মহামারিতে আযান দেয়ার শরয়ী বিধান ও গুরুত্ব
-মুহাম্মদ আবদুল মজিদ আল-ক্বাদেরী
আযান ইসলামের এক মৌলিক ইবাদত নামাজের দিকে আহবানের মাধ্যম। আযানের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত অবতীর্ণ হয়,বিপদ ও আযাব দূরীভূত হয়।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা:)থেকে বর্ণিত হাদীসে হুযুর (ﷺ) এরশাদ করেন,
“اِذَا اُذِّنَ فِیْ قَرِیَةٍ اٰمَنَھَا اللہُ مِنْ عَذَابِهٖ فِیْ ذٰلِكَ الْیَوْمِ”
-যখন কোন গ্রামে আযান দেয়া হয়,তখন মহান আল্লাহ (ﷻ) সেদিন ওই গ্রামকে তার আযাব থেকে নিরাপদে রাখেন।
[আল-মু’জামুল কবীর,খ-১,পৃ-২৫৭,হাদিস:৭৪৬,মুদ্রণ:মাকতাবায়ে ফয়সলীয়া,বৈরুত। ফতোয়ায়ে রযভীয়্যা, খন্ড:৫,পৃ-৩৬৯,রেযা ফাউন্ডেশন, লাহোর]
মহামারীর সময় আযান দেয়া একটি মুস্তাহাব বিষয়।
ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদ্দুল মুখতার বা ফতোয়ায়ে শামীতে আযানদানের ১০টি মুস্তাহাব সময়ের মধ্যে মহামারীর সময় আযানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
মুজাদ্দিদে দীনো মিল্লাত,ইমামে আহলে সুন্নাত,শাহ ইমাম আহমদ রেজা খান (রা.)লিখেন-
”وبا کے زمانے میں اذان دینا مستحب ہے“
– মহামারীর সময় আযান দেয়া মুস্তাহাব।
[ফতোয়ায়ে রযভীয়্যা,খ-৫,পৃ-৩৭০,মুদ্রণ-রেযা ফাউন্ডেশন লাহোর। বাহারে শরীয়ত,প্রথম খন্ড, অংশ-৩,পৃ-৪৬৬,মাকতাবাতুল মদীনা করাচী]
কারণ এ মহামারীর কারণে জনমনে ভয় ও অাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে,যার ফলে জনগণ উদ্বিগ্ন থাকে, ভীতি ও ত্রাসের শিকার হয়,এমন পরিস্থিতিতেও আযান আত্নার প্রশান্তি ও ভয়-ত্রাস দূর করার মাধ্যম।
আবু নাঈম ও ইবনে আসাকির হযরত আবু হুরায়রা (রা.)থেকে বর্ণণা করেন,হুযুর ( ﷺ) ইরশাদ করেন,
نَزَلَ آدَمُ بِالْھِندِ فَاسْتَوْحَشَ فَنَزَلَ جِبْرَئِیْلُ عَلَیْه الصَّلَاۃُ وَالسَّلَام فَنَادیٰ بِالْاَذَاَنِ.
-যখন হযরত আদম (আ.)জান্নাত থেকে ভারতবর্ষে অবতরণ করলেন,ভীত-সন্ত্রস্থ হলেন,তখন জিবরাইল (আ.)নেমে (ভয় দূর করার জন্য) আযান দিলেন।
[হিলয়াতুল আউলিয়া,খ-২,পৃ-১০৭,হাদিস:২৯৯,মুদ্রণ-দারুল কিতাব আল-আরাবিয়্যা,বৈরুত]
মুসনাদুল ফিরদৌস-এ আমীরুল মু’মিনীন,সৈয়্যদুনা আলী আল-মুরতাদ্বা (রা.)থেকে বর্ণিত,
قَالَ رَایٰ النَّبِیُّ صَلّٰی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْهِ وَسَلَّم حُزِیْناً فَقَالَ یَا ابْنَ اَبِیْ طَالِبٍ اِنِّیْ اَرَاكَ حُزِیْناً فَمُرْ بَعْضَ اَھْلِكَ یُؤَذِّنُ فِیْ اُذُنِكَ فَاِنَّهٗ دَرْءُ الْھَّمِ
-তিনি বলেন,হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাকে চিন্তিত অবস্থায় দেখে বললেন,হে আলী! আমি তোমাকে উদ্বিগ্ন অবস্থায় দেখছি, তোমার পরিবারের কাউকে তোমার কানে আযান দিতে বলো,কেননা তা চিন্তা ও উদ্বিগ্নতা দূরকারী।
[মিরকাতুল মাফাতীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, আযান পর্ব,খ-২, পৃ-১৪৯,মুদ্রণ-মাকতাবায়ে ইমদাদীয়া,মুলতান]
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি থেকে রক্ষায় অন্যান্য আমলের পাশাপাশি আযান দেয়া একটি শরীয়ত সমর্থিত মুস্তাহাব আমল। এটার জন্য কোন সময় নির্ধারিত নেই। মহান রাব্বুল আলামীন আমলের তাওফিক নসীব করুন। তদীয় প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র উসীলায় মুসলিম মিল্লাতকে সকলপ্রকার বিপদাপদ ও মহামারী থেকে হেফাজত করুন। আমীন।