মহানবী (দ:) কি নিজের মীলাদ পালন করেছিলেন?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মহানবী (দ:) কি নিজের মীলাদ পালন করেছিলেন?
[সুফফাহ ফাউন্ডেশন শীর্ষক ওয়েবসাইটে পোস্টকৃত; অনুবাদক: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন]

আল্লাহর নামে অরম্ভ, যিনি অত্যন্ত দয়ালূ, দাতা।
আমাদের আকা ও মওলা হযরত রাসূলুল্লাহ (দ:), তাঁর আহলে বায়ত (রা:) ও আসহাবে কেরাম (রা:)-এর প্রতি সালাত ও সালাম।

হাদীসের আলোকে মীলাদুন্নবী (দ:) উদযাপনের শরয়ী বৈধতা

১/ – চলুন, এ বিষয়ে মহানবী (দ:)-এর মতামত জানতে চেষ্টা করি, যিনি স্বয়ং নিজের মীলাদ পালন করতেন। হাদীসগ্রন্থ মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে: হযরত অাবূ কাতাদা আনসারী (রা:) রেওয়ায়াত করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:)-কে জিজ্ঞেস করা হয় কেন তিনি প্রতি সোমবার (নফল) রোযা রাখেন। জবাবে তিনি বলেন, “এই দিনে আমার বেলাদত (তথা ধরাধামে শুভাগমন) হয়েছে এবং আমার প্রতি ওহী (ঐশী বাণী)-ও অবতীর্ণ হয়েছে এই দিনে।”

দলিল:

১/ সহীহ মুসলিম, ৬ষ্ঠ বই, হাদীস নং ২৬০৬; ২৬০৩ হাদীসেও বিদ্যমান।
২/ আসাদ আল-গাবা ফী মা’আরফাতেস্ সাহাবা, ১ম খণ্ড, ২১-২২ পৃষ্ঠা; ১৯৮৭ সালে লাহোর, পাকিস্তানে প্রকাশিত
৩/ ইমাম বায়হাকী কৃত সুনানে কুবরা, ৪র্থ খণ্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮১৮২ ও ৮২৫৯
৪/ মোসান্নাফে আবদ্ আল-রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৮৬৫
৫/ সুনানে আবি দাউদ, ৭ম খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৪২৮
৬/ মুসনাদে আহমদ, ৪৯তম খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৩২০০
৭/ সুনানে ইমাম নাসাঈ

মহানবী (দ:) যখন বাৎসরিক নয়, বরং প্রতি সোমবার নিজের মীলাদ (বেলাদত দিবস) উদযাপন করেছেন, তখন কীভাবে একে শিরক বা বেদআত আখ্যা দেয়া যায়? এই হাদীস থেকে স্পষ্ট যে তিনি তাঁর বেলাদত দিবস সম্পর্কে খুব খুশি ছিলেন এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ সে দিনটিতে রোযা রাখতেন। রোযা এক ধরনের এবাদত, আর তাই অন্য যে কোনো ধরনের এবাদত/বন্দেগী দ্বারা কেউ এদিনটিকে পালন করতে পারেন। মুসলমানবৃন্দ রোযা রাখতে পারেন, ধর্মীয় জমায়েত করতে পারেন, গরিবদের মাঝে খাবার বিতরণও করতে পারেন; এগুলোর সবই এবাদত হিসেবে পরিগণিত।

আপনি যদি কাউকে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি কোনো বিশেষ ধরনের (নফল) এবাদত পালন করেন বা রোযা রাখেন অথবা কুরঅান তেলাওয়াত করেন, এমতাবস্থায় আপনি বাস্তবে তাঁকে সেই আমল তথা (পুণ্যদায়ক) কর্মের নিয়্যত (উদ্দেশ্য) সম্পর্কেই প্রশ্ন করে থাকেন। তাই সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) যখন মহানবী (দ:)-কে সোমবার দিন (নফল) রোযা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, তখন তাঁর প্রদত্ত উত্তর থেকে আমরা তাঁরই নিয়্যত সম্পর্কে জানতে পারি; তিনি বলেন: “এই দিনে আমার বেলাদত (তথা ধরাধামে শুভাগমন) হয়েছে এবং আমার প্রতি ওহী (ঐশী বাণী)-ও অবতীর্ণ হয়েছে।” 

রাসূলুল্লাহ (দ:) স্বয়ং মসজিদের মিম্বরে উঠে দাঁড়িয়ে সাহাবা-এ-কেরাম (রা:)-এর সমাবেশে নিজের পবিত্র বেলাদত ও (অনুপম) বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা ও তাযকেরা (স্মরণ) করেছিলেন। এই ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে মীলাদ পাঠ করা খোদ রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর সুন্নাত। এতদসংক্রান্ত কতিপয় হাদীস এখানে পেশ করা হলো:

২/ – একবার হযরত আব্বাস (রা:) মহানবী (দ:)-এর দরবারে হাজির হন। তাঁকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি (হুযূর পাক সম্পর্কে মন্দ) কিছু শুনেছিলেন। অতঃপর নবী করীম (দ:) মিম্বরে উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, “আমি কে?” সাহাবা (রা:) বল্লেন, “আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম।” তিনি বল্লেন, “আমি মোহাম্মদ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে আব্দিল মোত্তালিব। আল্লাহতা’লা মানুষ সৃষ্টি করে আমাকে তাদের মধ্য হতে প্রেরণ করেছেন; অতঃপর তিনি তাদেরকে দুটো দলে বিভক্ত করেছেন এবং আমাকে সেরা দল হতে আবির্ভূত করেছেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে বিভিন্ন গোত্রে পরিণত করেছেন এবং আমাকে সেরা গোত্রে আবির্ভূত করেছেন; আর তিনি তাদেরকে বিভিন্ন পরিবারে পরিণত করে আমাকে সেরা পরিবারে প্রেরণ এবং সেরা বৈশিষ্ট্য দ্বারা বিভূষিত করেছেন” (আবূ হাসান এই হাদীসকে হাসান বলেছেন)। [তিরমিযী শরীফ: কিতাবুল মানাকিব (গুণাবলীর বই), মহানবী (দ:)-এর বৈশিষ্ট্যসম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬১৬]

৩/ – ওয়াসেলা ইবনে আল-আসকা’ বর্ণনা করেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান: “সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা হযরত ইসমাঈল (আ:)-এর বংশধরদের মাঝে কানানা গোত্রকে বেছে নিয়েছেন; কানানা গোত্রের মাঝ হতে কোরাইশ গোত্রকে বেছে নিয়েছেন; কুরাইশের মাঝ হতে হাশেম পরিবারকে, আর আমাকে হাশেম পরিবারের মাঝ হতে বেছে নিয়েছেন” (আবূ ঈসা বলেন যে এ হাদীসখানি হাসান সহীহ গরীব শ্রেণীভুক্ত)। [তিরমিযী শরীফ: কিতাবুল মানাকিব, মহানবী (দ:)-এর বৈশিষ্ট্যসম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬১৭]

ভালোভাবে লক্ষ্য করুন যে ওপরের দুটি হাদীসে মহানবী (দ:) তাঁর সাহাবীদের মাঝে নিজের মওলিদ (ধরাধামে শুভাগমন) এবং সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার ও গোত্রে জন্মগ্রহণ সম্পর্কে ভাষণ দিয়েছেন। অথচ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত (সুন্নী মুসলিম সমাজ) যখন মহানবী (দ:)-এর মতো একই বর্ণনা পেশ করতে মসজিদে সমবেত হন, তখন তাঁদেরকে বেদআতী বলে আখ্যা দেয়া হয়। এই প্রশংসনীয় আমল পালনকারী এবং রাসূল (দ:)-এর সুন্নাতের অনুসরণকারী মুসলমানদের প্রতি মিথ্যে দোষারোপকারী লোকদের লজ্জা করা উচিত!

৪/ – হুযূর পাক (দ:) এরশাদ ফরমান: “আমার মা আমাকে জন্ম দেয়ার সময় তিনি তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছুরিত এক নূর (জ্যোতি) দেখতে পান, যা দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদগুলোও তাঁর সামনে দৃশ্যমান হয়।”

দলিল:

১/ ইবনে হাশিম; তাফসীরে ইবনে কাসীর ৪:৩৬০
২/ বায়হাকী, দালাইল আন্ নুবুওয়্যা, ১:১১০
৩/ হায়তামী, যাওয়াঈদ, ৮:২২১
৪/ ইবনুল জাওযী, আল-ওয়াফা’
৫/ কাজী আয়াজ, আল-শিফা
৬/ মুসনাদে আহমদ, ৪:১২৭

৫/ – প্রিয়নবী (দ:) বলেন, “আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন, তা হচ্ছে আমার নূর (জ্যোতি)।”

দলিল:

১/ তাফসীরে নিশাপুরী, ৫৫ পৃ্ঠা, ৮ম খণ্ড
২/ তাফসীরে আরাই’সুল বয়ান, ২৩৮ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৩/ তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৫৪৮ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৪/ যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, ৩৭ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৫/ মাদারিজুন্ নবুওয়্যাত, ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠা, ২য় খণ্ড
৬/ বয়ান আল-মীলাদ আন্ নবী লি ইবনে জাওযী, ২৪ পৃষ্ঠা

৬/ – আল-বোখারী হাদীসগ্রন্থের ব্যাখ্যাকারী ইমাম কসতলানী (রহ:) তাঁর বিখ্যাত “আল-মাওয়াহিব আল-লাদু্ন্নিয়্যা” গ্রন্থে বলেন যে হযরত ইমাম যাইনুল আবেদীন (রা:) তাঁর পিতা হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) হতে, তিনি তাঁর পিতা হযরত আলী মোশকিল কোশা (ক:) হতে বর্ণনা করেন মহানবী (দ:)-এর বাণী, যিনি বলেন: “আমি আল্লাহর কাছে নূর ছিলাম হযরত আদম (আ:)-এর সৃষ্টিরও ১৪০০০ বছর আগে।”

দলিল:

১/ আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়া, ১০ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
২/ যুরকানী আলাল মাওয়াহিব, ৪৯ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৩/ জওয়াহিরুল বিহার, ৭৭৪ পৃষ্ঠা
৪/ আনওয়ারুল মোহাম্মদীয়া, ৯ পৃষ্ঠা
৫/ তাফসীরে রূহুল বয়ান, ৩৭০ পৃষ্ঠা, ২য় খণ্ড
৬/ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন

৭/ – হযরত ইমাম মালেক (রহ:)-এর ছাত্র এবং ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-এর শিক্ষক হাফেযুল হাদীস ইমাম আবদুর রাযযাক আবি বকর বিন হাম্মান (রহ:), যিনি ইমাম বোখারী (রহ:) ও ইমাম মুসলিম (রহ:)-এর শিক্ষকের শিক্ষক, তিনি তাঁর প্রণীত “মোসান্নাফ” গ্রন্থে হযরত জাবের ইবনে আব্দিল্লাহ আনসারী (রা:) ও তাঁর পুত্র হতে বর্ণনা করেন এই মর্মে যে হযরত জাবের (রা:) মহানবী (দ:)-এর কাছে আরয করেন: “এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আমার পিতা ও মাতা আপনার জন্যে কোরবান হোন। আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম কী সৃষ্টি করেন?” রাসূলুল্লাহ (দ:) এরশাদ ফরমান: “আল্লাহতা’লা সর্বপ্রথম তাঁর নূর (জ্যোতি) হতে আমার নূর পয়দা করেন। এই নূর আল্লাহর ইচ্ছায় ঘুরে বেড়ায়। ওই সময় কোনো বেহেশত, দোযখ, লওহ, কলম, আসমান, জমিন, চাঁদ, সূর্য, জ্বিন বা ইনসান কিছুই ছিল না। আল্লাহ যখন সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলেন, তখন তিনি ওই নূরকে চার ভাগ করলেন। এক ভাগ হতে তিনি কলম, দ্বিতীয়টি হতে লওহ, তৃতীয়টি হতে আরশ সৃষ্টি করলেন। চতুর্থ অংশকে আবার চার ভাগ করে তিনি প্রথমটি হতে আরশ বহনকারী ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন; দ্বিতীয়টি হতে কুরসী (ঐশী আসন) এবং তৃতীয়টি হতে তিনি ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন। অতঃপর তিনি বাকি অংশকে আবারো চার ভাগ করে প্রথমটি হতে আসমানসমূহ, দ্বিতীয়টি হতে গ্রহ-নক্ষত্র, আর তৃতীয়টি হতে বেহেশত ও দুনিয়া সৃষ্টি করলেন। এরপর তিনি অবশিষ্ট অংশটি আবারো চার ভাগ করে প্রথম অংশটি দ্বারা সেই ক্ষমতা সৃষ্টি করলেন, যা দ্বারা ঈমানদারবৃন্দ (সত্য) দর্শন বা উপলব্ধি করে থাকেন। দ্বিতীয় অংশটি দ্বারা তিনি ঈমানদারদের অন্তরে মা’রেফতের নূর সৃষ্টি করলেন। তৃতীয় অংশটি হতে তিনি ঈমানদারদের জিহ্বায় নূর সৃষ্টি করলেন, যাতে তাঁরা কলেমায়ে তাওহীদ পাঠ করতে পারেন।

দলিল:

১/ মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া, ৯ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
২/ যুরকানী শরীফ, ৪৬ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৩/ সীরাতে হালাবীয়া, ৩৭ পৃষ্ঠা, ১ম খণ্ড
৪/ মোতালি আল-মোসাররাত শরহে দালাইল আল-খায়রাত, ৬১০ পৃষ্ঠা
৫/ আফযাল আল-কুরা, লেখক – ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহ:)
৬/ হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ৬৮ পৃষ্ঠা, লেখক – ইমাম ইউসূফ নাবহানী (রহ:)
৭/ আনওয়ার আল-মোহাম্মদীয়্যা, ৯ পৃষ্ঠা
৮/ আকীদাত আশ-শুহাদা, ১০০ পৃষ্ঠা
৯/ ফাতাওয়া-এ-হাদিসিয়্যা, ৩১ পৃষ্ঠা
১০/ দালাইল আন্ নুবুওয়াহ, লেখক – ইমাম বায়হাকী (রহ:)
১১/ খামীস, লেখক – আল্লামা দিয়ারবকরী
১২/ মাদারিজুন্ নুবুওয়াহ, লেখক – শায়খ আবদুল হক্ক মোহাদ্দীসে দেহেলভী (রহ:)

৮/ – শায়খ মোহাম্মদ বিন আলাউয়ী মালেকী (রহ:) নিজ “হাওল আল-এহতেফাল বি যিকরি মাওলিদ আন্ নাবাউয়ী আশ্ শরীফ” শীর্ষক গ্রন্থে বলেন:

মহানবী (দ:) তাঁর নবুওয়ত ঘোষণার পর নিজের আকীকা করেন; এটি-ই শুধু নয়, তিনি তাঁর মিম্বরে দাঁড়িয়ে নিজের শাজরা (বংশ পরম্পরা) বর্ণনা করেন, হযরত আদম (আ:)-এর বেলাদতকে স্মরণ করেন এবং সর্ব-হযরত ইবরাহীম (আ:), ঈসা (আ:), মূসা (আ:) প্রমুখের উচ্চ মকাম সম্পর্কেও আলোচনা করেন। তিনি তাঁর কতিপয় সাহাবী (রা:)-এর প্রতি তাঁরই প্রশংসা করার নির্দেশ দেন। সাঈয়্যেদুনা রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় ও প্রশংসায় অনেক সাহাবী (রা:) কবিতাও লিখেছিলেন। তিনি সেসব কবিতা শুনে খুশি হয়েছিলেন এবং তাঁদের জন্যে দোয়াও করেছিলেন। [হাওল আল-এহতেফাল বি যিকরি মাওলিদ আন্ নাবাউয়ী আশ্ শরীফ, লাহোরে প্রকাশিত, ১৯৮৭]

৯/ – ‘উরসা হতে বর্ণিত: আবূ লাহাবের দাসী সোয়াইবিয়া মহানবী (দ:)-এর বেলাদতের সময় এই খোশ-খবরী তার কাছে নিয়ে আসেন। এ কারণে আবূ লাহাব তাঁকে (দাসত্ব থেকে) মুক্ত করে দেয়। এরপর সোয়াইবিয়া রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর দুগ্ধমাতাও হন। আবূ লাহাব মারা যাওয়ার পর তার এক আত্মীয় তাকে খারাপ অবস্থায় স্বপ্নে দেখেন এবং জিজ্ঞেস করেন, “তোমার সাথে কেমন আচরণ করা হয়েছে?” আবূ লাহাব বলে, “(দুনিয়াতে) তোমাদের ত্যাগ করার পর আমি কোনো বিশ্রাম পাইনি, কেবল আমাকে এতে (বুড়ো আঙ্গুল ও অন্যান্য আঙ্গুলের মধ্যবর্তী আঙ্গুল) পান করার পানি দেয়া হয়েছে। আর এটি এ কারণে যে আমি তা দ্বারা সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করে দিয়েছিলাম।”  

মহানবী (দ:)-এর বেলাদতের খুশিতে আবূ লাহাব আঙ্গুলের ইশারায় সোয়াইবিয়াকে মুক্ত করেছিল, আর তাই কুফফার গোষ্ঠীর সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি ও ইসলামের মহা শত্রুকেও তার আযাব তথা শাস্তি থেকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। অতএব, মহানবী (দ:)-এর মওলিদে যে মো’মেন মুসলমান ব্যক্তি খুশি উদযাপন করেন, তাঁর অবস্থাটুকু (কী হতে পারে) ভাবুন। [সহীহ বোখারী, ৭ম খণ্ড, ৬২ নং বই, হাদীস নং ৩৮]

১০/ – হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বর্ণনা করেন: রাসূলুল্লাহ (দ:) মদীনায় (হিজরত করে) এলে পরে দেখতে পান ইহুদীরা মুহররম মাসের
দশম দিবসে রোযা পালন করছে। তাদেরকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়। তারা উত্তরে বলে, “এই দিনে আল্লাহ পাক মূসা (অা:) ও তাঁর বনী ইসরাইল জাতিকে ফেরাউনের ওপর বিজয় দান করেন। তাই এর মহিমায় আমরা রোযা রাখছি।” অতঃপর মহানবী (দ:) বলেন, “বনী ইসরাইলের চেয়ে হযরত মূসা (আ:)-এর ওপর আমাদের হক্ক আরো বেশি।” এমতাবস্থায় তিনি মুসলমানদেরকেও ওই দিন রোযা রাখার নির্দেশ দেন। [সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, হাদীস নং ১১৩০]

হযরত মূসা (আ:) ও তাঁর জাতির প্রতি যেদিন আল্লাহতা’লা করুণা বর্ষণ করেছিলেন, সেদিনটি যদি উদযাপন করা অনুমতিপ্রাপ্ত হয়, তাহলে যেদিন আল্লাহতা’লা এই উম্মতের প্রতি তাঁর সর্ববৃহৎ করুণা ও আশীর্বাদ (মহানবীর ধরাধামে শুভাগমন) মঞ্জুর করেন, সেদিনটি উদযাপন করা কীভাবে বেদআত ও গোমরাহী হতে পারে? মহানবী (দ:) সম্পর্কে তো স্বয়ং মূসা (আ:)-ই দোয়া করেছিলেন – “হে আল্লাহ, আপনি আমাকে তাঁর উম্মতের একজন করে দিন।” আর যেহেতু মহানবী (দ:) হলেন আল্লাহতা’লার মহানতম করুণা, সেহেতু এই উম্মাহ’র জন্যে তাঁর বেলাদত দিবসটি পালনের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জরুরি। এটি-ই হলো শায়খুল ইসলাম ও মোহাদ্দীসকুল শিরোমণি হযরত ইবনে হাজর আসকালানী (রহ:)-এর অভিমত।

১১/ – হযরত আনাস বিন মালেক (রা:) বর্ণনা করেন যে রাসূলে খোদা (দ:) তাঁর মে’রাজ রাতের ভ্রমণ সম্পর্কে উল্লেখকালে বলেন: “জিবরীল (আ:) বেথলেহেম স্থানটিতে আমাকে বোরাক হতে নামতে এবং সেখানে নামায পড়তে অনুরোধ করেন। তা করা হলে তিনি বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (দ:)! আপনি কি জানেন কোথায় নামায পড়েছেন? আপনি বেথলেহেমে নামায পড়েছেন, যেখানে ঈসা (আ:) জন্মগ্রহণ করেছিলেন’।” [সুনানে নাসাঈ, ১ম খণ্ড, হাদীস নং ৪৪৮]  

অতএব, মাওলিদ ও আম্বিয়া (আ:)-বৃন্দ যেসব স্থানে জন্মগ্রহণ করেন, সেগুলো আল্লাহর ‘শ’আয়ের’ তথা স্মৃতিচিহ্নের অন্তর্ভুক্ত।

পংক্তি:

ওহে মাহে রবিউল আউয়াল, এ খুশি উদযাপনে আমাদের জীবন হোক উৎসর্গিত 
কেননা, তোমার আনন্দোৎসব সহস্র সহস্র ঈদকেও করেছে অতিক্রম
জগতের সবাই এতে আনন্দিত
শয়তান-ই একমাত্র ব্যতিক্রম

                                                           *সমাপ্ত*

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment