ইমাম যখন নামাযে কুরআন পাঠ করতে থাকেন তখন মুক্তাদীর কাজ চুপ থাকা, নাকি ইমামের সাথে সূরা ফাতিহা বা কুরআনের অন্য কোন সূরা তিলাওয়াত করা। এ বিষয়টি নিয়ে সাহাবায়ে কিরামের যুগ থেকে অদ্যাবধি আমলের ভিন্নতা চলে আসছে। উভয় আমলের পক্ষেই সাহাবা, তাবিঈন ও উলামায়ে কিরামের অসংখ্য খ্যাতনামা বক্তিবর্গ অবস্থান নিয়েছেন। বিবাদমান দুটি বিষয়ের মধ্যে হানাফী মাজহাবের উলামায়ে কিরাম ইমামের কুরআন পাঠের সময় মুক্তাদীর নীরব থাকার মত গ্রহণ করেছেন। উক্ত মতের দালীলিক ভিত্তি তুলে ধরা হচ্ছে।
✔ প্রথম দলীল
وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
অর্থ : যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ কর এবং চুপ থাক। তাহলে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। (সূরা আ’রাফ: ২০৪)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম বলেন: এ আয়াত নামায ও খুতবা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (ইবনে কাসীর: ২/২৮১) অর্থাৎ, খুতবা চলাকালীন ও নামাযে তিলাওয়াত চলাকালীন চুপ থাকতে হবে এবং শুনতে হবে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহ. বলেন: أجمع الناس على ان هذه الآية فى الصلواة “উম্মাত একমত যে, এ আয়াতটি নামাযের ব্যাপারে অবতীর্র্ণ হয়েছে”। (আলমুগনী: ১/৪৯০) ইমাম ইবনে জারীর তাবারী রহ. তাঁর তাফসীরে তাবারীতে ৩৮টি সনদে সেসব সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিঈদের মন্তব্য তুলে ধরেছেন যাঁরা বলেন যে, এ আয়াতে ইমামের কুরআন পাঠের সময়ে মুক্তাদীদেরকে চুপ থাকা এবং কুরআন শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তন্মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা, আতা বিন আবী রবাহ, মুজাহিদ, যাহহাক, ইবরাহীম নাখঈ, কতাদা, যুহরী, আমের, শা’বী, হাসান বসরী, সাঈদ বিন যুবাইর ও সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব রহ. উল্লেখযোগ্য। অবশেষে ইবনে
✔ জারীর তাবারী রহ. এ ব্যাপারে নিজে এ মন্তব্য করেন:
قَالَ أَبُو جَعْفَرٍ: وَأَوْلَى الْأَقْوَالِ فِي ذَلِكَ بِالصَّوَابِ قَوْلُ مَنْ قَالَ: أُمِرُوا بِاسْتِمَاعِ الْقُرْآنِ فِي الصَّلَاةِ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ وَكَانَ مَنْ خَلْفَهُ مِمَّنْ يَأْتَمُّ بِهِ يَسْمَعُهُ، وَفِي الْخُطْبَةِ. وَإِنَّمَا قُلْنَا ذَلِكَ أَوْلَى بِالصَّوَابِ، لِصِحَّةِ الْخَبَرِ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: «إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا» وَإِجْمَاعُ الْجَمِيعِ عَلَى أَنَّ مَنْ سَمِعَ خُطْبَةَ الْإِمَامِ مِمَّنْ عَلَيْهِ الْجُمُعَةُ، الِاسْتِمَاعَ وَالْإِنْصَاتَ لَهَا
অর্থ “এ ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক কথা তাঁদেরটি যাঁরা বলেন যে, ইমাম যখন নামাযে কুরআন পাঠ করবেন তখন তাদেরকে (মুক্তাদী) মনোযোগ দিয়ে শোনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ইমামের পেছনে যারা ইক্তিদা করেছে তারা ইমামের কুরআন পাঠ শুনবে। এ আয়াতটি খুতবার ব্যাপারেও অবতীর্ণ হয়েছে। এ মতটিকে আমি এ কারণে সর্বাধিক সঠিক বলেছি যে, রসূলুল্লাহ স. থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত রয়েছে: اذا قرأ الإمام فانصتوا “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাক”। আর সবার ঐকমত্য বিদ্যমান রয়েছে যে, যাদের ওপর জুমআর নামায জরুরী তাদের মধ্যে যারা খুতবার সময় উপস্থিত থাকবে তাদের দায়িত্ব নীরব থাকা এবং মনোযোগের সাথে শোনা। (তাফসীরে তাবারী: সূরা আ’রাফ, ২০৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর)
এ আয়াতে নামাযের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াতের সময় উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে দু’টি নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে: এক. মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা, দুই. চুপ থাকা। যে সব নামাযে ইমাম উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করেন এবং ইমামের তিলাওয়াতের শব্দ মুক্তাদীগণের কান পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে উক্ত আয়াতের দু’টি নির্দেশই পালন করা সম্ভব। আর যে সব নামাযে ইমাম নীরবে তিলাওয়াত করেন অথবা ইমামের তিলাওয়াতের শব্দ মুক্তাদীগণের কান পর্যন্ত না পৌঁছে সেখানেও দ্বিতীয় নির্দেশটি পালন করা অর্থাৎ, চুপ থাকা সম্ভব। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ পালন করা সম্ভব হয় ততক্ষণ পর্যন্ত তা অমান্য বা প্রত্যাখ্যান করার কোন সুযোগ শরী’আতে নেই। সুতরাং ইমাম যখন নামাযে কুরআন তিলাওয়াত করেন, তা সরবে হোক বা নীরবে সর্বাবস্থায় মুক্তাদীগণের দায়িত্ব হলো নীরব থাকা। সূরা ফাতিহা বা অন্য কোন সূরা তিলাওয়াত না করা।
কুরআনের উক্ত স্পষ্ট আয়াতের ওপর আমল করতে যদিও কোন ব্যাখ্যা-
বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না, তবুও উক্ত আয়াতে প্রদত্ত নির্দেশ সমর্থন করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে হুকুম জারী করেছেন, তা থেকেও কিঞ্চিত আপনাদের খেদমতে তুলে ধরা হচ্ছে।
✔ দ্বিতীয় দলীল
حَدَّثَنَا أبُوْ بَكْرِ بْنُ أبِىْ شَيْبَةَ حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الْأَحْمَرِ، عَنِ ابْنِ عَجْلَانَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّمَا جُعِلَ الْإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ، فَإِذَا كَبَّرَ فكَبِّرُوا، وَإِذَا قَرَأَ فأَنْصِتُوا (رَوَاه إبْنُ مَاجه فِىْ بَابِ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا)
অর্থ : হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা) বলেন: ইমাম বানানো হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। যখন তিনি তাকবীর দেন তোমরাও তাকবীর দিবে। যখন তিনি কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাকবে।
রেফারেন্সঃ-
১) ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং- ৮৪৬,
২) মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭৯০,
৩) ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৩৮২০।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিম রাবী যাদের নির্ভরযোগ্যতা সমগ্র উম্মাতের নিকটে স্বীকৃত। ইমাম মুসলিম রহ.-এর নিকটে তাঁর ছাত্র আবু বকর রহ. জিজ্ঞেস করেন যে, فَحَدِيثُ أَبِى هُرَيْرَةَ فَقَالَ هُوَ صَحِيحٌ يَعْنِى وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا. “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এ হাদীসটি কেমন? ইমাম মুসলিম রহ. বলেন: ওটা আমার নিকটে সহীহ”।
রেফারেন্সঃ- মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭৯০।
☑ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমামের কুরআন পাঠের সময়ে মুক্তাদীর কাজ হলো চুপ করে থাকা। সুতরাং মুক্তাদী কুরআন পাঠ করবে না।
✔ তৃতীয় দলীল
حَدَّثَنَا يُوسُفُ بْنُ مُوسَى الْقَطَّانُ قَالَ: حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَبِي غَلَّابٍ، عَنْ حِطَّانَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الرَّقَاشِيِّ، عَنْ أَبِي مُوسَى الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا، فَإِذَا كَانَ عِنْدَ الْقَعْدَةِ، فَلْيَكُنْ أَوَّلَ ذِكْرِ أَحَدِكُمْ التَّشَهُّدُ» رَوَاه إبْنُ مَاجَه فِىْ بَابِ إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا)
অর্থ: হযরত আবু মুসা আশআরী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক। যখন বৈঠকের সময় হয় তখন তোমাদের প্রথম জিকির হবে তাশাহহুদ।
রেফারেন্সঃ-
১) ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং- ৮৪৭,
২) মুসলিম শরীফ হাদীস নং- ৭৯০।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী যাদের নির্ভরযোগ্যতা সমগ্র উম্মাতের নিকটে স্বীকৃত। “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক” বাক্যটি কোন কোন বর্ণনায় উল্লেখ না থাকার কারণে ইমাম মুসলিমের ছাত্র আবু বকর রহ. এ হাদীসের ওপর আপত্তি করলে ইমাম মুসলিম রহ. এ হাদীস সহীহ হওয়ার বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন: تُرِيدُ أَحْفَظَ مِنْ سُلَيْمَانَ؟ “তুমি কি এটা বুঝাতে চাচ্ছো: যারা এ বাক্যটি বর্ণনা করেনি তারা সুলাইমান থেকে বেশী স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন?” (তা মেটেই নয়; বরং এ বাক্যটি বর্ণনাকারী সুলাইমানই অন্যদের তুলনায় বেশী স্মৃতিশক্তিসম্পন্ন) আলবানীও হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (সহীহ-জঈফ ইবনে মাজাহ: ৮৪৭)
☑ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ হলো ইমামের কুরআন পাঠের সময়ে মুক্তাদীগণের চুপ থাকা।
⭕ ফায়দা : হযরত আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু.-এর উপরোক্ত বর্ণনায় إِذَا قَرَأَ الْإِمَامُ فَأَنْصِتُوا “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক” বাক্যটিকে ইমাম আবু দাউদ রহ. অসংরক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন। (আবু দাউদ: ৯৭৩) কিন্তু বেশ কিছু কারণে ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর উক্ত মন্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
এক. খ্যাতনামা অনেক মুহাদ্দিস এটাকে সহীহ বলে মন্তব্য করেছেন। তন্মধ্যে ইমাম মুসলিম রহ.-এর মন্তব্য পূর্বে পেশ করা হয়েছে। ইবনে তাইমিয়া ও ইমাম মুসলিমের পক্ষ সমর্থন করে বলেন: فِي حَدِيثِ أَبِي مُوسَى: ..وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا} فَإِنَّ هَذِهِ الزِّيَادَةَ صَحَّحَهَا مُسْلِمٌ وَقَبِلَهُ أَحْمَد بْنُ حَنْبَلٍ وَغَيْرُهُ “হযরত আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস, ‘ইমাম যখন যখন কুরআন পাঠ করেন তখন তোমরা চুপ থাক’-এর মধ্যে وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا বাড়তি বাক্যটিকে ইমাম মুসলিম রহ. সহীহ বলেছেন এবং ইমাম আহমাদ ও অন্যন্যরা এটি গ্রহণ করেছেন। (মাযমুউল ফাতাওয়া: ‘হাদীসের পরিভাষা ও অন্যান্য বিষয়ে কিছু প্রশ্ন’ অধ্যায়) হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا وَهُوَ حَدِيثٌ صَحِيحٌ “ইমাম যখন কুরআন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক- হাদীসটি সহীহ”। (ফাতহুল বারী: ‘ইমাম ও মুক্তাদীর জন্য কিরাত আবশ্যক’ অধ্যায়) হযরত ইবনে জারীর তাবারী রহ.ও এ হাদীটিকে সহীহ বলেছেন। (তাফসীরে তাবারী: সূরা আ’রাফের ২০৪ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যায়) ইবনে হাযাম রহ. وَإِذَا قَرَأَ فَأَنْصِتُوا বাড়তি বাক্যসহ এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। (আলমুহাল্লা বিল আছার: ইমামের পেছনে মুক্তাদীর কুরআন পাঠ অধ্যায়) উল্লিখিত ইমামগণের বিপরীতে ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর প্রমাণবিহীন মন্তব্যকে মেনে নেয়া যায় না।
দুই. ইমাম আবু দাউদ রহ.-এর ভাষ্য অনুযায়ী অভিযুক্ত রাবী হলেন আবু খালিদ আহমার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো: তিনি উল্লিখিত হাদীসের মধ্যে উক্ত অংশটি বৃদ্ধি করেছেন। অথচ আবু খালিদ আহমার একজন নির্ভরযোগ্য রাবী। বুখারী-মুসলিমসহ সিহাহ সিত্তার সব ইমাম তার বর্ণনার ওপর নির্ভর করেছেন। এ মানের একজন নির্ভরযোগ্য রাবীর বর্ণনায় যদি এমন কোন শব্দ বা বাক্য বেশী পাওয়া যায় যা অন্যদের বর্ণনায় নেই, তাহলে হাদীস গ্রহণের নীতিমালা অনুযায়ী উক্ত বর্ধিত শব্দ বা বাক্যটি হাদীসের অবশিষ্ট অংশের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে তা সবার নিকটে গ্রহণযোগ্য। (নুযহাতুন নজর: ৩৭) আর উক্ত বর্ধিত অংশের সাথে অবশিষ্ট অংশের কোন বৈপরিত্য নেই; বরং প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র হুকুম। অতএব, উসূলে হাদীস অনুযায়ী وإذا قرء فانصتوا “ইমাম যখন পাঠ করে তখন তোমরা চুপ থাক” বাক্যটি সর্বসম্মতভাবে গ্রহণযোগ্য।
তিন. হাদীসের উক্ত বর্ধিত অংশটি আবু খালিদ আহমার একাই বর্ণনা করেননি; বরং আবু খালিদের উসতাদ মুহাম্মাদ বিন আজলান থেকে তাঁর অপর নির্ভরযোগ্য ছাত্র মুহাম্মাদ বিন সা’দ আনসারীও তা বর্ণনা করেছেন। (নাসাঈ: ৯২৫, পৃষ্ঠা: ১/১০৭)
চার. وإذا قرأ فانصتوا বাক্যটি শুধু আবু মুসা আশআরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু. থেকে বর্ণিত হয়নি; বরং আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু থেকেও উক্ত বাক্যটি বর্ণিত হয়েছে।
১) মুসলিম শরীফ, হাদীস নং- ৭৯০,
২) ইবনে মাজাহ শরীফ, হাদীস নং- ৮৪৭,
৩) নাসাঈ শরীফ, হাদীস নং- ৯২৫।
✔ চতুর্থ দলীল
حَدَّثَنَا بَحْرُ بْنُ نَصْرٍ ، قَالَ : ثنا يَحْيَى بْنُ سَلَّامٍ ، قَالَ : ثنا مَالِكٌ ، عَنْ وَهْبِ بْنِ كَيْسَانَ ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، أَنَّهُ قَالَ : {مَنْ صَلَّى رَكْعَةً ، فَلَمْ يَقْرَأْ فِيهَا بِأُمِّ الْقُرْآنِ ، فَلَمْ يُصَلِّ إلَّا وَرَاءَ الْإِمَامِ}
অর্থ : হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: যে ব্যক্তি এক রাকাত নামাযও পড়লো অথচ তাতে সূরা ফাতিহা পড়লো না, সে যেন নামাযই পড়লো না। তবে যদি সে ইমামের ইকতিদা করে নামায আদায় করে তাহলে ভিন্ন কথা। (ত্বহাবী: ১৩০০)
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ লিগইরিহী। বাহ্র বিন নাসর এবং ইয়াহইয়া ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর বাহ্র বিন নাসর ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৭২৩) ইয়াহইয়া বিন সাল্লামের ব্যাপারে আবু হাতেম বলেন, صَدُوْقٌ “সত্যনিষ্ঠ”। (আলজারহু ওয়াত তা’দীল: ৬৪২) ইমাম জাহাবী বলেন: يَحْيَى بنُ سَلاَّمِ بنِ أَبِي ثَعْلَبَةَ أَبُو زَكَرِيَّا البَصْرِيُّ قَالَ: وَكَانَ ثِقَةً، ثَبْتاً، عَالِماً بِالكِتَابِ وَالسُّنَّةِ، وَلَهُ مَعْرِفَةٌ بِاللُّغَةِ وَالعَرَبِيَّةِ، “তিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য, মজবুত ও কুরআন-সুন্নাহ’র প্রতি। আর আরবী ভাষা সম্পর্কেও তাঁর ভালো অবগতি ছিলো”। (সিয়ারু আলামিন নুবালা: তবকা- ১০, রাবী নম্বর- ১২৮) আর মুসনাদে আহমাদের তাহকীকে শায়খ শুআইব আরনাউত বলেন: وهو حديث حسن روي عن جماعة من الصحابة، منهم جابر بن عبد الله، “এ হাদীসটি হাসান। একদল সাহাবায়ে কিরাম থেকে এ হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে; তন্মধ্যে হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম। বিভিন্ন সনদ ও সমর্থক বর্ণনার ভিত্তিতে হাদীসটি হাসান”। (মুসনাদে আহমাদ: ৭২৭০ নম্বর হাদীসের আলোচনায়) এ হাদীসটি হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে। ✔ তা এই:
حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ حَسَنِ بْنِ صَالِحٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَلُّ مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ»
অর্থ: হযরত জাবির বিন আব্দুল্লা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: যার ইমাম আছে তার জন্য ইমামের কিরাতই যথেষ্ট।
রেফারেন্সঃ-
১) ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৩৮২৩,
২) ইবনে মাজাহ, হাদীস নং- ৮৫০।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ লিগইরিহী। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী। হাসান বিন সালেহ-এর ব্যাপারে কোন কোন মুহাদ্দিস এ আপত্তি করে থাকেন যে, তিনি আবুয যুবাইর থেকে শোনেননি। কিন্তু এ অভিযোগ যথার্থ নয়। কারণ, হাসান বিন সালেহ ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” রাবী এবং তাঁর বিরুদ্ধে তাদলীসের কোন অভিযোগ নেই। হযরত ইবনে আদী রহ. বলেন: ولم أجد له حديثا منكرا مجاوز المقدار، وَهو عندي من أهل الصدق “বড় ধরণের কোন মুনকার হাদীস আমি তাঁর থেকে পাইনি। তিনি আমার দৃষ্টিতে সত্যবাদী”। (আলকামিল: ৪৪৮) সুতরাং তিনি এ হাদীসটি আবু য্যুবায়ের থেকে না শুনে বলেছেন এটা কল্পনাতীত। উপরন্তু, হাসান বিন সালেহ-এর জন্ম ১০০ হিজরীতে আর আবুয যুবাইর-এর মৃত্যু ১২৬ হিজরীতে। তাহলে ২৬ বছরের যৌথ জীবনে উভয়ের সাথে হাজার বারও সাক্ষাত সম্ভব। আর ইমাম মুসলিম রহ.-এর শর্ত মোতাবেক রাবী যদি মুদাল্লিস না হয় তাহলে উসতাদের সাথে সাক্ষাতের সম্ভাবনা থাকলেই তাঁর বর্ণনা সহীহ বলে গণ্য। এ নিয়মের আলোকে আবুয যুবাইর থেকে হাসান বিন সালেহ-এর বর্ণনা সন্দেহাতীতভাবে সহীহ। উল্লিখিত হাদীসটি ইবনে মাজাহ শরীফেও (৮৫০) বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী উক্ত সনদে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (সহীহ-জঈফ ইবনে মাজাহ: ৮৫০)। আল্লামা ইবনে হুমাম বলেন: হযরত জাবির রা.-এর হাদীসের সনদ মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। হযরত সুফিয়ান সাওরী, শারীক বিন আব্দুল্লাহ, জারীর বিন আব্দুল হামীদ এবং আবুয যুবাইর রহ. হাদীসটিকে সহীহ সনদে মারফু’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। (ফাতহুল কদীর: কিরাত অধ্যায়) এ হাদীসটি হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ রা. থেকেও বর্ণিত হয়েছে। আর ✔ তা এই:
حَدَّثَنَا شَرِيكٌ ، وَجَرِيرٌ ، عَنْ مُوسَى بْنِ أَبِي عَائِشَةَ ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : مَنْ كَانَ لَهُ إمَامٌ ، فَقِرَاءَتُهُ لَهُ قِرَاءَةٌ.
অর্থ : হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: যার ইমাম আছে তার জন্য ইমামের কিরাতই যথেষ্ট।
রেফারেন্সঃ- ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং- ৩৮০০।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের প্রসিদ্ধ রাবী। আর হযরত আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু সাহাবা। তাঁর বিষয়ে ইবনে হাজার রহ. বলেন, له رؤية “তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে দেখেছেন”। (আল ইসাবা: হযরত শাদ্দাদ ইবনুল হাদ-এর জীবনী আলোচনায়)
তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে কিছুই শোনেননি বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। অবশ্য তাতে এ হাদীসের বিশুদ্ধতা ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। কারণ, তিনি সাহাবা; আর সাহাবার মুরসাল গ্রহণযোগ্য। বুখারী শরীফে সাহাবাদের অনেক মুরসাল বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। প্রমাণ হিসেবে দেখুন ৩৭০৫ নম্বর হাদীস। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বদরের ময়দানে যা ইরশাদ করেছিলেন হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজে বদরের ময়দানে উপস্থিত না থেকেও উক্ত ইরশাদ বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: هُوَ من مَرَاسِيل الصَّحَابَة “এটা সাহাবাদের মুরসাল হাদীসের অন্তর্ভুক্ত”। (ফাতহুল বারী) অনুরূপভাবে বুখারী শরীফের ৩৮২৭, ৩৮২৮ ও ৩৮২৯ নম্বর হাদীস। এ হাদীসগুলোতে হযরত সাহল বিন আবী হাসমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জাতুর রিকা’ যুদ্ধে সলাতুল খওফের বিবরণ পেশ করেছেন। অথচ তখন তাঁর বয়স ছিলো সর্বোচ্চ চার বছর। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন: رِوَايَتُهُ لِقِصَّةِ صَلَاةِ الْخَوْفِ مُرْسَلَة “সলাতুল খওফের ঘটনা সম্পর্কে তাঁর বর্ণনাটি মুরসাল”। (ফাতহুল বারী)
☑ সারসংক্ষেপ : ইমাম মুক্তাদী সকলের জন্যই কুরআন পাঠ জরুরী মেনে নেয়া হলেও হযরত জাবির ও আব্দুল্লাহ বিন শাদ্দাদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত এ হাদীস দু’টি থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইমাম এ ব্যাপারে মুক্তাদীর প্রতিনিধিত্ব করেন। সুতরাং ইমামের কুরআন পাঠই মুক্তাদীর কুরআন পাঠ। এরপরেও মুক্তাদীর কুরআন পাঠ করার অর্থ হলো ইমামের প্রতিনিধিত্বকে অমান্য করা এবং ইমামের সাথে কুরআন নিয়ে ঝগড়া করা।
রেফারেন্সঃ- নাসাঈ শরীফ, হাদীস নং- ৯২২।
✔ পঞ্চম দলীল
حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، قَالَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنِ الأَعْلَمِ وَهْوَ زِيَادٌ عَنِ الْحَسَنِ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ، أَنَّهُ انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ رَاكِعٌ، فَرَكَعَ قَبْلَ أَنْ يَصِلَ إِلَى الصَّفِّ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ زَادَكَ اللَّهُ حِرْصًا وَلاَ تَعُدْ (رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابُ إِذَا رَكَعَ دُونَ الصَّفِّ)
অর্থ : হযরত আবু বাকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকটে এমন অবস্থায় পৌঁছলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন রুকুতে ছিলেন। হযরত আবু বকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কাতারে শামিল হওয়ার পূর্বেই রুকু করলেন। নামাযের পরে বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জানানো হলে তিনি আবু বাকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন: আল্লাহ তাআলা (নামাযের প্রতি) তোমার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে দিন। তবে এমনটি আর করো না। (অর্থাৎ, আগে কাতারে শামিল হও, তারপর রুকু কর)।
রেফারেন্সঃ- বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ৭৪৭।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি আবু দাউদ এবং নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৯০৫)
☑ সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে জানা গেলো যে, হযরত আবু বাকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইমামের সাথে শরীক হলেন রুকুতে। তিনি ইমামের পেছনে কুরআন পাঠ করতে পারেননি। আবার নামায শেষে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে দুআ দিলেন এবং একটি উপদেশ দিলেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পেছনে আদায়কৃত নামায পুনরায় পড়ার কোন নির্দেশ দিলেন না। ইমামের পেছনে কুরআন পাঠ করা যদি মুক্তাদীগণের আবশ্যকীয় দায়িত্ব হতো তাহলে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবশ্যই হযরত আবু বকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কে উক্ত নামায পুনরায় পড়ার নির্দেশ দিতেন।
✔ নিম্নে বর্ণিত অপর একটি হাদীসে এ বিষয়টি নীতিমালা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ فَارِسٍ، أَنَّ سَعِيدَ بْنَ الْحَكَمِ، حَدَّثَهُمْ أَخْبَرَنَا نَافِعُ بْنُ يَزِيدَ، حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ أَبِي سُلَيْمَانَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَبِي الْعَتَّابِ، وَابْنِ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِذَا جِئْتُمْ إِلَى الصَّلاَةِ وَنَحْنُ سُجُودٌ فَاسْجُدُوا وَلاَ تَعُدُّوهَا شَيْئًا وَمَنْ أَدْرَكَ الرَّكْعَةَ فَقَدْ أَدْرَكَ الصَّلاَةَ(رَوَاه ابُوْ دَاود فِىْ بَابٍ الرَّجُلُ يُدْرِكُ الْإِمَامَ سَاجِدًا كَيْفَ يَصْنَعُ؟)
অর্থ : হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: আমরা সিজদারত অবস্থায় যদি তোমরা নামাযে উপস্থিত হও তাহলে সিজদা করবে; তবে তা (রাকাত হিসেবে) গণনা করবে না। যে রুকু পেলো সে নামায পেলো।
রেফারেন্সঃ- আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং- ৮৮৯।
☑ হাদীসটির স্তর : হাসান। এ হাদীসের রাবীদের মধ্যে ইয়াহইয়া বিন আবী সুলাইমান এবং যায়েদ বিন আবী আত্তাব ব্যতীত সবাই-ই বুখারী-মুসলিমের রাবী। আর যায়েদ বিন আবী আত্তাব ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ২৩৫৩) ইয়াহইয়া বিন আবী সুলাইমানের বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মিশ্র মন্তব্য পাওয়া যায়। হাকেম তাকে ثقةٌ “নির্ভরযোগ্য” বলেছেন। ইবনে খুযাইমা তাঁর সহীহ কিতাবে উক্ত রাবীর হাদীস গ্রহণ করেছেন। আবার ইমাম বুখারী রহ. তাঁর সমালোচনা করেছেন। তবে পূর্ববর্ণিত হযরত আবু বকরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু -এর হাদীস দ্বারা মূল বিষয়টি সমর্থিত হওয়ায় এ হাদীসটি কোন ক্রমেই হাসান স্তরের নীচে নয়। আলবানী এ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। (সহীহ-জঈফ আবু দাউদ: ৮৯৩) হযরত ইবনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, রুকু ছুটে গেলে সিজদা অর্থাৎ রাকাত ছুটে যাবে। (মুয়াত্তা মালেক: ১৬) এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, রুকু পেলে রাকাত পাবে। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি বুখারী, মুসলিম এবং নাসাঈ শরীফেও বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৩৮৯৫)
✔ ষষ্ঠ দলীল
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ سُمَىٍّ، مَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا قَالَ الإِمَامُ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ فَقُولُوا آمِينَ. فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ(رَوَاهُ الْبُخَارِىُّ فِىْ بَابِ جَهْرِ المَأْمُومِ بِالتَّأْمِينِ)
অর্থ : হযরত আবু হুরাইরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: ইমাম غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلاَ الضَّالِّين বললে তোমরা آمين বলবে। কেননা, যার آمين বলা ফিরিশতাদের آمين বলার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।
রেফারেন্সঃ- বুখারী শরীফ, হাদীস নং-৭৪৬।
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। শাব্দিক কিছু তারতম্যসহ এ হাদীসটি সিহাহ সিত্তার সব কিতাবে বর্ণিত হয়েছে। (জামিউল উসূল: ৭১২৭)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুক্তাদীগণকে ‘আমীন’ বলার নির্দেশ দিলেন ইমামের غير المغضوب عليهم ولا الضالين পাঠের পরে। যদি সূরা ফাতিহা পাঠ করা মুক্তাদীগণের জন্য আবশ্যক হতো তাহলে তারা ইমামের غَيْرِ الْمَغْضُوبِ -এর পরে ‘আমীন’ বলবে কেন? বরং তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ ফাতিহা শেষে ‘আমীন’ বলবে। আর সবার পড়ার গতি যেহেতু এক নয়, তাই মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা পাঠ করলে কোনক্রমেই সবার ‘আমীন’ ইমামের ‘আমীন’-এর সঙ্গে মিলবে না এবং গুনাহ মাফের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া যাবে না। এ হাদীসের ভিত্তিতে ইবনে হাজার আসকালানী রহ.-এর মতো যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসও মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন যে, ইমামের সূরা ফাতিহা পাঠের সাথে মুক্তাদীগণ সূরা ফাতিহা পাঠ করবে না।