত মাসায়েল অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমেই আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর যথাযথ আনুগত্য প্রকাশ করবে।
আশা করি, পাঠক মহল ‘‘তাক্বলীদ’’ বা মাযহাব অনুসরণের অপরিহার্যতা ও প্রয়োজনীয়তা সংপ্তি প্রামাণ্য তথ্য দ্বারা বুঝতে পেরেছেন।
* তাক্বলীদ বা মাযহাব অনুসরণ সাধারণত দু’প্রকার,
১.تقليد مطلق তথা মুক্ত তাক্বলীদ
২.تقليد شخصى তথা ব্যক্তি তাক্বলীদ।
পরিভাষায়,تقليد مطلق বা মুক্ত তাক্বলীদ বলতে সকল বিষয়ে নির্দিষ্ট মুজতাহিদের পরিবর্তে বিভিন্ন মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত অনুসরণকে বুঝায়, تقليد شخصىবা ব্যক্তি তাক্বলীদ বলতে সকল বিষয়ে নির্দিষ্ট মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করাকে বুঝায়। সাহাবী ও তাবেয়ীগণের যুগে ‘‘মুক্ত তাকলীদ’’ ও ‘‘ব্যক্তি তাকলীদ’’ উভয়েরই প্রচলন ছিল। অবশ্য উভয় প্রকারের ল্য ও উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। তবে পরবর্তীতে পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেেিত উম্মাতের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞ আলেম ও ফকীহগণ। সর্বসম্মতভাবে মুক্ত তাকলীদের পরিবর্তে ব্যক্তি তাকলীদের পে রায় দিয়েছেন। কেননা তাঁরা ‘প্রবৃত্তির দাসত্ব’’ নামে এক ভয়ংকর ব্যাধি সর্বসাধারণদের মাঝে প্রত্য করেছিলেন। যে প্রবৃত্তির দাসত্বকে চরিতার্থ করার জন্য শরীয়তকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে তারা সামান্যতম কুণ্ঠিত হলো না, এ ধরণের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা যখন নিজেদের ঘৃণ্য চাহিদা পূরণে মুক্ত তাকলীদের নামে হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল প্রমাণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ঠিক এহেন মুহুর্তে মুক্ত তাক্বলীদের পরিবর্তে ব্যক্তি তাকলীদের অপরিহার্যতার পে এক বৈপ্লবিক রায় প্রদান করে, বিজ্ঞ মুজতাহিদগণ তাদের এক অনন্য দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের কবর শরীফকে রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন। আমীন। সুতরাং ব্যক্তি তাকলীদের অপরিহার্যতার ধারাবাহিকতায় আজ পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী এই চারটি বরহক্ব মাযহাব বিদ্যমান আছে।
মাযহাবগুলোর রূপকার হলেন যথাক্রমে ইমাম আযম আবু হানীফা নু’মান বিন ছাবিত (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ইমাম দারুল হিজরাহ্ হযরত মালেক বিন আনাস (রাহমাতুল্লহি আলাইহি) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদ্রিছ আশ্শাফেয়ী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)। আমাদের আক্বীদাহ হলো ইমাম চতুষ্টয়সহ সকল ছালেহ ইমাম ও মুজতাহিদ হক্বপন্থীদের অর্ন্তভূক্ত। তবে ইমামুল হারামাইন, আল্লামা শামী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) সহ বিজ্ঞজনদের অভিমত হলো বর্তমানে ছাহাবা, তাবেয়ীগণসহ এমন কোন ইমাম বা মুজতাহিদের তাকলীদ বৈধ নয় যাদের মাযহাব ও ফতোয়া পূর্ণাঙ্গ ও সুবিন্যস্তাকারে আমাদের কাছে নেই। বিশ্লেষণের নিরিখে আমরা বলতে পারি একমাত্র চার ইমামের মাযহাব ও ফতোয়া সুবিন্যস্ত গ্রন্থাবদ্ধ। সুতরাং অনিবার্য কারণবশতঃ উক্ত চার ইমাম ছাড়া অন্য কারো তাক্বলীদ সম্ভব নয়। হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী ও হাম্বলী থেকে যেকোন একটি মাযহাবের অনুসরণ করা ওয়াজিব। মাযহাব না মানা পথভ্রষ্টতা।
মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে তাকলীদের অপরিহার্যতা ও প্রয়োজনীয়তা বুঝার তাওফীক দান করুন। লামাযহাবীসহ সকল বাতিলপন্থীর মন্দ আক্বীদাহ্ থেকে আমদের ক্বলবকে পবিত্র রাখুন। কুরআন-সুন্নাহ্র নির্দেশিত সঠিক পথ ও মতে চলার মাধ্যমে দু’জাহানের সাফল্য দান করুন। আমীন, বিহুরমতি সায়্যিদিল মুরসালিন।
পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!