এ আলোচনাকে দু’টি অধ্যায় ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে বিদ্আতের সংজ্ঞা এর প্রকারভেদ ও বিধানাবলীর বিবরণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ প্রসংঙ্গে উত্থাপিত আপত্তিসমূহের বিবরণ ও এর উত্তর দেয়া হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়
বিদআতের সংজ্ঞা, এর প্রকারভেদ ও বিধানাবলী
বিদ্আতের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-নতুন জিনিস।
❏ যেমন-কুরআন করীম ইরশাদ ফরমান-
قُلْ مَا كُنْتُ بِدْعًا مِنَ الرُّسُلِ
-‘‘বলে দিন, আমি নতুন রসূল নই।’’
➥〈 সূরা নং- ৪৬: সূরা আহকাফ, আয়াত, ৯ 〉
❏ অন্যত্র ইরশাদ করেন-
ط بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ
-আসমান ও যমীনসমূহের সৃষ্টিকর্তা।
➥〈 সূরা নং- ২: সূরা বাক্বারা, আয়াত, ১১৭ 〉
❏ আর এক জায়গায় ইরশাদ করা হয়েছে –
وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ
-সন্ন্যাসবাদ তারা নিজেরাই প্রবর্তন করেছিল, আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি।
➥〈 সূরা নং- ৫৭: সূরা হাদীদ, আয়াত, ২৭ 〉
❏ উপরোক্ত আয়াত সমূহে ‘বিদ্আত’ শব্দকে শাব্দিক অর্থে-অর্থাৎ সৃষ্টি করা, নতুন কিছু তৈরি করা ইত্যাদি অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে। মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে بَابُ الِاعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ শীর্ষক অধ্যায়ে উলিখিত আছে-
قَالَ النَّوَوِيُّ: الْبِدْعَةُ كُلُّ شَيْءٍ عُمِلَ عَلَى غَيْرِ مِثَالٍ سَبَقَ
-‘‘ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, বিদ্আত সে কাজকে বলা হয়, যা বিগত কোন কিছুর অনুকরণ ছাড়া করা হয়।’’
➥〈 ইমাম নববী, শরহে মুসলিম, ৬/১৫৪পৃ: দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, দ্বিতীয় প্রকাশ- ১৩৯২হিঃ মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২৩পৃ: হা/১৪১ এর আলোচনা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪২২হিঃ। 〉
বিদ্আত তিন অর্থে ব্যবহৃত হয়।
(১) নতুন কাজ, যা হুযুর পাক (ﷺ) এর পরে সূচিত হয়েছে;
(২) সুন্নাতের বিপরীত কাজ, যা সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে এবং
(৩) সে সব বদ্আকীদা, যা পরবর্তীকালে সৃষ্টি হয়েছে।
প্রথম অর্থে ব্যবহৃত বিদ্আত দু’প্রকার-বিদ্আতে হাসনা ও বিদ্আতে সাইয়া।
দ্বিতীয় অর্থে ব্যবহৃত বিদ্আত মাত্রই সাইয়া (মন্দ)। সে সব বুযুর্গানে কিরাম প্রত্যেক বিদ্আতকে সাইয়া (মন্দ) বলেছেন, তাঁরা তা দ্বিতীয় অর্থের বেলায় বলেছেন এবং হাদীছের মধ্যে যে আছে-প্রত্যেক বিদ্আত গুমরাহী, তা দিয়ে তৃতীয় বিদ্আত বোঝানো হয়েছে। সুতরাং, হাদীছসমূহ ও উলামায়ে কিরামের উক্তি সমূহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই।
শরীয়তের পরিভাষায় বিদ্আত বলতে সে সব আকীদা ও আমলকে বলা হয়, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জাহেরী জিন্দেগীকালে ছিল না; পরে প্রচলন হয়েছে। এ সজ্ঞা থেকে প্রতিয়মান হয় বিদ্আতে শারেয়ী দু’রকম- বিদ্আতে ইতিকাদী ও বিদ্আতে আমলী। বিদ্আতে ইতিকাদ সে সব মন্দ আকীদাকে বলা হয়, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে ইসলাম ধর্মে সূচিত হয়েছে। ঈসায়ী, ইহুদী, মজুসী এবং মুশরিকদের আকীদাসমূহ বিদ্আতে ইতিকাদী নয়। কেননা এরা হুযুর আলাইহিস সালামের পবিত্র জিন্দেগীতে বিদ্যমান ছিল। অধিকন্তু, সেসব আকীদাকে ঈসায়ী ও অন্যান্যগণ ইসলামী আকাইদ বলে না। জবরীয়া, কদরীয়া, মরজিয়া, ছকড়ালবী, লা-মাযহাবী ও দেওবন্দীদের আকীদা হচ্ছে বিদ্আতে ইতিকাদী। কেননা এসব র্ফিকা পরে আর্ভিভূত হয়েছে এবং এরা তাদের আকীদাকে ইসলামী আকীদা মনে করে থাকে। যেমন-দেওবন্দীরা বলে, আল্লাহ মিথ্যে বলার ক্ষমতা রাখেন, হুযুর আলাইহিস সালাম গায়েব জানেন না, নামাযে হুযুরের স্বরণ গরু-গাধার স্বরণ থেকে খারাপ। এসব নাপাক আকীদা ১২০০ হিজরীর আবিষ্কার। আমি এ কিতাবের শুরুতে ফাত্ওয়ায়ে শামীর উদ্ধিতি দিয়ে এর প্রমান দিয়েছি।
এখন বিদ্আতে হাসনার প্রমাণ নিন।
❏ আল্লাহ তা’আলা ফরমান –
وَجَعَلْنَا فِي قُلُوبِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ رَأْفَةً وَرَحْمَةً وَرَهْبَانِيَّةً ابْتَدَعُوهَا مَا كَتَبْنَاهَا عَلَيْهِمْ إِلَّا ابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللَّهِ
-‘‘আমি তাঁদের আত্মায়, যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন, আরাম ও রহমত দান করেছি। সন্ন্যাসবাদ তারাই প্রবর্তন করেছিল; আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি। আল্লাহর রেযামন্দীর উদ্দেশ্যে এর সূচনা করেছিল।’’
➥〈 সূরা নং- ৫৭: সূরা হাদীদ, আয়াত, ২৭ 〉
❏ পুনরায় ইরশাদ করেন –
فَآتَيْنَا الَّذِينَ آمَنُوا مِنْهُمْ أَجْرَهُمْ
-‘‘তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আমি ওদেরকে পুরষ্কার দিয়েছি।’’
➥〈 সূরা নং- ৫৭: সূরা হাদীদ, আয়াত, ২৭ 〉
এ আয়াত থেকে বুঝা গেল যে, ঈসায়ীগণ বিদ্আতে হাসনা অর্থাৎ সংসার ত্যাগী হওয়াটা আবিষ্কার করলো, আল্লাহ তা’আলা এর প্রশংসা করলেন এবং এর জন্য পুরষ্কার দিলেন। তবে হ্যাঁ, যারা একে চালু রাখতে পারেনি, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-
فَمَا رَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا
-‘‘এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।’’ ৭
➥〈 সূরা নং- ৫৭: সূরা হাদীদ, আয়াত, ২৭ 〉
লক্ষ্য করুন, এখানে বিদ্আতের জন্য নিন্দা করা হয়নি বরং এটা চালু না রাখায় নিন্দা করা হয়েছে। তাই প্রমাণিত হলো যে, বিদ্আতে হাসনা ভাল ও ছওয়াবের কাজ। কিন্তু যথাযথ পালন না করা পাপ।
الامور خير اودمها -‘‘সবচেয়ে ভাল কাজ হচ্ছে ওটার উপর অটল থাকা।’’ সুতরাং মুসলমানগণ যেন যথাযথভাবে মীলাদ মাহফিল ইত্যাদি উদ্যাপন করেন।
❏ মিশকাত শরীফের بَابُ الِاعْتِصَامِ بِالْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رد
-‘‘যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।’’
➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫১পৃ: হা/১৪০, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৩/১৩৪৩পৃ: হা/১৭১৮, ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৭পৃ: মুকাদ্দামা, হা/১৪, ইমাম ইবনে হিব্বান, আস-সহীহ, ১/২০৮পৃ: হা/২৬ 〉
আমি উপরোক্ত হাদীসে শব্দের অর্থ আকীদা এ জন্য করেছি যে ধর্ম হচ্ছে আকীদার অপর নাম। গৌণ আমল সমূহের ক্ষেত্রে, যেমন-বেনামাযী গুণাহ্গার বটে, কিন্তু বেদীন বা কাফির নয়, অথচ মন্দ আকীদা পোষণকারী হয়তো গুমরাহ, না হয় কাফির।
❏ এ প্রসঙ্গে ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে –
قَالَ الْقَاضِي: الْمَعْنَى مَنْ أَحْدَثَ فِي الْإِسْلَامِ رَأْيًا لَمْ يَكُنْ لَهُ مِنَ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ سَنَدٌ ظَاهِرٌ أَوْ خَفِيٌّ مَلْفُوظٌ أَوْ مُسْتَنْبَطٌ فَهُوَ مَرْدُودٌ عَلَيْهِ، قِيلَ: فِي وَصْفِ الْأَمْرِ بِهَذَا إِشَارَةٌ إِلَى أَنَّ أَمْرَ الْإِسْلَامِ كَمُلَ
-‘‘ইমাম কাযি আয়ায (رحمة الله) বলেন, যে কেউ ইসলামে এ ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের পরিপন্থী, সে মরদুদ। আমি বলতে চাই যে الْأَمْرِ هَذَا দ্বারা ওদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে ইসলামের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হয়েছে।’’
➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২২পৃ: হা/১৪০ এর আলোচনা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪২২হিঃ। 〉
প্রমাণিত হলো বিদ্আত আকীকাকে বলা হয়েছে।
❏ মিশকাত بَاب الْإِيمَان بِالْقدرِ অধ্যায়ে উলেখিত আছে-
عَن نَافِع أَن ابْن عمر جَاءَهُ رجل فَقَالَ إِنَّ فُلَانًا يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ فَقَالَ لَهُ إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّهُ قَدْ أَحْدَثَ فَإِنْ كَانَ قَدْ أَحْدَثَ فَلَا تُقْرِئْهُ مِنِّي السَّلَامَ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُول يكون فِي هَذِه الْأمة أَو فِي أمتِي الشَّك مِنْهُ خَسْفٌ أَوْ مَسْخٌ أَوْ قَذْفٌ فِي أَهْلِ الْقَدَرِ. رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَابْنُ مَاجَهْ وَقَالَ التِّرْمِذِيُّ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
-‘‘হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) কে কেউ বললেন যে অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালা, দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন, আমি জানতে পারলাম যে সে বিদ্আতী হয়ে গেছে। তা যদি হয, তাকে আমার সালাম বলবে না।’’ জিজ্ঞাসা করা হলো বিদ্আতী কিভাবে হতে পারে? ফরমালেন, হুযুর আলাইহিস সালাম ফরমাতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কদরীয়া সম্প্রদায়ের বেলায় ভূমি ধ্বংসে যাবে, চেহারা বিকৃত হবে, অথবা পাথর বর্ষিত হবে। ইমাম তিরমিযি (رحمة الله), ইমাম আবু দাউদ(رحمة الله), ইমাম ইবনে মাযাহ (رحمة الله) এই হাদিসটি সংকলন করেছেন। তিরিমিযি বলেন, এই হাদিসটি হাসান, সহীহ, গরীব।’’
➥〈 খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪১পৃ: হা/১১৬, ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ২/১৩৫০পৃ: হা/৪০৬১, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, হা/২১৫২, মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/১৯০পৃ: হা/১১৬ 〉
প্রতিভাত হলো যে, কদরীয়া র্ফিকাকে অর্থাৎ যারা তকদীরকে অস্বীকার করতো তাদেরকে বিদ্আতী বলা হয়েছে।
❏ দুররুল মুখতারের কিতাবুল সালাতে বাবুল ইমামত শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে –
(وَمُبْتَدِعٌ) أَيْ صَاحِبُ بِدْعَةٍ وَهِيَ اعْتِقَادُ خِلَافِ الْمَعْرُوفِ عَنْ الرَّسُولِ
-‘‘বিদ্আতী ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। বিদ্আত হচ্ছে সেই আকীদার বিপরীত আকীদা পোষণ করা, যা হুযুর (ﷺ) থেকে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে।’’
➥〈 হাসকাফী, দুররুল মুখতার, ৭৩পৃ: কিতাবুল ইমামত, মাতবাউ মুজতাবা, লাহোর, পাকিস্তান, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৫৬০পৃ: দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন। 〉
উপরোক্ত ভাষ্য থেকে বোঝা গেল, বিদ্আত নতুন ও মন্দ আকীদাকে বলা হয়। হাদীছসমূহে বিদ্আত ও বিদ্আতী সম্পর্কে যে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, এর দ্বারা আকীদাগত বিদ্আতকে বোঝানো হয়েছে। হাদীছ শরীফে আছে-যে বিদ্আতীর (আকীদাগত) সম্মান করলো, সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করার ব্যাপারে সাহায্য করলো। ফাত্ওয়ায়ে রশীদিয়া, সে যেন ইসলামকে ধ্বংস করার ব্যাপারে সাহায্য করলো। ফাত্ওয়ায়ে রশীদিয়া প্রথম খন্ড কিতাবুল বিদ্আতের ৯০ পৃষ্টায় উলিখিত আছে-“যে বিদ্আতের ব্যাপারে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আকীদাগত বিদ্আত। যেমন-রায়েজী ও খারেয়ীদের বিদ্আত”।
❏ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) মেরকাত গ্রন্থে বলেন-
وَفِي الشَّرْعِ إِحْدَاثُ مَا لَمْ يَكُنْ فِي عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘বিদ্আত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের যুগে ছিল না।’’
➥〈 ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২২৩পৃ: হা/১৪১ এর আলোচনা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪২২হিঃ। 〉
❏ ‘আশ্আতুল লুম্আতে সেই একই অধ্যায়ে বর্ণিত আছে –
بدانكه هرچيز پيدا شده بعد از پيغمبر عليه السلام بدعة است
-‘‘যে কাজ হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে সূচিত হয়েছে, তা বিদ্আত।’’
➥〈 শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুম‘আত, ১/১৩৫পৃ: মাকতাবায়ে হাক্কানীয়া, পিশওয়ার, পাকিস্তান। 〉
উপরোক্ত ইবারতদ্বয়ে দীনের কাজের শর্তও নেই আর সাহাবায়ে কিরামের যুগের কথাও উলেখ নেই, যে কোন কাজ দুনিয়ারী হোক বা ধর্মীয়, যা হুযুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের পরে যে কোন সময়ে সাহাবায়ে কিরামের যুগে বা এর পরে চালু হয়েছে, তা বিদ্আত হিসেবে গণ্য। তবে প্রচলিত ভাষায় সাহাবায়ে কিরামের আবিষ্কারকে সুন্নাতে সাহাবা বলা হয়, বিদ্আত বলা হয় না। এটা প্রচলন মাত্র, না হয়, হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) তারাবীর নামাযে নিয়মিত জামআতের প্রবর্তন করে বলতেন না نعمة البدعة هذه -‘‘এতো খুবই উত্তম বিদ্আত।’’
আমলী বিদ্আত দু’প্রকার-বিদ্আতে হাসনা ও বিদ্আতে সাইয়া।
বিদ্আতে হাসনা ওই ধরনের নয়া কাজকে বলা হয়, যা কোন সুন্নাতের বিপরীত নয়। যেমন-মীলাদ মাহফিল, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্টান সমূহ, নিত্য নতুন উন্নতমানের খানাপিনা, ছাপাখানায় কুরআন শরীফ ও ধর্মীয় কিতাব ছাপানো ইত্যাদি। এবং বিদ্আতে সাইয়া ওই সব কাজকে বলা হয়, যা কোন সুন্নাতের বিপরীত বা কোন সুন্নাতকে বিলুপ্তকারী হিসেবে প্রতিভাত হয়। যেমন-জুমআ ও উভয় ঈদে আরবী বাদ দিয়ে অন্য ভাষায় খুৎবা পাঠ করা বা মাইকের সাহায্যে নামায পড়া বা পড়ানো।
➥〈 মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নাঈমী (رحمة الله) এই ফাতওয়াটি তাফসিরে নাঈমীতেও দিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে কিয়াস করেছেন যে লাউট ইস্পিকার এবং মাইকের আওয়াজ বক্তার আওয়াজকে বিকৃতি করে বলে এটিকে তিনি বিদ‘আতে সায়্যিয়াহ বলেছেন। বাস্তবে কিন্তু তা নয়। যদি এমনটি হয় তাহলে হবে এ বিষয়ে সকলে একমত। 〉
কেননা এর ফলে আরবী ভাষায় খুৎবা পাঠ করা এবং তক্বীর দেয়া অর্থাৎ তক্বীরের সাহায্যে আওয়াজ পৌছাঁনো যে সুন্নাত, তা লুপ্ত হয়ে যায়। বিদ্আতে হাসনা জায়েয বরং কোন কোন সময় মুস্তাহাব ও ওয়াজিবে পরিণত হয়। আর বিদ্আতে সাইয়া হচ্ছে মাকরূহ তানযিহী বা মাকরূহ তাহরীমী অথবা হারাম। এ প্রকারভেদকে আমি সামনে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করবো।