বিদ্আতে হাসনা ও বিদ্আতে সাইয়ার প্রমাণ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

শুনুন-

❏ আশ্আতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খন্ড الاعتصام অধ্যায় وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ হাদীছটি প্রসংগে উলে­খিত আছে-

وانپه موافق اصول وقواعد سنت او ست وقياس كرده شده است آں را بدعة حسنة گويند وانچه مخالف آں باشد باعث ضلالة گويند 

-‘‘যে বিদ্আত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদ্আতে হাসনা  বলা হয়। আর যা এর বিপরীত, সেটাকে বিদ্আতে গুমরাহী বলা  হয়।’’  

➥〈 আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, লুম‘আত, ১/১৩৫পৃ: 〉

❏ মিশকাত শরীফের কিতাবুল ইলম অধ্যায়ে মুনযির ইবনে জারীর (رحمة الله) তিনি তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَيْء . رَوَاهُ مُسلم

-‘‘যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য ছওয়াব পাবেন; যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও ছওয়াব পাবেন, তবে তাঁদের ছওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না, এবং  যারা ইসলামে মন্দরীতি প্রচলন করে, এর জন্য তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না।’’  ১৬

➥〈 সহীহ মুসলিম, ২/৭০৪পৃ: হা/১০১৭, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৭২পৃ: হা/২১০, সুনানে নাসাঈ, হা/২৫৫৪ এবং আস-সুনানিল কোবরা, হা/২৩৪৬, মুসনাদে আবি দাউদ তায়লসী, হা/৭০৫, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, হা/৩৩০৮, মুসনাদে আহমদ, ৪/৩৫৭-৫৮পৃ: , সুনানে ইবনে মাযাহ, মুকাদ্দামা, ১/৭৪পৃ: হা/ ২০৩ 〉

সুতরাং, বোঝা গেল ইসলামের কোন ভাল কাজের প্রচলন করাটা হচ্ছে ছওয়াবের কাজ আর মন্দ কাজের সূচনা করাটা হচ্ছে পাপের ভাগী হওয়া। 

❏ ফাত্ওয়ায়ে শামীর ভূমিকায় ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে উলে­খিত আছে-

قَالَ الْعُلَمَاءُ: هَذِهِ الْأَحَادِيثُ مِنْ قَوَاعِدِ الْإِسْلَامِ، وَهُوَ أَنَّ كُلَّ مَنْ ابْتَدَعَ شَيْئًا مِنْ الشَّرِّ كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُ مَنْ اقْتَدَى بِهِ فِي ذَلِكَ فَعَمِلَ مِثْلَ عَمَلِهِ إلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَكُلُّ مَنْ ابْتَدَعَ شَيْئًا مِنْ الْخَيْرِ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ كُلِّ مَنْ يَعْمَلُ بِهِ إلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

-‘‘উলামায়ে কিরাম বলেন-এসব হাদীছসমূহ ইসলামের কানুন হিসেবে প্রযোজ্য-যে কেউ ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করলে সে এর উপর সমস্ত আমলকারীদের গুনাহের ভাগী হবে; আর যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আমলকারীদের ছওয়াবের ভাগী হবেন।’’

➥〈 ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, রুদ্দুল মুহতার, ১/৫৮পৃ: মুকাদ্দামা 〉

এর থেকেও প্রমাণিত হলো ভাল বিদ্আতে ছওয়াব আছে ও মন্দ বিদ্আতে গুনাহ হয়। 

যেটা সুন্নাতের বিপরীত, সেটা হচ্ছে মন্দ বিদ্আত। এর প্রমাণও প্রত্যক্ষ করুনঃ 

❏ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ে উলে­খিত আছে-

مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد

-‘‘যে ব্যক্তি আমার ধর্মে নতুন কোন কিছু প্রচলন করলো, যা ধর্মের মধ্যে নেই, তাহলে সে মরদুদ হিসেবে গণ্য।’’  

➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫১পৃ: হা/১৪০, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৩/১৩৪৩পৃ: হা/১৭১৮, ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৭পৃ: মুকাদ্দামা, হা/১৪, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ১/২০৮পৃ: হা/২৬ 〉

‘ধর্মের মধ্যে নেই’ এর ভাবার্থ হলো ধর্মের বিপরীত। যেমন-আশ্আতুল লুমআতে-এ হাদীসের ব্যাখ্যা প্রসংগে বর্ণিত আছে-

ومراد چيزے است كه مخالف ومغير آں باشد

-‘‘এর দ্বারা এটাই বোঝানো হয়েছে, যা ধর্মের বিপরীত বা ধর্ম পরিবর্তনকারী।’’ 

❏ মিশকাত শরীফের সেই একই অধ্যায়ে কিতাবুল ই‘তিসাম এর তৃতীয় পরিচ্ছেদে উলে­খিত আছে-

وَعَن غُضَيْف بن الْحَارِث الثمالِي قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: (مَا أَحْدَثَ قَوْمٌ بِدْعَةً إِلَّا رُفِعَ مِثْلُهَا مِنَ السُّنَّةِ فَتَمَسُّكٌ بِسُنَّةٍ خَيْرٌ مِنْ إِحْدَاث بِدعَة) رَوَاهُ أَحْمد

-‘‘যে কোন কওম যে পরিমাণ বিদ্আতের সূচনা করে, সে পরিমাণ সুন্নাত বিলুপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং, সুন্নাতকে গ্রহণ করা বিদ্আতের প্রচলন করা থেকে উত্তম।’’  

➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৬৬পৃ: হা/৮৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৮/১৭৩পৃ: হা/১৬৯৭০, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন- (رَوَاهُ أَحْمَدُ) ، قَالَ مَيْرَكُ: بِسَنَدٍ جَيِّدٍ. -‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله) এই হাদিসটি সংকলন করেছেন, ইমাম মিরক (رحمة الله) বলেন, এই সনদটি শক্তিশালী।’’  (মেরকাত, ১/২৭০পৃ: হা/৮৭) এমনটি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেছেন। (ফতহুল বারী, ১৩/২৫৩পৃ:) এই সনদটি আলবানী মিশকাতের তাহকীকে ‘ইবনে আবি মারিয়াম’ নামক রাবীর কারণে যঈফ বলেছেন। ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন- الإِمَامُ، المُحَدِّثُ، القُدْوَةُ، الرَّبَّانِيُّ، -‘‘তিনি ছিলেন হাদিসের ইমাম, মুহাদ্দিস, অনুসরণযোগ্য ব্যক্তি, মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তি।’’ (ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামুল নুবালা, ৭/৬৪পৃ: ক্রমিক- ২৫) যাহাবী (رحمة الله) আরও উল্লেখ করেন- وقال ابْن عدي: أحاديثه صالحة -‘‘ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় সৎ ছিলেন।’’ (যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/২৫৮পৃ:) তাই এই হাদিসটি হাসান বা শক্তিশালী। 〉

❏ এর ব্যাখ্যা প্রসংগে ‘আশ্আতুল লুমআতে’ উলে­খিত আছে –

وحول احداث بدعة رافع سنت است هميں قياس اقامت سنت قاطع بدعة خواهد بود

-‘‘যেহেতু বিদ্আতের সূচনা করাটা হচ্ছে সুন্নাত বিলুপ্তির  সহায়ক, সেহেতু সুন্নাতের উপর অটল থাকাটা হবে বিদ্আত প্রতিরোধের সহায়ক।’’

এ হাদীছ ও এর ব্যাখ্যা থেকে এটা বোঝা গেল যে বিদ্আতে সাইয়া অর্থাৎ মন্দ বিদ্আত হচ্ছে, যার দ্বারা সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটে। ইতিপূর্বে এর উদাহরণসমূহ দেয়া হয়েছে। বিদ্আতে হাসনা ও বিদ্আতে সাইয়ার পার্থক্য ভালভাবে স্বরণ রাখা দরকার। কেননা এ ক্ষেত্রে প্রায়শই ধোঁকা দেয়া হয়। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment