বিষয় নং-২৪: আযানের পূর্বাপর দরুদ শরীফ পড়া

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দেওবন্দী পন্থিরা আযানের পূর্বে ও পরে দরুদ শরীফ পাঠ করাকে বিদআত বলে থাকে। এটা বন্ধ করার জন্য কঠোর ভূমিকা পালন করে এবং দরুদ পাঠকারীদের উপর শুধু শুধু ফতোয়া দিয়ে থাকে।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত আযানের পূর্বে ও পরে দরুদ শরীফ পাঠ করাকে বৈধ বলে থাকে। সাথে সাথে তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ)’র এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে, অমুক সময়ে দরুদ পড়া যাবে না। ২৯৯

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ২৯৯. 

তবে ফকীহগণ কিছু স্থানে দুরূদ সালাম পড়ার ব্যাপারে মাকরূহ বলে উল্লেখ করেছেন তাছাড়া সব স্থানে দুরূদ সালাম পড়া মুস্তাহাব বলে গণ্য।  তাই মাকরূহ সময় সমূহের মধ্যে আজানের আগে ও পরে উল্লেখ নেই। । 

❏ যেমন ফতোয়ার শামীতে রয়েছে যে- 

تُكْرَهُ الصَّلَاةُ عَلَيْهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فِي سَبْعَةِ مَوَاضِعَ: الْجِمَاعِ، وَحَاجَةِ الْإِنْسَانِ، وَشُهْرَةِ الْمَبِيعِ وَالْعَثْرَةِ، وَالتَّعَجُّبِ، وَالذَّبْحِ، وَالْعُطَاسِ

-‘‘ইমাম ইবনে আবেদীন শামী হানাফী  (رحمة الله) বলেন, সাত অবস্থায় নবীজী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সালাত ও সালাম পাঠ করা মাকরূহ (তাহরীমী)। যথা- 

(১) স্ত্রী সহবাসকালে 

(২) পেশাব পায়খানার সময় 

(৩) ব্যবসার মাল চালু করার সময়। 

(৪) হোচট খাওয়ার পর 

(৫) যবেহ করার সময় 

(৬) আশ্চর্য্যকর সংবাদ শ্রবণ করার সময়। 

(৭) এবং হাঁচি দেয়ার সময়।’’ 

(ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী: ১/৩৮৩ পৃ.) 

❏ এই নিষিদ্ধ সময় ছাড়া দরুদ-সালাম পড়া মোস্তাহাব। যেমন ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) এই স্থান ছাড়া বাকী স্থানে দরুদ-সালাম পড়া সম্পর্কে লিখেন-

(قَوْلُهُ وَمُسْتَحَبَّةٌ فِي كُلِّ أَوْقَاتِ الْإِمْكَانِ) أَيْ حَيْثُ لَا مَانِعَ.

-‘‘নিষিদ্ধ স্থান ব্যতীত প্রত্যেক যায়গায় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ-সালাম পাঠ করা মোস্তাহাব।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী,  ১/৫১৮পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।)

আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-

إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا

-‘‘নিশ্চয় মহান রব ও তাঁর ফিরিশতারা রাসূল (ﷺ) এর উপর দরুদ পড়েন। হে ঈমানদারগণ! তাঁর প্রতি দরুদ ও খুব সালাম প্রেরণ করো।’’ ৩০০

  • ৩০০. সূরা আহযাব, আয়াত নং-৫৬

এই আয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা সালাত এবং সালামের নির্দেশ দিয়েছেন। এ স্থানে সময়ের কোন শর্ত নেই।  ৩০১

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ৩০১. 

উক্ত আয়াতে প্রিয় নবীকে সালাম দিতে বলা হয়েছে এখানে কোন সময়কে খাস বা নির্দিষ্ট করা হয়নি যে শুধু এক বা নির্দিষ্ট সময়ই নবীকে সালাম দিবে, বরং এ আয়াতে আম ব্যাপককতার প্রমাণ মিলে যে নবীজির উপর দুরুদ সালাম পাঠ করার। 

❏ এ বক্তব্যের সমর্থনে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ফকীহ, মুহাদ্দিস, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) উক্ত আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-

اَنَّهُ تَعَالَى لَمْ يَوقُتْ ذَلِكَ لِيشَمِلُ سَائِرُ الْاَوْقَات-

-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা এখানে উক্ত আয়াতে কোন নির্দিষ্ট ওয়াক্ত বা সময় নির্ধারন করেন নি বরং সমস্ত সময় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। (অর্থাৎ যে কোন সময়ই দরূদ সালাম পড়া যাবে নিষেধাজ্ঞা সময় ব্যতীত)।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ২/১০৭ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়াহ, বয়রুত, লেবানন।)

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━

আল্লাহ তা‘য়ালা তার প্রিয় হাবীব (ﷺ) যেখানে সময়ের বাধ্যবাধকতা করেন নি। সেখানে দেওবন্দী ওহাবীরা বাধ্যবাধকতা করা মূলত আল্লাহ তা‘য়ালা ও তাঁর প্রিয় মাহবুব (ﷺ) এর বিরোধীতা করার নামান্তর। ৩০২

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ৩০২. 

❏ উপরোল্লেখিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه) বলেন-

{يَا أَيهَا الَّذين آمنُوا صلوا عَلَيْهِ} أثنوا عَلَيْهِ فِي صَلَاتكُمْ وَفِي مَسَاجِدكُمْ وَفِي كل موطن

-‘‘মহান রবের ঘোষণা হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার হাবিবের উপর দুরুদ সালাম পাঠ কর। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এ আয়াতের মধ্যে দরূদ-সালাম নামাযে, মসজিদের মধ্যে এবং এমনকি সর্বাবস্থায় (আযানের আগে পড়ে বলতে কোন কথা নেই) পড়ার হুকুম দেয়া হয়েছে।’’ (আল্লামা ইবনুল কাইয়্যুম : জালাউল ইফহাম : ১/৪২২পৃ. দারুল উরুবাত, কুয়েত, দ্বিতীয় প্রকাশ. ১৪০৭হি.)

━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━━

রাসূলে পাক (ﷺ)’ বাণী:

সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে মাকবুল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ، فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُولُ ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا

-‘‘মুয়াজ্জিন যখন আযান দেন, তখন তোমরা তার অনুরূপ বলো। এরপর আমার উপর দরুদ শরীফ পড়। যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালার তার উপর দশবার রহমত প্রেরণ করবেন।’’ ৩০৩

  • ৩০৩.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৬৪ পৃষ্ঠা), ১/২০৭ পৃ. হা/৬৫৭, সহীহ মুসলিম, ১/২৮৮ পৃ. হা/৩৮৪

এই হাদীসের মধ্যে রাসূলে পাক (ﷺ) আযানের পর- صَلُّوا عَلَيَّ -‘‘দরুদ শরীফ পড়ার হুকুম দিয়ে বলেছেন-

مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى الله عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا

-‘‘যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার উপর দশটি রহমত দান করবেন।’’ ৩০৪

  • ৩০৪.খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৬৪ পৃষ্ঠা), ১/২০৭ পৃ. হা/৬৫৭, সহীহ মুসলিম, ১/২৮৮ পৃ. হা/৩৮৪

নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালির বক্তব্য

ওহাবীদের দাবী তিনি কুরআন সুন্নাহ খুব ভাল করেই বুঝেন। দরুদ শরীফের ব্যাপারে তার মন্তব্য হল- বিভিন্ন সময় দরুদ শরীফ পড়ার জন্য রাসূলে পাক (ﷺ) হুকুম দিয়েছেন। সুতরাং কোন কোন সময় দরুদ শরীফ পড়া ওয়াজিব কখনো মুস্তাহাব। সুতরাং আযানের পরেও দরুদ পড়া এমন একটি সময়। এ কারণে ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, মুয়াজ্জিন যখন আযান দেন তোমরাও তার অনুরূপ বলবে, এরপর আমার উপর দরুদ শরীফ পড়বে, কারণ যে আমার উপর একবার দরুদ শরীফ পড়বে আল্লাহ তা‘য়ালা তার উপর দশটি রহমত প্রেরণ করবেন।’’ ৩০৫

  • ৩০৫. নবাব সিদ্দিক হাসান ভূপালি, তাফসীরে তারজুমানুল কুরআন, ১১ খণ্ড, ৪০১ পৃষ্ঠা

রাসূলে পাক (ﷺ)’র ইরশাদ অনুযায়ী আযানের পর দরুদ পড়া পূণ্য এবং আল্লাহর রহমত অর্জনের মাধ্যম। কিন্তু দেওবন্দী দরুদ শরীফ পড়াকে বিদআতী এবং জাহান্নামী বলা মূলত রাসূলে পাক (ﷺ) বিরোধিতা করার নামান্তর। আল্লাহর আশ্রয়!

উম্মতে মুহাম্মাদীর জলিলুল ক্বদর মুহাদ্দিস আবু বকর আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ইসহাক দিনওয়ারী (رحمة الله) যিনি ইবনে সুন্নি নামে প্রসিদ্ধ (ওফাত. ৩৬৪ হি.) এই বর্ণনাকে কেন্দ্র করে

بَابُ الصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ الْأَذَانِ

-‘‘আযানের পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর উপর দরুদ-সালাম পাঠের পরিচ্ছেদ।’’ (ইমাম ইবনে সুন্নী, ১/৮৩ পৃ., দারুল কিবলাহ, বয়রুত, লেবানন।) শিরোনামে একটি স্বতন্ত্র বাবের নামকরণ করেছেন।

এতোবড় মুহাদ্দিস কর্তৃক এই শিরোনামে বাবের নামকরণই প্রমাণ করে আযানের পূর্বে পরে দরুদ শরীফ পড়া অতীত পূর্ণের মাধ্যম।

বিষয়ে রাসূলে পাক (ﷺ) এর বাণী:

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার অনাবদ্য কিতাব ‘আল জামেউস সগীর’ এ রাসূলে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)’র একটি হাদিস শরীফ এনেছেন এর দ্বারাও প্রমাণিত হয় আযানের পূর্বে দরুদ পড়া মূলত পূণ্যের কাজ।

রাসূলে পাক (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

كُلُّ أَمْرٍ ذِي بَالٍ لاَ يُبْدَأُ فِيهِ بِحَمْدِ الله وَالصَّلاَةِ عَلَيَّ فَهُوَ أَقْطَعُ أَبْترُ مَمْحُوقٌ مِنْ كُلِّ برَكَةٍ

-‘‘যে সব ভাল কাজ আল্লাহর হামদ এবং আমার উপর দরুদ শরীফ দ্বারা শুরু হয় না তা বরকত শূণ্য হয়।’’ ৩০৬

  • ৩০৬. ইমাম সুয়ূতি, আল-জামিউস সগীর, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ৯২, হা/৯৭০২ এবং জামিউল আহাদিস, ১৫/৩১৫ পৃ. হা/১৫৫৮৬, ইমাম দায়লামী, মুসনাদিল ফিরদাউস, ৩/২৪৬ পৃ. হা/৪৭২৬, আহলে হাদিস আলবানী এ হাদিসটির সনদকে যঈফ বলেছেন, আমরা বলবো, এটি যঈফ হলেও মুস্তাহাব হিসেবে আমল করার ক্ষেত্রে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য।

এমন কোন মুসলমান আছে, যে আযানকে ভাল কাজ মনে করে না? মুসলমানগণ তো আযানকে ভাল কাজ মনে করেই আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পাঠ করেন।

ইমাম বদরুদ্দিন আইনি (رحمة الله) আকিদা:

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (رحمة الله) তাঁর অনাবদ্য কিতাব “উমদাতুল কারী” গ্রন্থে উপরোক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন 

وَأما الصَّلَاة فَلِأَن ذكره صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مقرون بِذكرِهِ تَعَالَى وَلَقَد قَالُوا فِي قَوْله تَعَالَى {ورفعنا لَك ذكرك} مَعْنَاهُ ذكرت حَيْثُمَا ذكرت

-“এজন্যই রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর দরুদ শরীফ পড়া হয় যাতে আল্লাহ পাকের সাথে তার যিকরও হয়। ওলামায়ে কেরাম (رحمة الله) ورفعنا لَك ذكرك এর ব্যাখ্যায় বলেন, মহান রবের বানী, “হে রাসূল! আমি আপনার যিকরকে বুলন্দ করে দিয়েছি’ এর মমার্থ হল, যেখানেই আমার যিকর হবে সেখানে আপনার যিকর হবে।”  ৩০৭

  • ৩০৭. আইনী, উমদাতুল কারী, প্রথম খণ্ড, ১১ পৃষ্ঠা

মুহাদ্দিসগণ আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়াকে জায়েয এবং মুস্তাহাব বলেছেন, কিন্তু দেওবন্দীরা এর থেকে নিষেধ করে থাকে।

ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله)’ আক্বিদা 

আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এবং তাঁর অন্যতম শাগরিদ মুহাদ্দিস আল্লামা সাখাভী (رحمة الله) ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর একটি উক্তি বর্ণনা করেছেন যে, 

قال الشافعي – رضي الله عنه – أحب كثرة الصلاة على النبي – صلى الله عليه وسلم

-‘‘ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)’র উপরে সর্বদা দরুদ পড়তে আমি পছন্দ করি।” (আল্লামা সাখাভী, আল-কওলুল বদী, ১৯৬ পৃ.)

ইমাম শাফেয়ী (رحمة الله) এর ন্যায় ব্যক্তিত্ব সর্বদা দরুদ পড়তে পছন্দ করেন আর তারা বেদআত এবং হারামের ফতোয়া ছড়ায়।

তাদের কাছে হযরত সালাহ উদ্দিন আইয়ুবীর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তারা বলবে তিনি একজন নেককার বাদশা ছিলেন, তিনি বায়তুল মুকাদ্দস জয় করেছেন এবং আলেম ওলামাদের তাঁর জন্য দোয়া করেন। এই হযরত সালাহ উদ্দিন আইয়ুবী (رحمة الله)ও আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়ার হুকুম দিয়েছেন। তাঁর যুগে এর বড় গুরুত্ব ছিল। আল্লামা সাখাভী (رحمة الله) তাঁর আল-কাওলুল বদীতে এবং আল্লামা সুলায়মান (رحمة الله) তাফসিরে জামালে তা বর্ণনা করেছেন।

কাজী আয়্যায (رحمة الله)’ আকিদা

তিনি তাঁর অনাবদ্য কিতাব যেটি রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর দরবারে কবুল হয়েছে। “আশ-শিফা ফি তা‘রিফে হুকুকিল মুস্তফা” এর মধ্যে আযানের সময় রাসূল (ﷺ) এর দরুদ শরীফ পাঠ করার কথা বলেছেন। তিনি বলেন- 

وَمِنْ مُوَاطِنِ الصَّلَاةِ عَلَيْهِ عِنْدَ ذِكْرِهِ وَسَمَاعِ اسْمِهِ أَوْ كِتَابَتِهِ أَوْ عِنْدَ الْأَذَانِ.

-‘‘রাসূলে পাক (ﷺ) এর উপর দরুদ শরীফ পাঠ করার অসংখ্য সময় হতে একটি হল আযানের সময় দরুদ শরীফ পড়া।’’ (ইমাম কাযি আয়্যায, আশ-শিফা, ২/১৫২) 

এখানেও ইমাম আয়্যায (رحمة الله) আযানের সময় উল্লেখ করেছেন। আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী (رحمة الله) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন-

أي الاعلام الشامل للإقامة

-‘‘এখানে আযান দ্বারা জানিয়ে দেয়া উদ্দেশ্য। এটি আযান ইকামত উভয়কে অন্তর্ভূক্ত করে।’’ ৩০৮

  • ৩০৮. আল্লামা মোল্লা আলী কারী হানাফী, শরহে শিফা, ২য় খণ্ড ১১৬ পৃ.

আল্লামা দিমিয়াতী মক্কী (رحمة الله)’ আকিদা

তিনি তাঁর কিতাব “ফতহুল মুঈন” গ্রন্থে আযান ও ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং সুন্নাত উল্লেখ করে বলেন-

وقال الشيخ الكبير البكري أنها تسن قبلهما

শায়খে কাযীর বিকরী (رحمة الله) আযান ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া মুস্তাহাব এবং সুন্নাত।’’ (আল্লামা দিমিয়াতি, ইয়ানাতুত ত্বালেবীন, ১/২৮০ পৃ.)

ফতহুল মুঈন এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ “ইয়ানাতুত তলেবীন “এর মধ্যে এসেছে” 

اَىْ الصَّلٰوةُ وَالسَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ قَبْلَ الْأَذَانِ وَالْاِقَامَةِ

-‘‘আযান ও ইকামতের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া সুন্নাত।’’ ৩০৯

  • ৩০৯. ইয়ানাতুত ত্বালেবীন, ১ম খণ্ড ২২৩ পৃ.

বিজ্ঞ পাঠকবর্গ! উম্মতে মুহাম্মদীর বিদগ্ধ আলেমদের বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হল আযানের পূর্বে দরুদ শরীফ পড়া সন্দেহ ছাড়া মুস্তাহাব।সুতরাং উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে দিবা লোকের ন্যায় প্রমাণিত হল আযানের পূর্ব-পরে দরুদ শরীফ পাঠ করা থেকে যারা বাধা প্রদান করে তথা ওই সমস্ত দেওবন্দী ওহাবীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment