ব্রেলভীদের খন্ডনে দেওবন্দীদের ইলমী খিয়ানত কেন? (২য় পর্ব)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

বাদায়ূনী রহ: এর ফতোয়ার সারমর্ম

মূল পর্যালোচনায় যাওয়ার আগে উপরের ফতোয়াটি আরও এক দু’বার পড়ে নিন। বাহাদূর শাহ জাফরের মূল প্রশ্ন কী ছিলো এবং এর উত্তরে মাওলানা বাদায়ূনী কী লিখেছেন? বাহাদূর শাহ জাফরের সময় কিছু লোক বলত, শুধু তা’জিয়া দেখাটাই সরাসরি কুফুরী। এক্ষেত্রে সে ইচ্ছায় দেখুক বা অনিচ্ছায়। এই প্রশ্নের উত্তরে মাওলানা বাদায়ূনী শুরুতে বলেছেন, কুফুর বা শিরকের মূল ভিত্তি হলো ব্যক্তির নিয়তের উপর। শুধু চোখে দেখার কারণে কোন কিছু শিরক বা কুফুর হয় না। যতক্ষণ না এর সাথে ব্যক্তির অন্তরের সত্যায়ন বা কুফুরী যুক্ত হয়। অন্তরের বিষয় না দেখে শুধু কাজের ভিত্তিতে কুফুরী-শিরকের ফতোয়া দেয়া মূলত: বাতিল ফেরকা খারেজীদের কাজ।

অন্তরের কুফুরী ছাড়া শুধু চোখে দেখা যে কুফুরী হতে পারে না, এর স্বপক্ষে মাওলানা বাদায়ূনী অনেকগুলো প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন।

১। প্রথমত: চন্দ্র ও সূর্য্য পূজা করে এমন অনেক মানুষ আছে পৃথিবীতে। এখন কোন কিছু পূজা করা হলে সেই জিনিস শুধু দেখা যদি কুফুরী হতো, তাহলে আমরা যত বার চাঁদ বা সূর্য্যকে দেখতাম, ততবার কাফের হয়ে যেতাম।

২। হিন্দুরা গঙ্গা-যমুনার পূঁজো করে। এখন হিন্দুদের এই পূঁজোর কারণে যদি শুধু দেখাটা কুফুর বা শিরক হতো তাহলে এই দুই নদীর দিকে তাকালে কিংবা এর পানি খেলে কাফের হয়ে যাওয়ার কথা।

৩। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত প্রাপ্তির পরে বহু উমরাহ পালন করেছেন। হজ্ব ফরজ হওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম বহু হজ্ব-উমরাহ করেছেন। আর স্বাভাবিকভাবে তখন কা’বা চত্তর ও সাফা-মারওয়াতে মুশরিকদের মূর্তি ছিলো। এগুলো তারা দেখেছেন। এখন শুধু দেখা যদি কুফুর বা শিরক হতো, তাহলে তাদের উপরও এই ফতোয়া এসে যেত।

৪। একইভাবে শরীয়তের বেশ কিছু মাসাইল রয়েছে, যেগুলো প্রমাণ করে অন্তরের কুফুরী ছাড়া শুধু কাজ কুফুরী হয় না। যেমন, মন্দির বা গীর্জা বানিয়ে, অগ্নিপূজকের আগুন জ্বালিয়ে পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ। এখন যদি অন্তরের নিয়ত না দেখে শুধু কাজের উপর ফতোয়া হতো, তাহলে এগুলো সবই কুফুরী হিসেবে গণ্য হতো।

৫। ফাতহুল বারী থেকে ইবনে হাজারের বক্তব্য উল্লেখ করে দেখিয়েছেন, মূর্তি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে আলিমদের অবস্থান কী। এবং মূর্তি বানান যে হারাম সেটিও উল্লেখ করেছেন। এখন শরীয়তের মাসআলার ভিত্তি যদি মূল কাজের উপর হতো তাহলে মূর্তি বানান কুফুর হতো এবং এর ক্রয়-বিক্রয়ও কুফুর হতো। কিন্তু শরীয়তে কোনটা হারাম, কোনটা শর্ত-সাপেক্ষে বৈধ। এগুলো সরাসরি কুফুর নয়।

উপরের পাঁচটি বিষয় যদি কুফুর না হয়, তাহলে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় শুধু তা’জিয়া দেখা কুফুর হবে কেন?

এটা ছিলো, বাদায়ূনী রহ: এর পুরো আলোচনার সার কথা। এখানে তিনি সতর্কতা হিসেবে কাফের-মুশরিকদের সেসব অনুষ্ঠানের কথাও উল্লেখ করেছেন, যেগুলোতে তাদেরকে সম্মানের উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণ করা কুফুর বা শিরক।যেমন অগ্নিপূজকদের নববর্ষে তাদের সম্মান বা তাদের কাজে একাত্ম হয়ে অংশগ্রহণ করা। তাদের এসব দিবস উপলক্ষ্যে তাদের সম্মানে বিশেষ উপহার দেয়া। এগুলো কুফুর – শিরক হতে পারে ব্যক্তির নিয়তের কারণে।একইভাবে তা’জিয়ার ক্ষেত্রেও তিনি বলেছেন, তা’জিয়াকে কেউ যদি ইবাদত করে, তাহলে এটাকে শিরকের উপলক্ষ্য বলতে পারত, কিন্তু শুধু তা’জিয়া দেখাকে সরাসরি কুফুর বা শিরক বলার সুযোগ কোথায়? এই ধরণের মত তো খারেজীরা ছাড়া অন্য কেউ রাখে না?

কেউ যদি ঠান্ডা মাথায় বাদায়ূনী রহ: এর পুরো আলোচনাটি পড়ে, তাহলে সে অবশ্যই বলতে বাধ্য হবে বাদায়ূনী রহ: উসূল ও দলিলের আলোকে চমৎকার আলোচনা করেছেন। এখানে সমালোচনা করার মতো কোন উপাদান উক্ত ফতোয়াতে নেই। প্রত্যোকটি বিষয় তিনি উসূল, ফিকহের কিতাব, হাদীস, হাদীসের উল্লেখযোগ্য ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো থেকে উপস্থাপন করে দেখিয়েছেন যে, ইচ্ছায় – অনিচ্ছায় শুধু দেখার কারণে শরীয়তে কুফুর হয় না। এটি আহলে সুন্নতের মত নয়। বরং এটি বাতিল ফেরকা খারেজীদের মত।

দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের সমালোচনার পর্যালোচনা

বাহাদুর শাহ জাফরের প্রশ্ন ছিলো, “ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় শিয়াদের তা’জিয়া দেখা কুফুরী” এমন বক্তব্য প্রদানকারীর হুকুম কী?

পুরো দালিলিক আলোচনা শেষে মাওলানা বাদায়ূনী ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে উপসংহার টেনেছেন এভাবে,

“দেখার বিষয় হল, শুধু মূর্তি বানান কুফুর নয়, আর মূর্তির ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে উলামাদের মাঝে মতবিরোধ আছে; মন্দির বা গীর্জা বানানোর দিনমজুরি, অগ্নিপূজকদের আগুন প্রজ্জলনের মজুরি নেয়া যদি জায়েজ হতে পারে, তাহলে ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় শুধু তা’জিয়া দেখা কুফুর হবে কেন?

যে ব্যক্তি ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তা’জিয়া দেখাকে সরাসরি কুফুর বলে দেয়, সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দ্বীন ও শরীয়তের স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।”

মাওলানা বাদায়ূনীর উপসংহারের বক্তব্য নিচের ছবির সাথে মিলিয়ে নিন।

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব সহ উলামায়ে দেওবন্দের যারা মাওলানা বাদায়ূনীর সমালোচনা করেছেন, তারা তার উপসংহারের একটি পূর্ণ বাক্যের কিছু অংশ কেটে নিয়েছেন। পুরো বাক্যের অর্ধেক কেটে তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন মর্ম জুড়ে দিয়েছেন।

দু:খের বিষয় হলো, মাওলানা বাদায়ূনীর পূর্ণ বাক্যের একটি অংশ কেটে দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম একেকজন একেক রকম গল্প তৈরি করেছেন। মাওলানা বাদায়ূনীর কী আলোচনা ছিল, তিনি কী প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তা তো উপরে স্পষ্ট হয়েছে। এখন চলুন, এই বিষয়টাকে দেওবন্দী উলামায়ে কেরাম কীভাবে উপস্থাপন করেন, সেটা দেখা যাক।

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব তার আলোচনাটি নিয়েছেন আরেক দেওবন্দী আলিম ডক্টর খালিদ মাহমুদের কাছ থেকে। যিনি ‘শাহ ইসমাইল শহীদ’, মুতালায়ে ব্রেলভীয়াত সহ আরও বেশ কয়েকটি কিতাব লিখেছেন। ডক্টর খালিদ মাহমুদ বিষয়টি উভয় কিতাবেই উল্লেখ করেছেন। চলুন দেখা যাক, ডক্টর সাহেব বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন,

১। ‘শাহ ইসমাইল মুহাদ্দিসে দেহলভী, শহীদে বালাকোট’ নামে ডক্টর খালিদ মাহমুদ আলাদা একটি কিতাব লিখেছেন। এই কিতাবের ১৭৭ পৃষ্ঠায় ডক্টর খালিদ মাহমুদ লিখেছেন,

“ইংরেজদের সময়ে এরকম একটা দু:সময়ও এসেছিল যে মুসলমানরা ‘বারজাখী তাসাউর’ এর পদ্ধতিতে হিন্দুদের মূর্তি পূজার সাথে সমঝোতা করতে শুরু করে। হিন্দুদের মতো মুশরিক সম্প্রদায় যাদের শিরকের কোন বৈধ ব্যাখ্যা পাওয়া সম্ভব ছিলো না তাদের পক্ষেও ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা হতে লাগল। মূর্তি বানানও কুফুরী রইল না। মন্দির তৈরি করাও জায়েজ হয়ে গেল। ইংরেজদের শাসনামলে মাওলানা ফজলে রাসূল বাদায়ূনী ফতোয়া দিয়েছিলেন,

ببینید ساختن بت کفر نیست، و در جواز بیع آن تفصیل علی الاختلاف، ومزدوری ساختن بتخانہ وبرا فروختن نارمعبود مجوس جائز۔

অর্থাৎ : লক্ষ্য কর, মূর্তি বানানো কুফর নয় এবং এর বেচাকেনা জায়েয হওয়ার বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে। আর মন্দির নির্মাণে মজদুরি করা ও অগ্নিপূজকের অগ্নি প্রজ্জ্বালনে মজদুরি করাও জায়েয।’ -ফাতাওয়া মৌলভী ফযলে রাসূল বাদায়ুনী পৃ. ১৪, মুদ্রণ : আল খালাইক প্রেস, ১২২৮ হিজরী, শাহ জাহান আবাদ; শাহ ইসমাঈল শহীদ, ড. খালেদ মাহমুদ পৃ. ১৭৭

উনার বক্তব্যের ছবি নিচে দেয়া হলো।

এটা হল, ডক্টর খালিদ মাহমুদের প্রথম গল্প। যার একটি অংশ আমাদের মাওলানা আব্দুল মালেক মাসিক আল-কাউসারে এনে মাওলানা বাদায়ূনীর আমানতদারি ও দ্বিয়াতনদারিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

২। এবার চলুন, ডক্টর খালিদ মাহমুদের বানান আরেকটি গল্পের দিকে যাওয়া যাক। একই বিষয় তিনি মুতালায়ে ব্রেলভীয়াতের ৩য় খন্ডে এনেছেন। তিনি লিখেছেন,

“হিন্দুরা মূর্তি পূজারী ছিলো। এবং তখনও পন্ডিত দিয়ানন্দ ‘আরিয়া’ সমাজের আন্দোলন শুরু করে নাই। তখন মুসলমানদের মূর্তি প্রতি অনেক ঘৃণা ছিলো। তারা কখনও মূর্তি ও মন্দিরের কাছে যেত না। হিন্দুরা চাচ্ছিল, কোনভাবে যদি মুসলমানদের অন্তর থেকে মূর্তি পূজার ঘৃণা দূর করা যায়। তারা হঠাৎ এই মাসআলা নিয়ে আলোচনা তুলল যে, মূর্তি বানান কুফুরী কি না? এই ফতোয়ার জন্য দিল্লীর পুরাতন ইলমী মারকাজ মাদ্রাসায়ে রহিমিয়ার দিকে যাওয়া হলো না। ঐ সমস্ত আলিমদের খোঁজা হল, যারা দিল্লীর এসব মুহাদ্দিসগণের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করার কাজে লিপ্ত ছিলো। মাওলানা ফজলে রাসূল বাদায়ূনী এসব আলিমদের অগ্রনায়ক ছিলেন। মাওলানা ইসমাইল শহীদের বিরুদ্ধে ‘সাইফুল জাব্বার’ ইত্যাদি কিতাবও লিখেছেন। তিনি ফতোয়া দিলেন, যা শাহজানাবাদের মুফিদুল খালাইক নামক প্রেস খুব ১২২৮ হিজরীতে খুব ধম-ধামের সাথে প্রচার করে।

বাদায়ূনী ফতোয়া দেন,

“ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি বানান কুফুর নয়”

লক্ষ্য করুন, মাওলানা বাদায়ূনী কতো ঘৃণ্যভাবে হিন্দুইজম বা হিন্দুত্ববাদকে সাপোর্ট দিয়েছেন। মুসলমানদের তো মূর্তির নামের প্রতি ঘৃণা ছিলো। তারা মূর্তিকে হাত দিতেও পছন্দ করত না। বানান তো অনেক দূরের বিষয়। কিন্তু মাওলানা বাদায়ূনী মুসলমানদের অন্তর থেকে মূর্তির ঘৃণা কমিয়ে দিতে এক আজীব ফিকহী মাসআলার সাহায্য নেন”

[ মুতালায়ে ব্রেলভীয়াত, খ: ৩, পৃ: ১১৫ ]

ডক্টর খালিদ মাহমুদের আলোচনার ছবি নিচে দেয়া হলো,

ডক্টর খালিদ মাহমুদ প্রথম গল্পের চেয়ে এবারের গল্পটা আরেকটু চিত্তাকর্ষক ও আবেদনময়ী করে বানিয়েছেন। গল্পটিকে বেশী আকর্ষণীয় করতে গিয়ে পূর্বের কাটছাটের সাথে পুরোপুুরি একটি মিথ্যা কথাও জুড়ে দিতে হয়েছে। এই মিথ্যা যোগ না করলে হয়ত গল্পটি একটু বেরসিক থেকে যেত।

এই গল্পে একই কিতাবের রেফারেন্স এনে তিনি লিখেছেন,

“ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি বানান কুফুর নয়”

‘শাহ ইসমাইল শহীদ’ নামক যে বইটি তিনি লিখেছেন, সেখানেও তিনি এই বক্তব্য এনেছেন। সেই বইয়ের রেফারেন্স বই এবং মুতালায়ে ব্রেলভীয়াতের রেফারেন্স বইও এক। তবে এখানে তিনি নিজের থেকে যেই মিথ্যা অংশটুকু জুড়ে দিয়ে পুরো একটি গল্প লিখেছেন, সেই মিথ্যা অংশ তার আগের বইয়েও নেই। এখানে তিনি “ইবাদতের উদ্দেশ্যে” বা ইবাদত কে লিয়ে কথাটা নিজের থেকে যুক্ত করে বানান গল্পটাকে প্রাণ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এমনিতে মূর্তি বানান আর ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি বানানোর মাঝে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মাওলানা বাদায়ূনী নিজে ইবনে হাজারের বক্তব্য নকল করে দেখিয়েছেন, স্বাভাবিকভাবে একজন মুসলমানের জন্য মূর্তি বানান হারাম। কিন্তু সেটি সরাসরি কুফুর নয়। অথচ মাওলানা বাদায়ূনীর উপর নিজের থেকে একটি ডাহা মিথ্যা কথা জুড়ে দিয়েছেন ডক্টর খালিদ মাহমুদ। মাওলানা বাদায়ূনী নাকি লিখেছেন, ইবাদতের উদ্দেশ্যে মূর্তি বানান কুফুর নয়। ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দিনে দুপুরে এতো বড় মিথ্যা কথা ডক্টর সাহেব কীভাবে বানালেন?

এতো গেল ফজলে রাসূল বাদায়ূনী রহ: এর বক্তব্য কাটছাট ও এর সাথে নিজের মতো করে মিথ্যা জুড়ে দেয়ার গল্প।

এই মিথ্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরার জন্য মাওলানা বাদায়ূনীর নামে হিন্দুইজম প্রতিষ্ঠার যেই অপবাদ দিলেন সেটার বিচার তো আল্লাহ তায়ালাই করবেন। বাকী তিনি যে নিজের মতো করে পুরো একটি মিথ্যা গল্প লিখেছেন, তা পূর্বের আলোচনা থেকে পাঠকের সামনে আশা করি স্পষ্ট হয়েছে।

মূল প্রশ্নটি হিন্দুদের পক্ষ থেকে ছিলো না। মূল প্রশ্নটি করেছিলেন সেই সময়ের মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর। আর প্রশ্নও এ নিয়ে ছিলো না যে, মূর্তি বানান কুফুরী কি না। মূল প্রশ্ন ছিলো, ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তা’জিয়া দেখা কুফুরী নামক যেই ফতোয়া দেয়া হচ্ছে, এ ব্যাপারে শরয়ী হুকুম কী? বাহাদুর শাহ জাফরের প্রশ্নকে হিন্দু সমাজের প্রশ্ন বানিয়ে দেয়াটা বোধ হয় ডক্টর সাহেবের মতো গল্প লেখকের পক্ষেই সম্ভব। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় তা’জিয়া দেখা কুফুরী কি না, এই প্রশ্নকে মূর্তি বানান কুফুরী কি না, সেই দিকে নিয়ে যাওয়াও তার মিথ্যা গল্প তৈরির দক্ষতার প্রমাণ বহন করে।

এছাড়া দিল্লির মাদ্রাসায়ে রহিমিয়ার আলিমদেরকে বাদ দিয়ে বাদায়ূনী উলামাদেরকে খুঁজে বের করার গল্পটিও ডক্টর সাহেব সুন্দরভাবে বানিয়েছেন। কারণ আমরা উপরেই দেখে আসছি, এই ফতোয়ার সাথে দিল্লির মাদ্রাসায়ে রহিমিয়া থেকে সনদ নেয়া শীর্ষ ৫জন আলিম সমর্থন ও স্বাক্ষর করেছেন।

নিজের থেকে এভাবে মিথ্যা গল্প বানাবার অসাধরণ যোগ্যতা নিয়ে ডক্টর খালিদ মাহমুদ কেন তার মুতালায়ে ব্রেলভীয়াত মাত্র ৮ খন্ডে সীমিত রাখলেন, সেটাই আশ্চর্য্য। এরকম মিথ্যা গল্প যেহেতু বানিয়েছেনই আরও দশ-বিশ খন্ড লিখলে অন্যরাও পড়ে বিনোদন পেতে পারত। গল্প-উপন্যাস পড়ার চেয়ে এধরণের বানান মিথ্যা গল্প পড়াও কম বিনোদনের নয়। তিনি যে শুধু এই একটা বিষয়ে এধরণের মিথ্যা গল্প বানিয়েছেন এমন নয়, ডক্টর সাহেবের অধিকাংশ আলোচনাতেই এরকম চিত্তাকর্ষক মিথ্যা রয়েছে। পরবর্তীতে আরও অনেক উদাহরণ সামনে আনার চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।ডক্টর সাহেবের কিতাব পড়ে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি হলো, আমার জীবনে এতো বাজে বই আমি পড়িনি। এদেশের মুজাফফর বিন মুহসিনদের চেয়েও নিম্নমানের কোন লেখার উদাহরণ যদি খোঁজা হয়, যার প্রায় পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ভুল তথ্য, মিথ্যা, বানোয়াট বক্তব্য আর অপবাদ দিয়ে ভরা, তবে ডক্টর সাহেবের মুতালায়ে ব্রেলভীয়াত পেশ করা যেতে পারে।

এবার আসুন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবে বক্তব্যটি দেখা যাক। মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব মাসিক আল-কাউসারে লিখেছেন,

“এক. প্রথমে মৌলভী ফযলে রাসূল বাদায়ুনীকে চিনে নিন, কে এই লোক? তার দ্বীনদারি ও আমানতদারির অবস্থা তো তার নিম্নোক্ত ফতোয়া থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।

ইংরেজ শাসনামলে সে ফতোয়া দিয়েছিল-

ببینید ساختن بت کفر نیست، و در جواز بیع آن تفصیل علی الاختلاف، ومزدوری ساختن بتخانہ وبرا فروختن نارمعبود مجوس جائز۔

অর্থাৎ : লক্ষ্য কর, মূর্তি বানানো কুফর নয় এবং এর বেচাকেনা জায়েয হওয়ার বিষয়ে কিছু ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আছে। আর মন্দির নির্মাণে মজদুরি করা ও অগ্নিপূজকের অগ্নি প্রজ্জ্বালনে মজদুরি করাও জায়েয।’ -ফাতাওয়া মৌলভী ফযলে রাসূল বাদায়ুনী পৃ. ১৪, মুদ্রণ : আল খালাইক প্রেস, ১২২৮ হিজরী, শাহ জাহান আবাদ; শাহ ইসমাঈল শহীদ, ড. খালেদ মাহমুদ পৃ. ১৭৭

যে লোক মন্দির নির্মাণে ও অগ্নিপূজার জন্য আগুন প্রজ্জ্বালনের সেবাদানকে জায়েয বলে এবং মূর্তি নির্মাণে উৎসাহিত করা হয় এমন সব কথা ফতোয়া আকারে সমাজে প্রচার করে, তার কাউকে কাফির বলা বা মুসলমান বলায় কী আসে যায়?”

আমি এতো দিন মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব হুজুরকে তাহকীক, ইলমী আদব, আদল ও ইনসাফের যেই উঁচু শিখরে বিশ্বাস করতাম, হুজুরের উপরের লেখাটিতে এগুলোর অনুপস্থিতি দেখে সীমাহীন কষ্ট পাই।

প্রথমত: আব্দুল মালেক সাহেব হুজুরের মতো তাহকীকি মানুষের জন্য ডক্টর খালিদ মাহমুদের কাটছাট করা একটি বক্তব্যের উপর নির্ভর করা শোভা পায় না।

দ্বিতীয়ত: মাওলানা বাদায়ূনীর আমানতদারি ও দ্বিয়ানতদারিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এরকম একটা বানোয়াট বিষয়ের উপর নির্ভর করা কোনভাবেই আমাদের চেনা-জানা আব্দুল মালেক সাহেব হুজুরের সাথে যায় না। তিনি অন্ত:ত এতটুকু খোঁজ-খবর নিতে পারতেন যে, কী কারণে উক্ত ফতোয়াটি দেয়া হয়েছিল? এগুলো না করে একজন লোকের পূর্ণ বাক্যের অর্ধেক বা কাটছাট ও বানোয়াট বক্তব্যের উপর নির্ভর করে মাওলানা বাদায়ূনীকে এভাবে আক্রমণ করায় খোদ মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেবের তাহকীক, ইলমী আদব ও ন্যায়-ইনসাফ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

তৃতীয়ত: মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব বলেছেন,

“যে লোক মন্দির নির্মাণে ও অগ্নিপূজার জন্য আগুন প্রজ্জ্বালনের সেবাদানকে জায়েয বলে এবং মূর্তি নির্মাণে উৎসাহিত করা হয় এমন সব কথা ফতোয়া আকারে সমাজে প্রচার করে, তার কাউকে কাফির বলা বা মুসলমান বলায় কী আসে যায়?”

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব হুজুর “মন্দির নির্মাণে ও অগ্নিপূজার জন্য আগুন প্রজ্জ্বালনের সেবাদানকে জায়েয” বলাকে মাওলানা বাদায়ূনীর অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন হলো, আপনি কি বিষয়টাকে নাজায়েজ মনে করেন? যদি নাজায়েজ মনে করে থাকেন, কীসের ভিত্তিতে নাজায়েজ? এই মাসআলা তো বেশ প্রসিদ্ধ। হানাফী মাজহাবের উল্লেখযোগ্য প্রায় সব ফতোয়ার কিতাবে মাসআলাটি এসেছে এবং প্রায় সবাই এটাকে জায়েজ বলেছেন। এমনকি দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের ফতোয়ার কিতাবগুলোতেও একে জায়েজ লেখা হয়েছে। এমন একটা জায়েজ মাসআলা লেখার কারণে যদি কারও দ্বীনদারি, আমানতদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে তো ইমাম আবু হানিফা রহ: থেকে শুরু করে ফিকহের যতো কিতাবে এই মাসআলাকে জায়েজ বলা হয়েছে সবার আমানতদারি ও দ্বিনদারি নিয়ে প্রশ্ন ওঠবে?

এছাড়া আব্দুল মালেক সাহেব হুজুর লিখেছেন,

“মূর্তি নির্মাণে উৎসাহিত করা হয় এমন সব কথা ফতোয়া আকারে সমাজে প্রচার করে”

মাওলানা বাদায়ূনী কোন কথা বলে সমাজে মূর্তি নির্মাণকে উৎসাহিত করেছেন? উনার পুরো ফতোয়ার কোন অংশে মূর্তি নির্মাণকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সেটি ফতোয়ার কোন শব্দ বা বাক্য থেকে বোঝা গেল?

এখানে কি মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব হুজুরও ডক্টর খালিদ মাহমুদের বানান গল্পে প্রভাবিত হয়ে এমন একটি বানোয়াট কথা মাওলানা বাদায়ূনীর উপর চাপিয়ে দিলেন?

আরেকটি বিষয় হলো, আব্দুল মালেক সাহেব হুজুর লিখেছেন,

“ইংরেজ শাসনামলে সে ফতোয়া দিয়েছিল”

হুজুরের কথার উদ্দেশ্য কয়েকটি হতে পারে,

১। এই ফতোয়াটি ইংরেজ শাসনামলে মাওলানা বাদায়ূনিই দিয়েছেন। এর আগে এই ফতোয়া কেউ দেয়নি। এরকম উদ্দেশ্য হলে, এটি অবশ্যই ভুল। এটি অনেক প্রাচীন মাসআলা। ফিকহ ও ফতোয়ার প্রায় সব কিতাবেই আছে।

২। হুজুরের উদ্দেশ্য যদি হয়, ফিকহের কিতাবে উক্ত ফতোয়াটি থাকলেও ইংরেজদের আমলে এই মাসআলা দেয়া সঠিক হয়নি। তাহলে প্রশ্ন আসবে, উলামায়ে দেওবন্দ যখন এজাতীয় ফতোয়া দিয়েছেন, তখন সেটি কোন আমল ছিলো? উলামায়ে দেওবন্দও তো সেই ইংরেজদের শাসনামলেই একই ফতোয়া দিয়েছেন।

তৃতীয়ত: মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব লিখেছেন,

“প্রথমে মৌলভী ফযলে রাসূল বাদায়ুনীকে চিনে নিন, কে এই লোক? তার দ্বীনদারি ও আমানতদারির অবস্থা তো তার নিম্নোক্ত ফতোয়া থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়।”

মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব যেই ফতোয়ার আলোকে মাওলানা বাদায়ূনীর দ্বীনদারি ও আমানতদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, ওই ফতোয়া যদি বাস্তবে ধরে নেই যে, এমনটি ছিলো, তাহলে কি শুধু এই ফতোয়ার কারণে মাওলানা বাদায়ূনীর উপর এতো বড় আপত্তি করা যায়?

বাদায়ূনীর ফতোয়া তো কাটছাট করা হয়েছে, সেটা আমরা এমনিতেই দেখতে পাচ্ছি, এরপরও যদি ধরে নিই, আব্দুল মালেক সাহেব যেভাবে লিখেছেন, ওইটাই মাওলানা বাদায়ূনীর মূল বক্তব্য ছিলো, এরপরও কি আব্দুল মালেক সাহেবের সমালোচনা সঠিক ছিলো?

এর সহজ উত্তর হলো, না। কারণ, এই বিষয়গুলো নিয়ে কাছাকাছি ফতোয়া দিয়েছেন উলামায়ে দেওবন্দও। আমি এখানে উদারহণ হিসেব দু’একটি ফতোয়া উল্পেখ করছি। কেউ চাইলে আরও বিস্তারিত দেখে নিতে পারেন।

১। কিতাবুন নাওয়াজিলে মাওলানা সালমান মানসুরপুরী ফতোয়া

উনার ফতোয়ার শিরোনাম হলো, মুসলমান রাজ-মিস্ত্রীর মন্দির নির্মাণ ও এর সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করা।

প্রশ্ন: এ ব্যাপারে উলামায়ে দ্বীন ও মুফতিগণ কী বলেন যে,

“কোন মুসলমানের জন্য মন্দির ইত্যাদির নির্মাণ কাজ করা অথাব মন্দিরের রং-পেইন্ট ইত্যাদির কাজ করা, অথবা মন্দির নির্মাণের জন্য ট্রাক্টর, ট্রলি ইত্যাদি ভাড়ায় দেয়া, একইভাবে মন্দির ইত্যাদির ডেকোরেশনের জন্য সামিয়ানা ইত্যাদি লাগান ও খোলার কাজে দিন – মজুরি করা কেমন? এটা তো স্পষ্ট যে, বর্তমানে মন্দির নির্মাণের একেবারে শুরু থেকেই দেব-দেবীর নামে নানা উৎসর্গ, দেবতাদের ছবি, দেয়াল ইত্যাদিতে মূর্তি নির্মাণে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। দ্রুত উত্তর জানিয়ে বাধিত করবেন, যাতে আগামী পূঁজো আসার আগেই হারাম থেকে বেঁচে হালাল পেশা গ্রহণ করতে পারি।

এবার দেখুন মাওলানা সালমান মানসুর পূরীর উত্তর:

মন্দির নির্মাণসহ এজাতীয় কাজ করে এর পারিশ্রমিক নেয়া বৈধ। তবে তাদের কোন ধর্মীয়ে কাজে অংশগ্রহণ করা কোন মুসলমানের জন্য বৈধ নয়।

এরপর তিনি ফতোয়ায়ে শামী ও ফতোয়ায়ে আলমগীরি থেকে উক্ত বক্তব্যের জওয়াব দিয়েছেন।

নিচে কিতাবের ছবি দেয়া হলো

২। ফতোয়া হক্কানিয়া

ফতোয়ায়ে হক্কানিয়াতে একটি মাসআলার শিরোনাম হলো, “মূর্তির ব্যবসায়ী এবং মূর্তি নির্মাণকারীকে কাফের বলার বিধান”।

প্রশ্ন: ফতোয়ায়ে কাজী খানে রয়েছে, যে ব্যক্তির অন্যের কুফুরীর উপর সন্তুষ্ট হয়, সেও কাফের হয়ে যাবে। এখন কেউ যদি মূর্তি কেনা-বেচা কিংবা মূর্তি নির্মাণের কাজ করে তাহলে তাকে কাফের বলা কি সঠিক?

উত্তর: মূর্তি নির্মাণ অথবা মূর্তির কেনা-বেচা তো সরাসরি মূর্তি পূঁজাও নয় আবার এর দ্বারা মূর্তিপূজার প্রতি সন্তুষ্টিও প্রকাশ পায় না। এমন ব্যক্তিকে কাফের বলা অজ্ঞতা ও ইলম না থাকার প্রমাণ। ফুকাহায়ে কেরামের কিতাবে এজাতীয় বিষয়ের উদাহরণ রয়েছে।

এরপর তিনি তার বক্তব্যের স্বপক্ষে কাজী খান থেকে দলিল দিয়েছেন। নিচে ফতোয়ায়ে হক্কানিয়ার ছবি দেয়া হলো,

এজাতীয় ফতোয়া দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের অন্যান্য ফতোয়ার কিতাবেও রয়েছে। এছাড়া হানাফী ফিকহের মৌলিক সবগুলো ফতোয়ার কিতাবেই বিষয়গুলি রয়েছে। উলামায়ে কেরামের জন্য রেফারেন্স হিসেবে কিছু কিতাবের বক্তব্য ও রেফারেন্স নিচে দেয়া হলো,

المبسوط للسرخسي (24/ 46)

بيع الاصنام يجوز عند ابي حنيفة

وذكر عن مسروق – رحمه الله – قال: بعث معاوية – رضي الله عنه – بتماثيل من صفر تباع

بأرض الهند، فمر بها على مسروق – رحمه الله – قال: والله لو أني أعلم أنه يقتلني لغرقتها،

ولكني أخاف أن يعذبني، فيفتنني، والله لا أدري أي الرجلين معاوية رجل قد زين له سوء

عمله، أو رجل قد يئس من الآخرة، فهو يتمتع في الدنيا، وقيل هذه تماثيل كانت أصيبت في

الغنيمة، فأمر معاوية – رضي الله عنه – ببيعها بأرض الهند ليتخذ بها الأسلحة، والكراع

للغزاة، فيكون دليلا لأبي حنيفة – رحمه الله – في جواز بيع الصنم، والصليب ممن يعبده كما

هو طريقة القياس.

تعمير كنيسة

الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (6/ 391)

(قوله وجاز تعمير كنيسة) قال في الخانية: ولو آجر نفسه ليعمل في الكنيسة ويعمرها لا بأس

به لأنه لا معصية في عين العمل

فتاوى قاضيخان (3/ 261)

ولو أن مسلما آجر نفسه ليعمل في الكنيسة و يعمرها لا بأس به لأنه لا معصية في عين العمل

* فإن آجر نفسه من نصراني ليضرب الناقوس كل يوم بخمسة دراهم وفي عمل آخر يعطيه

كل يوم درهما قالوا لا ينبغي له أن يؤاجر نفسه منهم و يطلب الرزق من عمل آخر *

الموسوعة الفقهية الكويتية (9/ 158)

بيع الأصنام ونحوها:

20 – الخلاف المار بين الجمهور وبين أبي حنيفة وبعض الشافعية في بيع آلات اللهو، جار

هنا في بيع الأصنام.

ودليل الجمهور على التحريم انتقاء المنفعة المباحة شرعا، ونص حديث جابر مرفوعا {إن الله

حرم بيع الخمر والميتة والخنزير والأصنام} (2) .

ودليل أبي حنيفة والقلة من الشافعية على الجواز: الانتفاع بها بعد الكسر، فنفعها متوقع،

فوجدت المالية والتقوم في المال، وجواز البيع مرتب عليهما.

وقد صرح الرافعي من الشافعية بأن الوجهين يجريان في الأصنام والصور (3) ، وكذا

الشوكاني (4)

وفيما يلي بعض ما يلحق بالأصنام مع بعض أحكامها

الفتاوى الهندية (4/ 450)

مسلم آجر نفسه من مجوسي ليوقد له النار لا بأس به. كذا في الخلاصة.

وفي نوادر هشام عن محمد – رحمه الله تعالى – رجل استأجر رجلا ليصور له صورا أو

تماثيل الرجال في بيت أو فسطاط فإني أكره ذلك وأجعل له الأجرة قال هشام: تأويله إذا كان

الإصباغ من قبل الأجير. كذا في الذخيرة.

ولو استأجر رجلا ينحت له أصناما أو يجعل على أثوابه تماثيل والصبغ من رب الثوب لا

شيء له. كذا في الخلاصة.

وإن استأجره ليكتب له غناء بالفارسية أو بالعربية فالمختار أنه يحل لأن المعصية في القراءة.

كذا في الوجيز للكردري

.

ولو استأجر الذمي مسلما ليبني له بيعة أو كنيسة جاز ويطيب له الأجر. كذا في المحيط.:

শেষ কথা: এটি ডক্টর খালিদ মাহমুদের বানানো অসংখ্য গল্পের একটি মাত্র নমুনা। এরকম বহু গল্প তিনি তার মুতালায়ে ব্রেলভিয়াতে তৈরি করেছেন। আর আমাদের দেশের শীর্ষ পর্যায়ের উলামায়ে কেরামও সেই বানান গল্পগুলো কোন ধরণের যাচাই-বাছাই ছাড়ায় বছরের পর বছর প্রচার করে আসছেন। আমি একথা বলছি না যে, ব্রেলভীদের ভুল নেই অথবা তাদের সমালোচনা করা যাবে না। আমি আগেও বলেছি, ব্রেলভীদের অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। তবে সেটি হতে হবে তাহকীকের সাথে। আদল ও ইনসাফের সাথে। উসূল ও ইলমের আলোকে মজবুত সমালোচনা প্রয়োজন। ডক্টর খালিদ মাহমুদের মতো মিথ্যা গল্প তৈরি করে নয়। আল্লাহ তায়ালা বিষয়গুলো বোঝার তৌফিক দান করুন। আমীন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment