💥বাসর ঘরের গোপনীয়তা প্রকাশ করা কতটা অপরাধ? অথবা নিজের বাসরঘরের কথা বন্ধুদের মধ্যে শেয়ার করা যাবে কিনা?💥
✴️শ্রদ্ধেয় পাঠক বৃন্দ! আমাদের সমাজে বহু এমন যুবক ও যুবতী পাওয়া যাবে যাদের বিবাহ হওয়ার পর বিবাহের প্রথম রাত যা বাসর রাত বলে পরিচিত। তার সমস্ত খবরা খবর নিজেদের বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শেয়ার করে থাকে এবং তাদের বন্ধুবান্ধবরাও অতি আনন্দ-উল্লাসের সহিত বন্ধুর অথবা বান্ধবীর বাসর রাতের গোপনীয়তা জেনে খুশি হয়। তেমনি কিছু মানুষ নিজের বাসর রাতের কথা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্যে শেয়ার করতেও খুব আনন্দ পায়। তবে ইসলাম শরীয়তে কোরআন ও হাদিসের আলোকে এটা যে খুবই বড় অপরাধ সেটা হয়তো তাদের জানা নেই। আসুন আমরা আজকে এই বিষয়টা নিয়ে কিছু আলোচনা করি যে, কোন ব্যক্তি যদি নিজের বাসর রাতের গোপন কথা ও কর্ম অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করে তাহলে তা কত বড় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে?
✴️ উক্ত প্রসঙ্গে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কয়েকটি হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো, আশা করি সবাই হাদিস গুলো মনোযোগ সহকারে পড়বেন এবং তার উপর আমল করার চেষ্টা করবেন!
أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِنَّ مِنْ أَشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللَّهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِي إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا ”
.
অর্থাৎ! আবূ সাঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামাতের দিন সে ব্যক্তি হবে আল্লাহর কাছে নিকৃষ্টতম পর্যায়ের, যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়, অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-3615,, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস-17559,, মিশকাতুল মাসাবিহ হাদিস নং-3190 }}
أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ الأَمَانَةِ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى امْرَأَتِهِ وَتُفْضِي إِلَيْهِ ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا ” . وَقَالَ ابْنُ نُمَيْرٍ ” إِنَّ أَعْظَمَ ” .
অর্থাৎ! আবূ সাঈদ আল খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সে ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষ বড় আমনাত খিয়ানাতকারী যে তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং স্ত্রীও তার সাথে মিলিত হয়। অতঃপর সে তার স্ত্রীর গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। ইবনু নুময়র বলেন, إِنَّ مِنْ أَعْظَمِ স্থলে إِنَّ أَعْظَمَ (সবচেয়ে অধিক) হবে।
{{ সহীহ মুসলিম হাদিস নং-3616,, মুসনাদে আহমদ হাদিস নং-11655,, মুস্তাখরাজ আবু আওয়ানা হাদিস-4298,, সুনান আবু দাউদ হাদিস নং-4870 }}
قَالَ: فَصَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَمْ يَنْسَ مِنْ صَلَاتِهِ شَيْئًا، فَقَالَ مَجَالِسَكُمْ، مَجَالِسَكُمْ. زَادَ مُوسَى هَا هُنَا ثُمَّ حَمِدَ اللَّهَ تَعَالَى وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ ثُمَّ اتَّفَقُوا: ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى الرِّجَالِ فَقَالَ: هَلْ مِنْكُمُ الرَّجُلُ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ فَأَغْلَقَ عَلَيْهِ بَابَهُ وَأَلْقَى عَلَيْهِ سِتْرَهُ وَاسْتَتَرَ بِسِتْرِ اللَّهِ قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ: ثُمَّ يَجْلِسُ بَعْدَ ذَلِكَ فَيَقُولُ فَعَلْتُ كَذَا فَعَلْتُ كَذَا قَالَ: فَسَكَتُوا، قَالَ فَأَقْبَلَ عَلَى النِّسَاءِ، فَقَالَ: هَلْ مِنْكُنَّ مَنْ تُحَدِّثُ؟ فَسَكَتْنَ فَجَثَتْ فَتَاةٌ قَالَ مُؤَمَّلٌ، فِي حَدِيثِهِ فَتَاةٌ كَعَابٌ عَلَى إِحْدَى رُكْبَتَيْهَا وَتَطَاوَلَتْ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَرَاهَا وَيَسْمَعَ كَلَامَهَا فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُمْ لَيَتَحَدَّثُونَ، وَإِنَّهُنَّ لَيَتَحَدَّثْنَهُ، فَقَالَ: هَلْ تَدْرُونَ مَا مَثَلُ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: إِنَّمَا مَثَلُ ذَلِكَ مَثَلُ شَيْطَانَةٍ، لَقِيَتْ شَيْطَانًا فِي السِّكَّةِ فَقَضَى مِنْهَا حَاجَتَهُ وَالنَّاسُ يَنْظُرُونَ إِلَيْهِ، أَلَا وَإِنَّ طِيبَ الرِّجَالِ مَا ظَهَرَ رِيحُهُ، وَلَمْ يَظْهَرْ لَوْنُهُ أَلَا إِنَّ طِيبَ النِّسَاءِ مَا ظَهَرَ لَوْنُهُ وَلَمْ يَظْهَرْ رِيحُهُ.
অর্থাৎ! বর্ণনাকারী বলেন, তিনি (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাত পড়ালেন কিন্তু সালাত কোথাও ভুল করেননি। তারপর তিনি বললেনঃ তোমরা নিজ অবস্থানে থাকো। তিনি আল্লাহর প্রশংসা করে পুরুষদের দিকে মুখ ফিরে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যে নিজ স্ত্রী সঙ্গমের সময় দরজা বন্ধ করে, নিজেকে পর্দায় আড়াল করে এবং আল্লাহর নির্দেশ মতো তা গোপন রাখে? তারা বললেন, হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ পরে (মিলন শেষে) সে একথা বলে যে, আমার স্ত্রীর সাথে আমি এরূপ এরূপ করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে সবাই চুপ হয়ে গেলো। অতঃপর তিনি মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমাদের মধ্যে এমন নারী আছে কি যে তার সঙ্গমের কথা নারীদেরকে বলে বেড়ায়? নারীরাও চুপ হয়ে গেলো।
এ সময় এক যুবতী নারী তার দুই পায়ে ভর দিয়ে ঘাড় উঁচু করে বসলো, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে পান এবং তার কথা শুনতে পান। যুবতী বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যা বলেছেন, আসলেই তা ঘটে। পুরুষেরা পুরুষদের মধ্যে, আর নারীরা নারীদের মধ্যে এরূপ কথা বলে থাকে। এরপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জানো, এদের উদাহরণ কি? তিনি বললেনঃ এদের উদাহরণ হচ্ছে, এমন এক শয়তানের যে স্ত্রী শয়তানের কাছে গিয়ে প্রকাশ্যে নিজেদের যৌনক্ষুধা মিটালো, এবং এ দৃশ্য লোকেরা স্বচক্ষে দেখলো। সাবধান! জেনে রাখো, পুরুষের জন্য এমন সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত, যার ঘ্রাণ আছে কিন্তু রং নেই। সাবধান! নারীদের জন্য এমন সুগন্ধি ব্যবহার করা উচিত যেটার রং আছে, কিন্তু ঘ্রাণ নেই।
{{ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-2176 }}
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ((لاَ تُبَاشِرُ الْمَرْأَةُ الْمَرْأَةَ لِتَنْعَتَهَا لِزَوْجِهَا كَأَنَّمَا يَنْظُرُ إِلَيْهَا)). অর্থাৎ! ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোনো মহিলা যেন অপর মহিলার দেহ স্পর্শ করে এমনভাবে তার বর্ণনা নিজের স্বামীর কাছে না দেয়, যেন সে তাকে চাক্ষুস দেখছে। {{ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-2152 }}
✴️শ্রদ্ধেয় পাঠক বৃন্দ! উপরোক্ত হাদীস সমূহের পরিপ্রেক্ষিতে আপনারা অবশ্যই জ্ঞাত হয়েছেন যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সঙ্গম, মিলন ও সহবাসের কথা অন্য কোন বন্ধু অথবা বান্ধবীর সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। নিজের স্ত্রীর গোপনীয়তা নিজের কাছেই রাখতে হবে এবং নিজের স্বামীর গোপনীয়তা নিজের কাছেই রাখতে হবে। স্বামী স্ত্রী একে অপরের জন্য পর্দা, কেউ কারো পর্দা কে ফাঁস করবে না। আর যদি একে অপরের পর্দা ফাঁস করে দেয় তাহলে, কাল কিয়ামতের মাঠে উত্তপ্ত ময়দানে কঠিন আযাবের দিনে তাকে সেই গোপনীয়তা ফাঁস করার শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা’য়ালা সমস্ত যুবক-যুবতীদেরকে উপরোক্ত মসলাটি বুঝার এবং তার উপর আমল করার শক্তি প্রদান করুন!! আমীন! ✨وما توفيقي الا بالله العلي العظيم و الصلاة والسلام على حبيبه الكريم صلى الله عليه وسلم✨
✍️মুফতী আমজাদ হুসাইন সিমনানী✍️