বুযুর্গানে কিরামের উরস ১ (উরসের প্রমাণসমূহ)

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

এ আলোচনার প্রথম অধ্যায়ে উরসের প্রমাণ দেয়া হয়েছে-

উরসের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘শাদী’ । এ জন্যই বর-কনেকে আরবী ভাষায় উরস বলা হয়। বুযুর্গানে দ্বীনের ওফাত দিবসকে এ জন্যই উসর বলা হয় যে, মিশকাত শরীফে -اثبات عذاب القبر   শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যখন মুনকার-নাকির কবরবাসির পরীক্ষা নেয় এবং যখন সে সেই পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়, তখন তাকে বলেন-

نَمْ كَنَوْمَةِ الْعُرُوْسِ الَّتِىْ لَا يُوْقِظُهَ اِلَّااَحَبُّ اَهْلِه اِلَيْهِ

আপনি সেই কনের মত শুয়ে পড়ুন, যাকে ওর প্রিয়জন ছাড়া আর কেউ উঠাতে পারে না। তাই মুনকার নকীর ফিরিশতাদ্বয় যেহেতু ওই দিনকে উরুস বলেছেন, সেহেতু উরস বলা হয়। অথবা এজন্য যে, ওই দিন জামালে মুস্তাফা (দ:) দেখার দিন। মুনকার নকির হুযুরকে দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার সম্পর্কে আপনার কি ধারণা? তিনিই তো সৃষ্টিজগতের দুলহা, সারা জগত তাঁরই ছোঁয়াছের প্রতিফলন। সেই মাহবুবে খোদার সাক্ষাতের দিন নিশ্চয় উরসের দিন। নিশ্চয় এ দিনকে ওরসের দিন বলা হয়। বাস্তব অর্থে প্রতি বছর ওফাত দিবসে কবর যিয়ারত করা, কুরআনখানি ও সদকা ইত্যাদি ছওয়াব পৌছানোকে উরস বলা হয়। উরসের উৎস হাদীছে পাক ও ফকীহগণের বিভিন্ন উক্তি থেকে প্রমাণিত আছে। ফতওয়ায়ে শাশীর প্রথম খণ্ড
زيارت القبورশীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-

رَوَى اِبْنِ اَبِىْ شَيْبَةَ اَنَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْةِ وَسَلَّمَ كَانَ يَاتِىْ قُبُوْرَ الشهَدَاءِ بِاُحُدٍ عَلى رَأسِ كُلِّ حَوْلٍ

ইবনে আবি শাইবা (রা:) বর্ণনা করেছেন যে হুযুর আলাইহিস সালাম প্রতি বছর উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবরে তশরীফ নিয়ে যেতেন। তফসীরে কবীর ও তফসীরে দুর্রে মনসুরে উল্লেখিত আছে-

عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْةِ وَسَلَّمَ اَنَّهُ كَانَ يَاتِىْ قُبُوْرَ الشُّهَدَاءِ عَلى رَأسِ كُلِّ حَوْلٍ فَيَقُوْلُ سَلَام عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْ تُمْ فنعمَ عُقْبى الدَّارِ وَالْخُلَفَاءِ الْاَرْبَعَةُ هكَذَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ

হুযুর আলাইহিস সালাম থেকে প্রমাণিত আছে যে তিনি প্রতি বছর শহীদদের কবরে তশরীফ নিয়ে যেতেন এবং ওদেরকে সালাম দিতেন। চার খলিফাগণও অনুরূপ করতেন।
শাহ আব্দুল আযীয ছাহেব ফতওয়ায়ে আযীযিয়ার ৪৫ পৃষ্ঠায় বলেছেন-
দ্বিতীয়ত : অনেক লোক একত্রিত হয় এবং খতমে কুরআন পড়া হয় আর খাদ্য দ্রব্য শিরনীর ফাতিহা দিয়ে সমবেত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। এ ধরণের রীতি হুযুর আলাইহিস সালাম ও খুলাফায়ে রাশদীনের যুগে ছিল না। কিন্তু কেউ যদি করে, তাতে কোন ক্ষতি নেই বরং জীবিতগণ কবরবাসির দ্বারা লাভবান হয়। ‘যুবদাতুন নসায়েহ ফি মসায়েলিয যবায়েহ’ গ্রন্থে শাহ আব্দুল আযীয ছাহেব (রহ:) মৌলভী আব্দুল হাকিম ছাহেব শিয়ালকোটির একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন।
“মানুষের অবস্থা সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণেই এ অপবাদ দেয়া হয়। কোন ব্যক্তিই শরীয়তের নির্ধারিত ফরযসমূহ ব্যতীত অন্য কিছুকে ফরয মনে করেনা। তবে নেক বান্দাদের কবরসমূহ থেকে বরকত লওয়া এবং ঈসালে ছাওয়াব, কুরআন তিলাওয়াত, শিরনী ও খাদ্যদ্রব্য বন্টন দ্বারা ওদের সাহায্য করা উলামায়ে কিরামের মতে ভাল। উরসের দিন এজন্য নির্ধারিত করা হয় যে, ওই দিন ওদের ওফাতের কথা স্বরণ করিয়ে দেয়। অন্যথায় এ কাজ কোন দিনই করা হোকনা কেন, উপকার রয়েছে”। হযরত শেখ আব্দুল কুদ্দুস গাঙ্গুহী ১৮২ নং পত্রে মাওলানা জালাল উদ্দিনকে লিখেছেন-
পীরগণের উরস ও তাঁদের তরিকা মতে কাওয়ালী পবিত্রতা সহকারে জারী রাখবেন) মৌলভী রশীদ আহমদ ও আশরাফআলী ছাহেবানের পীর হাজী ইমদাদুল্লাহ ছাহেব স্বীয় রচিত ‘ফয়সালা-এ-হাপ্ত মাসায়েল’ পুস্তিকায় উরস যায়েয হওয়া সম্পর্কে জোরালো অভিমত ব্যক্ত করেছেন এবং স্বীয় আমলের কথা এভাবে বর্ণনা করেন।
ফকীরের বিনয় এ যে প্রতি বছর আমি আমার পীর মুর্শিদের পবিত্র আত্মার প্রতি ইসালে ছওয়াব করে থাকি। প্রথমে কুরআনখানি হয়। এর পর যদি সময় থাকে মীলাদ শরীফের আয়োজন করা হয় এবং উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে খাবার পরিবেশন করা ও এর ছওয়াবও বখশিশ করে দেয়া হয়। মৌলভী রশীদ আহমদ ছাহেবও মূল উরসকে জায়েয মনে করেন। যেমন ফতওয়ায়ে রশিদিয়া প্রথম খণ্ড কিতাবুল বিদআতের ৯৬ পৃষ্ঠায় বলেছেন- অনেক জিনিস প্রথমে মুবাহ ছিল কিন্তু পরে কোন এক সময় নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উরস ও মিলাদ মাহফিলের বেলায়ও তাই হয়েছে। আরববাসী থেকে জানা যায় যে, মক্কা শরীফের লোকেরা হযরত সৈয়দ আহম্মদ বদ্দবী (রহ:) এর উরস অনেক ধুমধাম সহকারে পালন করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে মদীনা মনোয়ারার আলিমগণ হযরত আমীর হামযা (রা:) এর উরস করে থাকেন, যার পবিত্র মাযার উহুদ পাহাড়ে অবস্থিত। মোট কথা হলো, সারা দুনিয়ার মুসলমান, আলেম ও নেকবান্দাগণ বিশেষ করে মদীনাবাসী উরসের প্রতি আস্থাশীল এবং যেটাকে মুসলমানগণ ভাল মনে করে, ওটা আল্লাহর কাছেও ভাল বলে গণ্য। বিবেক ও বলে যে বুযুর্গানেদীনের উরস ভাল কাজ। কেননা,
প্রথমত: উরস হচ্ছে যিয়ারতে কবর ও সদকা খয়রাতের সমষ্টি এবং উভয়টা সুন্নাত। তাই দুই সুন্নাতের সমষ্টি (উরস) কিভাবে হারাম হতে পারে? মিশকাত শরীফে  –
زيارت القبور শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, হুযুর আলাইহিস সলাম ইরশাদ ফরমান, আমি তোমাদেরকে যিয়ারতে কুবুর থেকে বারণ করেছিলাম  اَلَافَزَوْرُهَا এখন থেকে নিশ্চয় যিয়ারত করবে। এর দ্বারা প্রত্যেক প্রকারের কবর যিয়ারতের বৈধতা বোঝা গেল, হয় প্রতিদিন বা বছরের পরে অথবা একাকী বা সমবেতভাবে যিয়ারত করা যায়। তাই নিজের পক্ষ থেকে এব্যাপারে শর্তারোপ করে সমবেতভাবে ও বছরের পর নির্ধারিত দিনে যিয়ারত করাকে নিষেধ বলাটা বাতুলতা মাত্র। নির্ধারিতভাবে হোক বা অনির্ধারিতভাবে হোক প্রত্যেক প্রকারের যিয়ারত জায়েয।
দ্বিতীয়ত: উরসের তারিখ নির্ধারিত থাকলে, লোকেরা সহজে জমায়েত হতে পারে এবং লোকেরা একত্রিত হয়ে কুরআনখানী, কলেমা তৈয়্যেবা, দরূদ শরীফ ইত্যাদি পাঠ করতে পারে এবং এতে অনেক বরকতের সমন্বয় ঘটে।
তৃতীয়ত: পীরের উরসের দিন মুরিদানেরা আপন পীর ভাইদের সাথে অনায়াসে সাক্ষাত করতে পারে এবং পরস্পরের অবস্থাদি সম্পর্কে অবগত হতে পারে। এর ফলে পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত: এটা পীর অনুসন্ধান করার সুবর্ন সুযোগ। কোন উরসে গিয়ে দেখবেন যে ওখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক বুযুর্গানেদ্বীন, উলামায়ে কিরাম ও সুফিয়ানে ইজাম সমবেত হয়েছেন। সবাইকে দেখে, যার প্রতি আকৃষ্ট হবেন তার কাছে বাইয়াত হবেন। হজ্জ ও মদীনা শরীফের যিয়ারতও নির্ধারিত তারিখে হয়ে থাকে। এতেও উপরোক্ত ফায়দাসমূহ নিহিত রয়েছে। আমি দেওবন্দী গুরুদের অনেক কবর দেখেছি, যেখানে নেই কোন সমাগম, নেই কোন ফাতিহাখানি বা ঈসালে ছাওয়াব, না তাদের থেকে বা তারা কারো থেকে ফয়েয লাভ করে। এটা হচ্ছে ভাল কাজ বন্ধ করে দেওয়ার পরিণামফল। -সুত্রঃ জা’আল হক ২য় খন্ড-

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment