মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) পরিচিতি, আল-কুরআন ও তফসীরের আলোকে।
🖋লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থ পরিচিতিঃ
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা |
আর “মীলাদ ও ” নবী” দুইটি শব্দ একত্রে মিলিয়ে হয় মীলাদুন্নবী | ” মীলাদের” তিনটি শব্দ রয়েছে – ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ | মীলাদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, জন্মবৃত্তান্ত (মানে হল বিস্তৃতভাবে বংশবৃত্তান্ত, স্থান-কালসহ আলোচনা করা)
অর্থাৎ, আভিধানিক বা শাব্দিক অর্থে ميلاد النبي বা ” মীলাদুন্নবী” বলতে হুজুর পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফকেই বুঝায়।
আর পারিভাষিক বা ব্যাবহারিক অর্থে,মীলাদুন্নবী বলতে হুজুর পাক (ﷺ) উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে উনার ছানা- সিফাত আলোচনা করা, উনার প্রতি সালাত সালাম পাঠ করা, এবং উনার পবিত্রতম জীবনী মুবারকের সামগ্রিক বিষয়ের আলোচনা বুঝানো হয় !
ওহাবী ও আহলে হাদিসগন একে বিদাত বলে আসুন দেখি রাসুল (ﷺ) এর জন্ম ও বংশবৃত্তান্ত আলোচনা কুরআন হাদিসে আছে কিনা।
আল-কুরআনের আলোকে মিলাদুন্নবী (ﷺ): এক নজরে কিছু আয়াত
● আল ইমরান 81,164।
● আন নিসা 59,175,164।
● আল মায়দায় 15।
● আত তাওবাতে 33,128।
● আস সাফ 6,8।
● আল জুমুআ 2।
● আল বালাদ ২-৩।
● আল ইব্রাহিম ২৮ (বুখারী শরিফের শানে নুযুল)
● আল ইব্রাহিম 34।
● আন নাহল 83।
● আল ইনশিরাহ 1-4।
● আল আম্বিয়া 107।
● আল ফাতহ 8,9, 28
● আল আহযাব 56।
● কাফ 2।
● আনফাল 33
● আদ দ্বোহা 11
● আল হিজর 72
● আল আরাফ 157
● ইব্রাহিম ৫ [হযরত মুসা (عليه السلام) এর মিলাদ সম্পর্কে]
● মায়িদা 20 [হযরত মূসা (عليه السلام) এর মিলাদ সম্পর্কে]
আল-কুরআন ও সর্বজন সমাদৃত বিখ্যাত (→) তফসীরগ্রন্থ থেকে মিলাদুন্নবী (ﷺ)
❏ আয়াত ১ :
আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : হে আমাদের রব আল্লাহ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !”
(সূরা মায়িদা ১১৪)
ব্যখ্যা :
হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হওয়ার দিনটি যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে যার উসীলায় জগৎ সৃষ্টি, যিনি সমগ্র জগৎ এর নিয়মাত, সকল নিয়মতের মূল, যিনি আন নি’মাতুল কুবরা সেই রাসূল (ﷺ) এর আগমন কি ঈদের (আনন্দের) দিন নয়?
কারণ হুজুর পাক (ﷺ) এর আগমনের দিন হল শয়তানের কান্নার দিন আর ইমানদারদের জন্য খুশির দিনঃ
❏ ইমাম ইবনে কাসীর (رحمة الله) লিখেনঃ
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল,
(১) যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন;
(২) যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়।
(৩) যখন হুজুর (ﷺ) এর বিলাদত/মিলাদ হয়।
(৪) যখন সূরা ফাতেহা নাযেল হয়।”
(ইমাম ইবনে কাসীর: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
❏ আয়াত ২ :
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ{يونس-٥٨}…
[হে হাবিব ﷺ]! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহর “ফযল” ও “রহমত” প্রাপ্তির কারণে তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এটি তাদের (সমুদয়) সঞ্চয় অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা উত্তম। (সুরা ইউনুস ১০:৫৮)
❏ তফসীরঃ
❏ বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) ও তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) সহ আর ও অনেকে বর্ণনা করেন যে, আহলে বায়াতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
عن قتادة رضى الله تعالى عنه ومجاهد وغيرهما قال ابو جعفر الباقر عليه السلام فضل الله رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم .
-“আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ও রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.।]
❏ বিশ্ব-বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) [ওফাত.৫৯৭হি.) উক্ত আয়াতে সম্পর্কে লিখেন,
ফাদ্বল দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং রহমত দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে যেমনটি তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) তাঁর শায়খ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।”
[ইমাম যওজী, যা’দুল মাসীর ফি উলূমূত তাফাসীর, ৪/৪০ পৃ.]
❏ ইমাম হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) [ওফাত. ৭৪৫হি.] বর্ণনা করেন-
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيمَا رَوَى الضَّحَّاكُ عَنْهُ: الْفَضْلُ الْعِلْمُ وَالرَّحْمَةُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
“তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- উক্ত আয়াতে (ফদ্বল) দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারুল মুহিত, ৫/১৭১ পৃ.]
❏ হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) [ওফাত. ৯১১হি.) লিখেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين.
(১০৭ الْأَنْبِيَاء الْآيَة )
-‘‘ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন, সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফাদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং (রহমত) দ্বারা নবীজী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি।(সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)।’’
[ইমাম তিরমিযী-মাজমাউল বায়ান,৫/১৭৭-১৭৮পৃ, তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮]
❏ বিখ্যাত মুফাস্সির ইমাম সৈয়দ শিহাবুদ্দীন মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (রহ.) [ওফাত. ১২৭০হি.] স্বীয় তাফসীরে উল্লেখ করেন-
وأخرج أبو الشيخ عن ابن عباس رضي الله تعالى عنهما أن الفضل العلم والرحمة محمد صلّى الله عليه وسلم.
“হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন নিশ্চয়ই (ফাদ্বলুল্লাহ্) বা অনুগ্রহ হল ইলমে দ্বীন এবং রহমত হলো নবী করিম (ﷺ)।’’[আল্লাম শিহাব উদ্দিন সৈয়দ মাহদুদ আলুসী-রুহুল মা’আনী,৬/১৩৩পৃ]
❏ ইমাম সৈয়দ মাহমুদ আলূসী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন-
وأخرج الخطيب، وابن عساكر عنه تفسير الفضل بالنبي عليه الصلاة والسلام.
-‘‘হযরত খতিবে বাগদাদী (رحمة الله) এবং ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, ফাদ্বল (অনুগ্রহ) দ্বারাও নবী করীম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[আল্লামা শিহাব উদ্দিন মাহমুদ আলুসী-রুহুল মা’আনী,৬/১৩৩পৃ]
❏ আয়াত ৩ :
সে রহমত সম্পর্কে অনত্র আল্লাহ পাক বলেন,
وماارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ : হে আমার হাবীব (ﷺ)! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !”‘
(সূরা আম্বিয়া ১০৭)
রহমতাল্লিল আল-আমিনের আগমনে খুশি হব নাকি শোক প্রকাশ করব আপনারাই বলুন।
❏ তফসীরঃ
❏ ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করার হুকুমঃ
❏ আয়াত ৪ :
মূসা (عليه السلام) ও তাঁর ক্বওম এর ব্যাপারে আল্লাহ পাক বলেন,
وذكرهم بايام الله ان في ذلك لايات لكل صبار شكور
আল্লাহর দিবসসমূহ তাদের স্মরণ করিয়ে দিন’। নিশ্চয় এতে প্রতিটি ধৈর্যশীল, কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন। (সূরা ইব্রাহীম ৫)
❏ আয়াত ৫ :
আল্লাহ পাক বলেন,
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো!” (সূরা আল ইমরান ১০৩)
❏ আয়াত ৬ :
وأما بنعمة ربك فحدت
অর্থ : আপনার রবের নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। (সূরা আদ-দ্বোহা ১১)
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হলেন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামতঃ
❏ আয়াত ৭ :
মহান রব ইরশাদ করেন-
‘‘যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে।’’ [সূরা ইব্রাহিম, আয়াত নং- ২৮]
রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহ এ আয়াতে নিয়ামত বলেছেন।
আর নিয়ামতকে অস্বীকার করেছেন কারা সে সম্পর্কে
❏ হাদিসঃ ইমাম বুখারী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-
هم كفار أهل مكة
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, যারা আল্লাহর নেয়ামত [রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে] কুফুরী বশতঃ পরিবর্তন করেছে তারা হলেন মক্কার কুরাইশ গোত্রের কাফের গণ।’’
[বুখারী, আস্-সহিহ, ৬/৮০পৃ. হাদিস নং. ৪৭০০]
আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত হওয়াঃ
❏ ফিক্বাহের কিতাবে আছে-
الامر للوجوب
অর্থাৎ, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা ফরজ ওয়াজিব সাব্যস্ত হয় ! (বাদায়েউস সানায়ে)
তদ্রুপ সূরা ইউনূছের ৫৮ আয়াতের فليفرحوا বা খুশি প্রকাশ করো এটা আদেশ সূচক বাক্য।
রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শান-সিফাত ও মাহাত্ম্য বর্ণনার নির্দেশঃ
❏ আয়াত ৮ :
إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
৪৮:৮ – নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির (উপস্থিত) নাযির (প্রত্যক্ষ সাক্ষীস্বরূপ), সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে;
৪৮:৯ – যাতে হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনো এবং রসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা ফাতাহ ৮,৯)
❏ আয়াত ৯ :
পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে নবীগণের মজলিশে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবীর (ﷺ)-এর আলোচনা (শানে নুযুল দেখতে পারেন)
وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
অর্থ: স্মরণ করুণ! যখন আল্লাহ পাক নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো। অতঃপর তশরীফ আনবেন একজন রসূল [মুহাম্মদ (ﷺ)] ! তিনি আপনাদের প্রদত্ত কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন। তখন আপনারা নিশ্চই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে (পেলে) সহযোগিতা করবেন ! মহান আল্লাহ বললেন, আপনারা কি এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম !”
(সূরা আল ইমরান ৮১)
❏ আয়াত ১০ :
আল্লাহ বলেন,
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দানকারী। যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ (ﷺ) !”
(সূরা আস সাফ ৬)
❏ তফসীরঃ
উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের মীলদ শরীফ বর্ননা করেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম হাকিম, ইমাম আত-তাবারানী, ইমাম আল-বাজ্জার, ইমাম আল-বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ননা করেন, হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“আমি আল্লাহর বান্দা ও শেষ নবী। আমি তখনো নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির অন্তর্গত ছিলেন। খুব শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে এসব বিষয়ে অবগত করব।
আমি আমার পিতা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর দোয়া,
হযরত ঈসা (عليه السلام) এর [তার জাতিকে দেয়া ভবিষ্যৎবানী] সুসংবাদ এবং “আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তাবারী : তফসীরে তাবারী : খ ১ : প ৫৫৬
২.ইমাম তাবারী : তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক : খ ১ : প ৪৫৮
৩.ইমাম কুরতুবী : তফসীরে কুরতুবী : খ ২ : প ১৩১
৪.ইমাম ইবনে কাসীর : তফসীরে ইবনে কাসীর : খ ৪ : প ৩৬০
৫.ইমাম আবু লাইস সমরকানী : তফসীরে সমরকানী : খ ৩ : প ৪২১
৬.ইমাম সূয়ূতী : তফসীরে দুররে মনসূর : খ ১ : প ৩৩৪
৭.ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ খ ৪ : প ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১
৮.ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : খন্ড ১ : পৃ ৮৩, প ১১০
৯.ইমাম ইবনে ইসহাক : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ২৮
১০.ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ১৫৬
১১.ইমাম ইবনে সা’দ : তাবাকাত আল কুবরা : খ ১ : প ১৫০
১২.ইমাম ইবনে হিব্বান : সহীহ ইবনে হিব্বান : খ ৯ : প ১০৬
১৩.ইমাম বাগবী : মিশকাতুল মাসাবিহ : প ৫১৩
১৪.ইমাম হাকিম : মুস্তাদরেক আল হাকিম : খন্ড ২ : পৃ ৬০০ : হাদিস ৪১৭৫
১৫.ইমাম ইবনে জাওজী : আল ওয়াফা : প ৯১
১৬.ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী : মাজমাউল যাওয়াইদ : (৮:২২১/৪০৯)
১৭.ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩
১৮.ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭
এই হাদিসটির বিভিন্ন রেওয়াতে বর্ণিত সুত্রঃ
১. হযরত কা’ব আল আহবার (رضي الله عنه)
২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (رضي الله عنه)
৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه)
৪. হযরত মু’য়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه)
৫. হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)
৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (رضي الله عنه)
৭. হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) [ইমাম হাকিম : আল-মুস্তাদরাক : পৃ ৩৬৯, হাদিস ৫৪১৭; মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : রবিউল আওয়াল অধ্যায় : ১১৪ পৃ]
৯. হযরত ইকরামা (رضي الله عنه)
❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর তশরীফ আনা সম্পর্কে আরও কিছু আয়াত (যেগুলোর তফসীর থেকে মিলাদুন্নবীর প্রমাণ মিলে)
❏ আয়াত ১১ :
لقد جاءكم رسول من انفسكم عزيز عليه ماعنتم حريص عليكم بالمؤمنين رءوف رحيم
অর্থ : তোমাদের কাছে তোমাদের জন্য একজন রসূল (ﷺ) এসেছেন, তোমাদের দুঃখ-কষ্ট উনার কাছে বেদনাদায়ক, তিনি তোমাদের ভালাই চান,মু’মিনদের প্রতি স্নেহশীল এবং দয়ালু !” (সূরা তাওবা ১২৮)
❏ আয়াত ১২ :
لقد من الله علي المؤمنين إذ بعث فيهم رسولا من أنفسهم يتلوعليهم اياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب وااحكمة
অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক মু’মিনদের প্রতি ইহসান করেছেন যে, তিনি তাদের মাঝে হাবীবুল্লাহ (ﷺ) উনাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাদেরকে আল্লাহ পাক উনার আয়াত শরীফ সমূহ তিলাওয়াত করে শোনান এবং তাদের অন্তর সমূহকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদের কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন !” (সূরা আল ইমরান ১৬৪)
❏ আয়াত ১৩ :
ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّـهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّـهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ ﴿٤﴾
”এটি আল্লাহর অনুগ্রহ; যাকে চান দান করেন; এবং আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল।” (সূরা জুমু’আহ্, ৪ আয়াত)
❏ তফসীরঃ
আয়াতের শেষাংশে ‘আল্লাহ বড় (অশেষ) অনুগ্রহশীল’ বাক্যটিকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ব্যাখ্যা করেন এভাবে:
আল্লাহর অনুগ্রহ অফুরন্ত, যেহেতু তিনি মহানবী(সাﷺ) -কে ইসলাম ও নবুয়্যত দান করেছেন; এও বলা হয়েছে যে এর মানে ঈমানদারদের প্রতি তিনি ইসলামের নেয়ামত বর্ষণ করেছেন। আর এ কথাও বলা হয়েছে যে এর অর্থ তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি তিনি অনুগ্রহ করেছেন মহানবী (ﷺ) এবং কেতাব (কুরআন) প্রেরণ করে।
[তানবির আল-মিকবাস মিন তাফসীর ইবনে আব্বাস]
❏ আয়াত ১৪ :
ياايها النبي انا ارسلناك شاهدا و مبشر و نذيرا وداعيا الي الله باذنه وسراجا منيرا
অর্থ : হে আমার হবীব (ﷺ)! নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদ দাতা, ভয় প্রদর্শনকারী এবং আমার নির্দেশে আমার দিকে আহ্বানকারী ও নূরানী প্রদীপ রুপে প্রেরন করেছি !” (সূরা আহযাব ৪৬)
❏ আয়াত ১৫ :
قد جاعكم من الله نور
অর্থ : নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এক মহান নূর [হুজুর পাক (ﷺ)] ও কিতাব এসেছে!” (সূরা মায়েদা ১৫)
জন্মদিন উদযাপন কি ইসলামে হারাম? নাকি ইহুদীদের মত উদযাপন হারাম?
❏ আয়াত ১৬ : আল্লাহ পাক হযরত ঈসা (عليه السلام) এর ব্যাপারে ইরশাদ করেন ,
وسلم عليه يوم ولد و يوم يموت ويوم يبعث حيا
অর্থ : উনার প্রতি সালাম (শান্তি), যেদিন তিনি বিলাদত শরীফ লাভ করেছেন এবং যেদিন তিনি বিছাল শরীফ লাভ করবেন এবং যেদিন তিনি পুনরুত্থিত হবেন !”
(সূরা মারইয়ম ১৫)
❏ আয়াত ১৭ : হযরত ইয়াহইয়া (عليه السلام) সম্পর্কে বলা হয়েছে,যেটা তিনি নিজেই বলেন-
والسلم علي يوم ولدت ويوم اموت ويوم ابعث حيا
অর্থ : আমার প্রতি সালাম বা শান্তি যেদিন আমি বিলাদত শরীফ লাভ করি, যেদিন আমি বিছাল শরীফ লাভ করি , যেদিন পুনুরুত্থিত হবো!” (সূরা মারইয়াম ৩৩)