প্রিয় আক্বা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— ‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোকও আছে, সে যদি তোমার নিকট একটি দীনার চায় তুমি তাকে দিবে না, যদি একটি দিরহাম চায় তাকে নিষেধ করে দিবে আর যদি একটি পয়সা চায় তুমি অস্বীকার করে বসবে। অথচ যদি সে আল্লাহ তায়ালার কাছে জান্নাত চায় আল্লাহ তাঁকে জান্নাত দিয়ে দিবেন। দুনিয়া চাইলে তাও দিয়ে দিবেন, কারণ দুনিয়া তার নিকট নিকৃষ্ট।
অসংখ্য ফাটা পুরোনো পোষাকের লোক এমন আছে, যদি সে কোনো বিষয়ে আল্লাহর শপথ করে বসে, আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ পূর্ণ করবেন।’ -আল মুজামুল আউসাত, ৫/৩৪৪, হাদীস ৭৫৪৮।
এসব বান্দারা দুনিয়ার চোখে তুচ্ছ। না তাঁকে খোঁজার কেউ আছে, না বড় বড় অনুষ্ঠানে এদেরকে দাওয়াতের উপযুক্ত ভাবা হয়। না তাঁর মৃত্যুর পর কান্না করার কেউ আছে। কারণ- তাঁরা দুনিয়ার প্রসিদ্ধি চান নি। কিন্তু আল্লাহর কাছে এসব বান্দাদের শান এমন, যে কিছু চাইলে আল্লাহ তাঁদের ফিরিয়ে দেন না। তাঁরা তাদের রবকে সন্তুষ্ট করেছেন, ইখলাস পূর্ণ আমল দ্বারা। তাঁদের নেক কাজ দুনিয়ার মানুষকে দেখানোর জন্য ছিল না।
আজকে আমাদের অবস্থা কোথায়? আমাদের ফেসবুক পোস্টগুলোর বিনিময়ে চাই হাজার হাজার রিয়েক্ট, মারহাবা-মাশাআল্লাহ’র প্রশংসায় ভরপুর কমেন্ট বক্স। আমাদের জুব্বা-পাগড়ী পরার বিনিময়ে চাই, মানুষ আমাকে আগে সালাম করবে। আমার জন্য জায়গা ছেড়ে ওঠে দাঁড়াবে। জিনিসপত্র ক্রয়ে দাম কমিয়ে রাখবে!
কারণ- আমাদের কাছে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে তুচ্ছ মনে হয় আর দুনিয়ার সন্তুষ্টিকে বিশাল মনে হয়। আমরা আখিরাতের প্রতিদানের ওপর, দুনিয়ার প্রতিদানকে প্রধান্য দিয়েছি। আর এভাবেই আমাদের ঝুলিতে জমানো কিছু আমল যাই ছিল, সেগুলোও ধীরেধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নিজের অজান্তেই। আর এদিকে আমরা নিজেকে খুব নেককার ধারণাও করছি।
আল্লাহ যেন শয়তানের এই ধোঁকা থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন আর এই নব্য ফিতনা ‘ভাইরাল হওয়ার ব্যামো’ থেকে দূরে রাখেন।
সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মুহায়রিয রাহিমাহুল্লাহ তাঁর এক সফর সঙ্গীকে বিদায়লগ্নে এই নসিহত তিনটি করেন। তিনি বলেন, “পারলে এই তিনটি বিষয়ের ওপর আমল করবে।
• তুমি মানুষকে চিনে নাও কিন্তু তোমাকে যেন কেউ না চিনে।
• তুমি চলো কিন্তু তোমার পেছনে যেন কেউ না চলে।
• তুমি প্রশ্ন করো কিন্তু তোমাকে যেন কেউ প্রশ্ন না করে।”
অর্থাৎ- সর্বাবস্থায় নিজেকে গোপন রাখার চেষ্টায় থাকো। আমলগুলো হোক শুধুই আমার প্রিয় রব তায়ালার জন্য। থাকুক না কিছু গোপন বিষয় আমার আর আমার প্রিয় রবের মাঝে। যেটা আমি আর তিনি ছাড়া কেউ জানবে না। আর তিনিই তো উত্তম প্রতিদানকারী।