জিজ্ঞাসা–৩৮৮: আজ প্রায় দু বছরের মত হল আমার একজনের সাথে সম্পর্ক, মাস তিনেক আগে আমি অন্য মানুষ মারফত জানতে পারি তার তিন বৎসর আগে বিয়ে হয়েছিল পারবারিকভাবে এবং সে বিয়ে অল্প সময়ের মাঝেই ভেঙ্গে যায়। তার মুখ থেকে সব শুনে আমি এই ব্যপারটা মেনে নেই যে মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এই পর্যায়ে যখন কিছু দিন আগে বিয়ের দিকে অগ্রসর হই তখন তার বন্ধুর থেকে জানতে পারি তার অতীত সম্পর্কে, যা সে আমাকে বলতে ইতস্তত বোধ করছিল, কিন্তু তার বন্ধুকে জানিয়ে ছিল আমাকে জানানোর জন্য। আর তা হলো, তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করা এবং বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া। ইসলাম এ ধরনের সম্পর্ক মেনে নেয় না তা আমি জানি। এই মুহূর্তে আমার করনীয় কি তা পরামর্শ দিলে উপকৃত হতাম।– প্রবর্তক (ছদ্ম নাম) : probortok@gmail.com
জবাব:
এক– বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে তোলা ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে ইসলামিকভাবে সম্পর্ক গড়ে তোলার একটাই পদ্ধতি; বিয়ে। কেননা, ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন পরনারী কোন পরপুরুষের সান্নিধ্যে আসতে পারেনা। দেখা-সাক্ষাৎ বা ফোন, নেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রেমালাপ করা যায় না। ইসলামি-শরিয়তের দৃষ্টিতে এগুলো একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচার। এমনকি মনে মনে কল্পনা করে তৃপ্তি অনূভব করার দ্বারাও অন্তরের যিনা হয়। যা হারাম এবং কবিরা গুনাহ।
রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন,
اَلْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظْرُ وَالْاُذُنَانِ زِنَاهُمَا الْاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُمَا الْككَلَامُ وَالْيَدُ زِنَاهُمَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهُمَا الخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوِىْ وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَالِكَ الْفَرْجُ اَوْ يُكَذِّبُه
‘’দুই চোখের ব্যভিচার হল হারাম দৃষ্টি দেয়া, দুই কানের ব্যভিচার হল পরনারীর কণ্ঠস্বর শোনা, জিহবার ব্যভিচার হল, [পরনারীর সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের ব্যভিচার হল পরনারী স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হল গুনাহর কাজের দিকে পা বাড়ান, অন্তরের ব্যভিচার হল কামনা-বাসনা আর গুপ্তাঙ্গঁ তা সত্য অথবা মিথ্যায় পরিণত করে।” (সহীহ মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)
দুই– বিস্ময়কর ব্যাপার হল, এক্ষেত্রে আপনি উক্ত হারাম এবং কবিরা গুনাহর ব্যাপারে তাওবা না করে অন্য কিছু ভাবছেন! এটা ভাবলেন না যে, আপনারা বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমের মাধ্যমে একপ্রকার যিনা বা ব্যভিচারেও জড়িত!
যা হোক, এখন আপনি/আপনারা এখন যা করবেন তাহল-
১। গুনাহর পর গুনাহ আর নয়; বরং তাওবা করুন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন- وَلا تَقرَبُوا الزِّنى إِنَّهُ كانَ فاحِشَةً وَساءَ سَبيلًا “আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।” (সূরা ইসরা ৩২)
যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায় উপকরণ কর্তন করুন। এক কথায়, লোকটির সাথে সকল সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা, আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় সীমালংঘনকারীর তাওবার আলামত হিসাবে বলেছেন, وَمَن تَابَ وَعَمِلَ صَالِحًا فَإِنَّهُ يَتُوبُ إِلَى اللَّهِ مَتَابًاআর যে (ব্যভিচার থেকে) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (সূরা আল ফুরকান ৭১)
২। তারপর অভিবাকের মাধ্যমে অন্যত্র সৎ ও দ্বীনদার পাত্র দেখে বিয়ে করার সুযোগ থাকলে বিয়ে করে নিন। কেননা, বিয়ের ক্ষেত্রে সৎ ও দ্বীনদার পাত্র নির্বাচন করা কর্তব্য। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ ছেলেকে যেমন দ্বীনদার মেয়ে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঠিক তেমনি মেয়েকে ও মেয়ের পরিবারকে দ্বীনদার ছেলে পছন্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ ، إِلَّا تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ
“তোমরা যে ছেলের দ্বীনাদারি ও চরিত্রের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পার সে যদি প্রস্তাব দেয় তাহলে তার কাছে বিয়ে দাও। যদি তা না কর তাহলে পৃথিবীতে মহা ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হবে।” (জামে’ তিরমিযী ১০৮৪)
৩। আর যদি আপনি ওই লোককেই বিয়ে করতে চান তাহলে অভিবাবকের মাধ্যমে দ্রুত সম্পাদন করুন। কেননা, বিবাহের ক্ষেত্রে অভিবাবক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পারিবারিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ রয়েছে।
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী






Users Today : 895
Users Yesterday : 1502
This Month : 10147
This Year : 149624
Total Users : 265487
Views Today : 3712
Total views : 3215825