“জাহাপনা, আমার সন্তান আপনার সেনাবাহিনীতে কাজ করে; আর প্রতিদিন রাতে কোনো এক দুর্বৃত্ত আমার বাড়িতে এসে হামলা করে, আমার পুত্রবধুর সতিত্ব নষ্ট করতে চেষ্টা করে। আমি আপনার কাছে আমার পুত্রবধুর সতিত্ব রক্ষার্থে বিচার চাই।”
বাদশাহ জাহাঙ্গীর কিছুই বললেন না। বুড়ি রেগে গিয়ে বললেন—
“হে বাদশাহ, আমি তোমাকে হতে দেখেছি, তুমি যদি আমার পুত্রবধুর সতিত্ব রক্ষার দায়িত্ব না নাও আমি কিয়ামতের দিন #তোমার_স্রষ্টার_আদালতে তোমাকে দাঁড় করাবো৷
অথবা, আমাকে দুই দিন সময় দাও, আমি তোমার সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে যাবো।”
বাদশাহ জাহাঙ্গীর কিছুই বললেন না; তখন, বুড়ি ভগ্ন হৃদয়ে বাড়ি চলে গেলেন।
সেই রাতে স্বয়ং বাদশাহ জাহাঙ্গীর তরবারি হাতে ঘোড়ায় করে চলে গেলেন বুড়ির বাড়িতে। অন্ধকার রাত, বুড়ির বাড়িতে টিম টিম আলো জ্বলছে। বাদশাহ দূর থেকে দেখলেন, বুড়ির দরজায় একজন প্রহরী। তারপর ই বাদশাহ শুনলেন মেয়েলি কণ্ঠের আওয়াজ— “বাচাও, বাচাও..!”
বাদশাহ জাহাঙ্গীর প্রহরীকে হত্যা করে বুড়ির ঘরে প্রবেশ করলেন। তারপর দুর্বৃত্তকে ধরে বুড়িকে বললেন— “বুড়ি আলো নিভিয়ে দাও।” বুড়ি আলো নিভিয়ে দিলেন আর বাদশাহ জাহাঙ্গীর সেই দুর্বৃত্তের মাথা কেটে মাটিতে ফেলে দিলেন৷ তারপর বললেন— “বুড়ি আলো জ্বালাও।”
আলো জ্বালানোর পর বাদশাহ জাহাঙ্গীর দুর্বৃত্তের মুখ দেখে বললেন— “আলহামদুলিল্লাহ্!”
এরপর বাদশাহ ঢক ঢক করে পানি পান করে বুড়িকে বললেন— “কাল তুমি তোমার পুত্রবধুকে নিয়ে আমার দরবারে হাজির হবে।”
পরেরদিন হিন্দু বৃদ্ধা মহিলা তার পুত্রবধুকে নিয়ে হাজির হলেন রাজ দরবারে। জমজমাট রাজদরবার, বুড়িকে জিজ্ঞেস করলেন— “আমি কেন তোমাকে আলো নিভাতে বলেছিলাম, তুমি কি জানো?”
বুড়ি বললেন— “নাহ্, জাহাপনা।”
বাদশাহ উত্তর দিলেন—
“আমার ধারণা ছিল আমার বাড়ির এত কাছে আমার পুত্র ছাড়া কেউ এ কাজ করার সাহস পাবে না৷ আর, আমি আমার ছেলেকে হত্যা করতে পারব না, মনে দুর্বলতা আসতে পারে, বিচার বে-ইনসাফ হয়ে যেতে পারে, তাই আলো নিভাতে বলেছিলাম। কিন্তু, দুর্বৃত্তকে হত্যা করার পর আলো জ্বাললে বুঝলাম, সে আমার পুত্র নয়! তাই ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ পড়েছিলাম।”
তিনি বুড়িকে আবার জিজ্ঞেস করলেন— “তুমি জানো কেন আমি তোমার ঘরে ‘পানি’ পান করেছিলাম?”
বুড়ি উত্তর দিলেন— “নাহ্, জাহাপনা!”
বাদশাহ বললেন— “তুমি যখন আমার দরবারে নালিশ করেছিলে, ‘কিয়ামতের দিন আমাকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে’ তখন থেকে দুশ্চিন্তায় আমি কিছুই খাই নি! আমার ভয় হচ্ছিল, আমি ন্যায় বিচার করতে পারব কি না! পরিশেষে তোমার ঘরে গিয়ে এক পেয়ালা ‘পানি’ পান করেছি।”
তারপর বাদশাহ জাহাঙ্গীর নিজের মাথার ‘মুকুট’ খুলে হিন্দু বৃদ্ধা মহিলার পায়ের কাছে রেখে বললেন—
“বুড়ি, মনে রেখো— একজন মুসলমানের কাছে একজন হিন্দু পুত্রবধুর সতিত্ব বাদশাহর মাথার মুকুটের চেয়েও দামী।”
এই ছিল মুসলিম শাসকদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
#মন্তব্য—
ইসলাম তরবারির মাধ্যমে জোর করে প্রতিষ্ঠিত হয়নি! কাওকে অপমান-অপদস্ত করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি! নিজেকে বড়, আর অন্যকে ছোট করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি! ঝগড়া আর গালাগালি দিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি!
ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে— সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে, অন্যের দুঃখে দুখি হয়ে, সততার মাধ্যমে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, মহব্বত আর… ন্যায়পরায়নতার মাধ্যমে।