বিনা ওযরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ছাড়লে কি গুণাহ হবে? যেমন- তারাবীহ।
——–স্বাধীন
(হানাফী ফিক্বহ অনুসারে)
গ্রহণযোগ্য মতে, গুণাহ হবে।
যেমন-
* ইমাম ইবন নুজাইম মিশরী র. বলেন,
” الظاهر من كلام أهل المذهب أن الإثم منوط بترك الواجب والسنة المؤكدة على الصحيح لتصريحهم بأن من ترك سنن الصلوات الخمس قيل لا يأثم والصحيح أنه يأثم ذكره في فتح القدير ، وتصريحهم بالإثم لمن ترك الجماعة مع أنها سنة مؤكدة على الصحيح وكذا في نظائره لمن تتبع كلامهم ولا شك أن الإثم مقول بالتشكيك بعضه أشد من بعض فالإثم لتارك السنة المؤكدة أخف من الإثم لتارك الواجب
(البحر الرائق ( 1 / 319 ))
“মাযহাবের ইমামদের কথা থেকে স্পষ্ট যে, ওয়াজিব তরকে গুণাহ হয়। আর বিশুদ্ধমতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরকেও গুণাহ হয়। যেহেতু ইমামগণ স্পষ্ট করেছেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সুন্নাত(মুয়াক্কাদাহ) নামাযগুলি ছেড়ে দেয়া গুণাহ। যদিও কেউ কেউ গুণাহ হয় না বলেছেন। তবু বিশুদ্ধ হচ্ছে, গুণাহ হয়। যেমনটা আছে ‘ফাতহুল কাদীর’ গ্রন্থে। ইমামগণ, নামাযের জামাত ব্যাপারেও স্পষ্ট করেছেন যে, এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ এবং তরক করলে গুণাহ। এভাবে অনুসন্ধানকারীর জন্য আরো উদাহরণ রয়েছে। তবে নিঃসন্দেহে গুণাহর পরিমাণ অনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এক গুণাহ অপর গুণাহর চাইতে মারাত্মক। তবে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরকের গুণাহ ওয়াজিব তরকের গুণাহর চাইতে হালকা।”
(আল বাহরুর রায়েক, ১/৩১৯)
* ফতোয়ায়ে শামীর লেখক বলেন,
ﻛﺎﻧﺖ اﻟﺴﻨﺔ اﻟﻤﺆﻛﺪﺓ ﻗﺮﻳﺒﺔ ﻣﻦ اﻟﻮاﺟﺐ ﻓﻲ ﻟﺤﻮﻕ اﻹﺛﻢ ﻛﻤﺎ ﻓﻲ اﻟﺒﺤﺮ
“সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সমূহ গোনাহ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ওয়াজিবের নিকটতম। যেমনটা রয়েছে ‘আল বাহরুর রাইক’ গ্রন্থে।”
(আদ্দুর্রুল মুখতার-২/১২)
তিনি আরো বলেন,
«والسنة نوعان: سنة الهُدى، وتركها يوجب إساءة وكراهية كالجماعة والأذان والإقامة ونحوها. وسنة الزوائد، وتركها لا يوجب ذلك كسِيَر النبي عليه الصلاة والسلام في لباسه وقيامه وقعوده».
“সুন্নাত দুই প্রকার। এক. সুন্নাতে হুদা(মুয়াক্কাদাহ), এটি ছেড়ে দেয়া গুণাহ ও মাকরুহ। যেমন- জামাআত, আযান, ইকামাত ইত্যাদি। আর আরেকটা হচ্ছে, সুন্নাতে যায়েদাহ। যা ছেড়ে দেয়া মুয়াক্কাদাহর মত নয়। যেমন- পোশাক, উঠা-বসাতে প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ।”
(রদ্দুল মুহতার, ১/১০৩)
ফতোয়ায়ে আলমগিরীতে বলা হয়েছে,
ﻭﺍﻥ ﺭﺁﻫﺎ ﺣﻘﺎ ﻓﺎﻟﺼﺤﻴﺢ ﺃﻧﻪ ﻳﺄﺛﻢ، ﻷﻧﻪ ﺟﺎﺀ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪ ﺑﺎﻟﺘﺮﻙ، ﻛﺬﺍ ﻓﻰ ﻣﺤﻴﻂ ﺍﻟﺴﺮﺧﺴﻰ، ( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ ﺍﻟﻬﻨﺪﻳﺔ – 1/112
”তবে কেউ যদি সুন্নতকে(সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ) সত্য মানে, কিন্তু অলসতা করে ছেড়ে দেয়, তবে বিশুদ্ধ মত হচ্ছে- গুনাহগার হবে। যেহেতু এটি ছাড়ার ব্যাপারে সাবধানবাণী এসেছে। যেমনটা আছে ইমাম সারাখসী র. ‘র মুহীত্ব গ্রন্থে।”
(ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ১/১১২)
এছাড়া
ইমাম বুরহানুদ্দীন বুখারী আল হানাফী র. বলেন,
برهان الدين البخاري الحنفي: «الجماعة سنة لا يجوز لأحد التأخر عنها إلا بعذر، والأصل فيه قوله عليه السلام: ((لقد هممت أن آمر رجلًا يصلي بالناس وأنظر إلى أقوام تخلفوا عن الجماعة فأحرق بيوتهم))، ومثل هذا الوعيد إنما يلحق تارك الواجب أو تارك السنّة المؤكدة»
(المحيط البرهاني 1/ 428)
‘নামাযের জামাত সুন্নাত(মুয়াক্কাদাহ)। বিনা ওযরে এটি ছেড়ে দেয়া জায়েয নয়। এর ভিত্তি রসূলেপাকের এই উক্তি- “ইচ্ছা হয় যে, কাউকে নামায পড়াতে দিয়ে আমি গিয়ে দেখবো কারা কারা জামাতে আসেনি। অতঃপর তাদের ঘর জ্বালিয়ে দেব।” এরূপ ভীতিপ্রদর্শন কেবল ওয়াজিব বা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরককারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’
(আল মুহীত্বুল বুরহানী, ১/৪২৮)
অবশ্য ভিন্নমতও আছে।
যেমন-
* আল্লামা জুরজানী রাহ বলেনঃ
ﻭﺣﻜﻤﻬﺎ ﻛﺎﻟﻮﺍﺟﺐ -— ﺇﻻ ﺃﻥ ﺗﺎﺭﻙ ﺍﻟﻮﺍﺟﺐ ﻳﻌﺎﻗﺐ ﻭﺗﺎﺭﻛﻬﺎ ﻻ ﻳﻌﺎﻗﺐ – ( ﺍﻟﺘﻌﺮﻳﻔﺎت، ص 138)
এর হুকুম ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ পড়া জরুরী। তবে পার্থক্য হচ্ছে, ওয়াজিব তরককারীকে শাস্তি দেয়া হবে, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরককারীকে শাস্তি দেয়া হবে না।(অর্থাৎ গুণাহ হবে না।)
(আত তা’রীফাত, পৃ.-১৩৮)
* ইমাম কাহাস্তানী র. বলেন,
حكمها كالواجب في المطالبة في الدنيا إلا أن تاركه ( أي تارك الواجب ) يعاقب و تاركها ( أي السنة المؤكدة )لا يعاتب اهـ .
“দুনিয়াবি গুরুত্বের দিক দিয়ে এর হুকুম ওয়াজিবের মত। পার্থক্য হচ্ছে, ওয়াজিব তরককারীকে শাস্তি দেয়া হবে, সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ তরককারীকে শাস্তি দেয়া হবে না।”
(হাশিয়াতুত ত্বহাবী, পৃ.-৬৪)
অতএব ইচ্ছা করলেই বিনা ওযরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ ছাড়া কোনো কাজের কথা নয়। যেহেতু
প্রথমতঃ এর আবশ্যকতার ব্যাপারে সবাই একমত যে, ওয়াজিবের মত।
দ্বিতীয়তঃ গ্রহণযোগ্য মতে, এতে গুণাহ হবে।
~ ফা লা ক্ব