♥বদর যুদ্ধঃ
মুহাম্মদ আযম
২য় হিজরীর ১৭ রমজান, ৬২৪খৃ: ফেব্রুয়ারি; মদিনা থেকে ৮০ মাইল দূরে ;
মুসলিম সৈন্য : ৩১৩ জন (৮৩জন মুহাজির, ২৩০ আনসার তন্মধ্যে ৭০ জন খাজরাজ, ৬১ আওস গোত্রের),
কুরাইশ সৈন্য: ১০০০জন (৭০০ উষ্ট্ররোহী, ৩০০ অশ্বারোহী);
ঘটনা:
আবু সুফিয়ানের কাফেলা আক্রান্তের মিথ্যা অপপ্রচার উত্তেজিত হয়ে আবু জেহেল ১০০০ সৈন্য নিয়ে বদর প্রান্তে অবস্থান করলে মুসলিম বাহিনিও অগ্রসর হয় ; পতাকা বহন করেন, হযরত মুসআব ইবনে উমাইর আদী (রাঃ)। আনসারদের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত সা’দ ইবনে মা’য (রাঃ) মুহাজিরদের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আলী (রাঃ)।
ফালাফলঃ কোরাইশদের শোচনীয় পরাজয়। আবু জেহেল, উকবা, শাইবা, উমাইয়াসহ তাদের ৭০ জন নিহত, ৭০জন বন্দী হয়। ১৪জন মুসলিম শহীদ (৬ মুহাজির, ৮ আনসার)।
♥বদর যুদ্ধে গায়েবী সাহায্য।♥
আল্লাহ তা’আলা বদর যুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করেছেন এবং তোমরা দুর্বল অবস্থায় ছিলে। অতএব, আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবেই তোমরা শোকর গুজর থাকবে।
(সূরা আল ইমরান)
অবশেষে তাই হল। সর্বপ্রকার প্রতিকুল অবস্থা এবং এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সুস্থ অবস্থায় ও নিরাপদে রক্ষা পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র হতে বের হওয়া একটি অলৌকিক ব্যপার ছিল।
গায়েবি সাহায্য যে কি ছিল? সাহায্যগুলো মুটামুটি এই-
(১) প্রথম সাহায্য ছিল ঘটনার পূর্বরাত্রে বৃষ্টি বর্ষন করা। এ বৃষ্টি বর্ষনে প্রতিকুল অবস্থানটি অনুকুলে এসে গেল, আর কাফেরদের অনুকুল অবস্থান প্রতিকুলে চলে গেল।
ُ وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُم مِّنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءً لِّيُطَهِّرَكُم بِهِۦ وَيُذْهِبَ عَنكُمْ رِجْزَ ٱلشَّيْطَٰنِ وَلِيَرْبِطَ عَلَىٰ قُلُوبِكُمْ وَيُثَبِّتَ بِهِ ٱلْأَقْدَامَ*
আকাশ হতে তোমাদের জন্য পানি বর্ষন করিছেলেন এজন্য যে তিনি তোমাদের পবিত্র করবেন, শয়তানের ওয়াসওয়াসা তোমাদের থেকে দূর করবেন এবং তোমাদের মনের সাহস বৃদ্ধি করে দেবেন।
(সুরা আনফালঃ১১)
এ বৃষ্টি হতে তিনটি ফায়দা হল।
(এক) মুসলমানরা যতেষ্টে পরিমানে পানি লাভ করে এবং কুপ বানিয়ে আটক করে লয়।
(দুই) মুসলমানরা যেহেতু উপত্যকার উচ্চ অংশে অবস্থিত ছিল, এ কারণে বৃষ্টির ফলে বালু জমে যায় ও দাঁড়ানোর মত জমি শক্ত হয়।
(তিন) কাফের বাহিনী ছিল নিম্ন এলাকায়, ফলে বৃষ্টির দরুন সেখানে মাটি কর্দমক্ত হয়ে যায় এবং পা বসে যেতে থাকে।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা অর্থ ত্রাস ও ভীতি সংকুল অবস্থা সৃষ্টি করা। মুসলমানরা প্রথমত এ অবস্থায় মধ্যে নিমজ্জিত ছিল।
(২) দ্বিতীয় সাহায্য ছিল এই যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় হাবিবকে ﷺ স্বপ্নে যোগে কাফিরদের সংখ্যা সল্প করে দেখান যেমন- আল্লাহ বলেন-
اِذۡ يُرِيۡكَهُمُ اللّٰهُ فِىۡ مَنَامِكَ قَلِيۡلاًؕ وَّلَوۡ اَرٰٮكَهُمۡ كَثِيۡرًا لَّفَشِلۡتُمۡ وَلَتَنٰزَعۡتُمۡ فِىۡ الۡاَمۡرِ وَلٰكِنَّ اللّٰهَ سَلَّمَؕ اِنَّهٗ عَلِيۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ﴾
আর স্মরণ করো সে সময়ের কথা, যখন হে হাবীব, আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নের মধ্যে তাদেরকে সামান্য সংখক দেখাচ্ছিলেন। যদি তিনি তোমাকে তাদের সংখ্যা বেশী দেখিয়ে দিতেন তাহলে নিশ্চয়ই তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং যুদ্ধ করার ব্যাপারে ঝগড়া শুরু করে দিতে। কিন্তু আল্লাহই তোমাদের এ থেকে রক্ষা করেছেন। অবশ্যি তিনি মনের অবস্থাও জানেনন।
(আন ফালঃ ৪৩)।
এটা ছিল সে সময়ের কথা, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথে কোন এক মঞ্জিলে অবস্থান করছিলেন এবং কাফেদের প্রকৃত সৈন্য সংখ্য কত তা নিশ্চিত ও নিঃসন্দেহরূপে জানা ছিল না। এ সময় নবীজী ﷺ সময় স্বপ্নে যা দেখলেন মুসলামন সৈন্যদের তা শুনালেন। এতে তাঁরা সাহস ও হিম্মত লাভ করে নির্ভীকচিত্তে ও বীর বিক্রমে সম্মুখে অগ্রসর হয়ে গেলেন।
(৩) তৃতীয়ঃ উভয়পক্ষের সৈন্যসংখ্যা কম দেখান। সম্মুখ যুদ্ধের প্রথম সময়ে এমনও হয়েছিল যে, মুসলমানের দৃষ্টিতে শত্রুসৈন্য কম এবং কাফেরদের দৃষ্টিতে মুসলিম সৈন্য কম দেখাচ্ছিল, যাতে উভয় পক্ষ যুদ্ধে ঝাফিয়ে পড়ে।
আল্লাহ বলেন,-
وَاِذۡ يُرِيۡكُمُوۡهُمۡ اِذِ الۡتَقَيۡتُمۡ فِىۡۤ اَعۡيُنِكُمۡ قَلِيۡلاً وَّيُقَلِّلُكُمۡ فِىۡۤ اَعۡيُنِهِمۡ لِيَقۡضِىَ اللّٰهُ اَمۡرًا كَانَ مَفۡعُوۡلاًؕ
আর স্মরণ করো, যখন সামনাসামনি যুদ্ধের সময় আল্লাহ তোমাদের দৃষ্টিতে শত্রুদের সামান্য সংখ্যক দেখিয়েছেন এবং তাদের দৃষ্টিতেও তোমাদের কম করে দেখিয়েছেন, যাতে যে বিষয়টি অনিবার্য ছিল তাকে আল্লাহ প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন।
(আন ফাল: ৪৪)।
(৪)(আর যুদ্ধ পুরাধমে লেগে যাওয়ার পর) মুসলমামদের সংখ্যা কাফেরদের চোখে দ্বিগুণ বোধ হল-( নিজেদের চেয়ে) যেন তারা মুসলমানদের ভয়ে ভীত হয়ে দুর্বল হয়ে যায়।
قَدۡ كَانَ لَكُمۡ اٰيَةٌ فِىۡ فِئَتَيۡنِ الۡتَقَتَاؕ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِىۡ سَبِيۡلِ اللّٰهِ وَاُخۡرٰى كَافِرَةٌ يَّرَوۡنَهُمۡ مِّثۡلَيۡهِمۡ رَاۡىَ الۡعَيۡنِؕ وَاللّٰهُ يُؤَيِّدُ بِنَصۡرِهٖ مَنۡ يَّشَآءُؕ اِنَّ فِىۡ ذٰلِكَ لَعِبۡرَةً لِّاُولِىۡ الۡاَبۡصَارِ
তোমাদের জন্য সেই দু’টি দলের মধ্যে একটি শিক্ষার নিদর্শন ছিল যারা (বদরে) পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। একটি দল আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছিল এবং অন্য দলটি ছিল কাফের। চোখের দেখায় লোকেরা দেখছিল, কাফেররা মু’মিনদের দ্বিগুণ।কিন্তু ফলাফল (প্রমাণ করলো যে) আল্লাহ তাঁর বিজয় ও সাহায্য দিয়ে যাকে ইচ্ছা সহায়তা দান করেছেন। অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য এর মধ্যে বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।
(আল ইমরান:১৩)
(৫) ঠিক যুদ্ধ চলাকালে আল্লাহ মুসলমানদেরকে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন করে দিলেন এবং কয়েক মিনিট পরে জাগ্রত করে তাদের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন’-
اِذۡ يُغَشِّيۡكُمُ النُّعَاسَ اَمَنَةً مِّنۡهُ
স্মরন কর, যখন আল্লাহ তা’আলা নিজের তরফ হতে তন্দ্রার আকারে তোমাদের উপর শান্তির নিশ্চয়তা ও নির্ভরতার অবস্থা সৃষ্টি করে ছিলেন।
(সূরা আনফাল: ১১)
অর্থাৎ, যে সময়টি কঠিন ভয় ও শংকায় প্রমকম্পিত তখন আল্লাহ মুসলমানদের দিলকে এমন চিন্তা শূন্য ও ভয় ভীতি মুক্ত করে দিলেন যে, তাদের তন্দ্রা আসতে লাগল।
অনুরূপ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থা ওহুদের যুদ্ধের সময়ও হয়েছিল বলে কোরআনে উল্লেখ আছে।
(চলবে)