বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিবেকের কাঠগড়ায় আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ)-[পর্ব 4]
লেখক, সংকলকঃ (Masum Billah Sunny)
⛔ কে আপনার নিকট অধিক প্রিয়? আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) নাকি আহলে বাইয়াত (আঃ) ?
– সাহাবীগণ আহলে বাইয়াতকে সর্বাধিক সম্মান করতেন, ভালবাসতেন তাই আমরাও তাই করব কিন্তু এই ভালবাসা যেন আবার সাহাবীগণের প্রতি হিংসাত্মক, শত্রুতা কিংবা সমালোচনার দিকে ধাবিত না করে। আর এটাই আহলুস সুন্নাহর আদর্শ। আর যদি কেউ সাহাবী হয়ে থাকেন তিনি যদি আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ)ও হন তার ব্যাপারেও চুপ থাকতে হবে, কেউ তার সমালোচনা করলে এটা নিয়েও Strongly প্রতিবাদ করতে হবে।
কোন সুন্নীর অবস্থান এই বিষয়ে স্পষ্ট থাকা উচিত যে, সাহাবীগণের নিকট প্রিয় কি ছিল? নিঃসন্দেহে আহলে বাইয়াত। সন্দেহাতীতভাবে আহলে বাইয়াতের স্থানে ওনারা সম্মানিত।
(তাই বলে খুলাফায়ে রাশেদীনের সম্মানের Chain এ হাত দিতে যাবেন না, এটা আর ঐটা ভিন্ন)
⛔ উদাহরণস্বরুপঃ
হাদিসে এসেছে, (মূলভাব) –
আখেরী জামানার কোন কোন উম্মতের শান-মান দেখে নবীগণ বিস্মিত হবেন আর প্রশ্ন করবেন, হে পরোয়ারদেগার! এরা কি কোন নবী? আল্লাহ বলবেন, না, তারা আখেরী জামানার নবীর উম্মত…….। ” এখন কি বলতে পারবেন যে উম্মতের মর্যাদা নবীর তুলনায় বেশি? বরং এটা বেয়াদবী হবে। কতিপয় সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম বিষয়াদি রয়েছে যার ব্যাখ্যা বুঝা কঠিন সুতরাং যা আপনার ধারণ ক্ষমতার মধ্যে নেই তা বুঝি না বলে আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন।
⛔ তাবেয়ী ইমাম ইবনে সীরীন (রহঃ) [ওফাত ১১০হিঃ] বলেন,
“হাদিস জানার চেয়ে হাদিসের ব্যখ্যা জানা জরুরি।”
⛔ তিনি আরো বলেন,
“এই ইলম হচ্ছে দ্বীন। সুতরাং তোমরা কার থেকে এই (ইলমে) দ্বীন শিখছ তা আগে দেখে নাও।
(সহিহ মুসলিম ১/১৪ পৃঃ)
⛔ এই তর্কের শেষ কোথায়?
– আগুন ঘাটলে যেমন উত্তাপ ক্রমশ বেড়েই উঠে এই বিষয়ে যতই ঘাটবেন ততই ফিত্না বাড়বে। তাই যতক্ষণ না সমালোচনাকারী গণ পিছপা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত একটি বিশাল জামায়াত এর প্রতিবাদ করে যাবে বলে ধারণা করছি।
⛔ এই মুহূর্ত্বে আমাদের কি করা উচিত?
– চুপ থেকে ভেবেছিলাম ফিত্না কমে যাবে উল্টা সাধারণ মুসলমান তাদের সমালোচনামূলক পোস্টগুলো সম্মতি দিয়ে পথভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আমি এই কথা চিন্তা করে কলম ধরেছি। আপনাদেরও আহবান জানাচ্ছি দেরী হওয়ার আগে ভ্রান্ততা সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করুন, শক্ত হস্তে নিন্দুকদের দমন করুন, তাদের এই মতবাদকে প্রতিহত করুন। তারা যদি সমালোচনা বন্ধ করে দেয় তাদেরকে খোঁচানোও বন্ধ করে দিন। তবে হ্যাঁ যদি আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর ব্যাপারে দলিলাদি সম্পর্কিত পোস্ট অব্যাহত রাখলে সেখানে ক্ষতির কিছুই দেখছি না। আর যদি কেউ ওনার প্রতি হিংসাত্মক স্বভাব পোষণ করে তার প্রতিবাদ করুন।
⛔ আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) এর ব্যাপারে আপনারা কোন নীতির অনুসরণ করেন?
“ওনার সমালোচনা করা আহলুস-সুন্নাহর আকিদা নয়, সমস্ত সাহাবীগণের ব্যাপারে জিহ্বাকে সংযত করে মুখে লাগাম দিতে হবে। নয়ত এটা আদবের খেলাফ হবে। আর এটাই সম্মানিত আহলুস-সুন্নাহর ইমামগণের ইজমা। আর এসব ফিত্নার মূল কারণ হল পারষ্পরিক ভুল বুঝাবুঝি এবং এ সমস্ত কতিপয় বিষয়কে আমরা ইজতিহাদী ভুল মনে করি।“যেমনঃ
⛔ হাদিস ১ : সনদ সহঃ
ইমাম বুখারী (রহঃ) বর্ণনা করেন-
↓
আল-হাকাম ইবনে নাফী’ (রহঃ) হতে,
↓
তিনি শু’আয়ব (রহঃ) হতে,
↓
তিনি আল-যুহরী (রহঃ) হতে,
↓
তিনি আবূ সালামাহ ইবনে আবদির রাহমান (রাঃ) হতে,
↓
তিনি হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে, যিনি বলেন যে মহানবী (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
”প্রলয় দিবস আসবে না, যতোক্ষণ না দুইটি (মুসলমান) দল পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; তাদের আহ্বান একই হবে (মানে একই আদর্শের জন্যে লড়বে)।”
★ ইমাম বুখারী (রহঃ) : সহিহ আল-বুখারীঃ হাদিস ৩৬০৮
⛔ হাদিস ২ : সনদ সহঃ
ক্বাসিম ইবনে ফযল (রহঃ) হতে,
↓
তিনি আবূ নাদরাহ (রহঃ) হতে,
↓
তিনি আবূ সাঈদ (রাঃ) হতে, যিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান:
“মুসলমান সমাজ যখন দ্বিধা বিভক্ত হবে, তখন একটি দলের (কিছু) অংশ বিদ্রোহ করবে; আর দুটি দলের মধ্যে যে দলটি সত্যের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে, তারা ওই (বিদ্রোহী) অংশের সাথে লড়বে।”
★ ইমাম মুসলিমঃ সহিহ মুসলিম (হাদিস ১০৬৫)
⛔ ব্যাখ্যাঃ
অতএব, হযরত আলী (রাঃ) ও আমীরে মু’আবিয়া (রাঃ)’র মাঝে যা ঘটেছিলো, সে সম্পর্কে হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ)’র বিবরণে একটি ব্যাখ্যা পাওয়া যায়; আর নিঃসন্দেহে হযরত আলী (রাঃ)-ই অন্য যে কারো চেয়ে সত্যের কাছাকাছি ছিলেন এবং তিনি-ই আবার খারেজী বিদ্রোহী/ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। এই রওয়ায়াত/বর্ণনায় আমীরে মু’আবিয়া (রাঃ)-এর ইসলামী জিন্দেগী সম্পর্কে স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়, কেননা নবী করীম (ﷺ) এরশাদ করেন, “…তাদের আহ্বান একই হবে,” এবং ”দুটি দলের মধ্যে যে দলটি সত্যের কাছাকাছি অবস্থানে থাকবে,” তারা ধর্মত্যাগীদের বিরুদ্ধে লড়বে।
⛔ ইমাম নববী (রহঃ) তাঁর রচিত ’শরহে মুসলিম’ গ্রন্থে (৭:১৬৮) বলেন:
“….এই বর্ণনায় রয়েছে এক দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা এ মর্মে যে দুটো দল-ই মুসলমান; আর তারা নিজেদের (মধ্যকার) এ যুদ্ধের কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হননি, তাঁদেরকে ফাসিক্ব/পাপী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়নি। আর এটাই আমাদের (আহলে সুন্নাতের) দৃষ্টিভঙ্গিগত অবস্থান।”
(উক্ত হাদিসের অনুবাদকঃ Kazi Saifuddin Hossain)