প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুকে মালা পরানো কি জায়েয?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কুরবানীর পশুকে মালা পরানো

-আশরাফুল হাসান কাদেরী।

_____________________________

◾ কুরআন ও হাদীস থেকে কুরবানীর পশুকে মালা বা কিলাদা পরানোর প্রমাণ:

➤ সুরা মায়িদার ২ নং আয়াতের প্রথমাংশে আল্লাহ বলছেন,

❞يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تُحِلُّوا شَعَائِرَ اللَّهِ وَلَا الشَّهْرَ الْحَرَامَ وَلَا الْهَدْيَ وَلَا الْقَلَائِدَ وَلَا آَمِّينَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنْ رَبِّهِمْ وَرِضْوَانًا……❝

হে ঈমানদারগণ ! তোমরা অবমাননা করো না আল্লাহর নিদর্শনসমূহ, সম্মানিত মাসসমূহকে এবং কুরবানীর জন্যে কাবায় পাঠানো পশুকে, সেসব পশুকে যাদের গলায় কণ্ঠাভরণ (গলায় চিহ্ন) রয়েছে।

এইখান কণ্ঠাভরণ বলতে গলায় এমন কিছু লাগানো যা চিহ্ন হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা কুরবানীর পশু ছাড়া অন্য পশুকে কেউ মালা বা কণ্ঠাভরণ পরায় না। কুরবানীর পশু স্পেশাল এইজন্যই এই কণ্ঠাভরণ।

➤ হাদীসে আরো স্পষ্ট পাওয়া যায় সহীহ বুখারীর ১৬৯৪ এবং ১৬৯৫ নং হাদীসে ইরশাদ হচ্ছে —

عَنْ الْمِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ وَمَرْوَانَ قَالاَ خَرَجَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ❞زَمَنَ الْحُدَيْبِيَةِ مِنْ الْمَدِينَةِ فِي بِضْعَ عَشْرَةَ مِائَةً مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا كَانُوا بِذِي الْحُلَيْفَةِ قَلَّدَ النَّبِيُّ الْهَدْيَ….❝

হযরত মিসওয়ার ইবনে মাখরামা ও মারওয়ান রা. উভয়ের সূত্রে বর্ণিত —

❝হুদায়বিয়ার সন্ধির পর রাসূলুল্লাহ ﷺ এক হাজারেরও অধিক সাহাবী নিয়ে মদিনায় হতে বের হয়ে যুর-হুলাইফা স্থানে পৌঁছে কুরবানীর পশুটিকে কিলাদা তথা মালা পরালেন….❞

➤ বুখারীর শরীফের ১৬৯৬ নং হাদীসে আম্মাজান আয়েশা রা. এর সুত্রে বর্ণিত হচ্ছে—

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ ❞فَتَلْتُ قَلاَئِدَ بُدْنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِيَدَيَّ ثُمَّ قَلَّدَهَا وَأَشْعَرَهَا وَأَهْدَاهَا….❝

আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন, ❝আমি নিজ হাতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কুরবানীর পশুর কিলাদা তথা মালা পাকিয়ে দিয়েছি। এরপর তিনি তাকে কিলাদা পরিয়ে ইশআর করার পর পাঠিয়ে দিয়েছেন….❞

➤ ইমাম বুখারী রা. পশুকে মালা পরানো বিষয়ে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে দুইটি থেকে তিনটি বাব তথা অধ্যায়ের শিরোনাম করেছেন এইভাবে

“فَتْلِ الْقَلاَئِدِ لِلْبُدْنِ وَالْبَقَرِ”

অর্থাৎ, “উট এবং গরুর জন্য কিলাদা পাকানো”

অন্যটি,

“مَنْ قَلَّدَ الْقَلاَئِدَ بِيَدِهِ”

অর্থাৎ, “নিজ হস্তে যে মালা বা কিলাদা বাঁধে”

আরেকটি,

“تَقْلِيدِ الْغَنَمِ”

অর্থাৎ, “পশু/বকরীর গলায় কিলাদা বা মালা পরানো”

“فَتْلِ الْقَلاَئِدِ لِلْبُدْنِ وَالْبَقَرِ”

অর্থাৎ, “উট এবং গরুর জন্য কিলাদা পাকানো” অধ্যায়ে দুইটি হাদীস বর্ণনা করা হয়। একটি আম্মাজান হযরত হাফসা রা. ও অন্যটি আম্মাজান হযরত আশেয়া রা. হতে।

➤ ১৬৯৭ নং হাদীসে আম্মাজান হযরত হাফসা রা. এর সুত্রে বর্ণিত হচ্ছে—

عَنْ حَفْصَةَ قَالَتْ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَا شَأْنُ النَّاسِ حَلُّوا وَلَمْ تَحْلِلْ أَنْتَ قَالَ ❞إِنِّي لَبَّدْتُ رَأْسِي وَقَلَّدْتُ هَدْيِي……❝

তিনি (হযরত হাফসা রা.) বলেন—আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ ﷺ লোকদের কী হল তারা হালাল হয়ে গেল আর আপনি হালাল হলেন না? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ❝আমি তো আমার মাথার তালবিদ করেছি এবং আমার কুরবানীর পশুকে কিলাদা পরিয়ে দিয়েছি…❞

➤ ১৬৯৮ নং হাদীসে আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. সুত্রে বর্ণিত হচ্ছে—

❞كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُهْدِي مِنْ الْمَدِينَةِ فَأَفْتِلُ قَلاَئِدَ هَدْيِهِ…❝

তিনি (আম্মাজান আয়েশা রা.) বলেন, ❝রাসূলুল্লাহ ﷺ মদিনা হতে কুরবানীর পশু পাঠাতেন। আমি তার গলায় কিলাদার মালা পাকিয়ে দিতাম…❞

➤ এইছাড়া আম্মাজান হযরত আয়েশা রা. এর সুত্রে আরো বেশ কয়েকটি সহীহহাদীস পাওয়া যায়, যেখানে আম্মাজান আয়েশা রা. বলেন—

❝আমার কাছে যে পশম ছিল আমি তা দিয়ে কিলাদা/মালা পাকিয়ে দিয়েছি।❞ সুবহানআল্লাহ

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments