অতীতের কথা, ভবিষ্যতের কথা, মনের কথা-গোপন কথা, জাহান্নামে কে যাবে, জান্নাতে কে যাবে, কিয়ামত কখন হবে- এসব জ্ঞান আল্লাহ’র অসীম জ্ঞানের তুলনায় সামান্যমাত্র। তিনি ইচ্ছে করলেই তাঁর অসীম জ্ঞানের এই সামান্য অংশটুকু আমাদের প্রিয় নবী ﷺ কে দিতে পারেন যদিওবা অনেকেই মানতে চাইনা। আমি এগুলোর স্বপক্ষে প্রমাণ যুক্তি উপস্থাপন করছিঃ
#অতীত_ভবিষ্যতের_জ্ঞানঃ
তারিক ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, আমি ‘উমার (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, একদা নবী ﷺ আমাদের মধ্যে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি আমাদের সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে জ্ঞাত করলেন। অবশেষে তিনি জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করার কথাও উল্লেখ করলেন। যে ব্যক্তি এ কথাটি স্মরণ রাখতে পেরেছে, সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গেছে। (সহীহ বুখারী ৩১৯২)
সৃষ্টির সূচনা দিয়ে শুরু করলেন, জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করার কথা দিয়ে শেষ করলেন আর মধ্যেখানে কি বললেন!!
আবূ যায়দ রাঃ বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। তারপর মিম্বরে আরোহণ করে ভাষণ দিলেন। পরিশেষে যোহরের নামাজের সময় উপস্থিত হলে তিনি মিম্বার হতে নেমে নামাজ আদায় করলেন। তারপর পুনরায় মিম্বরে উঠে তিনি ভাষণ দিলেন। এবার আসরের নামাজের ওয়াক্ত হলে তিনি মিম্বর থেকে নেমে নামাজ আদায় করে পুনরায় মিম্বারে উঠলেন এবং আমাদেরকে লক্ষ্য করে খুতবাহ্ দিলেন, এমনকি সূর্যাস্ত হয়ে গেল, এ ভাষণে তিনি আমাদেরকে পূর্বে যা ঘটেছে এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে ইত্যকার সম্বন্ধে সংবাদ দিলেন। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, যে ব্যক্তি এ কথাগুলো সর্বাধিক মনে রেখেছেন আমাদের মধ্যে এ সম্বন্ধে তিনিই সবচেয়ে বেশী জানেন। (সহীহ মুসলিম ৭১৫৯)
সুতরাং বুখারী মুসলিমের হাদিসেই প্রমাণ হয়ে গেল আমাদের প্রিয় নবী ﷺ অতীত এবং ভবিষ্যতের কথা শুধু জানতেন এটা নয় বরং সাহাবীদের নিকট বর্ণনাও করেছেন। উনি কিভাবে জেনেছেন?? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা জানিয়েছেন বলে জেনেছেন।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা’ কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি। (এই হাদিসটা অনেক ইমাম বর্ণনা করেছেন যেমনঃ ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল কবীরঃ ১/৩৮২; মুত্তাকী হিন্দিীঃ কানযুল উম্মালঃ ১১/৪২০ হাদিসঃ ৩১৯৭১; ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়াঃ ৩/৯৫ পৃ.; আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াহিদঃ ৮/২৮৭ পৃ.; আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তীঃ জামিউল কবীরঃ হাদীসঃ ৪৮৪৯..)
এই হাদিসটা সিহাহ সিত্তাতে আসেনি বলে অনেকেই বলে বসতে পারে এত গুরুত্বপূর্ণ হাদিস সিহাহ সিত্তাতে আসেনি কেন?? এটা বানোয়াট, জাল, যঈফ। তাই আমি এর স্বপক্ষে কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করছি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা গোটা পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিলেন। অতঃপর আমি এর পূর্বপ্রান্ত থেকে পশ্চিমপ্রান্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ গুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দুই প্রকারের ধনাগার দেয়া হয়েছে। (সহীহ মুসলিম ৭১৫০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার সামনে সকল উম্মতকে পেশ করা হয়েছিল। (সহীহ বুখারী ৫৭০৫)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমার উম্মতের সমস্ত আমল আমার সামনে পেশ করা হয়েছিল।
(সহীহ মুসলিম ১১২০)
আম্মাজান আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ এমন কোন জিনিস নেই যা আমাকে দেখানো হয়নি আমি এ জায়গা হতে সব কিছুই দেখেছি। এমন কি জান্নাত ও জাহান্নাম দেখলাম। (সহীহ বুখারী ৯২২)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,
“(হে প্রিয় হাবিব!) আল্লাহ্ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবতীর্ণ করেছেন আর আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহ্র মহা অনুগ্রহ রয়েছে।” (সূরা নিসাঃ ১১৩)
এবার আসি, #মনের_কথা_জানতেন_কিনা!!
আবূ হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি (কেবল) ক্বিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার নিকট তোমাদের খুশু’ (বিনয়, একাগ্রতা) ও রুকূ’ কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন হতেও তোমাদের দেখতে পাই। (সহীহ বুখারী ৪১৮)
খুশু মানে নামাজে আপনার একাগ্রতা। এটা একান্তই মনের কথা অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের নবীকে এটাও জানতে পারার ক্ষমতা দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলতেনঃ আল্লাহর কসম! যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। আমি ক্ষুধার তাড়নায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। (আবূ হুরাইরা রাঃ বলেন) একদিন আমি (ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাধ্য হয়ে) নবী ﷺ ও সাহাবীগণের রাস্তায় বসে থাকলাম। আবূ বকর (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি কুরআনের একটা আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি তাঁকে প্রশ্ন করলাম এই উদ্দেশে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি কিছু করলেন না। অতঃপর ‘উমার (রাঃ) যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। আমি প্রশ্ন করলাম এ উদ্দেশে যে, তিনি আমাকে পরিতৃপ্ত করে খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন। কিছু করলেন না। অতঃপর আবুল কাসিম (বন্টনকারী) ﷺ যাচ্ছিলেন। তিনি ﷺ আমাকে দেখেই মুচকি হাসলেন এবং আমার প্রাণের এবং আমার চেহারার অবস্থা কী তিনি তা অাঁচ করতে পারলেন। অতঃপর বললেন, হে আবূ হির (আবূ হুরাইরা রা.)! (আবূ হুরাইরা রাঃ বলেন) আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি হাযির, তিনি বললেনঃ তুমি আমার সঙ্গে চল। এ বলে তিনি চললেন, আমিও তাঁর অনুসরণ করলাম। (সহীহ বুখারী ৬৪৫২)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন,
“বলুন, তোমরা কাজ (আমল) করতে থাক। অচিরেই তোমাদের কার্যকলাপ আল্লাহ দেখবেন এবং তাঁর রসূল ও বিশ্বাসীগণও দেখবে। আর অচিরেই তোমাদেরকে অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয়ের জ্ঞাতা (আল্লাহর) দিকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের সকল কৃতকর্ম জানিয়ে দেবেন।” (সূরা তাওবাহঃ ১০৫)
অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা চাইলে শুধু রাসূল নন, আল্লাহ’র প্রিয় বান্দারাও গোপনীয় আমল বা কথা সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন। যেমন হাদিসে পাকে ইরশাদ হয়েছে,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ তোমরা মুমিনের দূরদৃষ্টি সম্পর্কে সজাগ থাক। কারণ সে আল্লাহ্ তা’আলার নূরের সাহায্যে দেখে। তারপর তিনি পাঠ করেনঃ “নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য।” (সূরা আল-হিজরঃ ৭৫)। (সূনান আত তিরমিজী ৩১২৭)
উক্ত হাদিস বর্ণনার পর আল ফিকহুল আকবরের ৬৯-৭০ পৃষ্ঠায় “নবীগণের মুজিযা ও অলিগণের কারামত সত্য” নামক পরিচ্ছেদে উল্লেখিত হয়েছে,
ফিরাসত -দূরদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি তিন প্রকার। ফিরাসতে ঈমানিয়াঃ যা ঈমানের কারণে আল্লাহ্ তা’আলা অন্তরে পয়দা করেন, ফিরাসাতে রিয়াযিয়াঃ যা সাধনার মাধ্যমে অর্জন করে এবং ফিরাসাতে খালকিয়াঃ যা স্বভাবজাত। এখানে যে ফিরাসাতের কথা হাদীসে বলা হয়েছে তা প্রথম প্রকার ফিরাসাত। হযরত উমর রাঃ এঁর (প্রেরিত) চিঠির দরুণ নীলনদের প্রবাহ সঞ্চারণ ; মদীনার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে নিহাওয়ান্দের যুদ্ধের সেনাপতিকে পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করার নির্দেশ প্রদান ও তাঁর সে নির্দেশ শুনে সে অনুযায়ী কাজ করা; হযরত খালিদ (রা) এঁর বিষ পান করা ও তাতে কোন ক্রিয়া না করা ইত্যাদি সাহাবীদের থেকে প্রদর্শিত কয়েকটি কারামত। নবী-রাসূলদের মু’জিযাসমূহ কুরআনে ও হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।
এবার আসি, #কে_জান্নাতে_যাবে, #কে_জাহান্নামে_যাবে_এটা_জানতেন_কিনাঃ
আবূ মূসা (রা.) বলেন, একদা নবী ﷺ কে কয়েকটি অপছন্দনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। প্রশ্নের সংখ্যা অধিক হয়ে যাওয়ায় তখন তিনি রেগে গিয়ে লোকদেরকে বললেনঃ ‘তোমরা আমার নিকট যা ইচ্ছা প্রশ্ন কর।’ [অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তোমরা আমাকে যা-ই প্রশ্ন করবে, আমি তারই উত্তর প্রদান করব (সহীহ বুখারী ৭০৮৯)]। জনৈক ব্যক্তি বলল, ‘আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ ‘তোমার পিতা হুযাফাহ।’ আর এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ ‘তোমার পিতা হল শায়বার দাস সালিম।’ তখন ‘উমার (রা.) রসূলুল্লাহ ﷺ এঁর চেহারার অবস্থা দেখে বললেনঃ ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! আমরা মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট তাওবাহ করছি।’
(সহীহ বুখারী ৯২)
বুখারীতে রয়েছে উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে এই আয়াত নাজিল হয়।
“ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা এমন বিষয়ে প্রশ্ন করো না যা তোমাদের কাছে প্রকাশ করা হলে তোমাদের খারাপ লাগবে।” (সূরা মায়িদাহঃ ৫/১০১)
এবার দেখুন রসূলুল্লাহ ﷺ এঁর হাতে জান্নাতবাসী এবং জাহান্নামবাসীদের নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম ও তাদের গোত্রের নামসহ।
আবদুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাঃ) বলেন, একদা রসূলুল্লাহ ﷺ দুই হাতে দু’টি কিতাব নিয়ে বের হলেন এবং (সাহাবীগণের উদ্দেশে) বললেন, তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টি কি? আমরা বললাম, না, ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! কিন্তু আপনি যদি আমাদের অবহিত করতেন। তিনি তাঁর ডান হাতের কিতাবের প্রতি ইশারা করে বললেন, আমার ডান হাতে কিতাবটি হচ্ছে আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে একটি কিতাব। এতে সকল জান্নাতীদের নাম, তাদের বাপ-দাদার নাম ও তাদের গোত্রের নাম লিখা রয়েছে এবং এদের সর্বশেষ ব্যক্তির নামের পর সর্বমোট যোগ করা হয়েছে। অতঃপর এতে আর কখনো (কোন নাম) বৃদ্ধিও হবে না কমতিও করা হবে না। তারপর তিনি তাঁর বাম হাতের কিতাবের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, এটাও আল্লাহ রব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ হতে একটি কিতাব। এ কিতাবে জাহান্নামীদের নাম আছে, তাদের বাপ-দাদার নাম ও তাদের গোত্রের নামও রয়েছে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ ব্যক্তির নাম লিখে মোট যোগ করা হয়েছে। তাই এতে (আর কোন নাম কখনো) বৃদ্ধিও করা যাবে না কমানোও যাবে না।
তাঁর এ বর্ণনা শুনার পর সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ﷺ! এসব ব্যাপার যদি আগে থেকে চূড়ান্ত হয়েই থাকে (অর্থাৎ- জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি তাক্বদীরের উপর নির্ভর করে লিপিবদ্ধ হয়েছে) তবে ‘আমল করার প্রয়োজন কী? উত্তরে তিনি বললেন, হক পথে থেকে দৃঢ়ভাবে ‘আমল করতে থাক এবং আল্লাহর নৈকট্যার্জনের চেষ্টা কর। কেননা জান্নাতবাসীদের শেষ ‘আমল (জান্নাত প্রাপ্তির ন্যায়) জান্নাতীদেরই কাজ হবে। (পূর্বে) দুনিয়ার জীবনে সে যা-ই করুক। আর জাহান্নামবাসীদের পরিসমাপ্তি জাহান্নামে যাবার ন্যায় ‘আমলের দ্বারা শেষ হবে। তার (জীবনের) ‘আমাল যা-ই হোক। অতঃপর রসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর দুই হাতে ইশারা করে কিতাব দু’টিকে পেছনের দিকে ফেলে দিয়ে বললেন, তোমাদের রব বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে রেখেছেন। একদল জান্নাতে যাবে আর অপর একদল জাহান্নামে যাবে। (সূরা আশ্ শূরা ৪২: ৭)।(মিশকাতুল মাসাবীহ ৯৬, সূনান আত তিরমিযী ২০৬৭)
ইমাম তিরমিযী বলেনঃ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ صَحِيحٌ আলবানী বলেছে: হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রহঃ)ও তার মুসনাদের ২/১৬৬ নং পৃঃ বর্ণনা করেছেন যার সানাদ সহীহ।
তাফসীরে খাযেনে, “(হে সর্বসাধারণ!) আল্লাহর শান এ নয় যে, তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান। সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং যদি তোমরা ঈমান আনো এবং পরহেযগারী অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৯) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় রয়েছে,
প্রিয় নবী ﷺ বলেন, আমাকে বলে দেয়া হয়েছে কে আমার উপর ঈমান আনবে আর কে আমাকে অস্বীকার করবে। যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পৌঁছালো, তখন তারা হেসে বলতে লাগলো, হুযুর ﷺ ওসব লোকদের জন্মের আগেই তাদের মুমিন ও কাফির হওয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে গেছেন, অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি কিন্তু আমাদেরকে চিনতে পারেন নি।’ এ খবর যখন হুযুর ﷺ এঁর নিকট পৌঁছলো, তখন তিনি মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ ফরমান এসব লোকদের কি যে হলো, আমার জ্ঞান নিয়ে বিরূপ সমালোচনা করছে। এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাস করো, আমি অবশ্যই বলে দিব।’’ [ইমাম খাযেন: লুকাবুত তা’ভীল: ১/৩২৪ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন, প্রকাশ.১৪১৫হি.]
এবার আসি #কিয়ামত_কখন_হবে বা #কিয়ামতের_জ্ঞান_নিয়েঃ
ইতিমধ্যেই একদম শুরুতেই আমি দেখিয়েছি রসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে সৃষ্টির সূচনা থেকে, অতীত ভবিষ্যত এবং জান্নাতবাসী ও জাহান্নামবাসীর নিজ নিজ নির্দিষ্ট স্থানে প্রবেশ করার কথা উল্লেখ করে দিয়েছেন। এখন কথা হচ্ছে এর মধ্যেই কি কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার প্রসঙ্গ এসে যায় নি!! সুতরাং কখন কিয়ামত হবে এটাও যে, রসূলুল্লাহ ﷺ কে আল্লাহ তায়ালা জানিয়েছেন এটা প্রমাণের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। উল্লেখ্য যে, রসূলুল্লাহ ﷺ বলেই দিয়েছেন কিয়ামত কোন দিন হবে।
রসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিনই হচ্ছে সর্বোত্তম। আদম (আ)-কে এদিনেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো। এদিনই তাঁকে জান্নাত থেকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছিলো। এদিনই তাঁর তাওবা কবুল হয়েছিলো। এদিনই তিনি ওফাতবরণ করেছিলেন এবং #এদিনই_ক্বিয়ামাত_সংঘটিত_হবে। জিন ও মানুষ ছাড়া প্রতিটি প্রাণী শুক্রবার দিন ভোর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ক্বিয়ামাতের ভয়ে ভীত থাকে।(সূনান আবূ দাউদ ১০৪৬)
তখন কি হিজরী সনের প্রবর্তন হয়েছিল যে, সাল বলে দিবে??
কিন্তু এখন অনেকেই বুখারীর হাদিস এই দেখিয়ে দাবী করতে পারেন, কিয়ামতের জ্ঞান নবীজির কাছে ছিলনা,
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইলমে গায়েব-এর চাবিকাঠি পাঁচটি, যা আল্লাহ্ ভিন্ন কেউ জানে না। তা হলোঃ আগামী দিন কী হবে, তা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জানে না। মাতৃগর্ভে কী আছে, তা আল্লাহ্ ভিন্ন আর কেউ জানে না। বৃষ্টি কখন আসবে, তা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জানে না। কোন ব্যক্তি জানে না তার মৃত্যু কোথায় হবে এবং ক্বিয়ামত কবে সংঘটিত হবে, তা আল্লাহ্ ব্যতীত আর কেউ জানে না। (এই সম্পর্কিত কুরআনের আয়াতও রয়েছে)
কিন্তু আমি বলব, এখানে আল্লাহ’র সত্ত্বাগত ইলমে গায়েবের কথা-ই বলা হয়েছে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা না জানালে কেউ জানতে পারবে না, আল্লাহ প্রদত্ত ইলমে গায়েবকে অস্বীকার করা হয়নি। কেননা ইতিমধ্যেই ভবিষ্যতে কি হবে সবকিছুই নবীজি ﷺ বর্ণনা করেছেন। এছাড়াও মাতৃগর্ভে কী আছে, তার রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য সম্পর্কে ফেরেশতারাও জানতে পারেন, কেননা আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা থাকে। তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন রক্তপিন্ড, তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন গোশত পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহ্ একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য- এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেয়া হয় (সহীহ বুখারী ৬৫৯৪)। সুতরাং ইলমে গায়েব-এর চাবিকাঠি পাঁচটি, যা আল্লাহ্ ভিন্ন কেউ জানে না-এটা দ্বারা আল্লাহ ব্যতিত সত্ত্বাগতভাবে কেউ জানেনা এটাই বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা চাইলে এগুলোও অন্যকে জানাতে পারেন।
কিয়ামতের জ্ঞান প্রসঙ্গে তাফসীরে সাবীতে উল্লেখিত হয়েছেঃ
এ প্রসঙ্গে যে বিষয়টি বিশ্বাস করা একান্ত দরকার, সেটা নবী আলাইহিস সালাম পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন নি, যে পর্যন্ত না আল্লাহ তাআরা রাসূল ﷺ সে সমস্ত অদৃশ্য ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে অবহিত করেছেন, যা দুনিয়া ও আখিরাতে সংঘটিত হবে। তাঁর জ্ঞান একজন প্রত্যক্ষদর্শীয় জ্ঞাত তথ্যের মত। কেননা, হাদীছে বর্ণিত আছে- ‘আমার সামনে দুনিয়াকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আমি নিজের হস্তস্থিত বস্তু দেখার মত সবকিছুর প্রতি দৃষ্টিপাত করছিলাম। আরও বর্ণিত আছে যে, তাঁকে বেহেশ্ত ও সেখানকার যাতীয় নিয়মত, দেযাখ ও সেখানকার যাবতীয় শাস্তি ও যন্ত্রণা সম্পর্কে সম্যকরূপে অবহিত করা হয়েছে। তবে এ সম্পর্কিত কিছু কিছু তথ্য তাঁকে গোপন রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। {ইমাম সাভীঃ তাফসীরে সাভীঃ ২/৭৩৩ পৃ.}
‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে এ প্রসঙ্গে লিখা আছেঃ
‘‘নবী ও ওলীগণ থেকে যে সব অদৃশ্য বিষয়াদির খবর আছে, সেগুলো খোদা কর্তৃক অবহিত করার ফলশ্রুতি স্বরূপ তথা ওহী ‘ইলহাম’ বা ‘কাশ্ফের’ মাধ্যমে তারা জ্ঞাত হন। যেমন- কোন কোন ওলী বৃষ্টি বর্ষণ সম্পর্কে পূর্বেই বলে দিয়েছেন। তারা যে রকম বলেছেন ঠিক সে রকমই হয়েছে।’’ {আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৭/১০৫ পৃ.}
ইমাম আইনী রহঃ ও ইমাম কুস্তালানী রহঃ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ এবং মোল্লা আলী কারী রহঃ মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাতের কিতাবুল ঈমানের ১ম পরিচ্ছেদ ঐ হাদীছের প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করেছেনঃ
‘‘সুতরাং যে কেউ রাসূল ﷺ এঁর মাধ্যম ছাড়া এ পঞ্চ বিষয়ের যে কোন একটি বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী বলে দাবী করে সে স্বীয় দাবীতে মিথ্যুক।’’
{ক. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনীঃ উমদাদুল ক্বারীঃ কিতাবুল ঈমানঃ ১/২৯০ পৃ., আল্লামা ইমাম কুস্তালানীঃ ইরসাদুস সারীঃ কিতাবুল ঈমানঃ ১/১৪১ পৃ., আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীঃ ফতহুল বারীঃ কিতাবুল ঈমানঃ ১/১২৪ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারীঃ মিরকাতঃ ১/৬৫ পৃ., আল্লামা আলূসী বাগদাদীঃ তাফসীরে রুহুল মায়ানীঃ ২১/১১২ পৃ.}
আশিয়াতুল লুম‘আত’ গ্রন্থে শায়খ আব্দুল হক রহঃ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
এই হাদীসের ভাবার্থ হলো এসব অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ কর্তৃক অবহিত করা ছাড়া কেউ স্বীয় প্রজ্ঞা ও সহজাত জ্ঞানের বলে জ্ঞাত হতে পারে না। কেননা সেগুলো সম্পর্কে খোদা ব্যতীত আর কেউ জ্ঞাত নয়, কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাকে ওহী কিংবা ইলহামের মাধ্যমে জানিয়ে দেন তিনিই জ্ঞাত হন। {আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশিয়াতুল লুমআতঃ ১/৪৪ পৃ.}
আগামীকালের খবর, কার মৃত্যু কোথায় হবে এসব খবরও আমাদের নবী ﷺ জানতেন এই মর্মে আরো কিছু হাদিস পেশ করব, তার আগে আমি আরো বলতে চাই, “কিয়ামতের জ্ঞান আল্লাহর জানা আছে” মক্কায় এমন আয়াত নাজিল হওয়ার পরও মদিনাতে সাহাবায়ে কেরাম নবীজিকে “কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে” এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, তার মানে সাহাবায়ে কেরাম এটা বিশ্বাস করতেন যে, ঐসব আয়াত দ্বারা কিয়ামতের জ্ঞান সত্ত্বাগতভাবে আল্লাহ’র-ই জানা আছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবিবকে জানাবেন না এমন বলা হয়নি এবং প্রিয় নবী ﷺও কখনো বলেননি যে, আমি জানিনা। পরিস্থিতি সাপেক্ষে কোন বিষয় প্রকাশ না করা বা কিছু প্রশ্নের জবাব না দেয়া উক্ত বিষয়ে অজ্ঞতা নয়, হেকমতও হতে পারে। যেমনঃ
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, আমি এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ উভয়ে মসজিদে নববী থেকে বের হচ্ছিলাম। তখন মসজিদের দরজায় এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? রসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ তুমি কিয়ামতের জন্য কি পাথেয় সঞ্চয় করেছ? রাবী বলেন, তখন লোকটি চুপ হয়ে গেল। এরপর সে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমি তো সে জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ নামাজ, রোজা ও সাদকা-খয়রাত সঞ্চয় করিনি। তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কে ভালবাসি। তিনি বললেনঃ তুমি তার সঙ্গেই থাকবে যাকে তুমি ভালবাস। আনাস (রাঃ) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পরে কোন কিছুতে আমরা এত বেশী খুশি হইনি যতটা নবী ﷺ এঁর বাণীঃ “তুমি তার সঙ্গেই (থাকবে) যাকে তুমি ভালবাস” দ্বারা আনন্দ লাভ করেছি। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহ, তার রাসুল, আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) কে ভালবাসি। সুতরাং আমি আশা করি যে, কিয়ামত দিবসে আমি তাদের সঙ্গে থাকব, যদিও আমি তাদের মত আমল করতে পারিনি। (সহীহ মুসলিম ৬৬০৬, ৬৬০৭, ৬৬০৮) (সহীহ বুখারী ৩৬৮৮)
আগামীকালের খবর, কার মৃত্যু কোথায় হবে এই বিষয়ক হাদিসঃ
বদর যুদ্ধের আগের দিন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ এটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্থান, এ বলে তিনি যমীনের উপর হাত রাখলেন। এটা আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্থান, এ বলে তিনি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর হাত রাখলেন। এ হলো আগামীকাল অমুকের নিহত হওয়ার স্থান এবং এ বলে তিনি নির্দিষ্ট স্থানে তাঁর হাত রাখলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সেই সত্ত্বার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! কাফিরদের কেউই রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর হাত রাখার নির্দিষ্ট স্থান অতিক্রম করেনি (তারা ঐ নির্দিষ্ট স্থানেই নিহত হয়)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নির্দেশ মোতাবেক ওদের লাশের পা ধরে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে বদরের একটি অন্ধকার কূপে নিক্ষেপ করা হয়। (সুনান আবূ দাউদ ২৬৮১,সহিহ মুসলিম ৪৫১৩)
খাইবার যুদ্ধের সময় রাসূলূল্লাহ্ ﷺ বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে এ পতাকা দেয়া হবে। যখন ভোর হল তখন সকলেই রাসূলূল্লাহ্ ﷺ এঁর নিকট গিয়ে উপস্থিত হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা করছিলেন যে পতাকা তাকে দেয়া হবে। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আলী ইবনু আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলূল্লাহ্ ﷺ তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাকে আমার নিকট নিয়ে এসো। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল ﷺ তাঁর দু’চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোন রোগই ছিল না। রাসূল ﷺ তাঁকে পতাকাটি দিলেন। (সহীহ বুখারী ৩৭০১)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে,
সালামাহ ইবনু আকওয়া‘ (রাঃ) বলেন, খাইবার যুদ্ধে ‘আলী (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে পেছনে থেকে যান, (কারণ) তাঁর চোখে অসুখ হয়েছিল। তখন তিনি বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে পিছিয়ে থাকব? অতঃপর ‘আলী (রাঃ) বেরিয়ে পড়লেন এবং নবী ﷺ-এঁর সঙ্গে এসে মিলিত হলেন। যখন সে রাত এল, যে রাত শেষে সকালে ‘আলী (রাঃ) খাইবার জয় করেছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব, কিংবা (বলেন) আগামীকাল এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবে যাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল ﷺ ভালবাসেন। অথবা তিনি বলেছিলেন, যে আল্লাহ্ তাআলা ও তাঁর রাসূল ﷺ কে ভালবাসে। আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁরই হাতে খাইবার বিজয় দান করবেন। হঠাৎ আমরা দেখতে পেলাম যে, ‘আলী (রাঃ) এসে হাজির, অথচ আমরা তাঁর আগমন আশা করিনি। তারা বললেন, এই যে ‘আলী (রাঃ) চলে এসেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে পতাকা প্রদান করলেন। আর আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁরই হাতে বিজয় দিলেন।
(সহীহ বুখারী ২৯৭৫, ৩৭০২)
প্রিয় নবী ﷺ যখন ফাতিমাহ রাঃ কে ওনার ওফাত হওয়ার বিষয়ে অবগত করেন তখন ফাতিমাহ রাঃ কেঁদে ফেলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ ﷺ চুপেচুপে বলেন, ফাতিমাহ রাঃ ই উনার পরিবারবর্গের মধ্যে সর্বপ্রথম উনার সঙ্গে মিলিত হব, তখন ফাতিমাহ রাঃ (খুশিতে) হাসতে শুরু করলেন। (সহীহ বুখারী ৩৭১৬)
আমি আবারো উল্লেখ করছি,
আল্লাহ’র জ্ঞান তো অসীম। আল্লাহ পাক মহা অনুগ্রহ করে তাঁর রাসূলকে যা যা দরকার সবই জানিয়ে দিয়েছেন। কতটুকু জানিয়েছেন তার সীমা নির্ধারণ করার অধিকার আমাদের নেই, সেই সীমা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ ই ভালো জানেন। কিন্তু আমাদের জ্ঞান আল্লাহ’র রাসূলের জ্ঞানের তুলনায় অতি নগন্য। রাসলূল্লাহ ﷺ তো সৃষ্টির সূচনা থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এবং জান্নাতবাসী জান্নাতে, জাহান্নামবাসী জাহান্নামে প্রবেশের কথাও উল্লেখ করে দিয়েছেন। আর এসবও সম্ভব হয়েছে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা উনাকে জানানোর কারণে। আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা” আর “আল্লাহর সত্ত্বাগত ক্ষমতা” একই কথা নয়, তাই “প্রিয় নবী ﷺ আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় গায়েবের খবর জানেন” এ আকীদা পোষণ করা কখনোই কুফরী হতে পারে না কিংবা শিরক নয়।
আল্লামা মোল্লা আলী কারী রহঃ বলেন,
‘‘জেনে রাখুন যে, নবীগণ আল্লাহ তা’আলা কর্তৃক জ্ঞাত করানো ব্যতিরেকে অদৃশ্য বিষয়াদিতে জ্ঞাত হন না।
হানাফীগণ সুস্পষ্টরূপে উল্লেখ করেছেন যে, যে ব্যক্তি নবী ﷺ কে সত্ত্বাগতভাবে ইলমে গায়বের অধিকারী রূপে বিশ্বাস করে সে কুফরী করল।’’ {মোল্লা আলী ক্বারীঃ শরহে ফিকহুল আকবারঃ পৃ. ১৮৫}
আল্লামা যুরকানী রহঃ শরহে মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়ায়’ বলেছেন- ‘‘অগণিত বর্ণনাকারীর সমর্থনপুষ্ট হাদীছ সমূহের সর্বসম্মত ভাবার্থে একথা বলা হয়েছে যে গায়ব সম্পর্কে হুযুর ﷺ অবগত এবং মাসআলাটি সে সব আয়াতের পরিপন্থী নয়, যেগুলো দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ গায়ব জানে না। কেননা উক্ত আয়াত সমূহে যে বিষয়টির অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা হয়েছে, তা’হলো মাধ্যম ছাড়া অর্জিত জ্ঞান (স্বত্বগত জ্ঞান) আর হুযুর ﷺ এঁর খোদা প্রদত্ত জ্ঞানের বলে গায়ব সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ব্যাপারটি আল্লাহর কালামের সে আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়, যেখানে বলা হয়েছে- ارْتَضَى مِنْ رَّسُوْلٍ ‘কেবল তাঁর পছন্দনীয় রাসূলকে অদৃশ্য বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়’।’’
‘শিফা শরীফে’ ইমাম কাজী আয়াজ মালেকী রহঃ বলেন, (খরপূতী শরহে কসিদায়ে বোর্দা থেকে সংগৃহীত।)
‘‘আল্লাহ তা’আলা হুযুর ﷺ কে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করে দ্বীন-দুনিয়ার সমস্ত মঙ্গলময় বিষয়াদির জ্ঞান দান করেন। নিজ উম্মতের মঙ্গলজনক বিষয়, আগের উম্মতগণের ঘটনাবলী এবং নিজ উম্মতের নগণ্য হতে নগণ্যতর ঘটনা সম্পর্কেও তাঁকে অবহিত করেছে; মারিফাতের সমস্ত বিষয় তথা অন্তরের অবস্থাসমূহ, ফরয কার্যাবলী ইবাদতসমূহ এবং হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বিষয়েরও তাঁকে অবহিত করেছেন। {মোল্লা আলী ক্কারীঃ শরহে কাসীদায়ে বুরাদাঃ ১০ পৃ.}
মাদারেজ’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডের পঞ্চম অধ্যায়ে ‘হুযুর আলাইহিস সালামের ফযীলতের বর্ণনা’ প্রসঙ্গে ১৪৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া পর্যন্ত সব কিছুই হুযুর ﷺ এঁর কাছে প্রতিভাত করা হয়েছে, যাতে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর অবস্থাদি সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত হন। তিনি এ ধরনের কিছু কিছু বিষয়ের সংবাদ সাহাবায়ে কিরামকেও দিয়েছেন। {শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ মাদারিজুন নবুয়তঃ ১/১৪৪ পৃ}
পরিশেষে বলতে চাই,
“(হে সর্বসাধারণ!) আল্লাহর শান/রীতি এ নয় যে, তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দেবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করে নেন তার রাসূলগণের মধ্য থেকে যাঁকে চান। সুতরাং ঈমান আনো আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং যদি তোমরা ঈমান আনো এবং পরহেযগারী অবলম্বন করো, তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।” (সূরা আলে ইমরানঃ ১৭৯)
“তিনি (ঈসা আলায়হিস সালাম) বলবেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে নিদর্শনসহ তোমাদের নিকট এসেছি, আমি তোমাদের জন্য মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানিয়ে তাতে ফুঁক দেব, আল্লাহর হুকুমে পাখি হয়ে যাবে, আল্লাহ’র হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগী আরোগ্য করবো এবং মৃতকে জীবিত করবো এবং আমি তোমাদেরকে বলে দেব তোমাদের গৃহে তোমরা যা আহার কর এবং সঞ্চয় করে রাখ; নিশ্চয়ই এ কাজে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মু’মিন হও।” (সূরা আলে ইমরান ৪৯)