বিষয় নং-১৪: মৃতদের শ্রবণ শক্তি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা বলে মৃতরা শুনে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল মৃতরা শুনতে পান। পবিত্র কুরআনে আছে কাউমে ছামুদের উপর আল্লাহ তা‘য়ালা আযাব নাজিল করেন। তারা মৃত্যু বরণ করে তখন হযরত ছালেহ (عليه السلام) তাদেরকে বলেন-

فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِنْ لَا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ

-“অতঃপর সালিহ তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং বললেন, ‘হে আমার সম্প্রদায়, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালত পৌঁছিয়ে দিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি, কিন্তু তোমরা হিতাকাঙ্খীদের কল্যান পছন্দই করো না।’’ ১৭৯

  • ১৭৯. ৮ পারা ১৭ রুকু সূরা: আরাফ আয়াত নং-৭৯

হযরত শোয়াইব (عليه السلام) 

অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘য়ালা মাদায়েনের ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, যেমন মাদায়েন বাসীর উপর যখন আযাব আসে তারা ধ্বংস হয়, তখন হযরত শোয়াইব (عليه السلام) এই মৃতুদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন- 

فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ فَكَيْفَ آسَى عَلَى قَوْمٍ كَافِرِينَ

-“অতঃপর শোয়াইব তাদের দিক হতে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং বললো ‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের নিকট আমার প্রতিপালকের (প্রেরিত) বানী:পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গলের জন্য উপদেশ দিয়েছি, সুতরাং (আমি) কি করে সমবেদনা প্রকাশ করি কাফিরদের জন্য।’’ ১৮০

  • ১৮০. ৯ পারা ১ রুকু সূরা আরাফ: আয়াত ৯৩

সম্মানিত পাঠক! মৃত কাউমকে হরফে নেদা يَا দ্বারা আহ্বান করা দ্বারা প্রকাশ পেয়েছে যে, তারা শুনে। আর যিনি আহ্বান করছেন তিনি জলিলুন মরতাবাবান নবী। 

সারওয়ারে আম্বিয়া (ﷺ)’ আকিদা

বদর ময়দানে মক্কার মুশরিকরা যখন সাংঘাতিক পরাজয় হল তাদের মৃতদেহ গুলোকে একটি কূপে নিক্ষেপ করা হল। এই কূপের নিকটে গিয়ে হুযুর (ﷺ) তখন বলতে লাগলেন: 

্রيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانُ بْنَ فُلَانٍ أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللَّهَ وَرَسُولَهُ؟ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجدتمْ مَا وعدَكم رَبُّكُمْ حَقًّا؟

-‘হে অমুকের পুত্র অমুক, অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কী এটার উপর খুশি হতে না যে, তোমরা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)’র আনুগত্য করবে? এরপর বলেন, নিশ্চয়ই আমাদের রবের অঙ্গীকার আমরা যথাযথভাবে পেয়েছি। তোমরাও কী তোমাদের রবের অঙ্গীকার যথার্থ পেয়েছ?’’

তখন হযরত উমর (رضي الله عنه) আরয করলেন, হে রাসূল (ﷺ) আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন! এদের তো প্রাণ নেই। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, 

وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ

-‘‘আল্লাহর শপথ! তাঁর হাতে আমার প্রাণ আমি যা বলছি এদের চেয়ে অধিক তোমরা শুনো না।’’  ১৮১

  • ১৮১. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ২/১১৬০ পৃ. হা/৩৯৬৭, পরিচ্ছেদ: بَاب حكم الاسراء , ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/৮৬ পৃ. হা/৪০২৬, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১০/২৯১ পৃ. হা/৬১৪৫, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৪৮১ পৃ. হা/২২১২, ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ৬/৪৩৩ পৃ. হা/৩৮০৮

হযরত ঈসা (عليه السلام)’ আক্বিদা

হযরত ঈসা (عليه السلام)’র একটি মু‘জিযা প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতেন। যেমন কুরআনে পাকে আছে, 

وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِ الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللهِ

-“এবং আমি নিরাময় করি জন্মন্ধ ও সাদা দাগ সম্পন্ন (কুষ্ঠ রোগী) কে আর আমি মৃতকে জীবিত করি আল্লাহর নির্দেশে।” (৩য় পারা, সূরা আলে-ইমরান, আয়াত, ৪৯)

এই আয়াতের তাফসীরে হতে স্পষ্ট বুঝা যায়, তিনি মৃতকে জীবিত করতেন। তাফসীরে আছে মৃতকে জীবিত করার জন্য তিনি قُمْ بِإِذْنِ اللهِ বলতেন। قُمْ শব্দটি আমর তথা নির্দেশ সূচক শব্দ। যার অর্থ উঠ! তিনি قُمْ বললে মৃত ব্যক্তি দাঁড়াতেন বুঝা গেল মৃত ব্যক্তি প্রথমত قُمْ শব্দটি শ্রবণ করাটা প্রমাণিত এরপর হযরত ঈসা (عليه السلام)’র মু‘জিযার প্রকাশ। মৃত যদি না শুনতো তবে তিনি قُمْ শব্দটি বলতেন না। قُمْ শব্দটি বলার দ্বারাই বুঝা যায় মৃতরা শুনতে পায়।

হযরত আনাস (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

সারকারে দোআলম (ﷺ)’র অন্যতম সাহাবা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-

إِنَّ العَبْدَ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتَوَلَّى عَنْهُ أَصْحَابُهُ، وَإِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ

-“কোন মানুষকে যখন কবরস্ত করা হয় এবং তার বন্ধু বান্ধবরা চলে যায় তখন মৃত ব্যক্তি তাদের জুতার শব্দও শুনতে পায়।’’  ১৮২

  • ১৮২. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/৯৮ পৃ. হা/১৩৭৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ২৪ পৃ.) ১/৪৫ পৃ. হা/১২৬, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২২০০ পৃ. হা/২৮৭০, সহীহ ইবনে হিব্বান, ৭/৩৯০ পৃ. হা/৩১২০

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) মদিনা শরীফের কবরের পাশ দিয়ে গমনের সময় বলতেন, 

السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالأَثَرِ.

-‘‘হে কবর বাসী! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদেরকে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের আগে এসেছো, আমরা তোমাদের পরে আসবো।’’  ১৮৩

  • ১৮৩. ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ২/৩৬০ পৃ. হা/১০৫৩, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৫৩ পৃ. হা/১৭৬৫

প্রিয় পাঠক! ‘‘ইয়া আহলাল কুবুর! দ্বারা কবরে মৃতরা শুনে, বরং দেওবন্দী, গাইরে মুকাল্লিদ আহলে হাদীস, তাবলীগ জাম‘আত এবং মওদুদীদের অন্যতম মুজাদ্দেদ ইবনে কাইয়ুমও এ বাস্তবতার স্বীকার করেছে। 

ইবনে কাইয়্যুমের স্বীকারূক্তি:

ইবনুল কাইয়্যুম জাওযী লিখেন-

وَالْخِطَابُ وَالنِّدَاءُ لَمَوْجُوْدِ يَسْمَعُ وَيُخَاطَبُ وَيَعْقِلْ

-‘‘মৃতব্যক্তি তার পাশের জনের আহ্বান, কথা-বার্তা, শুনে এবং বুঝে।’’ তিনি আরও লিখেন: 

فَإِن السَّلَامُ عَلٰى مَنْ لَايَسْمَعُ وَلَا يَشْعُرُ وَلَا يَعْلَمُ بِالْمُسلمِ مَحَالْ

-‘‘কেননা যে সালাম শুনেনা এবং বুঝে না, তাকে সালাম করা অসম্ভব।’’ (ইবনুল কাইয়্যুম জাওযিয়্যাহ, কিতাবুর রূহ, ৮ পৃ.)

কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল দেওবন্দী এবং আহলে হাদীস পন্থিরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment