দেওবন্দীদের গুরুরা রাসূল (ﷺ) এর নূর মুবারককে অস্বীকার করে, কেবল বাশার বাশার করে চিৎকার করে।
আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাতের আক্বীদা হল রাসূলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র স্বত্ত্বা নূরানী ও বাশারীও সরকারে দু’আলম (ﷺ) এর জাত মুবারক বাশারিয়াতের পূর্বেও ছিল, কিন্তু দুনিয়ার মধ্যে বাশারী ছুরতে দৃপ্তি প্রকাশ করেছেন, পোশাক পরিবর্তনের কারণে হাকিক্বত পরিবর্তন হয় না।
যেমন হযরত জিবরাইল (عليه السلام) নূরের তৈরী, কিন্তু তিনি যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট তাশরীফ আনতেন তখন মানব আকৃতিতে আসতেন। এর বর্ণনা মহান আল্লাহ তা’য়ালা উক্ত শব্দগুলোর মাধ্যমে করেছেন। যেমন-
فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
-“সুতরাং তিনি তাঁর সামনে একজন সুস্থ মানুষ রূপে প্রকাশ হলেন।” (পারা ১৬, রুকু ৫ সূরা মারিয়াম, আয়াত নং ১৭)
মিশকাত শরীফের প্রথম হাদিস যেটির বর্ণনাকারী দ্বিতীয় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه), তিনি বলেন-
نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ
-“একদা আমরা রাসূলে কারিম (ﷺ) এর নিকট ছিলাম, আমাদের কাছে একজন মানুষ আসলেন।”
ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এই লোকটি কে? ফারুকে আযম (رضي الله عنه) আরয করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) ই অধিক জানেন। সরওয়ারে (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,- فَإِنَّهُ جِبْرِيل -“তিনি হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)।” ➥18
- ১৮. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা ১১, হা/২, মুসনাদে আহমদ, ১/৪৩৪ পৃ. হা/৩৬৭, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৮/৮৭ পৃ. হা/৪৯৯০, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/২২৩ পৃ. হা/৪৬৯৫, সহীহ মুসলিম, হা/৮
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘রজুল’ বলা হয় এমন পুরুষকে যার চুল কালো, পোশাক সাদা, তার দুটি চোখ, দু’হাত, দু’পা এবং দুইটি কান রয়েছে।
সম্মানিত আলেমগণ অধিক অবগত যে, সম্মানিত মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদিস শরীফে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যেগুলোতে হযরত জিবরাঈল নবুওয়াতের দরবারে অনেকবার সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতিতে এসেছেন। ➥19
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ১৯.
ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে সংকলন করেন-
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: يَأْتِينِي جِبْرِيلُ عَلَى صُورَةِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় জিবরাঈল (ﷺ) রাসূল (ﷺ) এর সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)-এর আকৃতিতে আগমন করতেন।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/৭ পৃ. হা/৭)
যেমন: দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শায়খুল ইসলাম ও ইবনে তাইমিয়া তার স্বীয় কিতাবে, ‘আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান’ এই বাস্তবতাটির সত্যতা নিন্মোক্ত শব্দের মধ্যে বলেছেন:
وَقَدْ أَخْبَرَ أن المَلَائِكَةَ جَاءَتْ إِبْرَاهِيْم عَلَيْهِ السَّلَام فِي صُوْرَةِ الْبَشَرِ، وَاِنَّ المَلِكَ تَمْثِلُ لِمَرْيَمَ بَشَراً سَوِيّاً، وَكَانَ جِبْرَيْل عَلَيْه الصَّلَاةُ وَالسَّلَام يَأتِي النَّبِيَّ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُوْرَةِ دَحْيَةِ الْكَلْبِي وَفِي صُوْرَةِ أَعْرَابِي -مثل حديث تعليم الناس الإسلام والإيمان والإحسان- وَيَرَاهُمْ النَّاسُ كَذَلِكَ
-“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা এ সংবাদ দিয়েছেন যে, হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নিকট ফেরেশতা মানব আকৃতিতে আসতেন, হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট সুস্থ মানব আকৃতিতে এসেছেন। আর জিবরাঈল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) এর কাছে সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه) এবং বেদুইনের আকৃতিতে এসেছেন মানুষগণ তাদেরকে এভাবে দেখেছেন।’’ ➥20
- ২০. ইবনে তাইমিয়া, আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান, ৫/১৫ পৃ.
ইবনে তাইমিয়া কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো উল্লেখপূর্বক নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লিখেছেন:
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ
-“তারা বললো, আল্লাহর সন্তান রয়েছে, আল্লাহ তা‘য়ালা এর থেকে পুত পবিত্র। যাদেরকে তারা সন্তান মনে করছে, তারা সন্তান নয়, বরং সম্মানিত বান্দা।” (সূরা আম্বিয়া, ২৬)
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) কে পবিত্র কুরআনে (بَشَرًا سَوِيًّا) সুস্থ মানুষ, (عبد) বান্দা বলা হয়েছে। হাদীসে পাকে (رَجُلٌ) বা পুরুষ বলা হয়েছে। হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতি ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি নূরেরই সৃষ্টি।
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)’র মানবীয় আকৃতি ধারণ এবং মানুষ রূপে প্রকাশ হওয়ার কারণে কী সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) তাঁর নূরানীয়তকে অস্বীকার করেছেন? না, কোথাও এরূপ দেখা যায় নি। কোন আকৃতিই জিবরাঈল (عليه السلام)’র নূরের সৃষ্টি হওয়াকে অস্বীকার করেন নি।
রাসূল (ﷺ) এর খাদেম, গোলাম এবং উম্মত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন নূরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও মানবীয় রূপ ধারণ করার ফলে তাঁর নূরের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকেনা এবং কেউই তাঁর নূরকে অস্বীকার করেনা। তাহলে সেই জিবরাঈল নয় বরং সমস্ত সৃষ্টি জগতের সর্দার হুযূর পুর নূর (ﷺ) যদি মানবীয় রূপে এই ধরায় তাশরীফ আনেন তবে তাঁর মহান নূরানীয়তের মধ্যে কেনো ব্যবধান থাকবে? এমন কোন মুসলমান আছে যে, রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারককে অস্বীকার করবে?
এখন আপনাদের সামনে রাসূল (ﷺ) এর নূরের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র আক্বীদা পেশ করা হবে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,
أَوَّلُ مَا خَلَقَ اَللهُ نُوْرِي
-“আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ➥21
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ২১.
ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/১৮ পৃ., তাফসীরে আরাইসুল বায়ান, প্রথম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বায়ান, প্রথ খণ্ড ৫৪৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড ৩৭ পৃষ্ঠা, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, দ্বিতীয় খণ্ড, ০২ পৃষ্ঠা, ইবনে জাওযী, বয়ানে মিলাদুন্নবী, ২৪ পৃষ্ঠা, মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসাররাত, ২৭ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৬১-৫৮২ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
❏ এ বিষয়ে একটি হাদিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে, হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন।’’
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩, আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬, আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ., সার্রাজ, হাদিসাহ, হাদিস নং.২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখালিসিয়্যাত, ৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০, সালিম জার্রার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭১ পৃ., ইফরাকী, মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক, ২/১১১ পৃ.)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এর কে সকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে!
এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
❏ এমনকি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري
-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২)
❏ ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন-
وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة
-‘‘বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতামহ হযরত জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’
(ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.)
এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।
❏ বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উলেখ করেন,
قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
রাসূলে কারিম (ﷺ) এর জালিলুল কদর সাহাবী হযরত জাবের (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন,
يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ
-“হে রাসূল (ﷺ) ! আপনার কদমে আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক, আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেন?” উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন,
يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ
-‘‘হে জাবের! আল্লাহ সর্বপ্রথম তাঁর নূর মোবারক থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।” ➥22
- ২২. ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, (জুযউল মাফকুদ) ৬৩ পৃ. হা/১৮, মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়া শরীফ, প্রথম খণ্ড, ০৯ পৃষ্ঠা, যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৬ পৃষ্ঠা, হালাবী, সিরাতে হালবীয়াহ, প্রথম খণ্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসার্রাত শরহে দালাইলুল খায়রাত, ২১০ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৮০ পৃষ্ঠা এবং আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়্যাহ, পৃষ্ঠা ০৯, আকীদাতুশ শোহদা, ১০০ পৃষ্ঠা, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৫১ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৮৯-৬১০ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ কাস্তাল্লানী (কুদ্দাসা সিররুহুল বারী) তাঁর স্বীয় কিতাব “মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়্যায় ➥23 একটি বর্ণনা নকল করেছেন যে, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা ইমামে শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হতে এবং তিনি তাঁর পিতা শেরে খোদা মুশকিল কোশা হযরত সায়্যিদুনা আলী মরতুযা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي ﷺ قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق آدم بأربعة عشر ألف عام
-“হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হবার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের নিকট নূর ছিলাম।” ➥24
- ২৩. আল্লামা শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়া’ স্বীয় যুগের অদ্বিতীয় কিতাব। (বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন, ফার্সী ১১৯ পৃ.) (ফকীর আবুল হামেদ জিয়া উল্লাহ কাদেরী।)
- ২৪. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনীয়া, প্রথম খণ্ড, ১০০ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিল বিহার, ৩/৭৭৬ পৃষ্ঠা ও আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া, ০৯ পৃষ্ঠা, এবং হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৫১ পৃষ্ঠা, ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৩৭০ পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় খণ্ড, এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৬১১-৬১৬ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র এসব বাণী থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মতের কাছে তাঁর নূরানিয়্যতের ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন।
সুতরাং রাসূল (ﷺ)’র নূরানিয়তের ব্যাপারে যারা অস্বীকার করবে তাদের তরীকা মূলত রাসূল (ﷺ)’র পদ্ধতির বিপরীত। কবি বলেন:
خلاف پيبر كے را گز يہ ۞ ہر گز بمنزل نہ خواہد ريہ
‘‘প্রিয় নবীর (ﷺ) বিরোধীতা করবে যারা
মনযিলে মকসুদে কখনো পৌঁছবে না তারা।’’
আপনাদের সম্মূখে এখন রাসূলে করিম (ﷺ) এর প্রাণপ্রিয় এমন সাহাবায়ে কেরামদের আক্বীদা বর্ণনা করবো, যারা আমাদের জন্য পথ প্রদর্শক। কেননা রাসূল (ﷺ) নাযাত প্রাপ্ত দলের জন্য যে মানদণ্ড এবং কষ্টিপাথর নির্ধারণ করেছেন তা হল,
مَا أَنَا عَلَيْهِ وأصحابي
-“আমি এবং আমার সাহাবাগণ যার উপর আছে।” ➥25
- ২৫. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬ পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০ পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২ পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫ হি. বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩ পৃ. বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩ পৃ. হাদিস, ১০৪
অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবাগণের আক্বীদাই হল তোমাদের আক্বীদার মানদন্ড।
প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ)’র মহান ইমাম, মুহাদ্দেস, হযরত ইমাম বায়হাকী এবং আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী (رحمة الله) তাদের স্বীয় কিতাবে হযরত সায়্যিদুনা সিদ্দিকে আকবার (رضي الله عنه)’র একটি আক্বীদা এনেছেন, যা তাঁর নিম্নোক্ত কবিতায় প্রস্ফূটিত হয়েছে-
أَمِينٌ مُصْطَفًى لِلْخَيْرِ يَدْعُو … كَضَوْءِ الْبَدْرِ زَايَلَهُ الظَّلَامُ
“উত্তম কাজের প্রতি ডাকেন সারকারে মুস্তফা আমিন;
বদর সম রৌশনীতে যার দূরভীত হয় রাত গহীন।”
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, প্রথম খ- ২৯৮ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিরুল বিহার, প্রথম খ-, ৯২ পৃষ্ঠা)
সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
إِذَا تَكَلَّمَ رُئِيَ كَالنُّورِ يَخْرُجُ مِنْ بَيْنِ ثَنَايَاهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ)’র যখন কথা বলেন তাঁর দাঁত মুবারক থেকে যেন নূর বের হয়।’’ ➥26
- ২৬. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদ্দুনিয়া, ২/১৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ১৩২পৃ, যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/২৮৭ পৃ.
সায়্যিদুনা আব্বাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
তাবুক যুদ্ধের বিজয় এবং সাফল্য পেয়ে হুযূরে পুর নূর সারকারে দো আলম (ﷺ)’র যখন মদীনা শরীফে তাশরীফ আনলেন, তখন হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র শানে কবিতা আবৃতির অনুমতি প্রার্থনা করেন। হুযুর (ﷺ)’র অনুমতি দান করে বললেন, চাচা! আল্লাহ আপনার মুখকে হেফাজত করুন।
হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) উপর্যুক্ত কবিতার শেষ দুই পংক্তিতে রাসূল (ﷺ)’র নূরের আলোচনা করেছেন: এই কবিতাগুলো রাসূল (ﷺ)’র উম্মতের অনেক বড় বড় মুহাদ্দিস যেমন, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله), মুহাদ্দীস ইমাম ইবনে জাওযী (رحمة الله), আল্লামা বুরহানুদ্দীন হালবী (رحمة الله), আল্লামা দাহলান মাক্কী (رحمة الله), আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আল্লামা ইবনে আবদুল র্বা (رحمة الله), আল্লামা হাকিম নিশাপুরী (رحمة الله), আল্লামা ইবনে কাসীর (رحمة الله), আল্লামা শাহাস্তাতানী (رحمة الله) প্রমূখগণ নিজেদের কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। কবি বলেন:
وَأَنْتَ لَمَّا وُلِدْتَ أَشْرَقَتِ … الْأَرْضُ وَضَاءَتْ بِنُورِكَ الْأُفُقُ
فَنَحْنُ فِي ذَلِكَ الضِّيَاءِ وَفِي … النُّورِ وَسُبْلِ الرَّشَادِ نَخْتَرِقُ
“আর্বিভাবের ক্ষণে তব জ্যোতিতে চমকে অন্তরীক্ষ
সেই জ্যোতিতেই পেলাম মোরা হেদায়তের প্রোজ্বলক। ➥27
- ২৭.
১. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা, ১/৩৫ পৃ.,
২. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, প্রথম খণ্ড, ৬৭ পৃ.,
৩. ইমাম বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ, ১/৮৩ পৃ.,
৪. ইবনে কাসির, সিরাতুন নববিয়্যাহ, ১/১৯৫ পৃ.
৫. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহেরুল বিহার, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪০,
৬. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মাদীয়া, ৪১৬ পৃষ্ঠা,
৭. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ২২২ পৃ.,
৮. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লা দুনিয়্যাহ, ১/৭৯ পৃ.
৯. ইমাম ইবনে আব্দুল বার্, আল ইস্তিয়াব, ২/৪৪৭ পৃ.
১০. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৩৬৯ পৃ., হা/৫৪১৭
১১. ইবনে কাসির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড ২৫৮ পৃ.
১২. শাহরাস্তানী, কিতাবুল মিলাল ওয়ান নিহাল, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৩৭ পৃ., দারুল মা‘রিফ, বয়রুত।
১৩. হাইসামী, মাজমাউয-যাওয়াইদ, ৮/২১৮ পৃ. হা/১৩৮৩০
১৪. যাহাবী, তালাখিসুল মুস্তাদরাক, ৩২৭ পৃ., তৃতীয় খণ্ড
১৫. মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৩৭০ পৃ.
১৬. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/৩২৯ পৃ.
১৭. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৫/২৬৮ পৃ.
১৮. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/২২০ পৃ.
১৯. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭০ পৃ.
২০. ইমাম মুকরীজী, ইমতাউল আসমা, ৩/১০৪ পৃ.
২১. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৪/২১৩ পৃ. হা/৪১৬৭
২২. ইমাম দিনওয়ারী, মাজালিস ওয়া জাওয়াহিরুল ইলম, ৪/৫৬ পৃ. হা/১২১৮
২৩. ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ২/৪৩৪ পৃ. হা/২৮৩১
২৪. ইমাম ইবনে মানদাহ, মা‘রিফাতুস সাহাবা, ১/৫২১ পৃ.
২৫. যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ১/৪৯৫ পৃ. ক্রমিক. ১ এবং সিয়ারু আলামিন নুবালা, ২/১০৩ পৃ.
২৬. ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৩/৪১০ পৃ. ক্রমিক. ৭৬১
২৭. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, মা‘রিফাতুস সাহাবা, ২/৯৮৩ পৃ. হা/২৫২০
২৮. ইমাম ইবনে আছির, আসাদুল গাবাহ ফি মা‘রিফাতিস সাহাবা, ২/১৬৫ পৃ. ক্রমিক. ১৪৩৮
হযরত সায়্যিদুনা আবু হোরাইরা (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
জলিলুল কদর সাহাবী হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরাইরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
وَإِذَا ضَحِكَ ﷺ يَتَلَأْلَأُ فِي الْجُدُرِ
-‘‘রাসূল (ﷺ) যখন তাবাস্সুম করতেন (মুচকি হাসতেন) তখন তাঁর নূর মোবারকে দেওয়াল চমকিত হতো।’’ ➥28
- ২৮.
১. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১২৭ পৃ.
২. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়া, ২/৬৩ পৃ.
৩. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মাদীয়া, ১৩৩ পৃ.
৪. ইমাম কাযি আয়্যায, শিফা শরীফ, ১/১৪৯ পৃ.
৫. মোল্লা আলী কারী, শরহে শিফা, ১/১৬৩ পৃ.
৬. শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাজী, নাসিমুর রিয়াদ্ব, ১/৩৩৮ পৃ.
৭. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত (ফার্সী), ১/১২ পৃ
৮.শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহে আলাল আলামীন, ৬৮৯ পৃ.
৯. বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ১/২৭৪ পৃ.
১০. ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ৫/৪৫০ পৃ.
১১. ইমাম মুকরীজী, ইমতাউল আসমা, ২/১৭৬ পৃ.
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ الْمَدِينَةَ أَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ
-‘‘রাসূলে করিম (ﷺ) যে দিন মদিনা পাকে তাশরীফ আনয়ন করেন, তাঁর নূরের আলোকে প্রত্যেক বস্তু আলোকিত হয়।’’ ➥29
- ২৯.
১. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬/১৭ পৃ. হা/৩৬১৮
২. ইমাম তিরমিযি, শামায়েলে মুহাম্মাদিয়্যাহ, ১/৩৩৩ পৃ. হা/৩৯৩
৩. খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, (৫৪৭ পৃ. ভারতীয়) ৩/১৬৮১ পৃ., হা/৫৯৬২
৪. ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৫৫৪ পৃ. হা/১৬৩১
৫. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ১/১৮১ পৃ.
৬. কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লা দুনিয়া, ১/১৮৪ পৃ.
৭. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, আনওয়ারে মুহাম্মদীয়া, ৩৮ পৃ.,
৮. ইমাম যুরকানী, শারহুল মাওয়াহিব, ২/১৬৫ পৃ.
৯. ইমাম হালবী, সিরাতে হালবীয়্যা, ২/৭৪ পৃ.
১০. শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহেরুল বিহার, ৬০ পৃ.,
১১. ইমাম সুয়ূতি, খাসায়েসুল কুবরা, ১/৩১২ পৃ.
১২. শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়াত, ২/৮০ পৃ.
১৩. ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৫৯ পৃ. হা/৪৩৮৯, তিনি বলেন, সনদটি সহীহ।
১৪. যাহাবী, তালখিসুল মুস্তাদরাক, তৃতীয় খণ্ড, ১২ পৃ.
১৫. ইমাম দিয়ার বকরী, তারিখুল খামীস, ১/৩৪১ পৃ.
১৬. ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী, আশরাফুল ওয়াসায়েল, ১/৫৭৩ পৃ.
১৭. ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুন নবুয়ত, ৭/২৬৫ পৃ.
১৮. বাগভী, আনওয়ার ফি শামায়েলে নাবিয়্যিল মুখতার, ১/৭৫৬ পৃ. হা/১২১০
১৯. ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/৩৭২ পৃ.
২০. ইমাম ইবনে কাসির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৫৪৪ পৃ.
২১. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২১/৩৫ পৃ. হা/১৩৩১২
২২. মুসনাদে বায্যার, ১৩/২৯১ পৃ. হা/৬৮৭১
২৩. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৫০ পৃ. হা/৩৮৩৩
২৪. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, দালায়েলুন নবুয়ত, ২২৭ পৃ. হা/১৭৯
আল্লামা কুতুবুদ্দীন দেহলভী ছাহেবে ‘মাযাহেরে হক’ এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, মদীনা মুনাওয়ারার দরজা এবং দেয়াল পর্যন্ত আলোকিত হয়। ➥30
- ৩০. নবাব কুতুবুদ্দীন দেহলভী, মাযাহেরে হক, ৩৩৯ পৃষ্ঠা, চতুর্থ খণ্ড
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! উপর্যুক্ত হাদিসে পাকের মাধ্যমে প্রতিভাত হলো যে, রাসূল কারিম হুযূরে পূরনূর (ﷺ) এর সম্মানিত সাহাবাগণের নূরানী আক্বীদা দ্বারা প্রকাশ পায় যে, তারা রাসূলে কারিম (ﷺ) কে নূর জানতেন।
সুতরাং দেওবন্দীদের বড় বড় আলেম যারা কেবল হুযুর পুরনূর (ﷺ) কে মানুষই মানে এবং বাশার বাশার বলে ডাক হেঁকায় এবং সাথে সাথে এই দাবীও করে যে, আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াত জাম‘আত।
উল্লেখিত হাদিসে পাকের আলোকে হাদীসে সুবুল পেশওয়ায়ে কুল হুযুর (ﷺ) এবং সাহাবারে কেরাম (رضي الله عنه) গণের আক্বীদাকে উপেক্ষা করত নিজেদেরকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত দাবী করা মূলত ধোঁকাবাজীরই অন্তর্ভূক্ত।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত তো তারাই যারা হুযুর (ﷺ) কে নূর মানে; আর এ আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আতই হল বেরলভীগণ।
দেওবন্দীরা বলে হুযূর (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি ও আওলাদ ছিলেন এবং তিনি পানাহার করেতেন এজন্য তিনি নূর নয়।
দেওবন্দীদের আকল আর জ্ঞানের দাবী হলো রাসূল (ﷺ)’র নূর মানার জন্য তাঁর পানাহার করা, শাদী করা, আজওয়ায়ে মুতাহ্হারাত হওয়া এবং আওলাদে পাক থাকা নিষিদ্ধ।
কিন্তু সাহাবারে কেরামদের সামনে মিরাজ শরীফের দুলহান, সমস্ত সৃষ্টিকূলের আশ্রয় স্থল হুযুর পূরনূর (ﷺ) পানাহার করতেন। তাঁরাও তো জানতেন রাসূল (ﷺ)’র শাদী মুবারক, আজওয়াজে মুতাহ্হারাত এবং আওলাদে পাক রয়েছেন। তা সত্ত্বেও সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ﷺ) কে নূর হিসেবে মানতেন।
যেমন উম্মতে মুহাম্মদীর সকল মুফাস্রিদের সর্দার হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কুরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াত-
قَدْ جَاءَكُمْ مِنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُبِينٌ
এর তাফসীরে বলেন,
{قَدْ جَآءَكُمْ مِّنَ الله نُورٌ} رَسُول يَعْنِي مُحَمَّدًا
-‘‘তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ (ﷺ) তাশরীফ এনেছেন।’’ ➥31
- ৩১. তাফসীরে ইবনে আব্বাস, ৯০ পৃ., পৃথিবীর সুবিখ্যাত ৭৬ টি তাফসিরে উপরোক্ত আয়াতের নূর দ্বারা রাসূল (ﷺ) কে উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৪০-৫৬০ পৃষ্ঠায় দেখুন।
হযরত সায়্যিদাহ হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
হযরত সায়্যিদুনা হালিমা সাদিয়া (رضي الله عنه) যিনি রাসূল (ﷺ)’র দুধ মাতা, যাঁর সামনে কুল কায়েনাতের অভিভাবক রাসূল (ﷺ) পানাহার করতেন, তাঁর আক্বিদাও ছিল যে, হুযুর (ﷺ) নুর।
এ হাদীস খানা মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী এবং আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
اَذَا اَرْضَعْتُهُ فِى الْمَنْزِلَ اَسْتُغْنِى بِه عَنْ الْمِصْبَاحِ
‘রাসূল (ﷺ) যখন দুধ পান করতেন তখন আমার ঘরে চেরাগের প্রয়োজন হতো না।’
একদা আমাকে উম্মে মাওলা সাদিয়া জিজ্ঞাসা করলেন, হে হালিমা! তুমি সারা রাত কেন বাতি জ্বালিয়ে রাখো? উত্তরে তিনি বললেন,
لا والله لا أَوْقَدَ نَارًا ولكنه نور محمد ﷺ
আল্লাহর শপথ! না, আমি বাতি জালাই না, বরং এটা রাসূল (ﷺ)’র নূর মুবারক।’’ ➥32
- ৩২. ইমাম ইবনে জাওযী, মাওলুদুন নববী শরীফ (ﷺ), ৫৪ পৃ., কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসীরে মাযহারী, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৪২৪ পৃ.
হযরত সায়্যিদাহ উম্মে আয়মান➥33 (رضي الله عنه)র আক্বিদা
সায়্যিদুশ শাফেয়ীন ইমামুল আউয়ালিন ওয়া আখেরীন রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দ্বিতীয় দুগ্ধ পানকারীনীর আক্বিদাও ছিল যে, হুযুর (ﷺ) নূরই ছিলেন, যেমন রাসূল (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর তিনি এক কবিতায় তা প্রকাশ করেন-
وَلَقَدْ كَانَ بَعْدَ ذَلِكَ نُورًا
وَسِرَاجًا يضيء في الظلماء
“ছিলেন তিনি জ্যোর্তিময় আর ছিলেন দেপ্তীময়
সেই জ্যোতিতে আঁধার তিতির দূরীভূত হয়।”
এখন রাসূলে কারিম (ﷺ)’র ফুফুদের আক্বিদার পেশ করা হবে, যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র এর সম্মানিত বিবিগণ এবং আওলাদগণকে দেখেছেন এবং তাঁকে পানাহার করতেও দেখেছেন। ➥34
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৩.
❏ ওয়াহাবীদের গর্ব ইবরাহীম মীর শিয়ালকুটী হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه)ও হুযুর (ﷺ) কে দুধ পান করিয়েছেন। হযরত আয়মান ওই মহিলা যিনি রাসূল (ﷺ) কে স্বীয় পিতার পক্ষ থেকে ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছেন এবং যিনি তাঁর মায়ের ইন্তিকালের পর হুযুর (ﷺ) কে আবওয়া নামক স্থান থেকে মদীনা শরীফে নিয়ে এসেছেন। তাঁর নাম ছিল বরকত। হুযুর (ﷺ) তাঁকে অধিক সম্মান করতেন। হাফেজ ইবনে আবদুল বার্ (رحمة الله) বিশুদ্ধ সনদে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, “উম্মে আয়মান আমার মায়ের পর মা।”
❏ হাফেজ ইবনে কাসীর (رحمة الله) তার বিদায়া ওয়ান নিহায়ার মধ্যে লিখেছেন যে, রাসূল (ﷺ) যখন বড় হলেন তখন উম্মে আয়মান (رضي الله عنه) কে আযাদ করে দিয়েছেন এবং আযাদকৃত গোলাম ও পোষ্যপুত্র হযরত যায়েদ বিন হারেছ (رضي الله عنه)’র সাথে তাঁকে বিবাহ দেন। অত:পর তাদের থেকে হযরত উসামা বিন যায়েদ ভূমিষ্ট হলেন। হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه)’র নাম বরকত ছিল। আর তিনি এমনিতেই বরকত ছিলেন এবং আল্লাহর দরবারে মকবুল ছিলেন।
❏ ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত উম্মে আয়মান (رضي الله عنه) যখন মদীনা পাকে হিজরত করেন তখন তিনি রোযাদার ছিলেন। তাঁর পানির পিপাসা পেল। তখন আসমান থেকে পরিষ্কার পানি ভর্তি একটি বালতি অবতীর্ণ হল। তিনি বলেন, এর থেকে আমি তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলাম যে, এরপর আমি আর পিপাসার্ত হয়নি। অথচ প্রচন্ড গরমেও আমি রোযা রাখতাম (সিরাতে মুস্তফা, প্রথম খণ্ড, ১১৮ পৃষ্ঠা, ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া)
- ৩৪.
ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তবকাতুল কোবরা, ২/২৫৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরীজি, ইমতাউল আসমা, ১৪/৬০২ পৃ., ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৯৪ পৃ.
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
সায়্যিদাহ ছফিয়া (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
হযরত আল্লামা আব্দুর রহমান জামী (رحمة الله) রেওয়ায়েত নকল করে বলেন, রাসূল করিম (ﷺ)’র ফুফী হযরত ছফিয়া (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ)’র শুভাগমনের সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমি লক্ষ্য করলাম যে, তাঁর নূর মোবারক প্রদীপের আলোকে হার মানিয়েছে। ➥35
- ৩৫. আল্লামা জামী, শাওয়াহেদুন নবুওয়াত (ফার্সী), পৃষ্ঠা ২২
শাফায়াতের মালিক হুযুর পুর নূর (ﷺ)’র ইন্তেকালের বিরোহের বিচ্ছেদে হযরত ছফিয়া (رضي الله عنه) একটি পঙক্তি বরেছেন, এর মধ্যেও তাঁর আক্বিদা প্রস্ফূটিত হয়েছে।
لِفَقْدِ الْمُصْطَفَى بِالنُّورِ حَقًّا
“জ্যোতির্ময়ী মোস্তফারই বিরহে মোর অশ্রু ঝড়ে।” ➥36
- ৩৬. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৫০ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৬০০ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
উপর্যুক্ত দুটি বর্ণনার মাধ্যমে প্রতিভাত হলো হযরত সায়্যিদা ছফিয়া (رضي الله عنه) শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রাহমাতুললীল আলামীন (ﷺ)’র জাত মুবারকের ব্যাপারে নূরের আক্বীদাই পোষণ করতেন।
সায়্যিদাহ আতিকাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র অপর ফুফু হযরত সায়্যিদাহ আতিকাহ (رضي الله عنه)’র আকিদাও ছিল যে, ইমামুল মুরসালিন (ﷺ) নূর। রাসূল (ﷺ)’র জাহেরীভাবে আমাদের থেকে পর্দা করার পর তাঁর বিচ্ছেদের বিরোহে তিনি রাসূল (ﷺ) শান বর্ণনা করার সাথে তাঁর আকিদাও প্রকাশ করেছেন নিম্নোক্ত কবিতা দ্বারা-
يَا عَيْنِ فَاحْتَفِلِي وَسُحِّي وَاسْجُمِي
وَابْكِي عَلَى نُورِ الْبِلادِ محمد
‘‘চক্ষু হে মোর! ক্রন্দ্রন করে অশ্রু ঝেড়ে
শহরেরই জ্যোতির্ময়ী রসূল মোদের গেলেন ছেড়ে।’’
عَلَى الْمُصْطَفَى بِالْحَقِّ وَالنُّورِ وَالْهُدَى
‘‘সহ সত্যে প্রেরিত সেই মুহাম্মদী মুস্তফা
হেদায়ত আর জ্যোতিই যার উপরে ছেরপা।’’ ➥37
- ৩৭. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৮-২৪৯ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৫৯৬ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৮৩ পৃ.
সায়্যিদাহ আরওয়াহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা
মাহবুবে খোদা (ﷺ)’র ইন্তেকালের পর তাঁর তৃতীয় ফুফু হযরত সৈয়্যিদাহ আরওয়াহ (رضي الله عنه) তাঁর আক্বীদা প্রকাশ করে কবিতা লিখেন, ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله)
➥38 তার তবকাতে তা লিপিবদ্ধ করেছেন:
عَلَى نُورِ الْبِلادِ مَعًا جَمِيعًا
رَسُولِ اللَّهِ أَحْمَدَ فَاتْرُكِينِي
‘‘সে রাসূল সমগ্র নগরজুড়ে নূরপ্রস্রবন
দাও আমায় তাঁর স্তুতিগানের ক্ষণ।’’ ➥39
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৮.
দেওবন্দী ও ওহাবীদের নির্ভরযোগ্য প্রসিদ্ধ মওলবী শিবলী নুমানী তবকাতে ইবনে সাদ এবং এর গ্রন্থাকার মুহাদ্দিস ইবনে সাদ (رحمة الله) সম্পর্কে লেখেন যে, ইবনে সা‘দ (رحمة الله) এক মুহাদ্দিস ছিলেন এবং তাঁর সনদ গ্রহণযোগ্য।
❏ আল্লামা খতীবে বাগদাদী (رحمة الله) তাঁর সম্পর্কে লিখেন-
قَالَ الْخَطِيب كَانَ من أهل الْعلم وَالْفضل وصنف كتابا كَبِيرا فِي طَبَقَات الصَّحَابَة وَالتَّابِعِينَ وَمن بعدهمْ إِلَى وقته فأجاد فِيهِ وَأحسن
-“তিনি ছিলেন জ্ঞানবান, মর্যাদাবান এবং সমজদার। তিনি সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনদের স্তর সম্পর্কে একটি বড় কিতাব লেখেছেন। তার যুগে তিনি একই সুন্দর এ কাজটি করেন।’’
(ইমাম সুয়ূতি, তবকাতুল হুফ্ফায, ১/১৮৬ পৃ. ক্রমিক. ৪১১ এবং ইবনে হাজার আসকালানী, তাহযিবুত তাহযিব, ৯/১৮২ পৃ. ক্রমিক. ২৭৫, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৫/২৫৬ পৃ., ক্রমিক. ৫২৩৭, খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ২/৩৬৯ পৃ. ক্রমিক. ৮৭৬, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৫৩/৬৪ পৃ, ইবনে খাল্লিকান, ওয়াফিয়াতুল আইয়্যান, ৪/৩৫১ পৃৃ. ক্রমিক. ৬৪৫)
❏ নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালী তার কিতাব “হিদায়াতুস সুলুক” এ তবকাতে ইবনে সাদের হাওলা এনেছেন।
❏ মাওলবী সুলাইমান নদভী ইমাম ইবনে সাদ (رحمة الله) কে প্রিয় নবী (ﷺ)’র জীবনী লেখকগণের মধ্যে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে গণ্য করেন। (খোতবাতে মাদারেস, ৬২ পৃষ্ঠা)
- ৩৯. ইমাম ইবনে সা‘দ, আত-তাবাকাত, দ্বিতীয় খণ্ড, ২৪৮ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম মুকরিজী, ইমতাউল আসমা, ১৪/৫৯৭ পৃ., দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১২/২৮৪ পৃ.,
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
প্রিয় পাঠকবৃন্দ! রাসূলে কারিম (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি, আওলাদে পাক এবং তাঁর পানাহারের কথা জেনেই সাহাবীরা এবং তাঁর ফুফুগণের আকিদা ছিল যে, তিনি নূর।
এখন ওই সমস্ত মহাত্মাগণের আকিদা আলোচনা করবো যাঁরা আজওয়াজে মুতাহ্হারাতের অন্তর্ভূক্ত এবং সমস্ত মুসলমানদের মাতা।
উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ➥40 (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
হযরত তৈয়্যিবাহ তাহেরা আবেদা ফাবেদাহ আরেফা আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه) যিনি ছিলেন কোনো জটিল বিষয়কে সমাধান কল্পে শীর্ষস্থানীয়, তিনি বলেন-
وَأخرج ابْن عَسَاكِر عَن عَائِشَة قَالَت كنت أخيط فِي السحر فَسَقَطت مني الابرة فطلبتها فَلم أقدر عَلَيْهَا فَدخل رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فتبينت الإبرة بشعاع نور وَجهه
-‘‘একদা আমি সেহরীর সময় সেলাই করছিলাম, হঠাৎ আমার সুঁই পড়ে গেলে অনেক খোঁজাখুজির পর তা পেলাম না। ইত্যবস্যরে রাসূল (ﷺ) ঘরে প্রবেশ করলে তাঁর চেহরার নূর মোবারকে সুঁইটি পরিষ্কার দেখা গেল।’’ ➥41
- ৪০. ওয়াহাবীদের অহংকার মওলবী ইব্রাহীম শিয়ালকুটী হযরত আয়েশা সিদ্দিকাহ (رضي الله عنه)’র জ্ঞানের মর্যাদা সম্পর্কে বলেন ইলমী সমস্যার সমাধান করেন সাহাবীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিলেন।
- ৪১. সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, প্রথম খণ্ড, ১৫৬ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন, ৬৮৮ পৃষ্ঠা, সাখাভী, আল কাওলুল বদী, ১৪৭ পৃষ্ঠা, ইইয়াদুশ শোহাদা, ১০২ পৃষ্ঠা, কাসাসুল আম্বিয়া, ফার্সী ২৬৬ পৃষ্ঠা, এ হাদিসকে বিভিন্ন বাতিল পন্থীগণ জাল বলে থাকেন তাদের জবাব জানতে আমার লিখিত “প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন” ১ম খণ্ডের ১৭৬-১৭৯ পৃষ্ঠায় দেখুন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এবং আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) উম্মাহাতুল মু‘মিনীন আয়েশা (رضي الله عنه)-এর বক্তব্য উল্লেখ করেন-
كنت أدخل الخيط في الإبرة حال الظلمة لبياض رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم
-‘‘আমি অন্ধকার রাতে হুযূর পুরনুর (ﷺ)-এর নূরানী জ্যোতিতে সুঁইয়ের মধ্যে সুতা প্রবেশ করাতাম।’’ ➥42
- ৪২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/১৫৯ পৃ., কাসাসুল আম্বিয়া (ফার্সী), ২৬৬ পৃ.
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! মুফাসসির কুল শিরমনি, রাসূলে (ﷺ)’র চাচাতো ভাই, হুযূরে পূরনূর (ﷺ)’র ঘরে যিনি আসা-যাওয়া করতেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)’র নূর।
ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ)’র প্রিয় চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) অবগত যে, রাসূল (ﷺ)’র নূর। ওই সমস্ত ধাত্রীগণ, যারা রাসূল (ﷺ) কে দুধ পান করিয়েছেন, যাঁরা রাসূল (ﷺ) কে পানাহার করতে দেখেছেন এবং যাদের ঘরে স্বয়ং মাহবুবে খোদা (ﷺ) রয়েছেন, যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র পানাহার এবং বসবাস করণ সবকিছু দেখেছেন তাঁদের আক্বিদাহও হল হুযুর (ﷺ) নূর।
রহমতে দো আলম (ﷺ)’র প্রিয় ফুফুগণ, যাঁরা আযওয়াজে মুতাহহারাত, আওলাদে পাকদেরকে দেখেছেন, বসবাস করণ পানাহার সব কিছুই তাঁদের দৃষ্টিগোচর ছিল, কিন্তু তারা তাদের আক্বিদা ছিল হুযুর (ﷺ)’র নূরই ছিলেন।
রাসূলে করিম (ﷺ)’র সম্মানিত বিবিগণ (رضي الله عنه), যাঁরা রাসূল (ﷺ)’র হেরম শরীফের মর্যাদা লাভ করেছেন, যাদেরকে আল্লাহ তা‘য়ালা সমস্ত ঈমানদারের মাতা বানিয়েছেন তাঁরাও বলেন যে, হুযুর পূর নূর (ﷺ) নূর। কেবল হেদায়তের নূর নয়, বরং নূরে হিচ্ছি তথা অনুধাবনীয় জ্যোতি।
হুযুর (ﷺ)’র পানাহার, আযওয়াজে মুতাহ্হাআত এবং আওলাদে পাক সম্পর্কে এসব মহাত্মাগণের অবগত ছিলেন তথাপি এঁদের আক্বিদা ছিল হুযুর (ﷺ) নূরই ছিলেন।
যে হযরত সায়্যিদাহ আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ জটিল কঠিন মাসআলার সমাধান নিতেন, সে আয়েশা (رضي الله عنه) হুযুর (ﷺ)’র সম্মানিত বিবি হওয়া সত্ত্বেও বলেন যে, হুযুর (ﷺ) নূর।
কিন্তু দেওবন্দীদের আকলের উপর মূর্খতার এমন আবরণ পড়েছে যে, তারা বলে যে, হুযূর (ﷺ) পানাহার করেন, তাঁর বিবি এবং আওলাদ রয়েছে সে জন্য তিনি (মাটির) মানুষ।
সায়্যিদুনা ইমাম আজম আবু হানিফা (رضي الله عنه)’র আক্বীদা
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মহান ইমাম, গোপন রহস্য উন্মোচনকারী, ইমামুল আইম্মা সায়্যিদুনা ইমামে আজম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র উপর আক্বিদা নিম্নোক্ত পঙক্তির মধ্যে এভাবে ফুটে তুলেছেন-
انت الذى مِنْ نُورِكَ البدر اكتى
والشمس مشرقة بنور بهاك
“তব নূরের জ্যোতি পেয়ে পুর্ণিমা চাঁদ আলোকিত
জ্যোর্তিময়ী শশীখানা তব নূরে পুলকিত।”
(কাসিদায়ে নূমান, পৃষ্ঠা ২৩)
বিজ্ঞ পাঠকবৃন্দ! আপনাদের সামনে রাসূলে করিম (ﷺ)’র সম্মানিত সাহাবী (رضي الله عنه), পুত:পবিত্র আওলাদের আকিদাসমূহ নির্ভরযোগ্য মুহাদ্দিস গণের গ্রহণযোগ্য কিতাব হতে তুলে ধরেছি। এগুলো থেকে দিবালোকের ন্যায় প্রতিভাত হলো যে, এসব হাযারাত রাসূল (ﷺ)’র পানাহার, আযওয়াযে মুতাহহারাত এবং আওলাদে পাক সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও তাঁদের আক্বিদা ছিল নবী (ﷺ) নূরের তৈরি। সুতরাং তাঁরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত যাঁদের আক্বীদা হল রাসূল (ﷺ) নূর।
আর যারা রাসূল (ﷺ) কে নূরে হিচ্ছি হিসেবে মানে না তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের নয়। সুতরাং বুঝা গেল দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
আ‘লা হযরত আযিমুল বরকত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) বলেন-
چمک تجھ سے پا تے ہیں سب پا نے والے
ميرا دل بھى چمكا دے چمكا نے والے
ميں گدا تو باد شاه بھر دے پیالہ نور كا
نور دن دونا تيرا دے ڈال صدقہ نوركا
جوگدا ديكھو ليئے جاتا ہے توڑا نور كا
نور كى سركار ہےكيا اس ميں توڑا نور كا
“জ্যোতির উৎস তুমি, পাওয়ার যে পেয়ে যয়
বিকীর্ণ করো নূর আমারই এ আত্মায়।
আমি ভিখারি তুমি মহারাজা, দাও আধারে নূর
করুনা দাও দানপাত্রে, তিমির হবে ভোর।
যে নিংস্বে জুটে মহাদাতার, যৎকিঞ্চিত নূর
আলোকর্তার বিকিরনে, অন্ধতমস দূর।”
(কালামে রেযা, ৩৯ পৃষ্ঠা)