দেওবন্দীদের আকিদা হল নবী ওলীগণ নিজেদের এবং অন্যদের সম্পর্কে অবগত নন যে, আল্লাহ তা‘য়ালা কবর-হাশর তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করবেন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে দুনিয়া-আখেরাতের সব কিছু সম্পর্কে অবগত করেছেন।
আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ
-“এবং আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন, তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেয় তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান।’’ ৩৬৩
- ৩৬৩. সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৭৯
অন্যত্র ইরশাদ করেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا (২৬) إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ
-‘‘অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যের উপর কাউকে ক্ষমতাবান করেন না, আপন মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত।” ৩৬৪
- ৩৬৪. সুরা জ্বীন, আয়াত নং-২৬-২৭
হযরত ইবরাহিম (عليه السلام) সম্পর্কে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-
وَكَذَلِكَ نُرِي إِبْرَاهِيمَ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلِيَكُونَ مِنَ الْمُوقِنِينَ
-“এবং এভাবে আমি ইবরাহিমকে দেখাচ্ছি সমগ্র বাদশাহী আসমান সমূহের এবং যমীনের এবং এ জন্য যে, তিনি স্বচক্ষে দেখা নিশ্চিত বিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।” ৩৬৫
- ৩৬৫. সুরা আনআম, আয়াত নং-৭৫
আয়াত সমূহ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে গায়বের ইলম দান করেছেন। বরং হযরত ইবরাহীম (عليه السلام) কে আসমান-জমিনের রাজত্ব দেখিয়েছেন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে উপরের আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন-
أَنَّ اللَّهَ أَرَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ مَلَكُوتَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَكَشَفَ لَهُ ذَلِكَ فَتَحَ عَلِيَّ أَبْوَابَ الْغَيْبِ
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা ইবরাহীম (عليه السلام) কে আসমান জমিনের রাজত্ব দেখিয়েছেন, সবকিছুকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং অদৃশের দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।’’ ৩৬৬
- ৩৬৬. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরহে মিশকাত, ২য় খণ্ড, ৬০৯ পৃ. হা/৭২৫
রাসূলে পাক ছাহেব লাওলাক হুযুর পুর নূর (ﷺ) এর বরকতময় হাদিস –
فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
‘(আল্লাহর কুদরতী হাত আমার বক্ষে স্থাপনের) ফলে আমি আসমান এবং যমীনে যা কিছু আছে সব কিছু সম্পর্কে অবগত হয়েছি।’ ৩৬৭
- ৩৬৭. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, মসজিদ অধ্যায়, হা/৭২৫
এই হাদিসের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আল্লামা মোল্লা কারী হানাফী (رحمة الله) বলেন-
وَقَالَ ابْنُ حَجَرٍ: أَيْ جَمِيعَ الْكَائِنَاتِ الَّتِي فِي السَّمَاوَاتِ بَلْ وَمَا فَوْقَهَا، كَمَا يُسْتَفَادُ مِنْ قِصَّةِ الْمِعْرَاجِ، وَالْأَرْضِ هِيَ بِمَعْنَى الْجِنْسِ، أَيْ: وَجَمِيعَ مَا فِي الْأَرَضِينَ السَّبْعِ، بَلْ وَمَا تَحْتَهَا، كَمَا أَفَادَهُ إِخْبَارُهُ – عَلَيْهِ السَّلَامُ – عَنِ الثَّوْرِ وَالْحُوتِ اللَّذَيْنِ عَلَيْهِمَا الْأَرَضُونَ كُلُّهَا
-‘‘ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, مَا فِي السَّمَاوَاتِ দ্বারা সমস্ত আসমান বরং এর উপরের সব কিছুর জ্ঞানও উদ্দেশ্য। যেমন মিরাজ শরীফের ঘটনা থেকে বুঝা যায়। আর জমিন দ্বারা সমস্ত পৃথিবী এবং এর নীচে যা কিছু আছে সব কিছু উদ্দেশ্য। যেমন রাসূলে পাক (ﷺ) ছাওরা এবং হুউত (যা সমুদ্রের বিশেষ প্রাণী) এর সংবাদ দান করা।’’ ৩৬৮
- ৩৬৮. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরীফ, ২য় খণ্ড, ৬০৯ পৃ. হা/৭২৫
হুযুর পুর নুর (ﷺ)’র অপর একটি হাদিসও বর্ণনা করা হল যেখানে হুযুর পাক (ﷺ) সমস্ত সাহাবীগণকে জান্নাতের শুভ সংবাদ দিয়েছেন। হযরত জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
لَا تَمَسُّ النَّارُ مُسْلِمًا رَآنِي أَوْ رَأَى مَنْ رَآنِي
-‘‘যে মুসলমান আমাকে দেখেছেন, অথবা যাঁরা আমাকে দেখেছেন তাদেরকে দেখেছেন দোযখের আগুন তাদের স্পর্শ করবে না।’’ ৩৬৯
হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন-
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَبُو بَكْرٍ فِي الجَنَّةِ، وَعُمَرُ فِي الجَنَّةِ، وَعُثْمَانُ فِي الجَنَّةِ، وَعَلِيٌّ فِي الجَنَّةِ، وَطَلْحَةُ فِي الجَنَّةِ وَالزُّبَيْرُ فِي الجَنَّةِ، وَعَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ فِي الجَنَّةِ، وَسَعْدٌ فِي الجَنَّةِ، وَسَعِيدٌ فِي الجَنَّةِ، وَأَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الجَرَّاحِ فِي الجَنَّةِ.
-‘‘হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত উমর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত আলী (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত তালহা (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত জুবাইর (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه) জান্নাতী, হযরত সাঈদ বিন যায়েদ (رضي الله عنه) জান্নাতী এবং হযরত আবু উবাইদা বিন র্জারাহ (رضي الله عنه) জান্নাতী।“ ৩৭০
মহান আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন হযরত খিজির (عليه السلام) সম্পর্কে ইরশাদ করেন-
وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْمًا
-“এবং তাকে আমি ইলমে লাদ্ন্নুী দান করেছি।” ৩৭১
- ৩৬৯. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৫৪ পৃ.) ৩/১৬৯৫ পৃ. হা/৬০১৩, এ গ্রন্থের তাহকীকে আলবানী একে ‘হাসান’ বলে তাহকীক করেছেন। মিরকাত শরীফ, ১১ খণ্ড ২৭৮ পৃ., আশিয়াতুল লুমআত (ফার্সী), ৪র্থ খণ্ড ৬৩২ পৃ. জামে তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৭৭ পৃ. হা/৩৮৫৮
- ৩৭০. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ খণ্ড, ১০১ পৃ., হা/৩৪৪৭
- ৩৭১. সুরা কাহাফ, আয়াত নং-৬৫
নিভর্রযোগ্য কয়েকটি তাফসীর থেকে এই আয়াতের তাফসীর দেয়া হল, আল্লামা কুরতুবী (رحمة الله) বলেন-
(وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً) أَيْ عِلْمَ الْغَيْبِ.
-‘‘আমার পক্ষ থেকে তাকে জ্ঞান দান করলাম অর্থাৎ ইলমে গায়ব।’’ ৩৭২
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৭২. ইমাম কুরতবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১১ খণ্ড, ১৬ পৃ.,
❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-
ابْنُ عَطِيَّةَ: كَانَ عِلْمُ الْخَضِرِ عِلْمُ مَعْرِفَةِ بَوَاطِنَ قَدْ أُوحِيَتْ إِلَيْهِ، لَا تُعْطِي ظَوَاهِرَ الْأَحْكَامِ أَفْعَالَهُ بِحَسَبِهَا، وَكَانَ عِلْمُ مُوسَى عِلْمُ الْأَحْكَامِ وَالْفُتْيَا بِظَاهِرِ أَقْوَالِ الناس وأفعالهم.
-‘‘ইবনে আতিয়্যাহ (رحمة الله) বলেন, হযরত খিযির (ﷺ)-এর জ্ঞান ছিল ইলমে মা‘রিফাত, ইলমে বাতেন যা মহান রব তাকে প্রদান করেছেন, তাই তাকে জাহেরী আহকাম সংক্রান্ত জ্ঞান দান করেননি, অপরদিকে মহান রব হযরত মূসা (عليه السلام) কে ইলমে আহকাম, জাহেরী ফাতওয়া দেয়ার জ্ঞান করেছেন, মানুষ সেগুলো বলবে এবং করবে।’’ (ইমাম কুরতবী, তাফসীরে কুরতুবী, ১১ খণ্ড, ১৬ পৃ.)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
আল্লামা আলুসী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল মা‘আনী শরীফে বর্ণনা করেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً أي علما لا يكتنه كنهه ولا يقادر قدره وهو علم الغيوب وأسرار العلوم الخفية
-‘‘আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে এমন ইলম দান করলাম যার প্রকৃতি সম্পর্কে কেউ জানেন না এবং এর মর্যাদা বুঝাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়, তা হল অদৃশ্যের জ্ঞান।’’৩৭৩
- ৩৭৩. আল্লামা মাহমুদ আলূসী, তাফসীরে রুহুল মাআনী, ৮ খণ্ড ৩১১ পৃ.
আল্লামা আবুস সাউদ (رحمة الله) বলেন-
{وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا} خاصاً لا يُكتنه كُنهُه ولا يُقادَرُ قدرُه وهو علمُ الغيوب
-‘‘আমার পক্ষ থেকে তাকে ইলম দান করলাম যার প্রকৃতি এবং মযার্দা সম্পর্কে কেউ অবগত নন আর তা হল অদৃশ্যের জ্ঞান।’’ ৩৭৪
- ৩৭৪. তাফসীরে আবুস সাউদ, ৫ম খণ্ড, ২৩৪ পৃ.
তাফসীরে রুহুল বয়ানে এসেছে-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً خاصا هو علم الغيوب والاخبار عنها باذنه تعالى على ما ذهب اليه ابن عباس رضى الله عنهما او علم الباطن
-‘‘আমি তাকে আমার পক্ষ থেকে ইলম দান করলাম আর তা হল অদৃশ্য জ্ঞান।’’ ৩৭৫
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৭৫. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী, তাফসিরে রুহুল বায়ান, ৫/২৭০ পৃ.,
❏ আল্লামা খাযেন (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً أي علم الباطن إلهاما ولم يكن الخضر نبيا عند أكثر أهل العلم.
-‘‘আমি খিযির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেন (গায়ব), ইলহাম দান করেছি, অধিকাংশ আহলে ইলমের মতে, তিনি নবী ছিলেন না।’’ (ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ৩/১৭১ পৃ.)
❏ আল্লামা নিযামুদ্দীন নিশাপুরী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً إشارة إلى أنه تعالى أطلعه على بواطن الأشياء وحقائقها،
-‘‘মহান রব এ আয়াতে ইশারা করেছেন যে, হযরত খিজির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেনী (গায়ব) জ্ঞান এবং প্রত্যেক বিষয়ের হাকীকতের (রহস্যের) জ্ঞান দান করেছেন।’’ (তাফসিরে নিশাপুরী, ৪/৪৫৪ পৃ.)
❏ আহলে হাদিসদের ইমাম শাওকানী লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً وَهُوَ مَا عَلَّمَهُ اللَّهُ سُبْحَانَهُ مِنْ عِلْمِ الْغَيْبِ الَّذِي اسْتَأْثَرَ بِهِ.
-‘‘আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা হযরত খিযির (ﷺ) কে যে জ্ঞান দান করেছেন তা হল ইলমে গায়ব।’’ (শাওকানী, তাফসিরে ফতহুল কাদীর, ৩/৩৫৪ পৃ.)
❏ তিনি আরও লিখেছেন-
فَقَدْ كَانَ عِلْمُ مُوسَى عِلْمَ الْأَحْكَامِ الشَّرْعِيَّةِ وَالْقَضَاءِ بِظَاهِرِهَا، وَكَانَ عِلْمُ الْخَضِرِ عِلْمَ بَعْضِ الْغَيْبِ
-‘‘হযরত মূসা (عليه السلام) কে আল্লাহ আহকামে শরীয়াহ এবং দুনিয়াবী বিচার কার্যের জ্ঞান দান করেছেন, আর হযরত খিযির (ﷺ) কে ইলমে গায়ব দান করেছেন।’’ (শাওকানী, ফতহুল কাদীর, ৩/৩৫৪ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
প্রিয় পাঠক ! হযরত খিজির (عليه السلام) নবী হওয়ার ব্যাপার মতানৈক্য আছে কিন্তু অলী হওয়ার ব্যাপার কারো দ্বিমত নেই। ৩৭৬
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৭৬.
❏ ইমাম বাগভী (رحمة الله) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন-
وَعَلَّمْناهُ مِنْ لَدُنَّا عِلْماً، أَيْ عِلْمَ الْبَاطِنِ إِلْهَامًا وَلَمْ يَكُنِ الْخَضِرُ نَبِيًّا عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ.
-‘‘এবং তাকে আমি ইলমে লাদু্ন্নী দান করেছি অর্থাৎ ইলহাম তথা ইলমে বাতেন দান করেছি, হযরত খিজির (عليه السلام) কোনো নবী ছিলেন না, এটিই অধিকাংশ আহলে ইলমের অভিমত।’’ (ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/৩০৫ পৃ., তাফসিরে মাযহারী, ৬/৫০ পৃ., তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১২/৫৩০ পৃ.)
❏ আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَذَهَبَ كَثِيرُونَ إِلَى أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيًّا. بَلْ كَانَ وَلِيًّا. فَاللهُ أَعْلَمُ.
-‘‘অধিকাংশ মুফাসসিরীনে কেরামগণ বলেছেন, নিশ্চয় হযরত খিযির (ﷺ) নবী ছিলেন না, বরং তিনি মহান রবের ওলী ছিলেন। মহান রবই এ বিষয়ে ভাল জানেন।’’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, ৫/১৮৭ পৃ.)
❏ বিখ্যাত মুফাসসির ইমাম ওয়াহেদী (رحمة الله) এ আয়াতের তাফসিরে লিখেন-
{وعلمناه من لدنا علماً} أعطيناه علماً من علم الغيب
-‘‘তাঁকে আমি ইলম দান করেছি তথা ইলমে গায়ব দান করেছি।’’ (তাফসিরে ওয়াহেদী, ১/৬৬৭ পৃ.)
❏ ইমাম নাসাফী (رحمة الله) তার বিখ্যাত তাফসীরে লিখেন-
{وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْمًا} يعني الإخبار بالغيوب وقيل العلم اللدني ما حصل للعبد بطريق الإلهام
-‘‘তাঁকে আমি ইলম দান করেছি তথা ইলমে গায়ব দান করেছি, কোনো কোনো মুফাসসিরানে কিরাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁকে ইলমে ল্লাদুনি দান করেছেন, যা বান্দা ইলহামের মাধ্যমে হাসিল করেন।’’ (তাফসিরে নাসাফী, ২/৩১০ পৃ.)
❏ ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন দামেস্কী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وَعَلَّمْنَاهُ مِن لَّدُنَّا عِلْماً} أي: علم الباطن إلهاماً.
-‘‘আমি খিযির (عليه السلام) কে ইলমে বাতেন (গায়ব), ইলহাম দান করেছি।’’ (তাফসিরে লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ১২/৫৩০ পৃ.)
❏ আল্লামা কাযি নাসীরুদ্দীন বায়যাভী (رحمة الله) তার তাফসিরে লিখেন-
وهو علم الغيوب.
-‘‘খিজির (عليه السلام) কে মহান রব যে জ্ঞান দান করেছেন তা হল ইলমে গায়ব।’’ (তাফসিরে বায়যাভী, ৩/২৮৭ পৃ.)
❏ আল্লামা কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি (رحمة الله) লিখেন-
الحاصل للاولياء بالإلهام
-‘‘(হযরত খিযির আঃ কে যে জ্ঞান দান করা হয়েছে তা) আউলিয়ায়ে কিরাম ইলহামের মাধ্যমে ইলমে গায়বের জ্ঞান অর্জন করে।’’ (কাযি সানাউল্লাহ পানিপথি, তাফসিরে মাযহারী, ৬/৫০ পৃ.)
━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━
সুতরাং খিজির (عليه السلام) এর মর্যাদা যদি এতো উঁচু হয়, তবে হুযুরে আকরাম (ﷺ)’র মর্তবা কতবড় হবে? যারা হুযুর (ﷺ)’র শানে শ্রীহীন শব্দ ব্যবহার করে তারা কতবড় অজ্ঞ আর মুর্খ।
হযরতে ফারুকে আজম (رضي الله عنه) এর আকিদা:
বুখারী শরীফের بدء الخلق ও মিশকাত শরীফের بدء الخلق وذكر الانبياء নামক অধ্যায়ে হযরত উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে-
وَعَن عمرؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ مَقَامًا فَأَخْبَرَنَا عَنْ بَدْءِ الْخَلْقِ حَتَّى دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ مَنَازِلَهُمْ وَأَهْلُ النَّارِ مَنَازِلَهُمْ حَفِظَ ذَلِكَ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نسيَه . رَوَاهُ البُخَارِيّ ـ
-‘‘হযরত উমর (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন। সেখানে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন। এমনকি বেহেস্তবাসী দোযখবাসীগণ নিজ নিজ ঠিকানায় পৌঁছে যাওয়া অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় অবস্থা ও ঘটনাবলীর বর্ণনা প্রদান করেন। যিনি ওসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’ ৩৭৭
- ৩৭৭.
ক. ইমাম বুখারী : আস্ সহীহ্ :৬/২৮৬ পৃ. হাদিস, ৩১৯২
খ. খতিব তিবরীযি : মিশকাতুল মাসাবিহ্ : ৪/৫০৬ পৃ. হাদিস, ৫৬৯৯
গ. ইমাম আবূ দাউদ, আস্-সুনান, ৪/৪৪১ পৃ. হাদিস, ৪২৪০
ঘ. ইমাম তিরমিযী, আস্-সুনান, ৪/৪১৯ পৃ. হাদিস, ২১৯১
ঙ. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ.
চ. ইমাম বুখারী, আস্-সহীহ, ১১/৪৯৪ পৃ. হাদিস, ৬৬০৪
ছ. ইমাম মুসলিম, আস্-সহীহ, ৫/২২১৭ পৃ. হা/২৮৯১ এবং ২৩
জ. ইমাম ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ২/১৩৪৬পৃ. হাদিস, ৪০৫৩
ঝ. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ফিতান, ৪/২৭৮ পৃ. হাদিস, ৫৩৭৯
হযরত হোযাইফা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
মিশকাত শরীফের الفتن অধ্যায়ে হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হয়েছে-
مَا تَرَكَ شَيْئًا يَكُونُ فِي مقَامه إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا حَدَّثَ بِهِ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ ـ
-‘‘রাসূল (ﷺ) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন। কোন কিছুই বাদ দেননি। যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, যারা ভুলে যাওয়ার ভুলে গেছেন।’’ ৩৭৮
টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
- ৩৭৮.
ক. ইমাম মুসলিম : আস্ সহীহ্ : ২/৩৯০ পৃ. হাদিস নং : ২৮৯২ এবং ২৩
খ. খতিব তিবরিযি : মিশকাত শরীফ, পৃ-৪৬১, হাদিস নং : ৫৩৭৯
গ. বুখারী : আস সহীহ : ১১/৪৯৪ পৃ. হা/৬৬০৪,
❏ এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনার হাদিস রয়েছে- হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ؓ قَالَ: قَامَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ خَطِيبًا بَعْدَ الْعَصْرِ فَلَمْ يَدَعْ شَيْئًا يَكُونُ إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ حَفِظَهُ مَنْ حَفِظَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيَهُ
-‘‘রাসূল (ﷺ) আসরের নামাযের পর দাঁড়ালেন আর খুতবা দিতে গিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে তা তিনি বর্ণনা করেছেন যিনি এসব বিষয় স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনি তা স্মরণ রেখেছেন, আর যিনি স্মরণ রাখতে পারেননি তিনি ভুলে গেছেন।’’
(ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ৫/১৫৩ পৃ. হা/২১৩৯৯, ইমাম তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ২/১৫৩ পৃ. হা/১৬৪৭, ইমাম হাজার হায়সামী: মাজমাউয যাওয়াইদ: ৮/২৬৩ পৃ. হা/১৩৯৭১, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামীন : ৩৩৬ পৃ., কাজী আযাজ, শিফা শরীফ, ১/২০৭ পৃ., জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ৭/২০৬ পৃ., আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৩৮৫ পৃ., আবূ ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৯/৪৬ পৃ. হাদিস, ৫১০৯, বায্যার, আল-মুসনাদ, ৯/৩৪১ পৃ. হা/৩৮৯, ইবনুল বার্, আল-ইস্তিআ‘ব, ৪/১৬৫৫ পৃ., সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ২/১৮৪ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ৩/৯৫ পৃ.)
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله) সিরাতে রাসূল (ﷺ) এর উপর লিখিত মাওয়াহেবে ল্লাদুনি গ্রন্থে একটি হাদিস শরীফ এনেছেন-
عن ابن عمر، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ رَفَعَ لِي الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ-
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা‘য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়া তুলে ধরেছেন। ফলে আমি এ দুনিয়াতে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পাচ্ছি যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।’’ ৩৭৯
- ৩৭৯. ইমাম নুয়াঈম বিন হাম্মাদ, আল-ফিতান, ১/২৭ পৃ. হা/২, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৬/১০১ পৃ. দারুল কিতাব আল-আরাবী, বয়রুত, লেবানন, তাবরানী : মু’জামুল কাবীর, ১৩/৩১৮ পৃ. হা/১৪১১২, ইমাম কাস্তাল্লানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া : ৩/৯৫ পৃ. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৭/২০৪ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪২০৯ পৃ. হা/৩১৯৭৯ ও ১১/৪২০ পৃ. হা/৩১৯৭১, ইমাম সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ২/১৮৫ পৃ. সুয়ূতি : জামিউল জাওয়ামে : হা/৪৮৪৯ ও জামিউস সগীর, ১/৩৫৪৭ পৃ. হা/৩৫৪৭ এবং জামিউল আহাদিস, ৮/৫৫ পৃ. হা/৬৮৫৪, হাইসামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৮/২৮৭ পৃ. হা/১৪০৬৭, শায়খ ইউসুফ নাবহানী : জামিউল কাবীর, হা/৪৮৪৯, আবুল কাসেম তায়মী ইস্পাহানী, আল-হুজ্জাত, ২/৪৪০ পৃ. হা/৪২১, ইমাম তায়মী ইস্পাহানী, আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/২১১ পৃ. হা/১৪৫৬, দারুল হাদিস, কায়রু, মিশর, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৩১৬ পৃ. হা/৩৪০৫, এ হাদিসটিকে আহলে হাদিস আলবানীসহ আরও বিভিন্ন বাতিলপন্থীগণ যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন, তাদের এ মিথ্যাচারের জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ২৮৩-২৮৯ পৃষ্ঠায় দেখুন।
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলে পাক (ﷺ) এর দরবারে এসে আরয করলেন-
دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ دَخَلْتُ الْجَنَّةَ. قَالَ: تَعْبُدُ اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا وَتُقِيمُ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ وَتُؤَدِّي الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ وَتَصُومُ رَمَضَانَ . قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا أَزِيدُ عَلَى هَذَا شَيْئًا وَلَا أَنْقُصُ مِنْهُ. فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْجنَّة فَلْينْظر إِلَى هَذَا
-‘‘আমাকে এমন আমল সম্পর্কে বলুন যা পালন করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি। রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। ফরয নামায প্রতিষ্ঠা করবে, ফরয যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা পালন করবে। এরপর লোকটি আল্লাহর শপথ করে বললেন, আমি এর কমবেশ করবো না। সে চলে গেলে রাসূলে পাক (ﷺ) বললেন, যে কোন জান্নাতী লোক দেখতে চায়, সে যেন এ ব্যক্তির দিকে দেখে।“ ৩৮০
- ৩৮০. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, (ভারতীয় ১২ পৃ.) ১/১১ পৃ. হা/১৪, সহীহ বুখারী, ২/১০৫ পৃ. হা/১৩৯৭, সহীহ মুসলিম, ১/১৪ পৃ. হা/১৫
এই হাদিসে রাসূলে পাক (ﷺ) দুনিয়াতেই তাকে জান্নাতের কথা বলেছেন।
হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র আকিদা:
হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, অদৃশ্যের সংবাদদাতা নবী রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
إِنَّ الْجَنَّةَ تَشْتَاقُ إِلَى ثَلاَثَةٍ: عَلِيٍّ، وَعَمَّارٍ، وَسَلْمَانَ.
-‘‘তিন ব্যক্তির জন্য জান্নাত অধির আগ্রহে আছে, তাঁরা হলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত আম্মার (رضي الله عنه) এবং হযরত সালমান (رضي الله عنه)’’ ৩৮১
- ৩৮১. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৪১ পৃ. হা/৩৭৯৭, তিনি বলেন হাদিসটি ‘হাসান’।
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন উমর (رضي الله عنه)’র আকিদা:
তিনি বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
يَنْزِلُ عِيسَى بن مَرْيَمَ إِلَى الْأَرْضِ فَيَتَزَوَّجُ وَيُولَدُ لَهُ وَيَمْكُثُ خَمْسًا وَأَرْبَعِينَ سَنَةً ثُمَّ يَمُوتُ فَيُدْفَنُ مَعِي فِي قَبْرِي
-‘‘হযরত ঈসা বিন মারিয়াম (عليه السلام) পৃথিবীতে অবতরণ করবেন, অতঃপর তাঁর শাদী হবে, তাঁর সন্তান হবে এবং তিনি ৪৫ বছর জীবিত থাকবেন অতঃপর তিনি ইন্তিকাল করবেন এবং আমার পাশেই তাকে দাফন করা হবে।’’ ৩৮২
- ৩৮২. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৪৮৮ পৃ.) ৩/১৫২৪ পৃ., হা/৫৫০৮ আশিয়াতুল লুম‘আত, ৪র্থ খণ্ড, ৩৫৩ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত ১০ খণ্ড, ২৩৩ পৃ.
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’র আকিদা :
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
الحَسَنُ وَالحُسَيْنُ سَيِّدَا شَبَابِ أَهْلِ الجَنَّةِ.
-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত হাসান এবং হোসাইন (رضي الله عنه) জান্নাতিদের যুবকদের সর্দার।’’ ৩৮৩
- ৩৮৩. ইমাম তিরমিযী, আস-সুনান, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১১৭ পৃ. হা/৩৭৬৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৭৩৭ পৃ. হা/৬১৬৩, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৪৬০ পৃ. হা/৮৪৭৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৫/৪১১ পৃ. হা/৬৯৫৯
অদৃশ্যের সংবাদদাতা, নবীয়ে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اتَّقُوا فِرَاسَةَ المُؤْمِنِ فَإِنَّهُ يَنْظُرُ بِنُورِ اللهِ
-‘‘মুমিনের ফিরাসত (দূর দৃষ্টি) কে ভয় করে। কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন।’’ ৩৮৪
- ৩৮৪. জামে তিরমিযি, ৫/২৯৮ পৃ. হা/৩১২৭, এ বিষয়ক হাদিসের মান মুতাওয়াতিরের ন্যায়, বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৩৩৮-৩৪৪ পৃষ্ঠায় দেখুন।
আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله)’র আকিদা:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) বলেন,
قَالَ الطِّيبِيُّ: وَذَلِكَ أَنَّ النُّفُوسَ الزَّكِيَّةَ الْقُدُسِيَّةَ إِذَا تَجَرَّدَتْ عَنِ الْعَلَائِقِ الْبَدَنِيَّةِ عَرَجَتْ وَوَصَلَتْ بِالْمَلَأِ الْأَعْلَى، وَلَمْ يَبْقَ لَهَا حِجَابٌ، فَتَرَى الْكُلَّ كَالْمُشَاهَدِ بِنَفْسِهَا
-‘‘ইমাম তিব্বী (رحمة الله) বলেন, পুত পবিত্র আত্মা যখন শরীর থেকে পৃথক হয় তখন মালায়ে আলার সাথে মিলিত হয় তখন তাদের মাঝে আর কোন পর্দা থাকে না। সেজন্য তারা সকল বস্তু এমনভাবে দেখেন যেন তা তাঁদের সামনে।’’ ৩৮৫
- ৩৮৫. মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত শরহে মিশকাত, ২য় খণ্ড ৭৪৪ পৃ. হা/৯২৬-এর আলোচনা।
ইমামে রব্বানী আল্লামা আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি তাঁর শায়খ (পীর) সায়্যিদ আলী খাওয়াস (رحمة الله) কে বলতে শুনেছেন-
لَاتَكْمِيْلُ الرَّجُلُ عِنْدَنَا حَتَّى يَعْلَمَ حَرْكَاتِ مُرِيْدِه فِى اِنْتَقَالِه فِى الْاَصْلَابِ وَهُوَ مِنْ يَوْمِ اَلَسْتُ اِلَى اِسْتَقْرَارِه فِى الْجَنَّةِ اَوْ فِى النَّارِ
-‘‘আমাদের মতে মুরশিদ ততক্ষণ পর্যন্ত কামিল হন না যতক্ষণ না তিনি তাঁর মুরিদের ঔরসে স্থানান্তর হতে মৃত্যুর পর সে কি জান্নাতী নাকি দোজখী তা জানেন না।’’ (ইমাম শা‘রানী, কাবারিয়্যাতিল আহমার বর হাশিয়ায়ে ইয়াকিয়াত ওয়াল জাওয়াহির)
আল্লামা সায়্যিদি আবদুল ওহ্হাব শা‘রানী (رحمة الله) তাঁর অপর অনাবদ্য রচনা তবকাতে কুবরার মধ্যে ওলীয়ে কামেলের ইলম সম্পর্কে বলেছেন-
وأَطْلَعَه عَلَى غَيْبِه حَتَّى لَا تُنْبُتُ شَجَرَةٌ وَلَا تُخْضُرُ وَرَقةٌ اِلَّا بِنَظْرِه
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা অলীদেরকে ইলমে গায়ব সম্পর্কে অবগত করেন যার ফলে কোন গাছ উৎপন্ন হলে এবং পাতা সবুজ হলে তা তারা দেখেন।’’ ৩৮৬
- ৩৮৬. ইমাম শা‘রানী, আত-তাবকাতুল কুবরা, ১/১২২ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
কুতুবে জামান হযরত আবদুল আজিজ দিবাগ (رحمة الله)’র আকিদা:
যাকে দেওবন্দীরাও অলী হিসেবে শ্রদ্ধা করে, তিনি বলেন,
مَا السَّمَوتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُوْنَ السَّبْعُ فِى نَظَرِ الْعَبْدِ الْمُؤْمِنِ اِلَّا كَحَلْقَةٍ مُلْقَاةٍ فِى فُلَاةٍ مِنَ الْاَرْضِ
-‘‘মুমিনে কামেলের নিকট সাত আসমান জমিন এমন যেন কোন নিজর্ন মরুভূমিতে একটি আংটি নিক্ষেপ করা হল।’’ ৩৮৭
- ৩৮৭. আল-ইবরিয, ২৪২ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত
শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)’র আকিদা:
তিনি বলেন-
عارفين كاملين پر ہر چيز روشن اور ظاهر ہو جاتى امور غائبہ بہى منكشف ہوجا تے ہيں
-‘‘আরেফীন কামেলীনগণের নিকট প্রত্যেক বস্তু প্রকাশ হয়ে যায় এবং অদৃশ্য বস্তু উন্মুক্ত হয়ে যায়।’’ ৩৮৮
- ৩৮৮. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুমআত, (ফার্সী) ১ম খণ্ড, ১২১ পৃ.
اولياء الله كو لوگوں كے دلوں كے حالت اور آئنده وقوع پذيہ ہو نے وا لے واقعات كا علم ہوتا ہے
-‘‘আল্লাহর ওলীগণ মানুষের অন্তরের খবর এবং ভবিষ্যতে সংঘটিত ঘটনা সমূহের ইলম রয়েছে।’’ ৩৮৯
- ৩৮৯. আল-কাওলুল জামিলের অনুবাদ শিফাউল আলীল, ৫৬ পৃ.
শাহ্ সাহেব (رحمة الله) বলেন,
সম্মানিত পাঠকবর্গ! প্রত্যেক বিষয় কুরআন সুন্নাহ থেকে প্রমাণ করা হয়েছে। যার থেকে রাসূলে পাক (ﷺ), সাহাবায়ে কেরাম, আহলে বায়াত (رضي الله عنه)’র আকিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু দেওবন্দী এবং গাইরে মুকাল্লিদের মতে এই সকল আকিদা শিরক, কুফর এবং হারাম। এর পরেও তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের দাবী করে। সুতরাং কুরআন সুন্নাহর আলোকে প্রমাণিত হল তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।
واخر دعونا ان الحمد لله رب العلمين