জবাব:
মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করার শাস্তি
মনে করুন! যদি কেউ মিথ্যা স্বপ্ন বানিয়েও বলে, তবে সেটার দায়িত্ব তার নিজের উপরই বর্তাবে। আর সে কঠিন গুনাহগার ও জাহান্নামের আগুনের হকদার হবে। তাজেদারে রিসালত, শাহানশাহে নবুয়ত, মুস্তফা জানে রহমত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যে মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করে, তাকে কিয়ামতের দিন যবের দুটি দানার মধ্যে গিঁট লাগানাের শাস্তি দেয়া হবে এবং সে কখনাে গিট লাগাতে পারবেনা।”
(সহীহ বুখারী, ৮ম খন্ড, ১০৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৭০৪২)
চিন্তা ভাবনা করা ব্যতীত যারা কথা বলে তারা সাবধান অন্য একটি হাদীসে পাকে রয়েছে, “এক ব্যক্তি এমন কথা বলে, যার মধ্যে সে চিন্তা ভাবনা করেনা (অথচ এরূপ কথা বার্তা, গীবত, দোষ অন্বেষণ অথবা মনগড়া স্বপ্ন ইত্যাদি হারামের উপর প্রতিষ্ঠিত) তাহলে সে এরূপ কথার কারণে জাহান্নামে এতটুকু পরিমাণ থেকেও অধিক (নীচে) পতিত হবে যতটুকু পূর্ব ও পশ্চিমের দূরত্ব রয়েছে।” (সহীহ বুখারী শরীফ, ৭ম খন্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ৬৪৭৭)
স্বপ্ন বর্ণনাকারীকে শপথ করতে বাধ্য করা শরয়ী ওয়াজিব নয়। আর যে আল্লাহর পানাহ! মিথুক হবে, সে হতে পারে, মিথ্যা শপথও করে নিবে।
কোনটা সঠিক আর কোনটি সঠিক নয়, এটা বুযুর্গানে দ্বীন ও আমাদের চেয়ে অধিক ভাল জানতেন। ভাল স্বপ্ন বর্ণনা করার ব্যাপারে শরীয়াত নিষেধ করেনি। তাহলে আমরা বাধা প্রদান করার কে? কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ ও বুযুর্গানে দ্বীনের কিতাব সমূহে উল্লেখযােগ্য সংখ্যক স্বপ্ন সম্পর্কে আলােচনা রয়েছে।
হযরত সায়্যিদুনা ইমাম আবুল কাসিম কুশাইরী (رحمة الله) রিসালায়ে কুশাইরিয়্যাতে” রুয়াল কাওম’ নামক অধ্যায়ের ৩৬৮ হতে ৩৭৭ পৃ: পর্যন্ত আওলিয়ায়ে কিরামের ৬৬ টি স্বপ্ন উদ্ধৃত করেছেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম মুহাম্মদ গাযালী (رحمة الله) ইহইয়াউল উলুমের ৪র্থ খন্ডের ৫৪০ হতে ৫৪৩ পর্যন্ত মানা-মা-তুল মাশায়িখ নামক অধ্যায়ে ৪৯ টি স্বপ্ন উদ্ধৃত করেছেন।
এছাড়াও হায়াতে আ’লা হযরত (মাকতুবাতে নববীয়াহ্ গাঞ্জ বখশ রােড লাহাের হতে মুদ্রিত) এর ৪২৪ হতে ৪৩২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত আমার আকা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনাে মিল্লাত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, হযরত আল্লামা মাওলানা আল হাফিজ, আল ক্বারী আশ শাহ আহমদ রযা খান (رحمة الله) এর ১৪ টি স্বপ্ন তিনি নিজেই বর্ণনা করেছেন। এর মধ্য থেকে ১টি স্বপ্ন প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপন করছি।
আ’লা হযরত (رحمة الله) এর স্বপ্ন
সায়্যিদী আ’লা হযরত (رحمة الله) দুহাতে মুসাফাহা (করমর্দন) এর বৈধতা সম্পর্কে ৪০ পৃষ্ঠার ১টি বই লিখেছেন। সেটার ৩য় পৃষ্ঠায় নিজের ঐ স্বপ্ন বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছেন, যাতে তাঁর সাথে হযরত সায়্যিদুনা ইমাম কাযী খান (رحمة الله) এর সাক্ষাৎ হয়েছে। এছাড়া মুসলমানদেরকে কুমন্ত্রনা সমূহ হতে বাঁচানাের জন্য এবং আরাে অধিকহারে জানানাের জন্য এ রিসালা মােবারাকাতে মানুষের সামনে স্বপ্ন বর্ণনা করার দলীল সমূহ প্রদান করেছেন।
যেমন- উল্লেখিত রিসালাতে লিখেছেনঃ
সহীহ হাদীস হতে প্রমাণিত, খাতামুল মুরসালীন, শফীউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন (ﷺ) স্বপ্নকে মহান নির্দেশ হিসেবে জানতেন এবং এটাকে (স্বপ্নকে) শুনা, জিজ্ঞাসা করা ও বর্ণনা করাতে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে:
হযরত সামুরাহ বিন জুন্দাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসুলে আকরাম, শাহানশাহে বনী আদম (ﷺ) ফযরের নামায আদায়ের পর উপস্থিত লােকদের নিকট জিজ্ঞাসা করতেন আজ রাতে কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ? কেউ দেখে থাকলে আরয করতেন: আর নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসুলে আমীন (ﷺ) এর (তাবীর) ব্যাখ্যা প্রদান করতেন। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ১২৭ পৃষ্ঠা, হাদীস নং- ১৩৮৬)
সায়্যিদী আ’লা হযরত (رحمة الله) আরাে বলেন: আহমদ, বুখারী ও তিরমিযী হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন; তাজেদারে রিসালাত, শাহানশাহে নবুয়ত, মাহবুবে রাব্বুল ইয্যত (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “যখন তােমাদের মধ্য থেকে কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা তার নিকট ভাল মনে হয়, তাহলে সেটা আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ থেকে তার উচিত এ জন্য আল্লাহ্ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা এবং মানুষের সামনে (তা) বর্ণনা করা।”
(মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড ২য়, পৃষ্ঠা ৫০২, হাদীস নং-৬২২৩) |
সুসংবাদ অবশিষ্ট রয়েছে
সায়্যিদী আ’লা হযরত (رحمة الله) উল্লেখিত রিসালাতে বর্ণনা করেন, হুযুর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেছেন: “নুবুওয়াত সমাপ্ত হয়ে গেছে। এখন আমার পর আর নবুওয়াত পাবেনা কিন্তু সুসংবাদ পাবে।” (আরয করা হল) সেটা কি? (ইরশাদ করলেন) “ভাল স্বপ্ন, মানুষ নিজে দেখবে কিংবা তার জন্য অন্য কেউ দেখবে।”
(তাবারানী, আল মু’জামূল কবীর, ৩য় খন্ড, ১৭৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩০৫১)
নিজের ব্যাপারে ভাল স্বপ্ন দেখা ব্যক্তিকে পুরস্কার প্রদানঃ
সায়্যিদী আ’লা হযরত (رحمة الله) আরাে বলেন: এটাও সাহাবায়ে কিরাম (রা.) এর সুন্নাত দ্বারা প্রমাণিত, যে এমন স্বপ্ন দেখেছে যাতে তার কথার সমর্থন পাওয়া যায়, এর জন্য তাঁরা খুশী হয়ে, যে স্বপ্ন দেখেছে তার সম্মান ও মর্যাদা বাড়িয়ে দিত, সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে: আবু জামরাহ যাবঈ (رضي الله عنه) তামাত্তু হজ্বে স্বপ্ন দেখেন যা দ্বারা (ফিকহের মাসআলাতে) ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর পক্ষে সমর্থন লাভ হল। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) (ঐ মােবারক স্বপ্ন শুনে নিজের সম্পদ হতে) তার জন্য ভাতা নির্ধারণ করে দিলেন এবং ঐ দিন থেকে তাঁকে নিজের সাথে আসনে বসাতে আরম্ভ করেন। (সহীহ বুখরী হতে সংকলিত, ২য় খন্ড, ১৮৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১৫৬৭)
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার উপর প্রতিদিন সকালে দশবার ও সন্ধ্যায় দশবার। দরূদ শরীফ পাঠ করে, তার জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ নসীব হবে।” (মাজমাউয যাওয়ায়েদ)
আল্লাহ্ তাআলার রহমত তাঁদের উপর বর্ষিত হােক এবং তাঁদের সদকায় আমাদের ক্ষমা হােক।
ইমাম বুখারীর আম্মাজানের স্বপ্নঃ
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! আপনারা অন্যদেরকে স্বপ্ন শুনানাের ব্যাপারে দুটি সহীহ বুখারী শরীফের হাদীস লক্ষ্য করেছেন। সহীহ বুখারী শরীফের প্রণেতা হযরত সায়্যিদুনা শায়খ আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী (رحمة الله) অত্যন্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে হাদীস শরীফ সংকলন করেছেন। তিনি (رحمة الله) নিজেই বলেন: আমি সহীহ বুখারীতে প্রায় ৬০০০ (ছয় হাজার) হাদীস শরীফ আলােচনা করেছি। প্রতিটি হাদীস শরীফ লিখার পূর্বে গােসল করে দুই রাকাত নামায আদায় করে নিতাম।”
তাঁর সম্মানীত পিতা হযরত সায়্যিদুনা শায়খ ইসমাঈল (رحمة الله) অত্যন্ত নেককার লােক ছিলেন এবং তাঁর সম্মানীতা আম্মাজানও নেককার মহিলা ও মুসতাজাবুদ দোয়া (অর্থাৎ যাঁর দোয়া কবুল হয় এমন মহিলা) ছিলেন। ‘ ছােট বেলায় হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দৃষ্টি শক্তি চলে যায়। তাঁর আম্মাজান (رحمة الله) এ দুঃখে কান্না করতেন এবং বিনীতভাবে দোয়া করতে থাকতেন। এক রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁর ভাগ্যের তারা চমকে উঠল, অন্তরের চক্ষু খুলে গেল। স্বপ্নে দেখলেন, হযরত সায়্যিদুনা ইব্রাহীম খলীলুল্লাহ (عليه السلام) আসলেন আর বলতে লাগলেন: “আপনি আপনার সন্তানের চোখের দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়ার জন্য দোয়া করে যাচ্ছেন। আপনাকে মােবারকবাদ, আপনার দোয়া কবুল হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা আপনার ছেলের দৃষ্টি শক্তি পূর্বের মত করে দিয়েছেন।” যখন ভাের হল তখন দেখা গেল হযরত সায়্যিদুনা ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর চক্ষুদ্বয় দৃষ্টি শক্তি সম্পন্ন হয়ে গেছে।
(তাফহীমূল বুখারী হতে সংকলিত, ১ম খন্ড, ৪ পৃষ্ঠা, কৃত: শাইখুল হাদীস আল্লামা গােলাম রাসূল রযবী)
🌱[তথ্যসূত্রঃ ফয়যানে সুন্নাত: পৃ. ১১৬-১১৯]