বিষয় নং-১১: উসিলা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দেওবন্দী ওহাবীদের আকিদা হল উসিলা জায়েয নয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদা হল উসিলা জায়েয। আল্লাহ তা‘য়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

-“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর দিকে মাধ্যম তালাশ করো এবং তাঁর পথে জিহাদ করো এ আশায় যে, সফলতা পেতে পারো।’’ (সুরা মায়েদা আয়াত, ৩৫)

وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللهَ تَوَّابًا رَحِيمًا

-“এবং যদি কখনো তারা নিজেদের আত্মার প্রতি যুলুম করে তখন, হে মাহবুব! (তারা) আপনার দরবারে হাযির হয় এবং অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, আর রাসূল তাদের পক্ষে সুপারিশ করেন, তবে অবশ্যই আল্লাহকে অত্যন্ত তাওবা কবূলকারী দয়ালু পাবে।’’ ১৩৭

  • ১৩৭. ৫ম পারা , ৭ রুকু, সুরা নিসা, আয়াত নং- ৬৪

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এই আয়াতের তাফসীরে মুফাস্সিরগণ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন, নিম্মে তা বর্ণিত হল: 

جاء أعرابي بعد دفنه عليه السلام فرمى بنفسه على قبره وحثا من ترابه على رأسه وقال يا رسول الله قلت فسمعنا وكان فيما أنزل عليك ولو أنهم إذ ظلموا

النساء (৬৫ থ ৬৯) أنفسهم الآية وقد ظلمت نفسي وجئتك أستغفر الله من ذنبي فاستغفر لي من ربي فنودي من قبره قد غفر لك

-‘‘রাসুলে করিম (ﷺ) ইন্তেকালের পর এক বেদুঈন এসে রওযা শরীফের মাটি মুবারক নিজের মাথার উপর মালিশ করে এবং আরয করতে লাগল। হে রাসূল (ﷺ)! আপনার উপর নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়। আমি আমার নফসের উপর যুলুম করেছি। এখন আপনার দরবারে এসেছি আল্লাহর কাছে গুনাহ মার্জনা করার জন্য। তখন রওজা মুবারক হতে আওয়াজ আসে। তোমার পাপ ক্ষমা করা হল।’’ ১৩৮

  • ১৩৮. ইমাম নাসাফী, তাফসীরে মাদারিক, ১ম খণ্ড ৩৭০ পৃ., শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, জুযবুল কুলুব, (ফার্সী), ২১১ পৃ.

মহান রব তা‘য়ালা ইরশাদ করেন-

وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا فَلَمَّا جَاءَهُمْ مَا عَرَفُوا كَفَرُوا بِهِ فَلَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الْكَافِرِينَ

-‘‘কাফেরদের উপর বিজয় প্রার্থনা করতো, অতঃপর যখন তাশরীফ এসেছেন তাদের নিকট সেউ পরিচিত সত্ত্বা, তখন তাঁকে অস্বীকারকারী হয়ে বসেছে। এতএব আল্লাহর লা’নত (অভিশাপ) অস্বীকার কারীদের উপর।’’১৩৯  

  • ১৩৯. ১ম পারা ১১ রুকু, সুরা বাকারা, আয়াত নং-৮৯

মুফাস্সিরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, হুযুর পুর নুর (ﷺ) উসিলা নিয়ে ইহুদীরা প্রার্থনা করতো।

সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’ আকিদা: 

সায়্যিদুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, ইহুদীরা কাফেরদের উপর বিজয় লাভের জন্য নিন্মোক্ত প্রার্থনা করত-

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَنْصِرُكَ بِحَقِّ النَّبِي الْأُمِّي إِلاَّ نصرتنا عَلَيْهِم

-‘‘হে আল্লাহ আমাদেরকে নবীয়ে উম্মী (ﷺ)’র উসিলায় মুশরিকদের উপর বিজয় দান করুন।’’ ১৪০

  • ১৪০. ইমাম সুয়ূতি, তাফসীরে দুররে মানসুর, ১ম খণ্ড ২১৬ পৃ.

ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله)’ আকিদা

ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) ইসলামি দুনিয়ার বিখ্যাত মুফাস্সির। তিনিও আলোচ্য আয়াতের তাফসীরে বলেন- 

اللَّهُمَّ افْتَحْ عَلَيْنَا وَانْصُرْنَا بِالنَّبِيِّ الْأُمِّيِّ.

-“হে আল্লাহ! নবীয়ে উম্মী (ﷺ) উসিলায় আমাদেরকে বিজয় দান করুন এবং সাহায্য করুন।’’ ১৪১

  • ১৪১. ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসীরে কাবীর, ৩/৫৯৮ পৃ., ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/২৭৬ পৃ.

হযরত আবু আলিয়া (رضي الله عنه)’ আকিদা:  

তাবেয়ী হযরত আবুল আলিয়া (رحمة الله) বর্ণনা করেন ইহুদিরা প্রার্থনা করতো- 

اللَّهُمَّ ابْعَثْ هَذَا النَّبِيَّ الَّذِي نَجِدُهُ مَكْتُوبًا عِنْدَنَا حَتَّى يُعَذِّبَ الْمُشْرِكِينَ وَيَقْتُلُهُمْ.

-‘‘হে আল্লাহ এমন নবী (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যাঁর কথা আমরা তাওরাতে পেয়েছি, যাতে তিনি ইহুদিদের শাস্তি এবং কতল করতে পারেন।’’ ১৪২

  • ১৪২. ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৪০ পৃ.

আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) আকিদা

ইমাম ইবনে জারীর তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-

عَنْ عَلِيٍّ الْأَزْدِيِّ: فِي قَوْلِ اللَّهِ: {وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا} [البقرة: ৮৯] قَالَ: الْيَهُودُ، كَانُوا يَقُولُونَ: اللَّهُمَّ ابْعَثْ لَنَا هَذَا النَّبِيَّ يَحْكُمُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ النَّاسِ

-‘‘ইহুদী প্রার্থনা সুরে বলত, হে আল্লাহ! নবী করিম (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যিনি আমাদের এবং মানুষের মাঝে ফায়সালা করবেন এবং যাঁর উসিলা নিয়ে লোকেরা দোয়া করে বিজয়ী হবে এবং সাহায্য প্রার্থনা করবে।’’ ১৪৩

  • ১৪৩. ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৮ পৃ.

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله), আল্লামা শরবিনী (رحمة الله), আল্লামা নাসাফী (رحمة الله), ইমাম নিশাপুরী (رحمة الله), আল্লামা আবুস সাউদ (رحمة الله)’ আকিদা

উম্মতে মুহাম্মদী (ﷺ)’র এই মহান মুফাস্রিগণ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, ইহুদীরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বলতো-

اللَّهُمَّ انْصُرْنَا عَلَيْهِمْ بِالنَّبِيِّ الْمَبْعُوثِ فِي آخِرِ الزَّمَانِ الَّذِي نَجِدُ صِفَتَهُ فِي التَّوْرَاةِ،

-‘‘হে আল্লাহ! আমাদেরকে সাহায্য করুন, এমন নবী (ﷺ)’র উসিলায় যিনি শেষ জামানায় প্রেরিত হবে। যাঁর গুণাবলি সম্পর্কে আমরা তাওরাতে জেনেছি।’’ ১৪৪

  • ১৪৪. তাফসীরে মাদারেক, ১ম খণ্ড ৩৭০ পৃ., জালালাইন ১ম খণ্ড ১৪ পৃ., তাফসিরে নিশাপুরী ১ম খণ্ড ৩২৭ পৃ., তাফসিরে সিরাতুম মুনীর, ১ম খণ্ড ৭৩ পৃ., তাফসিরে জামেউল বয়ান, ১ম খণ্ড ১৬ পৃ., তাফসিরে কাশশাফ, ১ম খণ্ড ২৯৬ পৃ., ইমাম বাগভী, তাফসিরে মা‘লিমুত তানযিল, ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/২৭৬ পৃ., ইমাম সাম‘আনী, তাফসিরে সাম‘আনী, ১/১০৮ পৃ., ইমাম খাযেন, তাফসিরে খাযেন, ১/৬০ পৃ., তাফসিরে মানার, ১/৩১৫ পৃ.

মুহাদ্দিস ইবনে জাওযী (رحمة الله)-এর আক্বিদা:

ইমাম আবুল ফারাহ আবদুর রহমান জাওযী (رحمة الله) বলেন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنْ يَهُودَ، كَانُوا يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الْأَوْسِ وَالْخَزْرَجِ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَ مَبْعَثِهِ.

-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নিশ্চয়ই ইহুদীরা আউস এবং খাযরাজে গোত্রের উপর বিজয় হওয়ার জন্য রাসূল (ﷺ)’র প্রেরণের পূর্বে তাঁর উসিলা নিয়ে প্রার্থনা করত।  ১৪৫

টিকা━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

  • ১৪৫. 

ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা বিআহওয়ালিল মুস্তফা, ১ম খণ্ড ৪৪ পৃ., ইমাম তবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৭ পৃ., ইমাম মাওয়ারিদী, তাফসিরে মাওয়ারিদী, ১/১৫৮ পৃ., ইমাম ইবনে আবি হাতেম, তাফসিরে ইবনে আবি হাতেম, ১/১৭২ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৭ পৃ., ইমাম আবু হাফস সিরাজুদ্দীন উমর বিন দামেস্কী হানাফী, লুবাব ফি উলূমিল কিতাব, ২/৩১৭ পৃ., ইবনে কাসির, তাফসিরে ইবনে কাসির, ১/২১৭ পৃ., ইমাম আবু সাউদ, তাফসিরে আবিস সাউদ, ১/১২৮ পৃ., ইমাম নিশাপুরী, তাফসিরে নিশাপুরী, ১/৩৪৪ পৃ., 

❏ ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) এটি উল্লেখ করে লিখেন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ وَقَتَادَةَ وَالسُّدِّيِّ.

-‘‘এমনটি রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه), তাবেয়ী কাতাদা (رحمة الله), তাবেয়ী ইমাম সুদ্দী (رحمة الله)-এর ব্যাখ্যা।’’ (ইমাম রাজী, তাফসিরে কাবীর, ৩/৫৯৯ পৃ.)

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) আকিদা

জলিলুল কদর মুফাস্সির হযরত কাতাদাহ (رضي الله عنه) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-

عَنْ قَتَادَةَ: قَوْلُهُ: {وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا} [البقرة: ৮৯] كَانَتِ الْيَهُودُ تَسْتَفْتِحُ بِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى كُفَّارِ الْعَرَبِ مِنْ قَبْلُ، وَقَالُوا: اللَّهُمَّ ابْعَثْ هَذَا النَّبِيَّ الَّذِي نَجِدُهُ فِي التَّوْرَاةِ يُعَذِّبُهُمْ وَيَقْتُلُهُمْ.

-‘‘ইহুদীরা রাসূলে কারিম (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে কাফেরদের উপর বিজয় কামনা করত। তারা বলত, হে আল্লাহ! এমন নবী (ﷺ) কে প্রেরণ করুন, যাঁর গুণাবলী আমরা তাওরাতে পেয়েছি যাতে আমরা তাদেরকে শাস্তি ও কতল করতে পারি।’’  ১৪৬

  • ১৪৬. ইমাম ইবনে জাওযী, কিতাবুল ওয়াফা ১ম খণ্ড , ৪৪-৪৫ পৃ., ইমাম তাবারী, তাফসিরে তবারী, ২/২৩৯ পৃ., ইমাম আবু লাইস সমরকুন্দী, তাফসিরে বাহরুল উলূম, ১/৯৬ পৃ., ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৬ পৃ.

ইমাম আবু নাঈম, বায়হাকী, হাকিম এবং শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله)’ আক্বিদা

আল্লামা শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন, 

اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلك بِحَق مُحَمَّد النَّبِي الْأُمِّي الَّذِي وعدتنا أَن تخرجه لنا فِي آخر الزَّمَان وبكتابك الَّذِي تنزل عَلَيْهِ الَّذِي وعدتنا

-“হে আল্লাহ! হে আমাদের পরওয়ারদিগার! আমরা আপনার কাছে ওই নবী (ﷺ)’র উসিলায় প্রার্থনা করছি। যাঁকে প্রেরণ করার আপনি অঙ্গীকার করেছেন। ওই কিতাবের বরকতে যা আপনি তাঁর উপর অবর্তীণ করেছেন সকল কিতাবের পরে। সুতরাং আমাদের দুশমনের উপর আমাদেরকে বিজয় দান করুন।’’ ১৪৭

  • ১৪৭. ইমাম সুয়ূতি, তাফসিরে দুররুল মানসূর, ১/২১৬ পৃ., তাফসিরে ফতহুল আযিয, ৩৩৯ পৃ.

রাসূলে আজম (ﷺ)’ আক্বিদা

হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসূলে কারিম (ﷺ)’র দরবারে এসে আরয করেন, হে রাসূল (ﷺ)! আমার জন্য একটু দোয়া করুন যেন আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। তখন রাসূলে কারিম (ﷺ) তাকে বললেন যাও, অযু করে দু’রাকাত নামায পড়ে নিম্নোক্ত ভাবে প্রার্থনা কর: 

“اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِمُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي قَدْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى، اللَّهُمَّ شَفِّعْهُ فِيَّ

-“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, আপনার দিকে মনোনিবেশ করছি আপনার মাহবুব (ﷺ)’র উসিলায়। হে রাসূল (ﷺ)! আপনার উসিলা নিয়ে আমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করছি আমার এই হাজত পূরণের জন্য। হে আল্লাহ! আমার হকে আপনার মাহবুবের শাফায়াত কবুল করুন।’’ ১৪৮

  • ১৪৮. ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ২/৩৯৫ পৃ. হা/১৩৮৫

আল্লামা আবদুল গণী দেহলভী (رحمة الله) ইবনে মাজাহ শরীফের হাশিয়ায় এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-

قَالَ الشَّيْخُ عَبْدُ الْغَنِيِّ فِي إِنْجَاحِ الْحَاجَةِ ذَكَرَ شَيْخُنَا عَابِدٌ السِّنْدِيُّ فِي رِسَالَتِهِ وَالْحَدِيثُ يَدُلُّ عَلَى جَوَازِ التَّوَسُّلِ وَالِاسْتِشْفَاعِ بِذَاتِهِ الْمُكَرَّمِ فِي حَيَاتِهِ وَأَمَّا بَعْدَ مَمَاتِهِ

-‘‘এই হাদিস উসিলা বৈধ হওয়ার দলীল এবং তাঁর হায়াত ও ইন্তেকালের পর সুপারিশকারী হওয়ার দলিল।’’ ১৪৯

  • ১৪৯. ইমাম সুয়ূতি, মিসবাহুজ জুয্যাহ, ১/৯৯ পৃ. আব্দুর রহমান, মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ১০/২৫ পৃ., উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী, মের‘আত, ৮/২৬৫ পৃ.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র হতে বর্ণিত। রাসূলে পাক (ﷺ) আল্লাহর দরদারে আরয করলেন- 

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا – عَنِ النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – قَالَ:  اللَّهُمَّ أَعِزَّ الْإِسْلَامَ بِأَبِي جَهْلِ بْنِ هِشَامٍ، أَوْ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ فَأَصْبَحَ عُمَرُ، فَغَدَا عَلَى النَّبِيِّ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – فَأَسْلَمَ، ثُمَّ صَلَّى فِي الْمَسْجِدِ ظَاهِرًا . رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَالتِّرْمِذِيُّ.

-“হে আল্লাহ! আপনি ইসলামকে মর্যাদাবান করুন আবু জাহল বিন হিশাম অথবা উমর ইবনুল খাত্তাব দ্বারা। অতঃপর হযরত উমর বিন খাত্তাব (رضي الله عنه) প্রত্যুষে রাসূলে পাক (ﷺ)’র দরবারে উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলে পাক (ﷺ)’র পেছনে প্রকাশ্যে মসজিদে নামায পড়েন।  ১৫০

  • ১৫০. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭০৪ পৃ. হা/৬০৪৫, ৫৫৭ পৃ: তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড ২০০ পৃ:, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৯২ পৃ. হা/৩৮৮৫

সায়্যিদুনা আদম (عليه السلام)’ আকিদা

ইমাম তাবরানী (رحمة الله), ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله), আল্লামা হাকেম (رحمة الله), আল্লামা ইবনে আসাকীর (رحمة الله), আল্লামা জুরকানী (رحمة الله), আল্লামা ইবনে জাওযী (رحمة الله), আল্লামা কাস্তাল্লানী (رحمة الله), আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী (رحمة الله) এবং শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলবী (رحمة الله) প্রমুখ মুহাদ্দীসগণ তাঁদের নিজ নিজ কিতাবে বর্ণনা করেন যখন হযরত আদম (عليه السلام) হতে অপ্রকাশিত্য ভাবে ভুল প্রকাশিত হল। তখন তিনি আল্লাহর দরবারে রাসূলে পাক (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে নিম্নোক্তভাবে দোয়া করেন-

يَا رَبِّ أَسْأَلُكَ بِحَقِّ مُحَمَّدٍ لَمَا غَفَرْتَ لِي

-‘‘হে আমার পরওয়ারদিগার হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায় আমাকে ক্ষমা করে দিন।’’ ১৫১

  • ১৫১. ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাকঃ ২/৬৭২ পৃ. হা/৪২২৮, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল আওসাত : ৬/৩১৩ হাদিসঃ ৬৫০২, তাবরানীঃ মু’জামুস সগীর : ২/১৮২ হাদিসঃ ৯৯২, ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২৫৩ : পৃ., ইমাম ইবনে আসাকিরঃ- তারিখে দামেস্ক  : ৭/৪৩৭, আল্লামা ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি, খাসায়েসুল কোবরা, ১/১২ হাদিসঃ ১২, ইমাম বুরহান উদ্দিন হালবীঃ সিরাতে হালবিয়্যাহ ১/৩৫৫ পৃ., ইমাম কাস্তাল্লানীঃ মাওয়াহেবে লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ., ইমাম বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুয়তঃ ৫/৪৮৯ পৃ., ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মাদখালঃ ১/১৫৪ পৃ., ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলইয়াতুল আউলিয়া, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : শাওয়াহিদুল হক্ব : পৃ নং: ১৩৭, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আনোয়ার-ই-মুহাম্মদিয়া : পৃ নং: ৯-১০, আল্লামা শাহ আ: আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভী : তাফসীর-ই-আযীযী : প্রথম খন্ডঃ পৃ-১৮৩, আল্লামা শায়খ ইউসুফ নাবহানী : আফযালুস্ সালাত : পৃ-১১৭, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান: ২/৩৭০ পৃ. সূরা মায়েদা: আয়াত নং-১৫, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : শরহে শামায়েল : ১/১১৫ পৃ., আল্লামা শায়খ ইউসূফ নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার : ২/১১৪ পৃ:, ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/১৭২ পৃ., শায়খ ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৭৯৫ পৃ. এবং ৩১ পৃ., মাকতুবাতুত- তাওফিকহিয়্যাহ্, কায়রু,  মিশর। আল্লামা শফী উকাড়বীঃ যিকরে হাসীন, ৩৭ পৃষ্ঠা, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী : নশরত্তীবঃ পৃষ্ঠা নং- ২৮

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

সায়্যিদুনা নূহ (عليه السلام)’ আকিদা

আল্লামা শায়খ মুস্তফা আকরামী (رحمة الله) বলেন, হযরত নূহ (عليه السلام) যখন তাঁর নিজ কউমের জন্য দোয়া করতেন তখন এভাবে বলতেন, 

الهى اسئلك ان تنصرنى عليهم بنور محمد صلى الله عليه وسلم

-“হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি যে, আপনার মাহবুব মুহাম্মদ (ﷺ)’র নূর মুবারকের উসিলায় তাদের উপর আমাকে সাহায্য করুন।’’ ১৫২

  • ১৫২. রিসালাতুস সুন্নিঈন ফিরদ্দি আলাল মুবতাদীঈন তওহাবীয়্যীন, ২৪ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

সায়্যিদাহ, তায়্যিবাহ, তাহেরাহ উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ই সায়্যিদুনা রশাদ করেন,

عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: “اللَّهُمَّ أَعِزَّ الْإِسْلَامَ بِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ خَاصَّةً

-“হে আল্লাহ! উমর (رضي الله عنه)’র মাধ্যমে ইসলামকে মর্যাদাবান করুন।”  ১৫৩

  • ১৫৩. ইমাম ইবনে মাজাহ, ১/৭৭ পৃ. হা/১০৫, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৮৯ পৃ. হা/৪৪৮৫, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৬/৬০২ পৃ. হা/১৩১০২, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৮৮২

আলী মুরতাদা শেরে খোদা কাররামাহুল্লাহ ওয়াজুহুল কারীম

সায়্যিদুনা আলী (رضي الله عنه) ইরশাদ করেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে একথা বলতে শুনেছি, রাসূলে করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-

الْأَبْدَالُ يَكُونُونَ بِالشَّامِ، وَهُمْ أَرْبَعُونَ رَجُلًا، كُلَّمَا مَاتَ رَجُلٌ أَبْدَلَ اللهُ مَكَانَهُ رَجُلًا، يُسْقَى بِهِمُ الْغَيْثُ، وَيُنْتَصَرُ بِهِمْ عَلَى الْأَعْدَاءِ، وَيُصْرَفُ عَنْ أَهْلِ الشَّامِ بِهِمِ الْعَذَابُ

-“আবদালগণ শাম দেশেই হবে, তাঁরা ৪০ জন পুরুষ, তাঁদের কেউ ইন্তিকাল করলে তদস্থলে আল্লাহ তা‘য়ালা অন্যজনকে স্থলাভিষিক্ত করেন, তাঁদের বরকতে বৃষ্টি বর্ষিত হয়, তাঁদের উসিলায় শক্রুর উপর জয়ী হয় এবং তাঁদের বরকতে বিপদ দূরীভূত হয়।’’  ১৫৪

  • ১৫৪. ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/২৩১ পৃ. হা/৮৯৬, এবং ইমাম আহমদ, ফাযায়েলুস সাহাবা, ২/৯০৬ পৃ. হা/১৭২৭, ইমাম যিয়া মুকাদ্দাসী, আহাদিসিল মুখতার, ২/১১০ পৃ. হা/৪৮৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৮২ পৃ.) ৩/১৭৬৭ পৃ.হা/৬২৭৭, ইমাম সুয়ূতি, জামেউ সগীর, ১২২ পৃ: ১ম খণ্ড, আহলে হাদিস আলবানী এটিকে মিশকাতের তাহকীকে যঈফ বলে মনগড়া তাহকীক করেছে, মূলত সনদটি ‘হাসান’, এ বিষয়ে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ তৃতীয় খণ্ড দেখুন।

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, 

أَيْ: بِبَرَكَتِهِمْ أَوْ بِسَبَبِ وُجُودِهِمْ فِيهَا…. بِهِمْ يُدْفَعُ الْبَلَاءُ عَنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ

-“আবদালগণের বরকতে এবং তাঁদের উপস্থিতির কারণে বৃষ্টি বর্ষণ হয় দুশমনের উপর বিজয় লাভ করা যায় এবং তাঁদের বরকতে রাসূলে করিম (ﷺ)’র উম্মত হতে বিপদ দূর হয়।’’ ১৫৫

  • ১৫৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৯/৪০৪২ পৃ. হা/৬২৭৭-এর আলোচনা।

হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) এবং হযরত সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

আল্লামা মুহিবুদ্দীন তাবারী (ওফাত. ৬৯৪ হি.) বর্ণনা করেন সায়্যিদুনা ফারুকে আজম (رضي الله عنه)’র খিলাফতকালে কিসরার দিকে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। হযরত সাদ বিন আবী ওয়াককাস (رضي الله عنه) কে তাদের আমির নিযুক্ত করা হয়। আর সেনাপতি নির্বাচিত হন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه)। তাঁরা দজলা নদী পর্যন্ত পৌঁছে দেখতে পান সেখানে কোন জাহাজ কিংবা নৌকা নেই। তখন হযরত খালেদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) এবং সাদ বিন আবি ওয়াককাস (رضي الله عنه) সামনে গিয়ে নদীকে সম্বোধন করে বলেন-

يا بحر إنك تجري بأمر الله, فبحرمة محمد -صلى الله عليه وسلم- وبعدل عمر خليفة رسول الله إلا خليتنا والعبور، فعبر الجيش بخيله وجماله إلى المدائن ولم تبتل حوافرها.

-“হে নদী! তুমি আল্লাহর হুকুমে প্রবাহমান। সুতরাং রাসূলে কারিম (ﷺ) এবং রাসূলে কারিম (ﷺ)’র খলিফা হযরত উমর (رضي الله عنه)’র আদালতের উসিলায় আমাদের মাঝে এবং আমাদের ঘোড়ার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি কর না। এরপর সৈন্যদল তাদের উট এবং ঘোড়া নিয়ে মাদায়েন চলে যান অথচ তাদের পায়ের খুর পর্যন্ত ভিজেনি।’’ ১৫৬

  • ১৫৬. আল্লামা মহিবুদ্দীন তবারী, আর-রিয়াদুন নাদিরাহ ফি মানাকিবে আশারা, ২/৩৩১ পৃ.

হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

৩য় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উসমান গণী (رضي الله عنه)’র খেলাফতকালে একটি ঘটনা সংঘটিত হয়। যা হাদিস শরীফের নির্ভরযোগ্য কিতাব তাবরানী শরীফ এবং ইবনে মাজাহ শরীফের হাশিয়া মিসবাহুয জুয্যাহ এর ১/১০০ পৃষ্ঠায় এসেছে। হযরত উসমান গণী (رضي الله عنه)’র সাথে এক ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল। কিন্তু হযরত উসমান (رضي الله عنه) লোকটির প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন না। লোকটি হযরত উসমান বিন হানিফ (رضي الله عنه) কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি রাসূলে করিম (ﷺ)’র উসিলা নিয়ে দোয়া করতে বলেন। লোকটি কথামত আমলটি করলেন, তখন হযরত উসমান (رضي الله عنه) তার দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। দোয়াটি নিম্নরূপ-

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِمُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ، يَا مُحَمَّدُ، إِنِّي قَدْ تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى، اللَّهُمَّ شَفِّعْهُ فِيَّ

-‘‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি, রহমতের নবী মুহাম্মদ (ﷺ)’র উসিলায়, আপনার নিকট মনোনিবেশ করছি। হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আপনার উসিলা নিয়ে নিজ রবের নিকট মনোনিবেশ করছি, আমার এমন হাজতে যা পূরণীয় হে আল্লাহ! হুযুর (ﷺ)’র শাফায়াত আমার জন্য কবুল করুন।’’ ১৫৭

  • ১৫৭. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৯/৩০ পৃ. হা/৮৩১০, জযবুল কুলুব ফার্সী, ২১৯-২২০ পৃ.

সায়্যিদুনা আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه)’ আক্বিদা

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيَقُولُونَ: فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ

-“এমন এক সময় আসবে যে একদল লোক যুদ্ধ করবে, তখন তারা জিজ্ঞাসা করবে আপনাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছেন যিনি রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র সাথে ছিলেন, তারা বলবেন, হ্যাঁ, অতঃপর তাঁদের উসিলায় যুদ্ধে তারা জয় লাভ করবে। অতঃপর এমন এক সময় আসবে একদল লোক যুদ্ধ করবে। তারা তখন বলবেন আপনাদের মাঝে এমন কেউ আছেন যিনি সাহাবায়ে কেরামের  (رضي الله عنه) সান্নিধ্য পেয়েছেন, তাঁরা বলবেন হ্যাঁ, এরপর তাঁর উসিলায় যুদ্ধে তারা জয় লাভ করবেন। অতঃপর এমন এক সময় আসবে যে একদল মানুষ যুদ্ধ করবে তখন তারা জিজ্ঞাসা করবেন আপনাদের মাঝে এমন কেউ আছেন যিনি সাহাবায়ে রাসূল (ﷺ)’র সান্নিধ্য পেয়েছেন। তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ, তখন তাঁর উসিলায় তাঁরা জয় লাভ করবেন।’’  ১৫৮

  • ১৫৮. 

ক. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, (ভারতীয় ৫৫৩ পৃ.) ৩/১৬৯৪ পৃ., হা/৬০০৯, পরিচ্ছেদ:  بَاب مَنَاقِب الصَّحَابَة 

খ. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/২ পৃ. হা/৩৬৪৯

গ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৪/৭৪ পৃ. হা/৩৮৬৪

আল্লামা সাবী আলমালেকী (رحمة الله)’ আকিদা

উমদাতুল মুফাস্সিরীন আল্লামা সাবী (رحمة الله) বলেন, 

فَالْاَنْبِيَاءُ وَسَائِطِ لَاُمِهِمْ فِى كُلِّ شَيْئٍ وَوَاسِطَتِهِمْ رَسُوْلُ اَلله

-‘‘প্রত্যেক নবী (عليه السلام) তাঁদের উম্মতের জন্য প্রতিটি বিষয়ে উসিলা, আর রাসূলে করিম (ﷺ) প্রত্যেক নবীর জন্য উসিলা।’’ (তাফসীরে সাবী, ১ম খ-, ১০৭ পৃ:) তিনি আরও লিখেন-

فَهُوَ الْوَاسِطَةُ لِكُلِّ وَاسِطَةٍ  حَتَّى اَدَمَ

-‘‘সুতরাং হুযুর আকরাম (ﷺ)’র প্রত্যেক উসিলার উসিলা এমন কি হযরত আদম (আ;)’রও উসিলা।’’ (তাফসীরে সাবী, ১ম খ-, ২২ পৃ:) 

শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (رحمة الله)’ আকিদা

শায়খুন মুহাদ্দিসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন-

توسل يوےصلى الله عليه وسلم قضائے حاجت وسبب نحاح مرام است

-‘‘হাজত পূরণের জন্য হুযুর আকরাম (ﷺ)’র উসিলা আবশ্যক এবং উদ্দেশ্য পূরণের কারণ।’’(কিতাবের নাম) শায়খুন মুহাদ্দিসিন (رحمة الله) তাঁর অনবদ্য রচনার অন্যস্থানে বলেন, 

توسل واستمداد بديں حضرت متقبت جناب صلى الله عليه وسلم زيارت حضرت سيد المرسلين صلى الله عليه وسلم اكمال الصلوة وافضلہا جماع علمائے دين قولا وفعلا از افضل سنن دار كه مستحبات است

-‘‘ধর্ম বিশেষজ্ঞ আলেমদের কথা ও কাজের ঐকমত্যে হুযূর পুর নূর (ﷺ)’র উসিলা তালাশ, সাহায্য প্রার্থনা এবং যিয়ারত সর্বোত্তম সুন্নাত এবং তাগিদযুক্ত মুস্তাহাব (আবশ্যকরনীয়) বিধান।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, জযবুল কুলুব, ফার্সী, ২১৬ পৃ:) 

আল্লামা আহমদ দাহলান মক্কী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা আহমদ বিন দাহলার মক্কী (رحمة الله) বর্ণনা করেন-

التَّوَسَّلُ مَجْمَعٌ عَلَيْهِ عِنْدَ اَهْلِ السُّنَّتهِ

-‘‘উসিলা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত ঐকমত্য পোষণ করেন।’’ (আদদুরারুস সানিয়াহ, ৪০ পৃ:)

আল্লামা শারজী (رحمة الله)’ আকিদা

আল্লামা শারজী ১৫৯ (رحمة الله) বলেন, কেউ যখন কোন সমস্যায় পড়বে সে যেন নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকাত নামায পড়ে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস, ২য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর বিশবার সূরা ইখলাস, ৩য় রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৩০ বার সূরা ইখলাস এবং ৪র্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ৪০ বার সূরা ইখলাস পড়ে নামায সম্পন্ন করে নিম্নের দোয়াটি পড়বে-

اللهم بِنُوْرِكَ وَجَلَالِكَ وَبِحَقِّ هَذَا الاسْم الاعْظَم وَبِحَقِّ نَبِيِّكَ مُحَمَّد اَسْئَلُكَ اَنْ تقضى حَاجَتِى وَتَبْلِغْنِى سوئى

তবে দোয়া কবুল হবে। (কিতাবুস ফাওয়ায়েদিস সালাত ও আওয়ায়েদ, ২৯ পৃ.) 

টিকা__________________

  • ১৫৯. আল্লামা শারজী (رحمة الله) এমন ব্যক্তি যিনি দেওবন্দীদের অন্যতম আলেম নবাব সিদ্দিক হাসান ভুপালীর দৃষ্টিতেও গ্রহণযোগ্য। তিনি তাঁর আদ্ দা ওয়াদ দাওয়া” গ্রন্থে আল্লামা শারজী (رحمة الله)’র কথা এনেছেন। (ফকীর আবুল হামেদ মুহাম্মদ জিয়াউল্লাহ কদেরী গুফিয়াল্লাহু)

━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! কুরআন সুন্নাহর আলোকে বুঝা গেল উসিলা জায়েয, এটাও বুঝা গেল যে, দেওবন্দী ও আহলে হাদিসরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআত নয়। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment