বিয়ে-শাদীতে কনের পিতা-মাতা বা অভিভাবকগণ কনের নতুন সংসার গঠনের জন্য স্বেচ্ছায় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কন্যার প্রতি স্নেহের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রয়োজনীয় কিছু উপহার হিসেবে দিতে পারেন। এটা সুন্নাতও। এ’তে উভয়পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও সম্প্রীতি বাড়ে। এতে কোন পক্ষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, তেমনি বিয়ে-শাদীর সহজ পন্থাও ব্যাহত হয় না।
উল্লেখ্য, বিয়ে-শাদী যেমন সুন্নাত, তেমনি তাতে রয়েছে অনেক ফযীলত বা উপকার। সৃষ্টির সেরা মানুষের বংশীয় ধারার পবিত্রতা রক্ষা, শিশুর পিতৃপরিচয় নিশ্চিতকরণ, তার প্রতিপালন ও শিক্ষা-দীক্ষার নিশ্চয়তা বিধান, দাম্পত্য জীবন যাপনের মাধ্যমে মানব-জীবনে এক সুন্দর শৃংখলা আনয়ন এবং মারাত্মক রোগ-ব্যাধি থেকে নিরাপদ জীবন যাপন ইত্যাদি শরীয়তসম্মত বিয়ে-শাদীর মাধ্যমেই সম্ভব। এ কারণে ইসলামে বিয়ে-শাদীর বিধান রয়েছে। বাস্তবক্ষেত্রেও বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিয়ে-শাদীর নিয়মাবলীকে একেবারে সহজ করে দিয়েছেন। তিনি নিজের স্নেহের কন্যা হযরত ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার শাদী মুবারক, নিজের পবিত্র শাদীগুলো এবং সাহাবা-ই কেরামের মধ্যে বিবাহ্বন্ধনের নিয়মাবলী ও তাঁর অমীয় বাণী (হাদীস শরীফগুলো)’র মাধ্যমে বিয়ের সহজ-সরল ও পবিত্র মডেল স্থাপন করে দিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে অ-ইসলামী যৌতুক প্রথা এ পবিত্র পদ্ধতিকে জটিল ও অমানবিক পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিয়েছে।
সুতরাং বরপক্ষ কনে পক্ষের নিকট থেকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে দাবী করে যৌতুক উসূল করা ইসলাম সমর্থন করে না। এতে কনে পক্ষ যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। এ দাবীকৃত যৌতুক আদায়ে অপারগ হলে হয়তো বিয়ে হচ্ছে না। হলেও ভেঙ্গে যাচ্ছে অথবা অবিবেচক বরপক্ষের হাতে কনে ও কনেপক্ষ লাঞ্ছিত হচ্ছে। এমনকি এ অমানবিক প্রথার বলি হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে অগণিত নিরীহ গৃহবধূ। বিয়ে-শাদীর মাধ্যমে যেখানে পারস্পরিক ভালবাসার বন্ধন সৃষ্টি হবার কথা, সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণার মতো অনভিপ্রেত অনেক কিছু। এখানে একটি বিষয় স্মর্তব্য যে, এ ধরনের দাবীকৃত কিংবা লোভকৃত যৌতুক প্রথার জন্ম হয়েছে ওইসব ধর্মাবলম্বী কিংবা সমাজ থেকে, যাদের ধর্মে বা সমাজে পিতার সম্পত্তিতে কন্যা সন্তানের জন্য মীরাস বা উত্তরাধিকার নির্ধারিত নেই। সুতরাং এমন ধর্মাবলম্বী ও সমাজের লোকেরা তাদের কন্যাকে বিয়ে দেওয়ার সময় যথাসম্ভব মালামাল বা অর্থকড়ি স্বেচ্ছায় কিংবা বরপক্ষের দাবীর মুখে দিয়ে থাকেন কিংবা দিতে বাধ্য থাকেন। কিন্তু আমাদের পূতঃপবিত্র দ্বীন-ইসলাম এমন কোন সমস্যা রাখেনি। পিতার সম্পত্তিতে কন্যার নির্ধারিত অংশ রয়েছে। স্বেচ্ছাপ্রণোদিত উপহার ও আতিথ্যের বিধান রয়েছে আমাদের পবিত্র ধর্মে। সুতরাং যারা দাবী করে, অনেকটা জোরপূর্বক যৌতুক উসূল করতে চায় তারা এমন একটি সুন্নাতসম্মত বিষয়কে কেন্দ্র করে অ-ইসলামী পন্থায় অন্যের ধন হাসিল করতে গিয়ে যে নিজের দুনিয়া ও আখিরাতের সুখ-শান্তিকে জলাঞ্জলি দিচ্ছেন তা স্পষ্ট। তাই, আসুন এ বিষয়েও আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীবের শিক্ষা, বিধানকেই অবলম্বন করি।
দ্বিতীয়তঃ ‘মহর’ স্ত্রীর হক্ব। বিয়ের আক্বদের পর স্ত্রীর সাথে শরীয়তসম্মত নির্জনতা কিংবা সহবাসের মাধ্যমে স্বামীর উপর স্ত্রীর ‘মহর’ ওয়াজিব হয়ে যায়। মহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ (দশ দিরহাম) নির্ধারিত থাকলেও সর্বোচ্চ পরিমাণ শরীয়ত নির্ধারণ করেনি। তাই দম্পত্তির সম্মতিতে সাধারণত এ মহরের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। অন্যথায় ‘মহরে মিস্ল তো আছেই। অবশ্য এ ‘মহর’ নগদে কিংবা বাকীতে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে স্বামীকে। স্ত্রী স্বেচ্ছায় ক্ষমা না করলে কিংবা স্বামী পরিশোধ না করলে স্বামী তা থেকে অব্যাহতি পান না। এ ক্ষেত্রে মহর মাফ করানোর জন্য স্বামীর পক্ষ থেকে নানা অপকৌশল অবলম্বন করা হয় বলেও প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে স্ত্রীর মহর সম্পর্কিত হক্ব আদায় করার ব্যাপারে যত্নবান ও সতর্ক হওয়া দরকার। [গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব, পৃ. ৪২২-৪২৩]