মানবীয় মূল্যবোধ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মানবীয় মূল্যবোধ
হাসান মুহাম্মদ শারফুদ্দিন

জীবনে অনেক কিছু জানা, অনেক সম্পদ অর্জন করা সবচেয়ে বড় অর্জন নয়। মনুষত্ববোধ, মানবিকতা অমত্মরে লালন করা, অন্যের জন্য মনের কোণে একটা জায়গা রাখা, এ মানসিকতা অর্জন করাটাই সবচয়ে বড় অর্জন। সমাজের অশামিত্ম, বিশৃংখলার মূল কারণ হচ্ছে মনুষত্ববোধ, শিষ্টাচারের অভাব। সমাজের বড়রা হচ্ছেন ছোটদের অনুকরণীয়, অনুসরণীয় পথপ্রদর্শক। তাঁদের স্নেহ, ভালোবাসায়, খবরদারিতেই ছোটরা বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত থাকে, থাকে কলুষমুক্ত; হয়ে উঠে ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক পিতা-অভিভাবক। ছোটরা তাদের বড়দের দিকে তাকিয়ে যখন দেখে যে, তাঁরা সমাজ, মানুষ, দেশের কল্যাণের চেষ্টায় রত, অপরের অকল্যাণ করা থেকে বিরত এবং অপরকে বিরত রাখার চেষ্টায় রত, ছোটদের প্রতি স্নেহশীল, সৌহার্দ্যপূর্ন, তখন তারাও এ গুনগুলো আত্বস্থ করে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে উদ্ধুদ্ধ হয়। অপরপক্ষে,তারা যখন দেখে বড়রা নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ব্যসত্ম, অপরের কল্যাণ-অকল্যাণ নিয়ে তাঁদের মাথা-ব্যাথা নেই, ছোটদের প্রতি সৌহার্দ্যের তুলনায় কর্তৃত্ব ও ভয় প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী; তখন তারা ভাবে এটাই বুঝি জীবনের কর্তব্য, এটাকেই আদর্শ মেনে চলতে থাকে তারা।
সমাজের অনেক বড়রাই আফসোস করেন, আজকালকার ছোটরা বড়দের সম্মান করে না, মান্য করে না। তাঁদের কাছে প্রশ্ন আপনারা নিজেদেরকে প্রশ্ন করুন, কেন তারা আপনাদের কথা মানে না নেপথ্যের কারণটা কি? কারনটা কি এই নয় যে, যা আপনারা তাদের কাছ থেকে চাচ্ছেন তা আপনাদের মধ্যেই নেই! অথবা তাদেরকে আপনারা সঠিক প্রশিক্ষণ দেননি? কাঁদা মাটি তো শিল্পীর হাতেই বিভিন্ন রুপ ধারণ করে। আর আজকালকের ছোটরাও এ কথা ভুলতে বসেছে যে, সেও একদিন বড়দের স্থলাভিষিক্ত হবে; তার অধীনস্থ, নিম্নস্থ অনেক ব্যক্তি থাকবে। তখন সেও কি চাইবে না যে, আমার ছোট আমাকে সম্মান করুক, মান্য করুক। কিন্তুু এটা কিভাবে সম্ভব যে, আপনি কাউকে সম্মান করবেন না, আর অন্যদের কাছ থেকে সম্মান আশা করবেন । বড়রা এখন আগ বাড়িয়ে সালাম না দিয়ে মুখিয়ে থাকে ছোটরাই আমাকে সালাম দিবে; আর অপরদিকে ছোটরা তো বড়দের বদৌলতে একথা ভুলতেই বসেছে যে, সালাম দিতে হয়! শ্রদ্ধা ও স্নেহ একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত , একটি ব্যতিত অপরটির চিমত্মা করা বোকামী।
ভালোবাসা বলতে শুধু ক্ষণিকের আবেগ বুঝায় না, এ এক স্বর্গীয় অনুভূতি যার বদৌলতে ধনী-গরীব, ছোট বড়, ইতর-ভদ্র সকলে একাকার হয়ে যায়। অমত্মরে ভালোবাসা থাকলেই নিজের উপার্জিত সম্পদ অপরের জন্য ব্যয় করা যায়, নিজের খাবারে অন্যকে অংশীদার করা যায়, নিজের বাড়তি কাপড়টা দিয়ে বস্ত্রহীনের আব্রু রক্ষা করা যায়। শীতের কনকনে ঠান্ডা থেকে অন্যকে বাঁচাতে নিজের কাপড় দেয়া অথবা গরম কাপড় কেনার টাকা দেয়া যায় এই ভালোবাসা-সহানুভূতির কারণেই। আর এই ভালো বাসাটা যখন হবে একমাত্র আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সমত্মষ্টির জন্য তখনই তা হবে নির্মোহ-নিষ্ঠাপূর্ণ,সর্বোত্তম।
বর্তমান সমাজ দর্শনই হয়ে গেছে নিজেকে বাঁচাও, নিজের আখের গোছাও। আরে ভাই, আমার পাশে যে অভাবে আছে, বিপদের সম্মুখীন, সমস্যায় জর্জরিত তার দিকে তাকানো কি আমার কর্তব্য নয়? আমি যদি তার দিকে লক্ষ না করি, আপনিও যদি ঠিক একই কাজ করেন তবে এটা আশা করা কি ঠিক হবে যে, অন্য কেউ আমার, আপনার বিপদে পাশে দাঁড়াবে। কেউ আমার নিকট খাবার চাইবে, আমি তাকে তাড়িয়ে দেব; কেউ অর্থসংকটে আছে, আর আমার সাহায্য চাইল, সামর্থ্য থাকা স্বত্বেও তাঁকে সাহায্য করলাম না; শীতের কনকনে ঠান্ডায় নিজের আরামের ব্যবস্থা করলাম, কিন্তুু চোখের সামনের অসহায় লোকটির প্রতি ভ্রম্নক্ষেপও করলাম না; তবে আমাকেও বিপদের সময় একাকীত্বের ভয়ংকর অসহায় অবস্থাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে ।
জাগতিক অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পারলৌকিক না হোক, নিদেনপক্ষে নিজের ইহলৌকিক লাভের জন্য হলেও এ বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া উচিত। তবে পারস্পরিক এ শ্রদ্ধাবোধ, স্নেহবোধ, ভালোবাসা, সহযোগিতা, সহানুভূতি যদি ইহলোকিক লাভ বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তদীয় রাসূলের সন্তুুষ্টির মাধ্যমে শুধুমাত্র পারলৌকিক লাভের আশায় করি তবে এক ঢিলে দুই পাখি মারার মত পারলৌকিক লাভের সাথে নগদও কিছু পেয়ে যাব।
আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, নিজের আদর্শ যদি রাসূলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ না হয় তবে আশেপাশের লোকগুলো সিদ্দিকে আকবর, ফারুকে আযম, ওসমান গণী, শেরে খোদা, খাদিজাতুল কোবরা, মা-ফাতেমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) হবে না।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments