মসলক-এ আ’লা হযরত কি ও কেন?
[পড়ুন এবং শেয়ার করুন]
=====================>>
আল্লামা শায়খ সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আযহারী
(সহকারী অধ্যাপক, সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি)
প্রথমেই একথা ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকার ‘মসলকে আলা হযরত’ মানে নতুন কোন মসলক বা মাযহাবের নাম নয় বরং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন, ছালেহীন এবং মুসলিম জাতির মহান আলেম ও বিজ্ঞজনরা যে মসলক বা পথের উপর ছিলেন সেটাই মূলত ‘মসলকে আ’লা হযরত’।
এ নামকরণের মূল কারণ হলো- আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী পূর্বে উপমহাদেশের জমিনে জন্ম লাভ করেছে নতুন নতুন অনেক ফেরকাহ্, আর এ ফেরকাসমূহের প্রবর্তক বা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আচার অনুষ্ঠানকে শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয়।
বিশেষ করে ইসমাইল দেহলভী নজদী -ওয়াহাবী কর্তৃক প্রবর্তিত ভ্রান্ত আক্বিদা ভারত উপমহাদেশে আমদানী পূর্বক তা বাজারজাত করার লক্ষ্যে ‘তাক্বভীয়াতুল ঈমান’ নামক যে পুস্তকটি রচনা করে এতে রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ইলমে গায়ব’ হাযের-নাযের, শাফায়াত, সাহায্য তলব, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহ্বান করা, হায়াতুন্নবী, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ইখতিয়ার বা ক্ষমতা ইত্যাদি সকল প্রকার আকায়েদকে শিরক-বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে অথচ এ আক্বিদাহ্সমূহ ইসলামের প্রারম্ভ থেকেই ক্বোরআন হাদিস দ্বারা বিশুদ্ধ-সহীহ্ আক্বিদা হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ও গৃহীত হয়েছে।
অনুরূপভাবে মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম, ইসালে সাওয়াব, ওরস ইত্যাদি কর্মকান্ড যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে প্রচলিত এবং বিজ্ঞ আলেম ও জ্ঞানীদের নিকট পুণ্যময় আমল হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু এ সকল নতুন ফেরকার প্রবর্তক ও ধারক-বাহকের উপরোক্ত আক্বিদা ও আমলগুলোকে শিরক-বিদআত আখ্যায়িত করে সরল প্রাণ মুসলমানদের নিকট তা গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করল।
এ অবস্থায় সে সময়ের আহলে সুন্নাতের বিজ্ঞ আলেমগণ তাঁদের লিখনির মাধ্যমে এ সকল সর্বজন স্বীকৃত-বিশুদ্ধ আকায়েদ ও আমল সংরক্ষণে কাজ করেন এবং তাঁরা লিখা, বক্তব্য ও মুনাযারা বা সম্মুখ বিতর্কের মাধ্যমে প্রতিটি প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন।
ঈমান-আক্বিদা সংরক্ষনের এ যুগ সন্ধিক্ষণে ভারত উপমহাদেশে জন্মলাভ করেন ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রহমাতুল্লাহি আলায়হি। যিনি ছিলেন যুগে এক অদ্বিতীয় আলেম, যাঁকে আল্লাহ্ তায়ালা সুগভীর জ্ঞান ও হিকমত দ্বারা ধন্য করেছেন এবং তিনি জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় ৫৫টি শাখা-প্রশাখায় বিচরণ ও পান্ডিত্য অর্জন করেন। বিশেষ করে ‘ইলমে ফিক্বহ’-এ তৎকালীন সময়ে তাঁর কোন সমকক্ষতার দাবীদার ছিলনা। যার স্বীকৃতি তাঁর বিরুদ্ধাচরণকারীরাও দিতে বাধ্য হয়েছিল।
তাই তিনি দেখতে পেলেন সমকালীন ওলামা-মাশায়েখ তাঁদের লিখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে বাতিল ফেরকাগুলো কর্তৃক উপস্থাপিত প্রশ্ন ও আপত্তিগুলোর জবাব দিয়ে আসছেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সঠিক আক্বিদাসহ জনসমক্ষে উপস্থাপনের মাধ্যমে ঈমান ও আক্বিদা সংরক্ষণ করে আসছেন। তখন তিনিও এ মহান খেদমতে নিজেকে ন্যস্ত করে দিলেন এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বায়েদসমূহের সমর্থনে অকাট্য দলিল-প্রমাণাদির এক মহাসম্ভার প্রস্তুত করলেন এবং এক একটি আক্বিদার সমর্থনে একাধিক স্বতন্ত্র কিতাব-গ্রন্থ রচনা করেন। পাশাপাশি তাঁর সময়কার প্রচলিত নানা আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় রীতি-নীতি নিয়েও তিনি গবেষণা করেন এবং তৎমধ্যে যেগুলো কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিল এগুলোর সমর্থনে তিনি অসংখ্য কিতাবাদি রচনা করেন। আর যা কোরআন-হাদিস সমর্থিত ছিলনা তার খন্ডনেও তিনি প্রচুর পুস্তকাদি লিখেন।
এভাবে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে সহস্রাধিক কিতাবের এক মহা ভান্ডার মুসলিম জাতিকে উপহার দেন। সুতরাং তিনি বাতিল ফেরকাহ্সমূহের খন্ডনে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদ ও আমলের সমর্থনে যে মহান খেদমত আঞ্জাম দিয়েছিলেন এর ফলে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামাগণের কাতারে সর্বপ্রথম স্থানে সমাসীন হয়ে যান। আর আহলে সুন্নাতের এ মহান খেদমত ও প্রতিনিধিত্বের কারণে এক সময়ে এ আক্বিদাসমূহ তাঁর দিকে নিসবত বা সম্পর্কিত হতে থাকে। এক পর্যায়ে অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ালো যে, তাঁকে সর্বস্তরের সুন্নী মুসলমানগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এক মহান দিক নির্দেশক হিসেবেই স্বীকৃতি দিতে লাগল।
আহলে সুন্নাত মানেই ইমাম আহমদ রেযা, আর ইমাম আহমদ রেযা মানেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত। আর এ কারণেই যখন কোন হেজাযী বা সিরিয়াবাসী অথবা কোন ইরাকী বা ইয়ামনবাসী কিংবা কোন মিসরী বা সুদানীও যদি মদিনা শরীফে গিয়ে ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্’ বলে আহ্বান করে তখন নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করে, যদিওবা তার সাথে ভারতের ‘বেরলী’ শহরের কোন সম্পর্কই নেই। এমনিভাবে যদি কেউ ‘এয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার সুপারিশ প্রত্যাশা করছি, বলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শাফায়াত কামনা করে তখন সে আরব উপদ্বীপের লোক হলেও ওয়াহাবী-নজদীরা তাকে ‘বেরলভী’ বলে আখ্যায়িত করে থাকে অথচ ‘বেরলভী’ তাকেই বলা উচিত যে ভারতের ‘বেরলী’ শহরে বসবাস করে। কিন্তু তার কারণ আপনার নিকট স্পষ্ট আর তাহলো- উপরোক্ত আক্বিদাসমূহ মূলত সেই আকায়েদ যা সলফে সালেহীনগণ পোষণ করতেন, আর ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি এগুলোকে দলীল-প্রমাণাদি দ্বারা সুদৃঢ় ও মজবুতভাবে উপস্থাপন করেছেন এবং আক্বায়েদের প্রমাণের ক্ষেত্রে তাঁর অবাদানই ছিল সর্বাধিক। যার ফলে তিনি ভারতবর্ষের আলেমগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধি ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেন।
পাশাপাশি এ আকিদাগুলো ইমাম আহমদ রেযার দিকে এতবেশী নিসবত বা সম্পর্কিত হয়ে গেছে যে, পৃথিবীর যে কোন মুসলমানই যদি এ আক্বিদার বিশ্বাসী ও সমর্থক হয় তখন তাকে ইমাম আহমদ রেযার দিকে নিসবত করে ‘বেরলভী’ই বলে আখ্যায়িত করা হয়।
যেহেতু ভারত উপমহাদেশে নানা ফেরকার এক বিপুল সম্ভার বিদ্যমান। তাই প্রকৃত ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’ এর সঠিক পরিচয় লাভ করা অত্যন্ত দুরূহ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা দেওবন্দীরাও নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ হিসেবেই প্রকাশ করে থাকে। অথচ ওয়াহাবী ও দেওবন্দীদের মূল আকিদা ও এক ও অভিন্ন। শুধু পার্থক্য হলো- ওয়াহাবীরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদিস’ হিসেবে দাবী করে এবং চার মাযহাবের কোন মাযহাবের ইমামের তাকলিদ অনুসরণ করে না। পক্ষান্তরে দেওবন্দীরা যদিওবা তাকলীদ বা চার মাযহাবের কোন এক মাযহাবের অনুসারী কিন্তু তারা ওয়াহাবী আকায়েদকেও হক্ব বা সত্য হিসাবে মানে ও স্বীকার করে। তাই বর্তমান যুগে প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা তা বুঝে উঠা বা চিহ্ণিত করা মুশকিলের ব্যাপার। এ কারণেই আমাদের বিজ্ঞ আলেমগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’কে অন্যান্য ফেরকাহ্ আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘মসলকে আলা হযরত’ ব্যবহারকে সমীচীন মনে করেছেন।
আর এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো, এখন যে ব্যক্তি ‘মসলকে আলা হযরত’ কে স্বীকারকারী হিসেবে প্রমাণিত হবে তখন এমনিতেই তার সম্পর্কে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, এ ব্যক্তি ইলমে গায়ব, হাযের-নাযের, সাহায্য প্রার্থনা (ইসতায়ানাত), শাফায়াত ইত্যাদিকে মান্যকারী এবং আহলে সুন্নাতের অন্যান্য আমল ও আচার-অনুষ্ঠান তথা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম, মিলাদ-কিয়াম, সালাত-সালাম ইত্যাদিকেও পূণ্য ও সওয়াবের আমল হিসেবে মেনে নেয়।
যদি কেউ একথা বলে যে, ‘না, নিজেকে শুধু সুন্নী দাবী করাই যথেষ্ট’ তখন আমি তার উদ্দেশ্যে বলবঃ জনাব! যদি কেউ নিজেকে সুন্নী দাবী করে তাহলে আপনি তাকে কিভাবে বুঝবেন যে, সে কোন ধরনের সুন্নী? হানাফী মাযহাবের অনুসারী হয়েও ওয়াহাবী আকিদাকে হক্ব বা সত্য হিসেবে মান্যকারী, নাকি ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! স্লোগানধারী?
তাহলে প্রমাণিত হলো- শুধু ‘সুন্নী’ বললে কারও সঠিক পরিচয় পাওয়া যাবেনা, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে ‘বেরলভী সুন্নী’ বলে তাহলে সাথে সাথে বুঝা যাবে যে, এ ব্যক্তি হানাফীও এবং প্রকৃত সুন্নীও। অথবা কেউ নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করে তখনও ওই মুসলমানের আক্বিদা ও চিন্তাধারা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
প্রত্যেক যুগে আহলে ঈমান তথা হক্বপন্থীদের পরিচয় পেশ করা আবশ্যক ছিল। দেখুন, মক্কা ভূমিতে যখন ইসলামের দাওয়াত প্রচারিত হলো তখনকার ঈমানদারদের পরিচয় ছিল-‘মুসলমান’ তখন যে কেউ নিজেকে মুসলমান বলতো তাতে বুঝা যেত, সে আল্লাহ্ তা‘আলার ওয়াহ্দানিয়্যাত এবং রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর রিসালতকে বিশ্বাস করে এবং তাঁর সুন্নত বা নির্দেশানুযায়ী আমলকারী তথা ‘আহলে সুন্নাত’ এর অনুসারী। কিন্তু এক শতাব্দী যেতে না যেতে ঈমানদার বা আহলে হক্বের পরিচয়ের জন্য নতুন একটি শব্দ সংযোজনের প্রয়োজন হয়ে পড়ল, আর তা হলো ‘সুন্নী’ তার কারণ হলো- তখন এমন একটি নতুন ফেরকা উদ্ভব হলো যারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক্ব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, ফারুকে আযম এবং ওসমান যুন নুরাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে নানা অপবাদ দিতে শুরু করল। তাঁদেরকে বরহক খলিফা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাল এবং তাঁদেরকে লা’নত দিতে লাগল। কিন্তু এসব কিছুর পরও তারা নিজেদেরকে মুসলমান হিসেবেই দাবী করতে লাগল। এ কারণে সে সময়ের হক্বপন্থীরা নিজেদের সঠিক পরিচয়ের জন্য একটি অতিরিক্ত শব্দ সংযোজন করল আর তা হলো ‘সুন্নী মুসলমান’ । এ সময় কেউ যদি নিজেকে শুধু মুসলমান বলত তখন তার সম্পর্কে এ প্রশ্ন জাগত যে, সে কোন মুসলমান? হযরত সিদ্দিকে আকবর, হযরত ফারুকে আযম এবং হযরত ওসমানে গনি রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমকে গালিগালাজকারী মুসলমান? নাকি তাঁদের প্রতি সম্মান-তাজিম প্রদর্শনকারী এবং তাঁদের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে রহমত কামনাকারী মুসলমান?
আর যদি কেউ নিজেকে ‘সুন্নী মুসলমান’ বলে তখন তার সম্পর্কে এ ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি খোলাফায়ে রাশেদাকে সম্মানকারী মুসলমান এভাবে খোলাফায়ে রাশেদার প্রতি লানতকারী ‘রাফেজী সম্প্রদায়ের বিপরীতে ‘আহলে সুন্নাত’ এর একটি আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হলো, আর তাহলো- ‘‘সুন্নী মুসলমান।’’
এরই ধারাবাহিকতায় কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকে যে, হানাফী শাফেয় মালেকী ও হাম্বলী এ চারটি মাযহাব থাকার পরও ‘মসলকে আলা হযরত’ নামে পঞ্চম একটি নতুন মাযহাবের আবার প্রয়োজন কি? উত্তরে বলতে পারি এ কথা জেনে রাখা দরকার যে, ‘মসলকে আলা হযরত’ নতুন কোন মাযহাবের নাম নয় বরং উদ্দেশ্যই হলো- একথা প্রমাণ করা যে, ‘উপরিউক্ত চার মাযহাব হক ও সত্য। তাই এ চার মাযহাবের কোন একটি তাকলীদ (অনুসরণ) করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। যা ইমাম আহমদ রেযার কিতাবাদি থেকে প্রমাণিত। তাই কোন শাফেয়ী বা হাম্বলী মাযহাবের অনুসারীও যদি নিজেকে ‘মসলকে আলা হযরত’ এর দিকে নিসবত করে তাহলে তার বক্তব্য থেকে এ সথা বুঝা যাবে যে, সে ফেকহী ফরযী বা আমলী দিক থেকে স্বীয় ইমামের অনুসারী পাশাপাশি আকিদাও আহলে সুন্নাতের আচার অনুষ্ঠানাদিরও সমর্থক ও বিশ্বাসী।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলে হয়না, আর তা হলো- বিরুদ্ধাচরণকারীরা এ বলে বেড়ায় যে, ‘এটি একটি পঞ্চম মাযহাব’ আমরা তাদের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জসহ ঘোষনা করতে পারিঃ আপনারা কি প্রমাণ করতে পারবেন যে, ইমাম আহমদ রেযা রহমাতুল্লাহি আলায়হি কোন একটি আক্বিদাকে কোরআন-হাদিসের দলিল ব্যতিরেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন?
যে কোন বিষয়ের উপর তাঁর কিতাব খুলে দেখুন, দেখতে পাবেন তিনি প্রতিটি আকিদা প্রমাণের জন্য কোরআন-হাদিসের পাশাপাশি সলফে সালেহীনদের মতামত ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন।
সত্যকে জানতে হলে শর্ত হলো- উগ্রতাকে পরিহার করে নিরপেক্ষভাবে তাঁর পুস্তকাদি পাঠ করা। এতে একথা দিবালোকের ন্যায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে যে, আলা হযরত তাই বলেছেন যা চৌদ্দশত বছর ধরে আহলে হক আলেম ও ফক্বীহগণ বলে আসছেন।
তাও যদি কেউ মানতে রাজি না হয় এবং ‘মসলক’ শব্দটি ব্যবহারে আপত্তি থাকে, আর একে একটি নতুন মাযহাব হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায় তাহলে ওহাহাবী-দেওবন্দীদের উদ্দেশ্যে বলব আপনারা কি জবাব দেবেন যে, আপনাদেরই সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক মওলভী মোহাম্মদ ইকরাম তার ‘হাওযে কাওছার’ এ শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেছ দেহলভীর আকিদা ও চিন্তাধারা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মসলকে শাহ্ ওয়ালীউল্লাহ্’ শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন।
তাহলে বলবেন কি! চার মাযহাবের বাইরে পঞ্চম বা ষষ্ঠ একটি মাযহাব হলো- ‘মসলকে শাহ্ওয়ালী উল্লাহ্’’? আপনার যে উত্তরটি হবে সেটি আমাদেরও উত্তর।