বৃক্ষ, তোমার নাম কী?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

বৃক্ষ, তোমার নাম কী?
—-গোলাম দস্তগীর লিসানী

আল্লামা সাইয়্যিদ আহমাদ শাহ্ ক্বাদরী রা. বিশ্বনাগরিক। তাঁর ঘরের এক কোণায় কাশ্মীর, অন্যদিকে খুবই কাছে আফগানিস্তান। বাণিজ্য করেছেন সুদূর আরব হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বার্মা পর্যন্ত। মুসলিম করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শুরু করে কয়েকটা দেশে। নিজেও ছিলেন এক প্রথিতযশা আলিম। অসম্ভব সফল একজন ব্যবসায়ী, বয়োবৃদ্ধ হয়েও তাঁর মুরশিদের দরবারে রান্নার জন্য কাঠ বহন করেছেন যুগব্যাপী!

একবার ভাবুন তো,
১. রাসূল দ.’র সরাসরি বংশধর
২. একজন আলিম
৩. একজন দা’য়ী- যিঁনি অনেককে বহুদেশে মুসলিম করেছেন
৪. একজন বিজনেস টাইকুন
৫. বয়োবৃদ্ধ

এই প্রোফাইলের একজন মানুষকে যদি তাঁর মুরশিদ কাজেই লাগান, তাহলে দরবারের রান্নার কাঠখড়ি জোগানের কাজে কেন লাগাবেন? তাও বছরের পর বছর? মাইলের পর মাইল দূর থেকে! শুকনো কাঠ তো একটা বাচ্চা পাঠিয়ে গাধার পিঠেও বহন করানো যায়। ইঁনিই কেন করবেন?

কোনও এক অচেনা অঞ্চলে গেলেন সাইয়্যিদি, সেখানে এক দরবার। সেই দরবারের সাধারণ জায়গায় গুটিশুঁটি পাকিয়ে দিনের পর দিন শুয়ে থাকেন। কেউ জিগ্যেস করলে বলেন, এটা আমার পীরবাড়ি। সরাসরি পীরের বাড়ি নয় কিন্তু। পীরসাহেবের সিলসিলায় কয়েক পুরুষ উপরে যিঁনি ছিলেন, তার বাড়ি। তাঁরতো জলসা মাতানোর কথা ছিল। ওয়াজ করার কথা ছিল। সম্মানের সাথে গিয়ে বসার কথা ছিল সবার সাথে। প্রকাশ্যে তারতো এর মধ্যে সব অর্জনই শেষ। আলিম হওয়া, দা’য়ী হওয়া, দারুণ সফল বিজনেসম্যান হওয়া, এমনকি পাকাদাঁড়ি হওয়া। কিন্তু মেঝেতে গুটিশুটি হয়ে তিনি পড়ে থেকে কী নিলেন সেখান থেকে? সময়টা কীভাবে কাজে লাগলো, তার ফল কী হল?

এখানেই থিওরির ইসলাম ও প্র্যাকটিক্যাল ইসলামের তফাত। বইয়ের ইসলাম নিয়ে আমরা অনেক লাফাই না? এখানেই বইয়ের ইসলাম ও রক্তমাংসের মানুষের ইসলামের তফাত। ঘরের ভিতরের কালি কলমের ইসলাম ও ঘরের বাইরে ফুটিয়ে তোলার ইসলামের তফাত। ইসলামকে নীতি মনে না করে বাস্তবায়নের পথটাকে অন্তরে গাঁথার তফাত। এটাই তাসাউউফ। সূফিতত্ত্ব। সূফিত্ব।

সূফিত্ব এক মহাবৃক্ষ। সূফিত্ব অন্তর্লীন সিদরাতুল মুনতাহা। এ বৃক্ষের নাম জিগ্যেস করতে নেই। এ বৃক্ষের ফলে পরিচয়।
সাইয়্যিদ আহমাদ শাহ্ সিরিকোটি রা.’র নাম রহস্যেঘেরাই থাকবে, তাঁর কীর্তি অদ্ভুতই থাকবে, সূফিরা এমনই, সূফি পথটাই এমন। তবে তাঁদের মাক্বাম কোথায়, তাঁদের অবস্থা ও অবস্থান কোথায়, এটা তাঁদের অবদানের টোটাল ইম্প্যাক্ট দিয়ে মাপতে হবে।

সাইয়্যিদ আহমাদ শাহ্ রা.’র টোটাল ইম্প্যাক্ট হল বাংলাদেশের তাসাউউফকে বাঁচিয়ে দিয়ে যাবার ইম্প্যাক্ট। আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.’র কাছে তিঁনি এ ইম্প্যাক্ট অনুযায়ীই মর্যাদাপ্রাপ্ত। ফলে পরিচয়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment