ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) এর হত্যাকারী পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের পিতা বিশিষ্ট সাহাবা খলিফা হযরত আমিরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সমালোচকদের প্রতি হেদায়াত মুলক পোস্ট !!! অসংখ্য শান ও মর্যাদার অধিকারি ছিলেন কুরাইশ বংশের অভিজাত পরিবারের সন্তান হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)। দুরাচার ইয়াজিদকে কেন্দ্র করে কিছু অতি উৎসাহী আশেক মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) কে ইজিদের জন্মদাতা হিসাবে গালিগালাজ, জঘন্য কুটুক্তি করতেও দ্বিধা করেনা !!
মনে রাখুন, সাহাবা কেরামের মধ্যে যা ভুলবুঝাবুঝি হয়েছে তা ছিলো ইজতিহাদি ভুল !!!
আমাদের কারো যোগ্যতা নাই উনাদের ভুল ধরা বা সমালোচনা করার !!
উনার প্রতি মিথ্যাচারের পূর্বে সংক্ষেপে লিখিত নিম্নোক্ত অভিমত সমূহ জানা উচিত !!!
▶তিরমিজী শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবীজী (ﷺ) একবার তাঁকে এভাবে দুয়া করেছেন- “হে আল্লাহ তাঁকে পথ প্রদর্শক ও পথপ্রাপ্ত করে দাও এবং তাঁর মাধ্যমে মানুষকে হেদায়াত দান করো।”-(জাওয়ামিউস সাহীহ খঃ ২ পৃ-২৪৭)
▶অন্য হাদীসে এরশাদ হয়েছেঃ হে আল্লাহ ! মুয়াবিয়াকে হিসাব ও কিতাবের জ্ঞান দান করো এবং (জাহান্নামের) আযাব থেকে তাঁকে রক্ষা করো। -(উসদুল গাবাহ খঃ ৪ পৃ-৩৮৬)
▶নবি করীম (ﷺ)- এর লেখকদের মধ্যে হযরত যায়েদ বিন সাবেত (رضي الله عنه) সর্বাধিক হাজির থাকতেন। দ্বিতীয় স্থান ছিল হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-এর। দিন-রাত এদুজন ছায়ার মত নবীজীর সঙ্গে সঙ্গে থাকতেন।এ ছাড়া আর কোন দায়িত্ব তাঁদের ছিল না। -(জাওয়ামিউস সাহীহ : পৃ-২৭)
▶সাহাবা কেরামের চোখে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) :
“হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর উপস্থিতিতে একবার হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে বিরূপ আলোচনা শুরু হলে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, যে কুরায়েশী যুবক চরম ক্রোধের মুহূর্তেও হাসতে পারে, যার হাত থেকে স্বেচ্ছায় না দিলে কিছু ছিনিয়ে আনা সম্ভব নয় এবং যার শিরস্ত্রাণ পেতে হলে পায়ে লুটিয়ে পড়া ছাড়া উপায় নেই, (অর্থাৎ, সহনশীলতা, সাহসিকতা ও আত্মসম্মানবোধে যে যুবক অতুলনীয়) তোমরা তারই সমালোচনা করছ?” -(আল ইসত’আব : খ-৩, পৃ-৩৭৭)
▶আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর বর্ণনা করেছেন, সিফফীন যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে আপন অনুগামীদের লক্ষ্য করে হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেছিলেন, হে লোক-সকল ! মুয়াবিয়ার শাসনকে তোমরা অপছন্দ করো না। কেননা তাঁকে যেদিন হারাবে সেদিন দেখবে, ধড় থেকে মুন্ডগুলো হানযাল ফলের মত
কেটে কেটে পড়ে যাচ্ছে। -(আল বিদায়া : খঃ৮,পৃ-১৩১)
▶রইসুল মুফাসসিরীন নবী (ﷺ) এর আপন চাচাতো ভাই হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) একবার ফিকাহ সংক্রান্ত বিষয়ে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) এর সমালোচনা কারীদের সাবধান করে বলেছিলেন, তিনি একজন ফকীহ (সুতরাং, তার সমালোচনার অধিকার তোমার নেই) -(আল বিদায়া : খঃ ৮, পৃ-৩১)
▶সমালোচনাকারীকে আরও বলেছিলেন, তিনি তো রাসূল (ﷺ)- এর সান্নিধ্য লাভ করেছেন। (অর্থাৎ, তিনি একজন সাহাবী তাই কোন অধিকারে তুমি তাঁর সমালোচনা করছো?) (আল ইসাবাহ : খঃ ৩, পৃ-৪১২, বুখারী : খ-১, পৃ-৫৩১)
▶তাবেয়ীনদের চোখে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) : “হযরত উমর বিন আব্দুল আজীজকে আমি কখনও কাউকে দোররা লাগাতে দেখিনি। তবে হযরত মুয়াবিয়ার সমালোচনা করার অপরাধে এক ব্যক্তিকে দোররা লাগাতে দেখেছি”। -(আল বিদায়া : খঃ ৮, পৃ-১৩৯)
▶আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসীর বলেন,
সুপ্রসিদ্ধ তাবেয়ী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারককে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বললেন, বাহ ! এমন সৌভাগ্যবান ব্যক্তি সম্পর্কে আমি কি মন্তব্য করতে পারি, যিনি দোযাহানের সর্দার রাসূল (ﷺ) এর পিছনে নামায পড়েছেন এবং তাঁর সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদার জবাবে রাব্বানা লাকাল হামদ বলেছেন?
▶তাঁকেই (আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারাক) আরেকবার জিজ্ঞেস করা হল, উত্তম কে? মুয়াবিয়া না খলিফা উমর ইবনে আব্দুল আজিজ? প্রশ্নকারি, একদিকে সেই সাহাবীকে রেখেছেন যার বিরুদ্ধে ইতিহাসের আদালতে রয়েছে জঘন্যতম সব অভিযোগ। অন্যদিকে রেখেছেন খিলাফতে রাশেদার প্রতিবিম্ব সেই মহান তাবেয়ীকে উম্মাহর প্রতিটি সদস্য যার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের সামনে শ্রদ্ধাবনত। কিন্তু প্রশ্ন শোনা মাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক ক্রোধে জ্বলে উঠলেন। তিনি বললেন হযরত মুয়াবিয়ার সাথে তুমি উমর বিন আব্দুল আজিজের তুলনা করছো ? “আল্লাহর কসম ! নবী করীম (ﷺ)– এর সাথে জিহাদে গিয়ে হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)-এর নাকের ছিদ্রে যে ধুলাবালি প্রবেশ করেছে সেগুলোও উমর ইবনে আব্দুল আজিজের (رضي الله عنه) তুলনায় হাজার গুণে উত্তম।”
▶একই ধরণের প্রশ্ন করা হয়েছিল হযরত মুয়াফা বিন ইমরানকে (رضي الله عنه)। তিনিও রাগত স্বরে প্রশ্নকারীকে জবাব দিয়েছিলেন, আশ্চর্য ! একজন তাবেয়ী কোন সাহাবীর চেয়ে উত্তম হতে পারেন কি করে? তদুপরি হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) হলেন, নবী করীম (ﷺ)- এর বিশিষ্ট সাহাবীদের একজন। তাঁর বোন হলেন নবীর স্ত্রী এবং মুমিনদের মা। আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ ওহী লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষণের দায়িত্ব তিনি আঞ্জাম দিয়েছেন। সুতরাং মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের যে স্বর্ণশিখরে তিনি সমাসীন, কোন তাবেয়ীর পক্ষে তা কল্পনা করাই বা সম্ভব কিভাবে ? তারপর প্রশ্নকারীকে তিনি নিম্নোক্ত হাদীস শুনিয়ে দিলেন- “আমার সাহাবা ও আহলে বায়াতকে যারা গালমন্দ করে তাদের প্রতি আল্লাহর আভিশাপ” -(আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : খঃ ৮, পৃ-১৩৯)
হযরত হাসান (رضي الله عنه) ও আমিরে মুয়াবিয়া (রা.) এর মধ্যে সমঝােতাঃ
হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ) এর একদিন হযরত হাসান (رضي الله عنه) কে নিয়ে বেরিয়ে এলেন এবং তাঁকেসহ মিম্বরে আরােহণ করলেন। তারপর বললেন, আমার এ ছেলেটি (নাতী) সাইয়্যেদ তথা সরদার। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এর মাধ্যমে বিবাদমান দু’দল মুসলমানের আপােস (সমঝােতা) করিয়ে দেবেন।
এখানে লক্ষ্যনীয় যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (দ.) দুইটি মুসলমান দল বলেছেন। তিনি কোন দলকে মুনাফিক বলে সম্বোধন করেন নি। এ হাদিস দ্বারা শিয়াদের কাফির মুনাফিক ফতোয়ার জবাব দেয়া যায়।