অধ্যায় ৫:
মানাকিবে হাসনাইনে কারিমাইন (আলাইহিমুস সালাম)
❏ হাদীস ১-৩৪:
✧ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হুসাইন (رضي الله عنه) এর গুরুত্ব।
✧আহলে বাইত হবেন জান্নাতী যুবক-যুবতীদের অবিভাবক।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি যুবকদের সর্দার।
✧প্রিয় নবী (ﷺ) নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন।
✧নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন
✧প্রিয় নবী (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের (رضي الله عنه) আকিকা করেছেন।
✧হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (ﷺ)’র সন্তান।
✧হাসান ও হোসাইন আহলে বাইত।
✧হাসান ও হোসাইনের বংশধারা প্রিয় নবী থেকে।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) পবিত্র চরিত্রের অধিকারী।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ার বাগানের ফুল।
✧যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)কে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেন।
✧হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দেহ মুবারকের সদৃশ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মত।
✧হাদীসের আলােকে হাসান ও হােসাইনের ফযিলত।
✧হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর ইমাম হাসানের প্রতি বিশেষ মুহাব্বত।
✧হুযুর (ﷺ) এ হাসানাঈনে করীমাঈনকে ফুঁক দিতেন।
✧ইমাম হাসানের প্রতি সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর ভালবাসা।
✧ইমাম হােসাইনের প্রতি ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর অকৃত্রিম ভালবাসা।
✧ইমাম হাসানের প্রতি শেরে খােদা মওলা আলী (رضي الله عنه)’র ভালবাসা।
✧হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাত।
━━━━━━━━━━━━━━━━
শাহ্ আস্ত হুসাইন, বাদশাহ্ আস্ত হুসাইন,
দ্বীন আস্ত হুসাইন, দ্বীন পানাহ্ আস্ত হুসাইন,
ছার দাদ, না দাদ দাস্ত, দার দাস্তে ইয়াজিদ,
হাক্কা কে বিনায়ে লা ইলা আস্ত হোসাইন”
“আধ্যাত্বিক জগতের সম্রাট হলেন হোসাইন,
বাদশাহ হলেন হোসাইন,
ধর্ম হলেন হোসাইন,
ধর্মের আশ্রয় দাতা হলেন হোসাইন,
দিলেন মাথা, না দিলেন হাত ইয়াযীদের হাতে,
সত্য তো ইহাই যে, লা-ইলাহার স্তম্ভ হলেন হোসাইন”
🖋গরীবে নেওয়াজ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (رحمة الله)
ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হুসাইন (رضي الله عنه) এর গুরুত্বঃ
❏ হাদীস ১:
আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে বলেছিলেন: হে আল্লাহ, আমি তাকে ভালবাসি। তুমিও তাকে ভালবাস এবং তাকে ভালোবাসো যে তাকে ভালবাসে (হাসান)।
তথ্যসূত্রঃ
●সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর ৫৯৫১
●সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ৫৯৫২
●সহিহ মুসলিম হাদিস নম্বর ৫৯৫৩
আহলে বাইত হবেন জান্নাতী যুবক-যুবতীদের অবিভাবকঃ
❏ হাদীস ২:
عن حذيفة رضي الله عنه، قال: قال رسولالله صلى الله عليه وسلم: إن هذا ملك لم ينزل الأرض قط قبل هذه الليلة استأذن ربه أن يسلم عليّ و يبشّرني بأن فاطمة سيدة نساء أهل الجنة، وأن الحسن والحسين سيدا شباب أهل الجنة
হুযাইফাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “এমন এক ফেরেশতা আছেন যিনি আজ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে নেমে আসেননি, তাঁর পালনকর্তার কাছে আমাকে সালাম এবং সুসংবাদ দেওয়ার জন্য অনুমতি চেয়েছেন যে, “ফাতেমা (عليه السلام) জান্নাতের সমস্ত নারীদের নেত্রী এবং ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হলেন জান্নাতের সকল যুবকের নেতা।”
তথ্যসূত্রঃ
●তিরমিজি, আল জামি-উস-সহীহ (৫: ৬০৬০০ # ৩৭৮১)
●নাসাই, আস-সুনান-উল-কুবরা (৫: ৮০,৯৫ # ৮২৯৮,৮৩৬৫)
●নাসাই, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (পৃষ্ঠা.৫৮,৭২ # ১৯৩,২৬০)
●আহমাদ বিন হাম্বল, আল-মুসনাদ (৫: ৩৯১)
●আহমাদ বিন হাম্বল, ফাদাইল-উস-সাহাবাহ (২: ৭৮৮ # ১৪০৬)
●ইবনে আবী শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ (৬: ৩৮৮ # ৩২২৭১)
●হাকিম, আল-মুস্তাদরাক (৩: ১৬৪ # ৪৭২১,৪৭২২)
●তাবারানী, আল-মুজাম-উল-কবির (২২: ৪০২ # ১০০৫)
●বায়হাকী, আল-ইতিকাদ (পৃষ্ঠা ৩৩২)
●মুহিব্ব তাবারি, দাখায়িরুল-উকবা (পৃষ্ঠা.২২৪)
❏ হাদীস ৩-৪:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি যুবকদের সর্দার
হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মাতা আমার কাছে রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে আমার হাজির হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। আমি বললাম, এ ক’দিন থেকে আমি তো হুযুরের খেদমতে হাজির হতে পারি নি। এতে তিনি অসন্তুষ্ট হলেন। আমি বললাম, আমাকে অনুমতি দিন, আমি এ ক্ষুণি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হবো, তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করবো ও তাঁর কাছে আবেদন করবো যে, আমার ও আমার মায়ের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন। অতঃপর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র খেদমতে হাজির হলাম এবং তাঁর সাথে মাগরিবের নামায আদায় করলাম। অতঃপর হুযুর নফল আদায় করতে করতে শেষ পর্যন্ত ইশার নামাযও আদায় করলেন। তারপর রাসূলে আকরাম (ﷺ) হুজরা শরিফের দিকে রওনা করলে আমি তাঁর পেছনে চলতে লাগলাম। তিনি আমার আওয়াজ শুনে বললেন, কে? হুযাইফা! আমি আরজ করলাম, জি- হাঁ। রাসূলে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি প্রয়োজন আছে? আল্লাহ তায়ালা তোমার ও তোমার মাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার নিকট এক্ষণি একজন ফেরেস্তা এসেছেন। এটি এমন এক ফেরেস্তা যে, ইতিপূর্বে দুনিয়াতে অবতরণ করেন নি; সে স্বীয় রবের নিকট অনুমতি প্রার্থনা করেছে যেন সে আমার ওপর সালাম পেশ করে ও আমাকে এ সুসংবাদ দেয় যে, ফাতিমা জান্নাতি রমনিদের সর্দার আর হাসান ও হোসাইন জান্নাতি যুবকদের সর্দার।
[তিরমিযি, ৫: ৬৬০, আহমদ, মুসনাদ, ৫: ৩৯১, হাকেম, মুসতাদরাক, ৩: ৪৩৯।]
ﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺳﻌﻴﺪ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺳﻴﺪﺍ ﺷﺒﺎﺏ ﺍﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ .
অর্থ: “হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) দু’জনই জান্নাতী যুবকগণের সাইয়্যিদ।” [তিরমিযী শরীফ]
❏ হাদীস ৫:
প্রিয় নবী (ﷺ) নিজেই তাঁদের নাম রেখেছেন
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত ফাতিমার ঘরে হাসানের জন্ম হলো তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) আগমন করলেন অতঃপর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হাসান। অতঃপর যখন হোসাইনের জন্ম হলো তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং সে হবে হোসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান জন্মগ্রহণ করলো তখন তখন প্রিয় নবী আগমন করলেন আর বললেন: আমাকে আমার সন্তান আমাকে দেখাও; তোমরা তার কি নাম রেখেছো? আমি বললাম, আমি তার নাম রেখেছি হারব। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন: না; বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর ইরশাদ করলেন: আমি তাদের নাম হারুন আলায়হিস সালামের সন্তান শাব্বার, শাব্বির ও মুশাব্বার-এর নামের ওপর রেখেছি। আরবি ভাষায় এ তিনটি নাম হলো- হাসান, হোসাইন ও মুহসিন।
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৩, আহমদ বিন হাম্বল, আল মুসনাদ, ১:১১৮, হা. ন. ৯৩৫।]
❏ হাদীস ৬:
নবীজি হাসান ও হোসাইনের কানে আযান দিয়েছেন
হযরত আবু রাফে (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হাসান ও হোসাইন জম্মগ্রহণ করলেন তখন রাসূলে আকরাম (ﷺ) স্বয়ং তাদের উভয়ের কানে আযান দিয়েছেন। [তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ১: ৩১৫, হা. ন-৯৩১, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ৬০।]
❏ হাদীস ৭:
প্রিয় নবী (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের (رضي الله عنه) আকিকা করেছেন
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) হাসান ও হোসাইনের পক্ষ থেকে আকিকার মধ্যে প্রত্যেকের জন্য দুটি করে দুম্বা যবেহ করেছেন। [নাসাই, হা. ন. ৪২১৯, শরহে মুয়াত্তা, ৩: ১৩০]
❏ হাদীস ৮:
হাসান ও হোসাইন প্রিয় নবী (ﷺ)’র সন্তান
হযরত ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) আমার ঘরে আগমন করলেন আর বললেন, আমার সন্তানরা কোথায়? আমি বললাম, আলী তাদেরকে সাথে নিয়ে গেছেন। নবীজি তাদের সন্ধানে বের হলেন। আর তাদেরকে পানি পান করার একটি স্থানে খেলারত অবস্থায় পেলেন। আর তাদের সম্মুখে কিছু অবশিষ্ট খেজুর দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন: আলী খেয়াল রেখো! আমার সন্তানদেরকে গরম শুরু হওয়ার আগেই ফিরিয়ে নিয়ে এসো।
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭৭৪, দুলাবি, আয যুররিয়্যাতুত তাহিরা: ১: ১০৪, হা. ন-১৯৩।]
❏ হাদীস ৮:
হাসান ও হোসাইন আহলে বাইত
হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ফাতিমা, হাসান ও হোসাইনকে একত্রিত করে তাদেরকে স্বীয় চাদরের ভেতরে ঢুকিয়ে বললেন: হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত।
[হাকেম, আল মুসতাদরাক, ৩: ১৮০, হা. ন. ৪৭০৫, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৫৩, হা. ন-২৬৬৩, তাবারি, জামেউল কুরআন ফি তাফসিরুল কুরআন, ২২: ৮, ইবনে কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আজিম ৪: ৪৮৬,]
❏ হাদীস ১০:
হাসান ও হোসাইনের বংশধারা প্রিয় নবী থেকে
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ)কে বলতে শুনেছি: কিয়ামত দিবসে আমার বংশধারা ব্যতীত সকল বংশীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে। প্রত্যেক সন্তান তার পিতার দিকে সম্পর্কিত হবে কিন্তু ফাতিমার সন্তানেরা ছাড়া। কেননা, তাদের পিতাও আমি আর তাদের বংশধারাও আমি।
[হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৪: ২২৪, তাররাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৪৪, হা. ন-২৬৩১। শাওকানি, নাইলুল আওতার, ৬: ১৩৯।]
❏ হাদীস ১১:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) সর্বোত্তম বংশের অধিকারী
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন: হে লোকেরা আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে অবহিত করবো না যারা নানা-নানীর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা চাচা ও ফুফুর দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? আমি কি তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বলবো না, যারা পিতা-মাতার দিক দিয়ে সকলের চেয়ে উত্তম? তারা হলো, হাসান ও হোসাইন। তাদের নানা আল্লাহর রাসূল, তাদের নানী খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ। তাদের মাতা আল্লাহর রাসূলের কন্যা ফাতিমা। তাদের পিতা আলী ইবনু আবি তালিব। তাদের মামা আল্লাহর রাসূলের পুত্র কাসিম এবং তাদের খালা রাসূলুল্লাহ’র কন্যাগণ যয়নব, রোকেয়া ও উম্মে কুলসুম। তাদের নানা, পিতা, মাতা, চাচা, ফুফু, মামা ও খালা সকলেই জান্নাতে থাকবে এবং এরা দুই জনও থাকবে জান্নাতে।
[তাবরাণি, আল মুজামুল কবির, ৩: ৬৬, হা. ন-২৬৮২, ইবনে আসাকির, তারিখে দামিশ্কিল কবির, ১৩: ২২৯, হায়ছমি, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, ৯: ১৮৪।]
❏ হাদীস ১২:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এর সাথে প্রিয় নবীর সাদৃশ্য
হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বক্ষ হতে মাথা মুবারক পর্যন্ত অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। আর হোসাইন (رضي الله عنه) রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র শরীর মুবারকের অবশিষ্ট নিচের অংশের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
[তিরমিযি হা. ন-৫৭৭৯, আহমদ, মুসনাদ, ১: ৯৯।]
❏ হাদীস ১৩:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) প্রিয় নবীর বৈশিষ্ট্যসমূহের ওয়ারিছ
হযরত সৈয়দা ফাতিমা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি স্বীয় পিতা রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র বেসালপূর্ব অসুস্থাবস্থায় হাসান ও হোসাইনকে তার কাছে নিয়ে আসলেন। অতঃপর তিনি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এদের দু’জনকে আপনার উত্তরাধিকার থেকে কিছু দান করুন। তিনি ইরশাদ করেন: হাসান আমার ভীতিসঞ্চারক ও নেতৃত্ব এ দুটির ওয়ারিশ; আর হোসাইন আমার ধৈর্য ও দানশীলতা এ দুটির ওয়ারিশ। [আল মুজামুল কবির, ২২: ৪২৩, আল আহাদ ওয়াল মাসানি, ১: ২৯৯।]
❏ হাদীস ১৪:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) পবিত্র চরিত্রের অধিকারী
রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র পালিত হযরত ওমর ইবনে আবু সালাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন হযরত উম্মে সালমা (رضي الله عنه)র ঘরে নবীজির উপর এ আয়াত….নাজিল হলো তখন তিনি ফাতিমা ও হাসনাইন করিমাইনকে ডাকলেন এবং তাদেরকে একটি চাদরের মধ্যে জড়িয়ে নিলেন। হযরত আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাকেও চাদরে জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। সুতরাং তাদের থেকে সকল প্রকার অপবিত্রতা দূর করো এবং তাদেরকে পূত-পবিত্র করো।
[তিরমিযি, ৫: ৩৫১, জামেউল বয়ান, ২২:৮।]
❏ হাদীস ১৫:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতি নাম সমূহের দু’টি নাম
হযরত ইমরান বিন সুলাইমান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হাসান ও হোসাইন জান্নাতিদের নামসমূহের দুটি নাম। যে দুটি নাম জাহেলি যুগে কারো নাম হিসেবে রাখা হয় নি।
[ইবনে হাজর মক্কি, আস সাওয়ায়েকুল মুহরাকা, ১৯২, ইবনে আসির, উসদুল গাবা ফি মারিফাতিস সাহাবা, ২: ২৫।]
❏ হাদীস ১৬-১৮:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ার বাগানের ফুল
হযরত আবদুর রহমান ইবনে আবু নুআম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একজন ইরাকি লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করেন, কাপড়ের উপর মশার রক্ত লাগলে তার বিধান কি? হযরত ইবনে ওমর বললেন, এর দিকে দেখো! মশার রক্তের মাসআলা জিজ্ঞাসা করছে অথচ এরাই রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র সন্তান ( হোসাইন) কে শহীদ করেছে। আর আমি রাসূলে আকরাম (ﷺ) বলতে শুনেছি: হাসান ও হোসাইন দুনিয়ায় আমার বাগানের দু’টি ফুল।
[বুখারি, হা. ন. ৫৬৪৮, তিরমিযি, হা. ন. ৩৭৭০, নাসাই হা. ন. ৮৫৩০।]
❏ “হাসান ও হােসাইন (رضي الله عنه) দুনিয়ায় আমার দু’টি ফুল।”
(সহীহ বুখারী, কিতাবু ফাযায়ীলে আসহাবে নবী, বাব মানাকিবে হাসান ওয়া হােসাইন, ২য় খন্ড, ৫৪৭ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৫৩)
ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻫﻤﺎ ﺭﻳﺤﺎﻧﻰ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ .
অর্থ: “হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত হাসান (رضي الله عنه) এবং হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) তাঁরা দু’জনেই দুনিয়াতে আমার দু’টি ফুলস্বরূপ।
[তিরমিযী শরীফ]
❏ হাদীস ১৯:
যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)কে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেনঃ
ﻋﻦ ﻳﻌﻠﻰ ﺑﻦ ﻣﺮﺓ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﻠﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺣﺴﻴﻦ ﻣﻨﻰ ﻭﺍﻧﺎ ﻣﻦ ﺣﺴﻴﻦ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﺍﺣﺐ ﺣﺴﻴﻨﺎ ﺣﺴﻴﻦ ﺳﺒﻂ ﻣﻦ ﺍﻻﺳﺒﺎﻁ .
অর্থ: “হযরত ইয়া’লা ইবনে মুররাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) আমার থেকে আর আমি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) থেকে। যে ব্যক্তি হযরত হুসাইন (رضي الله عنه)কে মুহব্বত করবে আল্লাহ পাক তাকে মুহব্বত করবেন। হযরত হুসাইন (رضي الله عنه) বংশসমূহের মধ্যে একটি বংশ। [তিরমিযী শরীফ]
❏ হাদীস ২০:
হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) দেহ মুবারকের সদৃশ স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মতঃ
ﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﺍﻟﻰ ﺍﻟﺮﺃﺱ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﺷﺒﻪ ﺍﻟﻨﺒﻴﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ .
অর্থ: “হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছেন, হযরত হাসান (رضي الله عنه) হলেন (চেহারা-আকৃতি-অবয়বে) মাথা মুবারক হতে বক্ষ মুবারক পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার সদৃশ। আর হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) হলেন বক্ষ মুবারক হতে নীচ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উনার সদৃশ। [তিরমিযী শরীফ]
❏ হাদীস ২১:
হাদীসের আলােকে হাসান ও হােসাইনের ফযিলত:
❏ হুযুর (ﷺ) এর বাণী শ্রবন করি:
“যে এই দু’জনকেই ভালবাসলাে, মূলত সে আমাকেই ভালবাসলাে এবং যে এই দু’জনের সাথে শত্রুতা পােষণ করলাে, মূলত সে আমার সাথেই শত্রুতা পােষণ করলাে।”
(ইবনে মাজাহ্, কিতাবুস সুন্নাহ্, বাবু ফি ফাযায়ীলে আসহাবে রাসূলুল্লাহ্, ১/৯৬, হাদীস- ১৪৩)
❏ হাদীস ২২:
❏ ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) কে ভালবাসা ওয়াজিব: হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন: যখন এই আয়াতে মােবারকা নাজিল হয়:
“আপনি বলুন, আমি আমার দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে তােমাদের নিকট থেকে কোন পারিশ্রমিক চাই না,
কিন্তু নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালবাসা। (সূরা শুরা ২৩)
❏ হাদীস ২৩-২৪:
❏ তখন সাহাবায়ে কিরামগণ এ আবেদন করলাে: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ)! আপনার ঐ নিকটাত্মীয়রা কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের জন্য ওয়াজিব? হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “আলীউল মুরতাদ্বা, ফাতেমাতুয যাহারা এবং তাঁদের দুই ছেলে (অর্থাৎ হযরত সায়্যিদুনা হাসান ও ইমাম হােসাইন।”
(মু’জামুর কবির, বাবুল হা, হাসান বিন আলী বিন আবি তালিব, ৩/৪৭, হাদীস- ২৬৪১)
নবীয়ে রহমত, শফিয়ে উম্মত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “কোন বান্দা পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে তার প্রাণের চেয়ে বেশি ভালবাসবে না এবং আমি তার নিজ সত্ত্বার চেয়ে বেশি প্রিয় হবাে না। এবং আমার সন্তান তার নিজের সন্তান থেকে বেশি প্রিয় হবে না। এবং আমার আহলে বাইত তার আপন পরিবারের চেয়ে বেশি প্রিয় ও ভালবাসার পাত্র হবে না।”
(শুয়াবুল ঈমান, বাবু ফি হক্কুন নবী, ২/১৭৯, হাদীস- ১৫০৫)
❏ হাদীস ২৫:
❏ হযরত সায়্যিদুনা আবু হােরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; একদা তাজেদারে রিসালাম, শাহানশাহে নবুয়ত, নবীয়ে রহমত (ﷺ) এর সাথে ইশার নামায আদায় করছিলাম। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যখন সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর পিঠ মােবারকে আরােহন করলেন। তিনি (ﷺ) সিজদা থেকে মাথা উঠালেন তখন তাদেরকে নম্রভাবে ধরে জমিনে বসিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি (ﷺ) দ্বিতীয়বার সিজদায় গেলেন তখন ইমাম হাসান ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) দ্বিতীয়বার এমনই করল, এমনকি তিনি (ﷺ) নামায পরিপূর্ণ করলেন এবং তাঁরা উভয়কে আপন রান মােবারকে বসালেন।
(মুসনদে আহমদ, আবু হােরাইরা, ৩/৫৯৩, হাদীস- ১০৬৬৪, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৫/৫১৬)
❏ হাদীস ২৬:
শৈশবকালে একবার খুতবা চলাকালীন উভয় শাহ্জাদা মসজিদে আগমন করলেন, তখন নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) খুতবা বন্ধ রেখে তাঁদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে উঠিয়ে নিজের সামনে বসালেন।
(তিরমিযী, ৫ম খন্ড, ৪২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৩৭৯৯)
❏ হাদীস ২৭:
হুযুর পুরনূর (ﷺ) এর ইমাম হাসানের প্রতি বিশেষ মুহাব্বত
হযরত সায়্যিদুনা ওরওয়াহ বিন যুবাইর (رضي الله عنه) নিজের পিতা থেকে বর্ণনা করেন: একবার ছরকারে দো’আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) ইমাম হাসান (رضي الله عنه) কে চুমু দিলেন, তাঁর ঘ্রাণ নিলেন এবং বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন ঐ সময় তিনি (ﷺ) এর পাশে এক আনছারী সাহাবী দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ওনাকে ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এর প্রতি এমন মুহাব্বত দেখে আরয করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (ﷺ) ! আমার একটি ছেলে আছে। সে এখন বালেগ হয়েছে। কিন্তু আমি তাকে কখনাে চুমু দিয়নি। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করলেন: “যদি আল্লাহ্ তাআলা তােমার অন্তর থেকে মুহাব্বত তুলে নেয়, তবে এতে আমার কি করার আছে।”
(আল মুস্তাদরাক, মিন ফাযায়ীলিল হাসান বিন আলী, ১ম খন্ড, ৪র্থ খন্ড, ১৬১ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪৮৪৬)
❏ হাদীস ২৮:
হুযুর (ﷺ) এ হাসানাঈনে করীমাঈনকে ফুঁক দিতেন:
হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সম (ﷺ) হযরত সয়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) ও ইমাম হােসাইন (عليه السلام) কে কলেমাতে তাউয (নিরাপত্তার বাক্য সমূহ) সহকারে ফুক দিতেন। তিনি (ﷺ) ইরশাদ করেন: “তােমাদের সম্মানীত দাদাজান অর্থাৎ হযরত ইসহাক (عليه السلام) এসব কলেমা (বাক্য) দ্বারা ফুঁক দিতেন।
অর্থাৎ আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্য সমূহের মাধ্যমে সমস্ত শয়তান ও বিষাক্ত জন্তু এবং সকল বদনযর থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
(বুখারী, কিতাবুল আহাদীসুল আম্বিয়া, ২/৪২৯, হাদীস- ৩৩৭১)
❏ হাদীস ২৯:
ইমাম হাসানের প্রতি সিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) এর ভালবাসা
হযরত সায়্যিদুনা আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন আমীরুল মু’মিনীন ও খলিফাতুল মুসলীমিনের সিংহাসনের আসনে আসীন হলেন। তখন রাসূলে করীম (ﷺ) এর প্রতি সম্পর্কের কারণে তিনি (ﷺ) পবিত্র আহলে বাইতগণের খুবই দেখাশুনা করতেন এবং আহলে বাইতের ব্যাপারে বলতেন: নবী করীম, রউফুর রহীম (ﷺ) এর আত্মীয় স্বজন আমার কাছে আমার আত্মীয়স্বজনের চেয়ে অধিক প্রিয়।
(বুখারী, কিতাবুল মগজী, বাব হাদীস বনি নদ্বীর, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস-৪০৩৬)
❏ হাদীস ৩০:
ইমাম হােসাইনের প্রতি ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর অকৃত্রিম ভালবাসা
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হােসাইন (عليه السلام) বলেন: আমি একদিন আমীরুল মু’মিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর ঘরে গেলাম, কিন্তু তিনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আলাদা ভাবে আলােচনায় ব্যস্ত ছিলেন এবং ওনার ছেলে আব্দুল্লাহ্ (رضي الله عنه) দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সে ফিরে আসতে লাগল, তখন তার সাথে আমিও ফিরে আসতে লাগলাম। পরে আমীরুল মুমিনীন হযরত সায়্যিদুনা ওমর ফারুকে আযম (رضي الله عنه) এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে আমি বললাম: হে আমীরুল মু’মিনীন! আমি আপনার নিকট এসে ছিলাম। কিন্তু আপনি হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সাথে আরােচনায় ব্যস্ত ছিলেন। (আমি ভেবেছিলাম যখন ছেলের ভিতরে যাবার অনুমতি নেই সেখানে আমার কিভাবে?) এই কারণে আমিও তার সাথে ফিরে এসেছি। তখন ফারুকে আযম (رضي الله عنه) বললেন: হে আমার পুত্র হােসাইন! আমার সন্তানের চেয়ে অধিক হকদার এই কথার উপর যে আপনি ভিতরে চলে আসবেন। আর আমাদের মাথায় যে চুল রয়েছে, আপনাদের সদকায় তাে সব কিছু উৎপন্ন হয়।
(তারিখ ইবনে আসাকির, ১৪তম খন্ড, ১৭৫ পৃষ্ঠা)
❏ হাদীস ৩১:
ইমাম হাসানের প্রতি শেরে খােদা মওলা আলী (رضي الله عنه)’র ভালবাসাঃ
হযরত সায়্যিদুনা আসবাগ বিন নুবাতা (رضي الله عنه) বলেন: একবার হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান মুজতবা (عليه السلام) অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর সেবায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। আমিও তাঁর সাথে সেবার জন্য গেলাম। হযরত সায়্যিদুনা আলী মুরতাজা (عليه السلام) তাঁর অবস্থা জিজ্ঞাসা করে বললেন: হে রাসূলের নাতি! আপনার অবস্থা কেমন? উত্তর দিলেন: ভাল আছি। তিনি বললেন: যদি আল্লাহ্ তাআলা চান। তাে ভাল হয়ে যাবেন। তার পর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) আরজ করলেন: আমাকে হেলান দিয়ে বসান। হযরত সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) তাঁকে বুকে ঠেস লাগিয়ে বসিয়ে দিলেন। তারপর হযরত সায়্যিদুনা ইমাম হাসান (رضي الله عنه) বললেন:
একদিন আমাকে নানাজান, রহমতে আলামীন (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “হে আমার পুত্র! জান্নাতে একটি গাছ রয়েছে়। পরীক্ষায় নিমজ্জীত লােকদের কিয়ামতের দিন ঐ বৃক্ষের নিচে একত্রিত করা হবে। ঐ সময় তখন না মীযান রাখা হবে না আমল নামা খােলা হবে। তাদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রতিদান দেওয়া হবে।” তার পর ছরকারে দো’আলম (ﷺ) এই আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করেন:
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ:
“ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণ ভাবে দেওয়া হবে অগণিত ভাবে।” (যুমর, আয়াত- ১০)
(কিতাবুদ দোয়া লিত তাবারানী, ৩৪৭ পৃষ্ঠা)
❏ হাদীস ৩২:
হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর শাহাদাত:
হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর বিলাদত শরীফ-এর কিছু দিন পরই উনার শাহাদাতের কথা সবার কাছে জানাজানি হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে অনেক হাদীছ শরীফ বর্ণিত হযেছে। হযরত উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বলেন,
وروى البيهقي عن الحكم وغيره، عن أبي الأحوص، أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْجَوْهَرِيُّ بِبَغْدَادَ، ثَنَا أَبُو الْأَحْوَصِ مُحَمَّدُ بْنُ الْهَيْثَمِ الْقَاضِي، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ مُصْعَبٍ، ثَنَا الْأَوْزَاعِيُّ، عَنْ أَبِي عَمَّارٍ شَدَّادِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أُمِّ الْفَضْلِ بِنْتِ الْحَارِثِ، أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي رَأَيْتُ حُلْمًا مُنْكَرًا اللَّيْلَةَ، قَالَ: ” مَا هُوَ؟ ” قَالَتْ: إِنَّهُ شَدِيدٌ، قَالَ: ” مَا هُوَ؟ ” قَالَتْ: رَأَيْتُ كَأَنَّ قِطْعَةً مِنْ جَسَدِكَ قُطِعَتْ وَوُضِعَتْ فِي حِجْرِي، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ: ” رَأَيْتِ خَيْرًا، تَلِدُ فَاطِمَةُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ غُلَامًا، فَيَكُونُ فِي حِجْرِكِ ” فَوَلَدَتْ فَاطِمَةُ الْحُسَيْنَ فَكَانَ فِي حِجْرِي كَمَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ، فَدَخَلْتُ يَوْمًا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ، ثُمَّ حَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ، فَإِذَا عَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَآلِهِ وَسَلَّمَ تُهْرِيقَانِ مِنَ الدُّمُوعِ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللَّهِ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا لَكَ؟ قَالَ: ” أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ، فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا ”، فَقُلْتُ: هَذَا! فَقَالَ: ” نَعَمْ، وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ مِنْ تُرْبَتِهِ حَمْرَاءَ ”.
আমি একদিন হুযূর পাক (ﷺ) খিদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) কে কোলে দিলাম। এরপর আমি দেখলাম, হুযূর পাক (ﷺ)র চোখ মুবারক থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক, এর কারণ কী? ইরশাদ করলেন, আমার কাছে হযরত জিবরীল (عليه السلام) এসে এ খবর দিয়ে গেলেন ‘নিশ্চয়ই আমার উম্মত আমার এ শিশুকে শহীদ করবে।’ হযরত উম্মুল ফজল (رضي الله عنه) বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রসূলাল্লাহ! এ শিশুকে শহীদ করবে? হুযূর পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,‘হ্যাঁ। হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) শাহাদাত স্থলের লাল মাটিও এনেছেন। “আমার ছেলে (দৌহিত্র) হযরত ইমাম হুসাইনকে ফোরাত নদীর তীরে যে জায়গায় শহীদ করা হবে, সে জায়গার নাম কারবালা।’
[হাকেম, ৩/১১৬-১১৭]
❏ হাদীস ৩৩:
মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদতে থাকবে, নিশ্চয়ই কেবল সেই চোখ ছাড়া, যা ইমাম হুসাইনের বিয়োগান্ত ঘটনায় কেঁদেছে, ঐ চোখ সেই দিন হাসতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতের নিয়ামতসমূহের সুসংবাদ প্রদান করা হবে। [বিহারুল আনওয়ার, খ–৪৪, পৃ-১৯৩]
❏ হাদীস ৩৪:
মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “নিশ্চয়ই প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ের ইমাম হোসাইন-এর শাহাদাতের বিষয়ে এমন ভালোবাসার উত্তাপ রয়েছে যা কখনো শীতল হওয়ার নয়। [মুস্তাদারক আল ওয়াসাইল, খ–১০, পৃ-৩১৮]